নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ছিন্নপত্র

আশরাফুল ইসলাম রাসেল

প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ। শায়েস্তাগঞ্জ ডিগ্রি(সম্মান) কলেজ, হবিগঞ্জ(নিয়োগ আছে দুই বছর ধরে। তদবিরের অভাবে কাজ নেই, ভাতাও নেই। গভর্নিং বডির সভাপতির সাথে দেখা করার জন্য অধ্যক্ষ পরামর্শ দিলেও এ ব্যাপারে আমি অদক্ষ) )। সম্মান শ্রেণির শিক্ষক আমরা একবেলা খাই- শিরোনামে ইত্তেফাক-এ একটি লেখা প্রকাশ করায় প্রভাষকের(সৈয়দ সঈদ উদ্দীন কলেজ, মাধবপুর, হবিগঞ্জ) দায়িত্ব হতে অব্যাহতিপ্রাপ্ত।

আশরাফুল ইসলাম রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষক বিষয়ক গরুর রচনা

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৭

অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীর মত বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অর্ন্তভূক্তির দাবী জানাতে হচ্ছে এবং জানিয়ে আসছেন বিভিন্ন আদর্শ-লালিত শিক্ষক পরিষদ। ধর্মঘট, মানববন্ধন, অনশন, বিক্ষোভ-মিছিল ইত্যাদির পাশাপাশি সরকারের প্রতি কড়া হুশিয়ারী উচ্চারনও করছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। বছরের শুরুতে নতুন জাতীয় পে-স্কেল সংক্রান্ত আলোচনা শুরু হয়। বাজেটকালীন সময়ে এসে পে-স্কেলে অর্ন্তভূক্তির দাবীতে রাজপথে আন্দোলনরত একমাত্র শিক্ষক স্তরের পেশাজীবিরা। ফলে, স্বাভাবিকভাবেই বঞ্চনার দু:খের সাথে যুক্ত হয় ভবিষ্যতের অন্ধকার। তাই, অনেকটা দিগভ্রান্তের মত এদেশের শিক্ষকরা বিভিন্ন কৌশলের প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছেন। একাধিক কিংবা দশাধিক ভিন্ন ভিন্ন মঞ্চের সামনে জড়ো হয়ে সরকারের নিকট দাবী প্রকাশ করেন। বিচ্ছিন্নভাবে জানানো শিক্ষকদের দাবী জোরালো হয়না জেনেও একান্ত ব্যক্তিগত স্বার্থ ও অধিকার আদায়ে একাত্ম হতে পারছেন না শিক্ষকগন। আর, নিজেদের আবেদনের-দাবীর নিস্ফল হলেও তারা বুঝতে পারেন না যে, এদেশে মূলত শিক্ষকের প্রয়োজন নাই। একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সিপাহী, শিক্ষক, এমএলএসএস, নাইটগার্ড, রেলগার্ড ইত্যাদির মত কিছু কর্মচারী পোষতে হয়। শিক্ষকগন নিজেদের আলাদা কিছু ভাবতে পারেন কিন্তু এদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এদের কোন ঠাঁই নাই। মোটকথা, আশেপাশে তাকালেই যত খুশি দেখা যাবে শিক্ষকদের প্রতি সমাজের করুণাসুলভ আচরন। আর, কার্যক্ষেত্রে রাখাল এর মতই ব্যবহার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়, শিক্ষকের কোন শ্রেণি নেই। এক গবেষনায় পাওয়া যায়, অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষকতার বাইরে একাধিক পেশার সাথে ব্যাপকভাবে জড়িত হয়ে পড়ায় শিক্ষকদের মূল পেশা কোনটি অনুমান করা কঠিন হয়ে দাড়ায়। অন্যদিকে যারা শিক্ষকতাকে উৎকৃষ্ট ব্যবসা হিসাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ করে, স্কুল-কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রধানশিক্ষকরা