নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Our sweetest songs are those that tell of saddest thought (Shelly).

রূপক বিধৌত সাধু

মন রে, কৃষিকাজ জানো না; এমন মানবজমিন রইলো পতিত আবাদ করলে ফলত সোনা! রামপ্রসাদ সেন ([email protected])

রূপক বিধৌত সাধু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন পারাবার: শঠতা ও প্রতারণার উর্বর ভূমি

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪০


অনার্সের শেষ আর মাস্টার্সের শুরু। ভালুকা ডিগ্রি কলেজের উত্তর পার্শ্বে বাচ্চাদের যে স্কুলটা আছে (রোজ বাড কিন্ডারগার্টেন), সেখানে মাত্র যোগদান করেছি। ইংরেজি-ধর্ম ক্লাশ করাই। কয়েকদিনে বেশ পরিচিতি এসে গেল আমার।

স্কুল থেকে আমাকে বলা হলো বাচ্চাদের জন্য শিট তৈরি করে দিতে হবে। প্রিন্সিপাল মহাশয় বাচ্চাদের পড়ালেখার মানোন্নয়নে বিরাট তোড়জোড় শুরু করেছেন। কয়েকদিন খাটাখাটি করে শিট তৈরি করে বাচ্চাদের দিয়ে দিলাম।

এরমধ্যে আমার মাস্টার্সের একটা মিডটার্মের তারিখ এসে গেল। স্বাধীন, ভালুকায় এসে যার সাথে মোটামুটি একটা সখ্য তৈরি হয়েছে; তাকে বললাম আমার হয়ে একদিন ক্লাশ করাতে। আরও বললাম শিটের কিছু টাকা কয়েকজনের কাছে পাওনা আছে। সে যেন টাকাগুলো তোলে। কাউকে কিছু বলতে হবে না। আমিই বলে এসেছি তারা যেন স্বাধীনের কাছে টাকা দিয়ে দেয়।

বিকেলে স্বাধীনের সাথে দেখা হলো। জিগ্যেস করলাম টাকা তুলেছে কি না। সে জানাল বেশিরভাগই টাকা দেয়নি। আমার বেশ খটকা লাগল। এমন তো হওয়ার কথা না। টাকা তো দিয়ে দেওয়ার কথা।

পরদিন ক্লাশে গিয়ে জিগ্যেস করলাম তারা টাকা দিয়েছে কি না। সবাই জানাল দিয়ে দিয়েছে। স্বাধীনকে ধরলাম। সে স্বীকার করল। আমি তাকে বললাম, আমার শিক্ষার্থীরা কখনোই মিথ্যে বলবে না। তুমি যে মাত্র ক'টা টাকার জন্য মিথ্যে কথা বললে, এখন তোমাকে আর বিশ্বাস করা যাবে? সে চুপ।

বললাম, বাটপারি যদি করতেই হয়, এমনভাবে করতে হবে যেন ধরা পড়ার সুযোগ না থাকে। তুমি এমন জায়গায় বাটপারিটা করলে যে, হাতেনাতে ধরা খেয়ে গেলে।


বছর দুই আগে এক গ্যাঁড়াকলে পড়ে আমার কিছু টাকা আটকে গেল। বাসা ভাড়া দিতে পারছি না, খাবারের টাকা দিতে পারছি না, এছাড়া কিছু টাকা দেনা পড়ে গেছে; সেটা শোধ করতে পারছি না। এ বিষয়গুলো জেনে এক ভদ্রলোক আমাকে মেইল করলেন, ফোনও দিলেন। জানালেন, আমাকে তিনি সহযোগিতা করতে চান।

আমি বললাম, কীভাবে নিশ্চিত হলেন আমি সত্যিই সমস্যায় আছি? এমনও তো হতে পারে আমি মিথ্যে বলছি। লোকে চিকিৎসার কথা বলে, এই সমস্যার কথা বলে, ওই সমস্যার কথা বলে কত প্রতারণা করে। আমিও তো ওই প্রতারক শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হতে পারি।

ভদ্রলোক হাসলেন। বললেন, কাউকে না কাউকে তো বিশ্বাস করতেই হয়। তাছাড়া আপনাকে আমার কখনও মিথ্যুক মনে হয়নি। আপনার সম্পর্কে আট বছর ধরে জানি।

ভদ্রলোক আমাকে সহযোগিতা করেছিলেন। তাও আমি বলি কাউকে এত সহজে বিশ্বাস করা উচিত না। সমাজে সৎ লোকের চেয়ে অসৎ লোক বেশি। এরা কিডনির সমস্যার কথা বলে, এমনকি মা-বাবার নামে টাকা তুলেও প্রতারণা করে। যদি কাউকে সহযোগিতা করতেই হয়, শতভাগ নিশ্চিত হয়ে নেওয়াই ভালো।

অনেকে অবশ্য বিপদে পড়ে প্রতারণার আশ্রয় নেয়। ভালোভাবে বললে হয়তো কারও দৃষ্টি আকর্ষণ সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে কী করা উচিত বা অনুচিত দাতা ব্যক্তিই ভালো জানেন।



মূল কাজের পাশাপাশি বাড়তি উপার্জনের আশায় আমি একটা কাজ করতাম। মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ছিল। প্রতিদিন কাজে যাই, কিন্তু আমার কাজ (লেখা) কাজে লাগানো হচ্ছে না। আমি হতাশ হয়ে পড়লাম।

মাস শেষে সবার মতো আমাকেও বেতন দেওয়া হলো। কিন্তু আমি নিতে অস্বীকৃতি জানালাম। আমার মনে হলো টাকাটা আমার প্রাপ্য না। যদিও টাকাটা আমার অনেক দরকার ছিল। আমি মাস শেষ হওয়ার অনেক আগে থেকেই আশায় বসে আছি কবে টাকাটা পাব। কিন্তু বিষয়টা তো আমার স্বভাববিরুদ্ধ। কাজ করিনি, তো টাকা নেব কেন?

