নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

কৈশোরের স্মৃতি আর ৩ হাজার টাকা উপার্জন

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১৯


মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ। হাতে ৩ মাস সময় আছে। ভাবছি কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায়। এর মধ্যেই হঠাৎ জনৈক মামাতো ভাই এসে হাজির। বাড়িতে আমার মন টিকছিল না। ভাবলাম, মামার বাড়ি বেরিয়ে আসা যাক। এছাড়া তেমন আত্মীয়স্বজনও নেই অবশ্য।

আমাদের গ্রাম থেকে উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ১৩-১৪ কিলোমিটার। মামাতো ভাইয়ের সাথে উপজেলা সদর গিয়ে মনে হলো একটা বই কিনে নিলে ভালো হয়। কী বই কেনা যায়? ভাবনাচিন্তা করে কিনলাম উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের ট্রাজেডিসমগ্র। বেড়ানোর ফাঁকে পড়ে নেওয়া যাবে। বই পড়ার প্রতি বরাবরই ঝোঁক ছিল। এবার হাতে সময় পেয়ে সময়টাকে উপভোগ করা যাবে।

মামারা ৭ ভাই আর বোন কেবল আমার মা। আমার বয়সি বা কাছাকাছি ৩ মামাতো ভাই। আমিসহ ৪ জনের কাজ আপাতত টইটই করে গ্রামময় ঘুরে বেড়ানো। গ্রামের এ মাথা থেকে ও মাথায় যাই আর নিত্যনতুন আবিষ্কারের ধান্দায় থাকি। রাত হলে ভিসিআরে সিনেমা দেখি।

২ দিন যেতে না যেতেই দায়িত্ব একটা চাপল আমার কাঁধে। এক মামা বললেন ছেলেমেয়েদের পড়াতে। পড়ানো অবশ্য সমস্যা না। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় তৃতীয় শ্রেণির ছেলেমেয়েদের ক্লাস করিয়েছি। মানে আমাদের শিক্ষকগণ মাঝেমধ্যে বড় ক্লাসের ছেলেমেয়েদের দিয়ে ক্লাস করাতেন। সেরকম আর কী!

সে না না হয় গেল ছোটদের কথা। এখন যাদের পড়াতে বলা হচ্ছে; এদের মধ্যে ছোট যেমন আছে, আমার সমবয়সি এবং বয়সে বড়ও আছে ২ জন। যাদের সাথে বন্ধুত্ব বা যাদের বড় জানি, তাদের কী করে পড়াই?

কিছু করার নেই। আমি যাব বঙ্গে, (আমার) কপাল যাবে সঙ্গে অঙ্গে গেরোয়া বসন যতই পরি না। যাহোক, পড়ানো শুরু করলাম। বিশেষত, ইংলিশ গ্রামারের ওপর জোর দিলাম বেশি। এরা ইংলিশে অত্যাধিক দুর্বল। তারপর অন্যান্য বিষয়ে পড়ানো শুরু করলাম। ফলও আসতে লাগল দ্রুত। ভেবেছিলাম এদের পড়িয়ে যুত করতে পারব না।

আসলে এ এলাকাটা এত পশ্চাৎপদ যে, এখানে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। অনেক পয়সাওয়ালা লোকের ছেলেমেয়েও পড়ালেখা করে না। পড়ার যে পরিবেশ দরকার; সেটা এখানে নেই। মেয়েদের অল্পবয়সে বিয়ে হয়ে যায় আর ছেলেরা কাজকর্মে ঢুকে পড়ে। অথচ এখানে অনেকের এমন সামর্থ্য আছে যে, চাইলে ছেলেমেয়েদের বিদেশে নিয়ে পড়াতে পারে। যদিও বিদেশ বা শহরে নিয়ে পড়ানোর ইচ্ছে এদের নেই। অল্পবয়স থেকে টাকা-পয়সা রোজগার করতে পারলেই হলো।

একমাস-দু'মাস-তিন মাস; সময় যে কেমনে কেটে গেল টেরই পেলাম না। এমন মৌজ-মাস্তি আর কোথাও করা হয়নি কখনও। সুযোগও পাইনি। শুধু মৌজ-মাস্তি, তা নয়। এসময়ে শেক্সপিয়রের ট্রাজেডিসমগ্র শেষ করেছি। শেষ করেছি বড় মামাত ভাইবোনদের সংগ্রহে থাকা বেশ কিছু বই। বেশ কিছু কবিতাও লিখেছি।

একসময় বাড়ি ফিরতে হলো। কলেজে ভর্তির তারিখ দিয়েছে। মিস করছিলাম মামার বাড়ির মুহুর্তগুলো। বাড়ি আসার সময় এক মামি পকেটে ৩ হাজার টাকা গুঁজে দিলেন। আমি বিস্মিত হলাম। আসলে ওই সময়ে ৩ হাজার টাকা অনেক টাকা। এত টাকা দিয়ে আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তবে মনে মনে খুশিই হলাম। জীবনের প্রথম উপার্জন। খুশি না হয়ে উপায় আছে?

ছবিঃ প্রতীকী

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:১১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: বাহ নির্মল আনন্দময় সময় সাথে পুরুস্কার !!!

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:২৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আসলেই। দারুণ সময় ছিল।

২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।
শুনলাম আপনি বিয়ের জন্য পাত্রী খুজছেন?

