নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পর্ক

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫

দু'জনেরই অফিস শেষ ৬ টায়।

অনু আর তারেকের। ৭ বছরের প্রেম শেষে দু বছরের সংসার। অবসর ছাড়া অভাব নেই কোন। অনু এড ফার্মে। তারেক টেলিকম। অনু তারেকের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিল অফিসের সামনে, তারেক পৌঁছুল আধা ঘণ্টা দেড়িতে। গাড়ির দরজা খুলেই হাপিয়ে ওঠা গলায় বলল, 'ঢাকা সিটি ইজ সিমপ্লি এবসারড টু লিভ। হরিবল জ্যাম'।



অনু কথা বলল না, চুপচাপ গাড়িতে উঠল। তারেক বলল, 'রাতে কি বাইরে কোথাও খাবে?'

অনু জবাব দিতে যাচ্ছিল, এই মুহূর্তে তার ফোন বাজল, রাকিবের ফোন। রাকিব তার অফিসের কলিগ। ভালো বন্ধু। নানান সমস্যা যাচ্ছে রাকিবের। সিন্থিয়া কে নিয়ে। হুট করে বাবার বাড়ি চলে গেছে সিন্থিয়া, বলছে, আর আসবে না। কেন আসবে না, কারণ বলছে না। এই মুহূর্তে দিশেহারা রাকিবের বন্ধু, পরামর্শক, অভিভাবক হয়ে আছে অনু। রাত বিরাতে যখন তখন ফোন। অনু ফোন ধরল, 'হ্যা রাকিব, বল...'



তারেক চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছিল। রাতের ঢাকাটাকে কতদিন সেই আগের মত আর দেখা হয় না। সেই রাতের ক্রিসেন্ট লেক, মহাখালি ফ্লাই ওভার, শাহবাগ, ধানমণ্ডি... কত দিন...

অনু ফোন রেখে মোবাইল স্ক্রীন দেখল, আরও কতগুলো কল এসেছিল। ওয়েটিং পেয়ে কেটে দিয়েছে। সে স্ক্রিনে দেখল- লীনা, টিটু, জিওন। কতগুলো ফোন! আরিহ! দীপাও ফোন দিয়েছিল! কতদিন কথা হয় না! এখুনি ফোন ব্যাক করবে? তারপর হঠাৎ ভাবল, খানিক বাদে ফোন ব্যাক করা যাবে। তার আগে তারেকের সাথে কথা সেরে নেয়া যাক, রাতে বাইরে খাবার ব্যাপারে কিছু একটা বলছিল সে। অনু ঘাড় ঘুড়িয়ে বলল, 'হ্যা, কই খাবে? চলো কোথাও খাই'।



তারেক জবাব দিতে যাচ্ছিল, এই মুহূর্তে তার ফোন বেজে উঠেল, তারেক ইশারায় অনুকে থামতে বলে ফোন ধরল। রফিক ভাইয়ের ফোন। তারেক কথা শেষে যখন ফোন রাখল, ততক্ষণে অনু কথা বলছিল দীপার সাথে। তারেকেরও ফোন বাজল, প্রথমে নিধি, তারপর আনিকা আর শফিক। গাড়ী ততক্ষণে গ্যারেজে ঢুকেছে। ফোন কানে চেপেই ঘরে ঢুকল তারেক আর অনু...

তারপর ফ্রেশ হওয়া। তারপর আরও কিছু ফোন, তারপর খাওয়া, তারপর আরও কিছু ফোন, তারপর ফেসবুক, ফোন, তারপর... তারপর ক্লান্তি, তারপর ঘুম, তারপর আগামী দিন। আরেকটি কার্বন কপির জীবন।

অনু কিংবা তারেক বহু বছর পরে এক সন্ধ্যায় বসে ছিল অন্ধকার বারান্দায়। অনু ফোন কানে চেপে বসে আছে, তারেক আইফোনে ফেসবুক। কত কত মানুষের সাথে পরিচয়। সম্পর্কের কত কত বিস্তৃতি। অনু অন্ধকারে ঘাড় ফিরিয়ে তারেকের শরীরের আদলটা দেখল। তার হঠাৎ মনে হল, এই মানুষটাকে সে চেনে না। এ অন্য কোন তারেক। অন্য কোন মানুষ। আচ্ছা, সে নিজেও কি সেই অনু? সেই হুডখোলা রিকশার এলোচুল অনু? সেই রাত ভোর কেটে যাওয়া তারেকের বুকে মিশে থাকা অনু? সেই উৎকণ্ঠা মিশে থাকা বুকের অনু?