টাকা পেয়েছিলাম অবশ্য। আমাকে বলা হয়েছিল আপনি এখানে আছেন, এতেই আমরা খুশি। তাছাড়া আপনার কাজ রেখে দেওয়া হচ্ছে। পরে কাজে লাগানো হবে। যদিও পরবর্তীতে কাজটা আর করিনি।



অসততা আর লোভ মানুষের সবচেয়ে বদভ্যাসের মধ্যে অন্যতম। আমি অনেক সুপ্রতিষ্ঠিত মানুষকে দেখেছি চরম অসৎ আর লোভী। যদিও সে পর্যায়ে যাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। তাদের বিষয়ে কিছু বলা ধৃষ্টতা। তবে এটা মানি সততার পাশাপাশি দক্ষতারও দরকার। শুধু সততায় কাজ হয় না।

মনে পড়ে ছোটোবেলায় অন্যের গাছে ঢিল ছুড়ে আম বা বরই পাড়তাম। পাশের বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় নিজের মনে করে লেবু নিয়ে আসতাম। বড়ো হতে হতে বদভ্যাসগুলো বদলে গেল। এখন কোটি কোটি টাকা দেখলেও লোভ হয় না। সৎ থাকার চেষ্টা করেছি সবসময়। মনে হয় মোটামুটি সচ্ছল একটা জীবনযাপন করতে পারলেই হলো।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬

নতুন বলেছেন: বড়ো হতে হতে বদভ্যাসগুলো বদলে গেল।

বড় হতে হতে নিজের একটা জীবন দর্শন সৃস্টি হয়েছে সেটাই মানুষকে পরিবর্তন করে। যেই মানুষের নিজেস্ব জীবন দর্শন নাই সে আসলে এখনো পরিপূর্ন মানুষ হতে পারেনাই।

আমার কাছে মনে হয় এই স্তরটাকেই বুদ্ধা এনলাইনটমেন্ট বলেছিলেন।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:০১

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: বড় হতে হতে নিজের একটা জীবনদর্শন সৃস্টি হয়েছে, সেটাই মানুষকে পরিবর্তন করে। যেই মানুষের নিজস্ব জীবনদর্শন নাই, সে আসলে এখনও পরিপূর্ণ মানুষ হতে পারে নাই।
যথার্থ।

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৫

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল লিখেছেন।ধন্যবাদ।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

রানার ব্লগ বলেছেন: ভালো থাকবেন !

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন।

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৮

মায়াস্পর্শ বলেছেন: আমার জীবন যাপনের বাহিরে অতিরিক্ত টাকা দেখলেই খুব ভয় লাগে। টেনশনে অস্থির হয়ে যাই। অল্পতে আমি খুশি। অনেক সুন্দর লিখেছেন।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৪

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেকে এ কথা বিশ্বাস করতে চায় না, বলে, টাকা হয়ে গেলে নাকি চিন্তা বদলে যায়। আমার মনে হয় না পরিবর্তন হবে।

৫| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৮

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সৎ থাকার ইচ্ছে অটুট থাকুক

পুরোনো স্মৃতি পড়ে ভালো লাগলো

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৬| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সৎ থাকার মধ্যেই আনন্দ আছে। আপনার জন্য অন্তর হতেই শ্রদ্ধা চলে এলো।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শুভকামনা জানবেন।

৭| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৩

করুণাধারা বলেছেন: চারটা গল্পই ভালো লেগেছে। প্রথম গল্প একজনের অসততার গল্প হলেও পরের দুটোতে আপনি বলেছেন সততার কারণে কিভাবে আপনি মানুষের বিশ্বাস অর্জন করেছেন, এবং শেষে বলেছেন সততাকে আপনি জীবনে ধরে রেখেছেন। খুব ভালো লাগলো। হয়তো জীবনে কষ্ট করে চলেছেন এ জন্য, কিন্তু মাথা উঁচু করে চলতে পারছেন। এই স্বস্তিটা অনেক বড়।

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: হয়তো জীবনে কষ্ট করে চলেছেন এ জন্য, কিন্তু মাথা উঁচু করে চলতে পারছেন। এই স্বস্তিটা অনেক বড়। এটাই কথা।

৮| ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ২:১৩

শ্রাবণধারা বলেছেন: গল্পগুলো ভালো, তবে গল্পের শিরোনামটা গল্পগুলোর তুলনায় একটু বেশি ভারী হয়ে গেছে।

কাউকে সাহায্য করার আগে আপনার যে তার সম্পর্কে খোঁজ খরব নিতে হবে তা নয়। অন্যকে আঘাত পেতে দেখলে আমরা যেমন আহত হই, এটাও তেমনি। অন্যকে সাহায্য করার ভিতর দিয়ে আমরা নিজেদেরই সাহায্য করি।

আবার অন্যের শঠতা আমাদের বিক্ষব্ধ করলেও, এটা নিয়ে মুষড়ে পড়ার বা খুব বেশি ভাবার প্র‌য়োজন নেই। জীবন পারাবারটা তো বেশ বড় সড় একটা বিষয়, তাই ক্ষুদ্র বিষয়গুলো নিয়ে বেশি না ভেবে সামনের দিকে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করাটাই মঙ্গল।

০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শিরোনামটা নিয়ে অনেকক্ষণ ভাবছিলাম। কূলকিনারা করতে পারছিলাম না :(!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.