নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পর্ক-২

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৪

মগটা ভাঙল।

টুকরো কাঁচগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেঝেতে। রেনু ওঠাল না। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ড্রেসিং টেবিলের বিশাল আয়নাটার দিকে। অবসন্ন, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত এক মানুষের প্রতিচ্ছবি যেন। রেনু একদৃষ্টিতে তাকিয়েই রইল। তারপর হঠাৎ পা ফেলে উঠে দাঁড়ালো। হেঁটে গেল ভাঙা মগের কাঁচের টুকরোগুলোর ওপর দিয়ে। ফোঁটা ফোঁটা রক্ত জেগে উঠছে পায়ের তলায়। কাঁচের টুকরোগুলো পায়ের মাংসে গেঁথে গিয়ে তাকিয়ে আছে! কী ভীষণ তীঘ্ন! কি ক্ষুধার্ত!! রেনু আবার হেঁটে গেল, তীব্র যন্ত্রণায় তার সারা শরীর কেঁপে উঠল। সে বিড়বিড় করে বলল, 'আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি?'

ঘরে কেউ নেই। এই প্রশ্ন সে কাউকে করেও নি। শ্রেফ স্বগতোক্তি। কিন্তু অদ্ভুতভাবে আয়নার ভেতর থেকে ক্লান্ত, অবসন্ন, বিধ্বস্ত একটা মেয়ে কথা বলে উঠল, 'তুমি পাগল হয়ে যাও নি'।

রেনুর অবাক হবার কথা ছিল, কিন্তু সে একটুও অবাক হল না। স্বাভাবিক ভঙ্গীতে জিজ্ঞেস করল, 'তাহলে?'

আয়নার ভেতর থেকে মেয়েটা বলল, 'তাহলে আর কি? তুমি একটা সত্য আবিস্কার করেছ'।

রেনু বলল, 'কি সত্য?'

মেয়েটা বলল, 'সম্পর্ক ভেঙে গেলে এমন খুনে হয়ে যায়, লুকিয়ে থাকা চেহারারা বের হয়।'

রেনু বলল, 'কেন?'

মেয়েটা বলল, খানিক আগে যে মগটায় ঠোঁট ডুবিয়ে জল খেলে, কি মোলায়েম, মসৃণ আর পেলবতা ছুঁয়ে দিল তোমার ঠোঁট। অথচ এখন দেখ, সেই মগটাই ভেঙে গিয়ে কি তীক্ষ্ণ আর ধারালো হয়ে উঠেছে, পা কেটে রক্ত অবধি বের করে দিল, তাই না?'

রেনু জবাব দিল না। মেয়েটা বলল, 'অথচ এই ভয়ংকর টুকরোগুলোই কিন্তু আস্ত মগটার ভেতর লুকিয়ে ছিল! তাই না?' তখন ভেবেছ?'

রেনু অবাক গলায় বলল, 'না'।

মেয়েটা বলল, 'সম্পর্কগুলোও এমন, ভেঙে গেলেই শুধু পুরোপুরি টের পাওয়া যায়, ভেতরে কি লুকিয়ে ছিল, কি ধারালো, কি তীক্ষ্ণ আর ভয়ংকর!'



রেনু কথা বলল না। সেই তাকিয়ে রইল টুকরো কাচেদের দিকে। ঝাপসা চোখের ভেতর কাঁচগুলো ক্রমশই যেন পুরনো সব স্মৃতি হয়ে ফিরে আসছে। খুব দ্রুত ফিরে আসছে স্মৃতিরা। ফিরে আসছে আসিফ! আসিফের স্মৃতিরা। রেনু হঠাৎ উঠে দাঁড়াল। তারপর চট করে ঝাঁট দিয়ে কাঁচগুলো মেঝে থেকে সরিয়ে নিল। আর একবার পা কাটতে চায় না সে। রক্তাক্ত হতে চায় না।



সে জানে, কিছু স্মৃতিরাও এই কাঁচের মতই, যত দ্রুত মুছে ফেলা যায় তত ভালো। না হলে ক্রমাগত এমন করেই কেটে যেতে হয়, রক্তাক্ত হতে হয়...

----------------------------------------------------

সম্পর্ক-২/ সাদাত হোসাইন

১১/০৯/২০১৪

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১২

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: চমৎকার!

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: অনুভূতির গভীরতাটা ভালো লাগলো। বিশেষ করে উপমাটা।

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৭

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: অনুভূতির গভীরতাটা ভালো লাগলো। বিশেষ করে উপমাটা।

৪| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৩

ইমরান নিলয় বলেছেন: সুন্দর প্রকাশ।

৫| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৩

ইমরান নিলয় বলেছেন: সুন্দর প্রকাশ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.