অনু সেই গভীর অন্ধকারে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর ধীর পায়ে, খুব ধীর পায়ে তারেকের কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আলতো হাতে ছুঁয়ে দিল তারেকের কাঁধ। এই স্পর্শ তারেক চেনে। সে গভীর অন্ধকারেও চোখ বন্ধ করে বুক ভরে দীর্ঘ-নিঃশ্বাস নিল। তারপর আইফোনের সুইচটা অফ করে দিয়ে ঘুরে উঠে দাঁড়াল। দু হাতে অনুকে বুকের ভেতর টেনে নিয়ে ফিস ফিস করে বলল, ‘সম্পর্কের বিস্তৃতি যত বাড়ে, গভীরতা তত কমে’।

অনু বলল, ‘হুম।

তারেক বলল, অথচ দেখ, বিস্তৃতি নয়, সম্পর্কে গভীরতাটাই দরকার।

অনু তারেকের বুকে মুখ ঘসে আদুরে গলায় বলল, 'উমমম'।

তারেক বলল, ‘কারণ, গভীরতায় সবটুকু নিয়ে ডুবে যাওয়া যায়... সবটুকু নিয়ে।



সেই গভীর অন্ধকারে পৃথিবীর কিছু কিছু অনু-তারেক ডুবে গেল, ডুবে গেল সবটা নিয়ে।

ভেসে রইল কেউ কেউ, বিস্তৃত সম্পর্কের অগভীরে...

-------------------------------------------------------

সম্পর্ক/সাদাত হোসাইন

০৮/০৯/২০১৪

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৪

ভিটামিন সি বলেছেন: প্লটটা ভালো লেগেছে। গল্পটাও মচৎকার।

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১১

জেন রসি বলেছেন: সেই গভীর অন্ধকারে পৃথিবীর কিছু কিছু অনু-তারেক ডুবে গেল, ডুবে গেল সবটা নিয়ে।
ভেসে রইল কেউ কেউ, বিস্তৃত সম্পর্কের অগভীরে...

স্পর্শকাতর।
ভাল লাগল।

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৪

বাংলার পাই বলেছেন: সম্পর্কের বিস্তৃতি যত বাড়ে, গভীরতা তত কমে’। ------------সত্য কথাই বলেছেন। গল্প চমৎকার। আমাদের যান্ত্রিক জীবনের চরম বাস্তবতার গল্প।

৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: হুম । কর্মব্যস্ততার জন্য সম্পর্ককে ছুটি দিয়ে দেয় অথচ এই সম্পর্কগুলোর জন্যই এই কর্মব্যস্ততা । বিষয়টা অতিবয় হাস্যকর ।

ভালো লিখেছেন। :)

৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৩৬

সমানুপাতিক বলেছেন: আরিহ! মানে বুঝলাম না । /:) সুন্দর গল্প ।

৬| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

জুবায়ের আহমেদ গাছবাড়ী থেকে বলেছেন: দারুণ হইছে

৭| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২০

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
দু হাতে অনুকে বুকের ভেতর টেনে নিয়ে ফিস ফিস করে বলল, ‘সম্পর্কের বিস্তৃতি যত বাড়ে, গভীরতা তত কমে’।
অনু বলল, ‘হুম।

তারেক বলল, অথচ দেখ, বিস্তৃতি নয়, সম্পর্কে গভীরতাটাই দরকার।
অনু তারেকের বুকে মুখ ঘসে আদুরে গলায় বলল, 'উমমম'।


চমৎকার বর্ণনা আর উপলব্দি !!

অনেক ভালো লাগলো ! ++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.