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হুঁ।

৩| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৩

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: স্মৃতিময় ঘটনা ভালো লাগলো

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:০০

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: আপনার এ ধরনের পোস্টগুলো ভালো লাগে। মামির হাত থেকে ৩ হাজার টাকা পাওয়ার ঘটনাটি খুব ভালো লাগলো। এমন মমতাময়ী মামি খুব কমই হয়।

টিউশনি করে প্রথম কবে, কত টাকা পেয়েছিলাম সেটা কষ্ট করে মনে করতে হবে :) তবে, ছাত্রজীবন থেকে আমাকেও পড়াতে হয়েছে প্রচুর, কিন্তু সেগুলো সবই অবৈতনিক :) এবং ঐ সময়ে আমাদের অঞ্চলে টাকা দিয়ে/নিয়ে পড়ানোর চলও তেমন গড়ে ওঠে নি (স্কুলের শিক্ষক ছাড়া আর কাউকে টাকার বিনিময়ে পড়াতেও দেখি নি)। আমি হয়ত সিক্স/সেভেনে পড়ি, পাশের বাড়ির চাচা-চাচিরা তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে এসে বলতেন, ওগো তুমি পড়াও :) ব্যস, পড়ানো শুরু হয়ে গেল :) তাও, আমি যতক্ষণ পড়বো, ওরাও ততক্ষণ আমার পাশে বসে পড়বে, এবং সপ্তাহের ৭দিনই :)

যে-প্রাইমারি স্কুলে পড়েছি, টিচার ছিলেন ২জন। মাঝে মাঝেই প্রধান শিক্ষক খবর পাঠাতেন, তারা আজ কেউ স্কুলে থাকবেন না, আমি যেন স্কুল চালাই :) তো, আমি আমার হাইস্কুলে না যেয়ে প্রাইমারি স্কুলে যেয়ে স্কুল চালিয়ে আসতাম :)

এভাবেই এসএসসি পর্যন্ত গেলাম। এসএসসি'র পর (এখন মনে পড়লো) পাশের গ্রামের ২জন ছাত্র এলো, আমি যেন তাদের পড়াই। ওরা ক্লাস নাইনের ছাত্র। ২জনকে একমাস পড়ালাম। ওরা ২ চাচাতো ভাই মাস শেষে আমাকে ৫০ টাকা দিয়েছিল (এটাই আমার জীবনের প্রথম টিউশনির টাকা), যদিও আমার আশা ছিল ওরা দুজনে ২০০ টাকা দিবে :) ঐ সময়ে আরো কয়েকজনকে পড়িয়েছিলাম। তারা অবশ্য জনপ্রতি মাসে ১০০ টাকা করে দিয়েছিল।

চাকরি জীবনের ৩ ভাগের এক ভাগ পড়ানোর কাজে গেছে (এটা আমার প্রফেশনের অংশ)। পড়ানোর চাইতে অধিক আনন্দ আমি আর কিছুতে খুব কমই পেয়েছি।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৫৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আপনার ঘটনাগুলো ভালো লাগল। হাইস্কুলে না গিয়ে প্রাইমেরির ক্লাশ চালিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটা ইউনিক। আশা করি আপনার পড়ালেখায় অসুবিধা হয়নি। যথাযথ মূল্যায়ন হয়তো পেয়েছেন। আশপাশের ছেলেমেয়েদের বিনে পয়সায় পড়ালে অনেক সময় সম্মান পাওয়া যায় আবার অনেক সময় পাওয়া যায় না। আপনার কী অবস্থা হয়েছিল? মনে হয় সম্মান পেয়েছেন। এই সময়ে অল্প টাকা পেলেও ভালো লাগে। পড়ানোটা আমার এখনও ভালো লাগে। মনে হয় প্রত্যেকটা মানুষই মনোযোগী শ্রোতা চায়। আমি একটা জিনিস জানি আর এটা অন্যদের জানাচ্ছি; এরচেয়ে মজার বিষয় মনে হয় কমই আছে।

৫| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০৯

করুণাধারা বলেছেন: এসএসসি পাশের আগেই তিন হাজার টাকা উপার্জন করেছেন! অভিনন্দন। নিশ্চয়ই আপনি শিক্ষক হিসেবে খুব ভালো ছিলেন।

জীবনের এই সময়টা সবচেয়ে আনন্দের, কোন দায়দায়িত্ব নেই।

আপনার স্মৃতি চারণ ভালো লাগলো।

২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৫৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শিক্ষক হিসেবে কেমন ছিলাম নিজে তো বলতে পারব না, তবে শিক্ষার্থীরা ভালোবাসত অনেক। অভিভাবকরাও পছন্দ করতেন। এখনও ছেলেমেয়েরা খোঁজখবর নেয়।

৬| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:০৬

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: স্টুডেন্ট লাইফে কাউকে পড়ানো খুবই মজার।

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ওই সময়ে অল্প টাকাও অনেক টাকা মনে হয়। কারও তেমন প্রত্যাশা না থাকায় জীবনকে উপভোগ করা সহজ হয়।

৭| ২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: হুঁ।

আমার সন্ধানে একটা নিরীহ মেয়ে আছে। রোগা পোটকা শুকনা।
ভালো রান্না জানে না। তবে মেয়েটা লম্বা। আপনি কি এই মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজী আছেন?

২৯ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:২৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বিস্তারিত জানতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.