নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি দিগন্তের ওপারে যাবো বলে ছুটতে থাকি। কিন্তু যতো ছুটে যাই, দিগন্ত আরো বিস্তৃত হতে থাকে। আমি ধাঁধাঁয় পড়ে যাই...

সাবরিনা নেওয়াজ

https://www.facebook.com/profile.php?id=100004622567277

সাবরিনা নেওয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রসঙ্গ ঐশী নয়, সিস্টেম।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৬

লিখতে বসলাম কারণ ঐশীর বয়সটা আমার জানা এবং সে প্রায় আমারই বয়সী। একটা টিন এইজ ছেলে বা মেয়ে জীবনটাকে কিভাবে দেখে? বাস্তববাদী দৃষ্টিতে নাকি সমূহ ফ্যান্টাসিতে? রঙিন এই বয়সটা যখন সাদা কালো ঠেকে, তখন একজন উঠতি কিশোর বা কিশোরী সাধারণত কি করার চেষ্টা করে? প্রথমত সে অবলম্বন খোঁজে; শেষটায় আত্মহনন। ঐশী ইয়াবাকে তার অবলম্বন করে নিয়েছিল। দোষটা কি মাদকাসক্ত ঐশীর একার ছিল? নাকি তার নীতিহীন বাবা মার ছিল?নাকি সেই সব কালো হাতের মাদক ব্যবসায়ীদের ছিল যারা ঐশীদের হাতে ইয়াবা তুলে দেয়? নাকি ছিল দুষিত সমাজব্যবস্থার?
.
অপরাধপ্রবণতা কখনোই এক পাক্ষিক হতে পারে না। পারিপার্শ্বিক অবস্থানগুলো এর সাথে জড়িত। ঐশী অ্যাডিকটেড ছিল, তাই নিজ বাবা মাকে খুন করেছে। তাহলে তার কাছে মাদকদ্রব্য কোথা থেকে আসতো? তাকে ইয়াবা সরবরাহ করতো দুষিত সমাজ। সেই টাকার যোগান দিত কে? ঐশীর বাবা। পেশায় পুলিশ ঐশীর বাবা সরকারি নিজ বেতনের সমপরিমাণ টাকা বিলাসিতার জন্যে তুলে দিতেন কন্যার হাতে। কেননা এই অঙ্কের বহুগুণ অর্থ তার উপরি আয় ছিল। যেহেতু ঐশীর বাবা বেঁচে নেই, সে দায়মুক্ত এবং বিচার ব্যবস্থা এই দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না আর। ঐশীর বাবা মার মৃত্যুতে গোটা পুলিশ সমাজও কালো টাকার দায়মুক্ত হল; হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। এখন আসা যাক মাদক ব্যবসায়ীদের দিকে। যা তা নিচু শ্রেণির লোক নয় কিন্তু এরা। সমাজের অনেক উঁচু আসনে এদের প্রতাপ। সেই ক্ষমতার সুবাদে দুষিত সমাজও ঐশীর বাবা-মা খুনের দায় থেকে মুক্তি পেল। বাকি থাকলো শুধু ঐশী। একমাত্র দায়ী আসামি এবং একই সাথে ভিকটিম কিশোরী। সবার দুর্নীতির দায় এখন তার উপরেই বর্তাবে। সে নেশাগ্রস্ত এবং হত্যাকারী। তাকে দু বার ফাঁসিতে ঝোলানোর আদেশ দেওয়া হল। অপ্রাপ্তবয়স্ক ঐশীর মনস্তাত্বিক, পারিবারিক এবং সামাজিক ত্রুটি আমলেই আনা হল না। কি অদ্ভুত আমাদের বিচার ব্যবস্থার নতুন আঙ্গিক!
.
আসলেই কি ঐশী খুনী নাকি আমাদের করাপটেড সমাজব্যবস্থা তাকে প্রতিদিন নেশাগ্রস্ত করে তুলেছে খুন করার জন্য? আমাদের দেশে কিশোর অপরাধ এতো বাড়ছে প্রধানত দুটি কারণে। দারিদ্র্য এবং কালো টাকার আধিক্যে। ঐশী দ্বিতীয়টিতে পড়েছে। বয়স দিয়ে যদি বিবেচনা করি, তাহলে বলব এই সময়টা খুবই সেনসিটিভ। সামান্য ভুল দিক নির্দেশনায় জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুলটি হতে পারে। আমার নিজের প্রায়ই ইচ্ছে করে হ্যান করি, ত্যান করি, দুনিয়ার চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করি। কিন্তু যখন মনে পড়ে এতো ফালাফালির জন্যে যে অঢেল পর্যাপ্ত টাকা দরকার তা আমার হাতে নেই, তখন বাধ্য মেয়ের মত আবার বাবা মার দেখানো পথে চলতে শুরু করি। ঐশীরও এমন না হয়ে উপায় ছিল না যদি না হাত খরচের জন্য বাচ্চা মেয়ে লাখ টাকা পেত। অভাব কিংবা আধিক্য দুটোই আপনার সন্তানের পা পিছলে যাওয়ার কারণ হতে পারে। আয়-ব্যয়ের হিসেবটা তাই শুরু থেকেই সন্তানকে বুঝিয়ে দিন।
