নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বংশী ভাই

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫০


আমাদের বাড়ি থেকে কয়েকটা বাড়ি দূরে হামিদ ক্বারী ভাইদের বাড়ি। আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে তার নিত্য যাতায়াত ছিল। স্থানীয় এক মাদ্রাসায় পড়াতেন। যাওয়ার সময় 'বংশী ভাই' বলে আমাকে ডাক দিতেন। আমি দৌড়ে বাড়ির বাইরে আসতাম আর উনি আমার গাল টিপে দিয়ে চলে যেতেন। আমি অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। তখনও বুঝতাম না কেন তিনি আমাকে 'বংশী ভাই' বলে ডাকেন। বস্তুতঃ বংশী মানে যে বাঁশি; এটাই জানতাম না।

না জানি আর না বুঝি, নামটা আমার পছন্দ ছিল; সে কথা বলাই বাহুল্য। যখন বুঝলাম বংশী মানে বাঁশি, তখন তো আরও উৎসাহ অনুভব করলাম। এমনকি একসময় বাঁশি বাজানো শেখার তোড়জোরও শুরু করলাম, সর্বোচ্চ চেষ্টাও করলাম। মেলা থেকে নানান ধরনের বাঁশি সংগ্রহ করতাম। তবে বাঁশের বাঁশির প্রতি একটা মোহ তৈরি হয়ে গেল। ময়মনসিংহ সদর বা ভালুকায় থাকতে কয়েকজন বংশীবাদকের শিষ্যত্বও গ্রহণ করলাম, যদিও শেখা হয়নি। কাজটা অত সহজও না।

যাহোক, যার মাধ্যমে বাঁশির প্রতি টান, তাকে বরাবরই মিস করতাম। 'বংশী ভাই' ডাকটা মিস করতাম। ঢাকায় আসার পর আরও বেশি মিস করেছি। কারণ, এ সময়টায় আমার শৈশবের পছন্দের মানুষদের বেশি মনে পড়ত। এখানে তো চেনাজানা কেউ ছিল না। প্রিয় মুখগুলোর ছবি চোখে ভাসত। যখন কারও মৃত্যু সংবাদ শুনতাম, খুব খারাপ লাগত। আমার পছন্দের অনেক মানুষ ছিলেন, যাদের সাথে বছরের পর বছর যোগাযোগ ছিল না। তারা জানতেনও না যে তাদের কত মিস করি। জানাতে সঙ্কোচও লাগত অনেক।

আসলে প্রতিটা মানুষই সেসব মানুষকে মিস করেন, যারা তাদের ভালোবাসেন, দরদ করেন। আমি জীবনে খুব কম ভালোবাসাই পেয়েছি কারও কাছ থেকে। তাই হয়তো সর্বদা স্নেহের কাঙাল ছিলাম। নিজে যা পাইনি, তা শিক্ষার্থী বা ছোট ছেলেমেয়েদের দেওয়ার চেষ্টা করতাম।

আমাদের প্রতিবেশী মজি মুন্সী নামের এক লোক আমাকে 'বাবা' ছাড়া ডাকই দিতেন না। আমি তাকে মজি মুন্সী জ্যাঠা বলে ডাকতাম। উনি মারা যাওয়ার সময় আসার সুযোগ হয়নি। হামিদ ক্বারী ভাইয়ের বাবাও অনেক স্নেহ করতেন। উনি মারা যাওয়ার সময়ও খবর পাইনি। একে একে কত জন মারা গেলেন, আমি আসারই সুযোগ পাইনি অথবা জানতেও পারিনি।

এবার ভাবছিলাম হামিদ ক্বারী ভাইয়ের সাথে দেখা করবই। হঠাৎ সেদিন তার সাথে রাস্তায় দেখা। আমি এক কাজে যাচ্ছিলাম। বললাম, একসময় আমাদের বাড়িতে আসতে হবে। এলেন পরদিন। নজর করে চেয়ে দেখি, আহা ভাইটি বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। এমনিতে আমার চেয়ে ২০-২৫ বছরের বড় কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে বয়স ৬৫+। একটা চোখও প্রায় অন্ধ।