ছুটির পরে অথবা ছুটির দিনে লুঙ্গি পরিহিত হয়ে অফিস কক্ষে নিভৃতে কাজ করেন। বিভিন্ন প্রজাতির শতশত শিক্ষার্থীকে শিক্ষাদানের মত মহান কাজ যে কতটা হিসাবনির্ভর ও নিবিড় সাধনার তা অফিসে লুঙ্গিপরিহিত ও গামছা-সাবানসহ খাবারআণীত প্রতিষ্ঠান প্রধানদের দিকে লক্ষ্য করলে কিছুটা আঁচ করা যায়। এছাড়াও, প্রধানদের সাধনার ফল আমরা পেয়েছি এবং আন্দোলনরত শিক্ষকরাও পাচ্ছেন আর যারা পে-স্কেলের বাইরে জীবন যাপন করেন তারা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, গরু দিয়ে গরু শিক্ষার পাশবিক প্রতিক্রিয়াসহ শিক্ষক সমাজের আক্ষরিক সফলতার কষ্ট। সা¤প্রতিক কালে দেশ দ্রুত এগিয়ে যাওয়ায় শিক্ষকরাও খুলছেন নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর এসব বিজনেস সেন্টারে বসে একই সাথে বিদ্যালয়ের শ্রেণি-কার্যক্রম নিয়ন্ত্রন করতে পারলেতো পেশার বহুমূখীনতা আরো বাড়ত। তবে হ্যাঁ, গাদাগাদা গাইডবই প্রাইভেটে দাড়িয়ে থেকেই শেষ করে দিতে পারার কৃতিত্ব একমাত্র আমাদের দেশের শিক্ষকগনের। কিন্তুু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এদেশের অধিকাংশ শিক্ষক নিজেরাই গাইড বইগুলো পড়ে কিছু বুঝেন না অথবা পড়তে পারেন না। যেহেতু ছাত্র শিক্ষক উভয়ের জন্য পড়াশুনা দূর্বোধ্য একটি বিষয় সেহেতু চোখ বন্ধ করে মুখস্থ করাই উত্তম মনে করে চেয়ারে বসতে বসতে শেষ হয়ে যায় একটা ব্যাচ অথবা শ্রেণিকক্ষের শতশত শিক্ষার্থীর পড়ালেখা। তাই, এক অলৌকিক ক্ষমতার বলে চলছে এদেশের শিক্ষা ও মোহগ্রস্থের মত প্রতিষ্ঠানে উপস্থিতি দিয়েই হাওয়া হচ্ছেন। বেশীরভাগ বিশেষ করে মফস্বল ও প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর গরুর খামার একই রকম মনে হয়। আর মনে হওয়াটা সত্য হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষাদানের অপূর্ব ঘটনা দেখে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় বাংলাদেশের হাওড়-বাওড় তথা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানর শ্রেণিকক্ষে ছাত্র-ছাত্রীর পাশাপাশি কিছু ছাগল, ভেড়া, বাছুর এর অবস্থান দেখা যায়। এবং এ ও দেখা যায়, স্কুল-কলেজে পড়ার নামে ওইসব শ্রেণিকক্ষে যেসকল ছাত্রছাত্রী উপস্থিত থাকে তাদের চেয়ে উক্ত প্রাণীগুলো ক্লাসে অধিক মনোযোগী। এছাড়াও, শিক্ষার্থীরা যে পরিমান বিরক্তির সৃষ্টি করে এর এক কণা পরিমান বিরক্ত করেনা ছাগল-ভেড়া-বাছুর। আরো সাফল্যের বিষয় এই, উক্ত প্রাণীগুলো শ্রেণিকক্ষের বাইরে কোন প্রয়োজনে অথবা মলমূত্র ত্যাগের প্রয়োজনে স্মার্টলি বেরিয়ে যায় এবং কাজ শেষে ইচ্ছে হলে ফিরে আসে নয়তো ঘাস খাওয়ায় মন দেয়। তবুও শ্রেণিকক্ষে পাঠদানরত শিক্ষকের মনোযোগে বিচ্যুতি ঘটায় না। অথচ অন্যদিকে দেখা যাবে, বের হতে ও প্রবেশ করতে অনুমতির প্রয়োজন নাই- বলার পরও, দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী মাঝখানে দাড়িয়ে বলে ওঠবে, “স্যার/ম্যাডাম পেশাব করতাম” অথবা “স্যার/ম্যাডাম