শিশুর প্রাথমিক শিক্ষাটা পরিবারেই দেওয়া হয়। তার জন্যে অবশ্যই পরিবারের সদস্যদেরও সেই মূল্যবোধ থাকতে হবে। কারণ শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। এখন বাবা মা-ই যদি হয় ন্যায়-নীতি পরিপন্থি, সন্তানকে আর কি শিক্ষা দিবে কিংবা কোন মুখে সন্তানের সামনে মূল্যবোধের কথা বলবে। অঢেল টাকা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন, খোঁজ খবর রাখছেন না, ভালোবাসা প্রকাশ করছেন টাকার বিনিময়ে, যখন যা চাইছে দিচ্ছেন, কিছু দিন পর আপনার সন্তানের অবস্থান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে নিজেই বুঝতে পারবেন। তখন আফসোস করা ছাড়া উপায় থাকবে না। প্রাচুর্যের বিনিময়ে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে যাবেন না। তাকে ভালোবাসুন, সময় দিন, বন্ধুত্ব করুন। কালো টাকা দিয়ে পুষে মানবশিশু থেকে তৈরি করলেন কালসাপ, সেই সাপ আপনাকেই ছোবল মারলো! এখানে অবাক হবার কিছু নেই।
.
পুলিশের পেশাটা যদিও সেবাধর্মী। তবে সেই ধর্ম কোথাও অবশিষ্ট আছে কিনা সন্দেহ! একজন দারোগার বেতন কতই বা হবে? কিন্তু ঢাকায় তার বহুতল ভবন নেই- এটি অবিশ্বাস্য এবং অসম্ভব প্রায়। আমাদেরই বয়সী এক পরিচিত ছেলে, যার বাবা পুলিশে আছে। অবলীলায় তাকে বলতে শুনেছি- তার বাবার আজ মুড ভালো; ঘুষ খেয়ে পকেট ভর্তি করে এসেছে বলে। আর সেই ছেলেটির চারিত্রিক সনদ দিতে গেলে বলব সেটিও 'ঐশী' চরিত্রেরই এক প্রতিচ্ছবি। মোদ্দাকথা, আমাদের সমাজে এমন ঐশীর অভাব নেই যারা কিনা পিতার কালো টাকার মাদকে টাল মাটাল। শুধু 'পুলিশ' জনকের সন্তানই যে পথভ্রষ্ট হবে ঠিক তা নয়, যে কোনো দুর্নীতিপরায়ণ মানুষের সন্তানই পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করবে এটাই স্বাভাবিক; অন্যায়ের মাত্রাতে হয়তো কিছুটা ভিন্নতা থাকতে পারে।
.
এবার আসি আমাদের নড়বড়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের কথায়, যার অধিকাংশ স্ক্রুতে জং ধরে অচল হয়ে আছে।
গোটা মাদক-ব্যবসা, কালো-বাজারিকে ভন্ডুল করার ক্ষমতা একটি রাষ্ট্র রাখে। কিন্তু নেতাপুত্রগণই তো কালোবাজারির বড় বড় আসন দখল করে আছে, যারা কিনা প্রতিনিয়তই হাজার হাজার ঐশীর হাতে তুলে দেয় মাদক দ্রব্য; তৈরি করে মূল্যবোধহীন অ্যাডিকটেড 'ঐশী'। এদেরকে ধরা-ছোঁয়া তো দূরের কথা; বরং সিকিউরিটি দিয়ে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্বয়ং। বিনিময়ে তারাও কিছু ব্ল্যাক মানির ভাগীদার হচ্ছে। আর ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। মাদকাসক্তি ঘরে ঘরে নষ্ট করছে পিতার স্বপ্ন; তরুণের ভবিষ্যত। জন্ম দিচ্ছে এক অসুস্থ মানসিকতার জেনারেশন।
.
তবুও একটি ঐশীর ফাঁসি কখনোই হাজারো ঐশীকে মাদক থেকে ফেরাতে পারবে না এবং এটি কোনো সমাধান না। সমাধান করতে গেলে অবশ্যই সমস্যার রুট থেকে উগড়ে ফেলতে হবে। সমস্যা আমাদের সিস্টেম, সমস্যা করাপটেড সোসাইটি এবং আমাদের দুষিত মন মানসিকতা। ঐশীরা কোনো সমস্যা না; ওদের দরকার প্রোপার কাউন্সিলিং।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