কেমনে হলো জানতে চাইলে বললেন, বাঁশ কাটতে গিয়ে কঞ্চির আঘাত লেগেছিল চোখে। ডাক্তার দেখিয়েছেন। কাজ হচ্ছে না। এখন কালো চশমা পরে থাকেন। তার মেয়েদের খবর জানতে চাইলাম। জানালেন, তারা ভালোই আছে। বিয়ে হয়েছে। বাচ্চাকাচ্চা হয়েছে। মাঝেমধ্যে মা-বাবাকে দেখতে আসে।

চলেন কেমনে জিগ্যেস করলে বলেন দুটো টিউশনি করি। 'দেখেন?' তিনি বলেন, এক চোখে দেখি।

চা-নাস্তা চলে আর আমাদের আলাপ এগোতে থাকে। আমরা শৈশব-কৈশোরে ফিরে যাই। হঠা আমার অনুযোগ, আপনি তো এখন আমাকে বংশী ভাই ডাকেন না। উনি জোরে হেসে উঠেন। এ বিষয়ে কিছুই বলেন না। দম নেন। তারপর বলেন, দোয়া করি তুই ভালো থাক। বিপদআপদ যেন না হয়। আমি তার হাস্যোজ্জল মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। অনেক মায়া লাগে।

যাওয়ার সময় আমাকে আদর করে যান। আমি যে ছোটটি নেই; উনি ভুলে যান। আমিও ভুলে যাই আসলেই আমি ছোটটি নেই। মনে মনে খুশি হই, যাক অন্তত ভালোবাসার একজন মানুষের সাথে বহু বছর পর দেখা হলো। অনেক কথা হলো। কখন কে আছি, কে নেই তা তো বলা যায় না। যতক্ষণ বেঁচে আছি প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখি। তেমন কিছু করতে না পারলেও দুটো সুখ-দুঃখের কথা বলে জোরে শ্বাস নিই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৫৭

ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: জীবনটা খুব ছোট্ট কিন্তু পথটা অনেক দীর্ঘ বলে মনে হয় আমার কাছে।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার জন্য তো আরও :|

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:০৬

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


সৃজনশীল মানুষগুলো সবসময় ভালো মনের মানুষ হয়।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ১১:৪৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ঠিক।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:৫৮

বাকপ্রবাস বলেছেন: ছোট বেলায় মেলা থেকে বাঁশি কিনে নিয়ে আসতাম, ছোট্ট একটা বাঁশি ফু দিয়ে কী সুন্দর সুর তোলে বাদকে, আমি ফু দিলে কেবল বাতাস, ওরা ফটকে আঙ্গুল বসিয়ে একটা তুলে একটা রাখে এভাবে সুর তুলে আমি চেষ্টা করি, বাতাস বের হয় কোন স্বব্দ নেই, অতিৃপ্তি নিয়ে বাঁশিটা পরে থাকে, আবার কোথায় হারিয়ে যায়, পরের মেলায় আবার বাঁশি কিনি, সুরটার প্রেমে পড়ে যাই, ভাবি ইশশ যদি বাজাতে পারতাম। যে কোন সুর আমাকে খুব টানে, মনে হয় কোন সুর রপ্ত করতে পারলে আমি কিছু গান লিখব

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমি ম্যালা কষ্টে ফুঁ দেওয়া শিখেছিলাম। বাকিটা আর পারিনি।

৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৫| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:০১

জুন বলেছেন: আপনার লেখার সাথে মিশে গেলাম মনে হয় সাধু। আমিও মাঝে মাঝে এমন পুরনো মানুষ, রাস্তাঘাট, জনপদের কথা ভাবি। কেমন যেন পথের পাচালীর অপুর মত। আংগুলে কড় গুনি কত পরিচিত কত প্রিয় মানুষরা চলে গেছে। তাদের হাসিমাখা মুখ মনে পরে গেলো আপনার বংশীদার কথাগুলো পড়ে। ভালো থাকুন আর যোগাযোগ রাখুন সেই সব আন্তরিক মায়াময় মানুষদের সাথে।
+

০২ রা ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১০

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: এখন চেষ্টা করি প্রিয় মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখার, কথা বলার। বলা তো যায় না কখন কে আছি, কে নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.