বাথরুমে যাইতাম”। তাদের অনুমতি চাওয়ার প্রার্থনায় প্রায়ই ছেদ পড়ে শিক্ষকের নিবিড় পাঠদানে। তখন বলতে ইচ্ছে করে- কেন আমাকে সাথে আসতে হবে নাকি? তাই, অবহেলিত স¤প্রদায়ের ইতর প্রাণীগুলোকে নিরীহ ও শান্ত শ্রোতার ভূমিকায় দেখে সগর্বে অন্তত এটা বলা যায়, ওইসব প্রতিষ্ঠানের গরু-ছাগলও উন্নত মানের শিক্ষা পেয়ে থাকে এবং এরাও ধীরে ধীরে একাডেমিক শিক্ষার প্রতি অণূরাগী হয়ে ওঠছে। বিশ্বে স্বীকৃতি পাবে আমাদের শিক্ষকদের উচ্চ পর্যায়ের অভিনব শিক্ষা ব্যবস্থা । এতে দূণিয়া দেখবে, আমাদের দেশের দূর্গম ও দূরবর্তী এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যেকোন পর্বের প্রানীর উপর কার্যকর ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। উল্লেখ্য, উক্ত ছাগল-ভেড়া ছাড়া শ্রেণিকক্ষের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা দ্বারা জীবনে কিছু করতে না পারলেও অপরাপর প্রজাতির শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি, গ্রাম্য মাতব্বর, স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কেজি স্কুলে শিক্ষকতা ছাড়াও স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কিংবা গভর্নিং বডির সদস্য হতে সক্ষম হচ্ছে। সা¤প্রতিক সময়ে সম্পূর্ন ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার বদৌলতে সর্বোচ্চ বিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান, এমডি এমনকি উপাচার্য পদে ওই প্রাণীগুলোর নিয়োগ পাওয়া ও সম্পৃক্ততার হার বেড়ে চলছে। এরা যে পরিমান লেজুড়বৃত্তি করেন লেজওয়ালা প্রাণীও সেই পরিমান পারে না। উচ্চশিক্ষিত প্রাণীগুলো বিশেষ ব্যবস্থায় নিযোজিত প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগের উচ্চ পর্যায়, রাজনীতির শীর্ষপদ, এমনকি নীতি-নির্ধারনী পর্যায়েও কৃতিত্বের সাথে কর্মরত রয়েছে। সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন পদে নিয়োগ পাওয়া প্রানীগুলো সরকারী নীতি নির্ধারনে চালকের ভূমিকায় সক্রিয় থেকে নিজেদের প্রজাতি তথা পর্বের প্রাণীকুলের সুযোগ-সুবিধাকে অতিমাত্রায় প্রাধান্য দিচ্ছে। এমতাবস্থায় ওইসব শিক্ষকের প্রাক্তন ছাত্রদের হাতে রাজ্যের বাজেট হলেও শিক্ষা ও শিক্ষকের জন্য কিছু করছেনা তাদের শিষ্যরা। এরা দেখেছে শিক্ষকরাও গরু-ছাগল-ভেড়াদের স¤প্রদায়ভূক্ত একপ্রকার প্রাণী। তাই, সামান্য গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য শিক্ষকদের পে-স্কেলে অর্ন্তভূক্ত করা হলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে টান পড়বে এবং যা ঝুঁকিপূর্ন বলে মনে করে আমাদের শিক্ষকদের যোগ্য শিষ্যরা। কারন, শিক্ষকগনের জন্য ওইসব প্রাণীদের চেয়ে বেশী কিছুর প্রয়োজন নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা

২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: শিক্ষার মান এই কারণেই নিম্নগামী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.