তাল পাখা বলেছেন: তবুও একটি ঐশীর ফাঁসি কখনোই হাজারো ঐশীকে মাদক থেকে ফেরাতে পারবে না এবং এটি কোনো সমাধান না। সমাধান করতে গেলে অবশ্যই সমস্যার রুট থেকে উগড়ে ফেলতে হবে। সমস্যা আমাদের সিস্টেম, সমস্যা করাপটেড সোসাইটি এবং আমাদের দুষিত মন মানসিকতা। ঐশীরা কোনো সমস্যা না; ওদের দরকার প্রোপার কাউন্সিলিং।

সুন্দর লেখা।প্রতিটি লাইনই বাস্তবতার স্বাক্ষর রাখে। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ নির্ণীত আরো পোস্টের আশা রেখে দোয়া রইল।ভাল থাকুন।ধন্যবাদ।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

সাবরিনা নেওয়াজ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

ধমনী বলেছেন: আপনাদের প্রতি সহানুভূতি রইলো। সুন্দর পোস্ট।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩

সাবরিনা নেওয়াজ বলেছেন: সহমর্মিতা আপনার জন্যেও।

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৬

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আমাদের নড়বড়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের কথায়, যার অধিকাংশ স্ক্রুতে জং ধরে অচল হয়ে আছে।
গোটা মাদক-ব্যবসা, কালো-বাজারিকে ভন্ডুল করার ক্ষমতা একটি রাষ্ট্র রাখে। কিন্তু নেতাপুত্রগণই তো কালোবাজারির বড় বড় আসন দখল করে আছে, যারা কিনা প্রতিনিয়তই হাজার হাজার ঐশীর হাতে তুলে দেয় মাদক দ্রব্য; তৈরি করে মূল্যবোধহীন অ্যাডিকটেড 'ঐশী'। এদেরকে ধরা-ছোঁয়া তো দূরের কথা; বরং সিকিউরিটি দিয়ে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী স্বয়ং। বিনিময়ে তারাও কিছু ব্ল্যাক মানির ভাগীদার হচ্ছে। আর ধ্বংস হচ্ছে যুবসমাজ। মাদকাসক্তি ঘরে ঘরে নষ্ট করছে পিতার স্বপ্ন; তরুণের ভবিষ্যত। জন্ম দিচ্ছে এক অসুস্থ মানসিকতার জেনারেশন

এক চক্রবুহ্যে ফেসে আছে দেশ! একটা কমপ্লিট রেভ্যুলেশন ছাড়া গতানুগতিক পথে এর থেকে বরিয়ে আসা মুশকিলই বটে!

৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

সাবরিনা নেওয়াজ বলেছেন: হুম ঠিক ধরেছেন আপনি

৫| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩

গেম চেঞ্জার বলেছেন: ১. ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১ ০
তাল পাখা বলেছেন: তবুও একটি ঐশীর ফাঁসি কখনোই হাজারো ঐশীকে মাদক থেকে ফেরাতে পারবে না এবং এটি কোনো সমাধান না। সমাধান করতে গেলে অবশ্যই সমস্যার রুট থেকে উগড়ে ফেলতে হবে। সমস্যা আমাদের সিস্টেম, সমস্যা করাপটেড সোসাইটি এবং আমাদের দুষিত মন মানসিকতা। ঐশীরা কোনো সমস্যা না; ওদের দরকার প্রোপার কাউন্সিলিং।



সহমতঃ ফাঁসি কোনই সমাধান বা দৃষ্টান্ত নয়, হতে পারে না। এটা কেবল চিকিৎসার একটি চেষ্টা বৈ কিছু না। সেই চিকিৎসাও ভুল। ঐশীকে ফাঁসি দেয়ার চেয়ে নিশ্চয়ই মাদকের কবল থেকে মুক্তির জন্য পরিকল্প নেবার দরকার ছিল অধিক।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

সাবরিনা নেওয়াজ বলেছেন: হা হা আপনি কি আমার পোস্ট পড়েছেন নাকি কমেন্ট পড়ে কমেন্ট করেছেন?
হুম আমিও তালপাখার সাথে সহমত প্রকাশ করছি।

৬| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০০

গেম চেঞ্জার বলেছেন: পড়েছি। কিন্তু পোস্টের বাইরে তো কিছু বলিনি। :|| বলেছি নাকি?

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৪৩

সাবরিনা নেওয়াজ বলেছেন: হা হা একদম না। ঠিক আছে।

৭| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২৭

প্রীতম বলেছেন: প্রথম পড়ার জন্য পড়লাম
তারপর বোঝার জন্য পড়লাম
তারপর প্রতিকার হিসেবে কিছু লিখার জন্য পড়লাম।
যা বলার সব বলে দিয়েছেন।
কিন্তু প্রতিকার এর কথা ভাবতেই খারাপ লাগলো।
আদৌ কি এ সমস্যার কোন প্রতিকার বা সমাধান আছে?
থাকলে কে করবে সেটা?
(অদ্যপান্ত খুবই সুন্দর লিখেছেন, ধন্যবাদ।)

১৩ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪২

সাবরিনা নেওয়াজ বলেছেন: শেষ প্যারাটাই প্রতিকার। আশা রাখি আপনি আমি সবাই এগিয়ে এসেই করাপটেড সিস্টেমটাকে পিউরিফাই করার চেষ্টা করবো। মাদকাসক্তদের জন্যে কাউন্সিলিং ও পুনর্বাসনের সুব্যবস্থা করতে হবে।

৮| ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১০

প্রীতম বলেছেন: আমরা যদি সবাই অন্তত নিজেদের সন্তানদের কথা ভেবে নিজেদেরকে করাপটেড থেকে বের করে আনার চেষ্টা শুরু করি তবে শুরুটা শুরু হবে বলে আমার বিশ্বাস। ধন্যবাদ।

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩

সাবরিনা নেওয়াজ বলেছেন: আপানার ভাবনা সত্য। শুরুটা নিজ ঘর থেকই করতে হবে।
ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.