নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ কিংবা...

২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:৩৯

১/
বাসটা ছিটকে পড়ল রাস্তার পাশের খাদে।
ছিটকে পড়বার ঠিক আগ মুহূর্তে আমি বা দিকে ঝাঁপালাম। আমার কাঁধে ব্যাগ। কিন্তু তাতে বাসের ছাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তে অসুবিধা হল না। বাতাসে ভেসে পড়ার আগ মুহূর্তে একটা গাছের সাথে বাড়ি খেল আমার শরীর। পাঁজরের হাড় বরাবর। মুহূর্তে ফুসফুস ফাঁকা হয়ে গেল! মড়মড় শব্দে দুখানা হাড় ভাঙল বোধ হয়! আমি পড়ে রইলাম অর্ধেক শরীর ডুবিয়ে ধানক্ষেতের মধ্যে। নিঃসাড়। কারও হাতের স্পর্শে আমি চোখ মেলে তাকালাম। একটা মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন আমার পাশে। তার সাথে আরও কয়েকজন। মানুষটা নিচু গলায় বললেন, 'ছেলেটাকে এখুনি ডাক্তারের কাছে নিতে হবে, এখুনি'।
একজন বলল, 'কিন্তু কিভাবে নেব, হাসপাতাল দূরে'।
লোকটা বলল, 'কোন সমস্যা নাই, আমার সাথে গাড়ী আছে, আপনারা শুধু উঠাই দেন গাড়িতে। আমি হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি। ডাক্তার আমার পরিচিত'।
তারা ধরাধরি করে আমাকে গাড়িতে ওঠাল। ড্রাইভার গাড়ী ছাড়ল। ধবধবে সাদা শার্ট, ক্লিন শেভড, সুন্দর করে আঁচড়ানো চুলে সৌম্য চেহারার মানুষটা আমার পাশে এসে বসলেন। ব্যথায় কাতর চোখে মানুষটার দিকে তাকিয়ে আমি মৃদু হাসলাম। তিনিও। মানুষটা আমার মাথায় হাত রাখলেন। আমি প্রবল কৃতজ্ঞতায় তার দিকে তাকিয়ে চোখ মুদলাম। কতক্ষন জানি না, হঠাৎ গাড়ী থামায় আমার ঝিমুনি কেটে গেল। তাকিয়ে দেখি ড্রাইভার গাড়ী থেকে নেমে গেছে। আমার পাশের দরোজাটা খুলে গেল। 'হাসপাতালে এসে গেছি?' আমি ক্লান্ত গলায় জানতে চাইলাম। কেউ কোন জবাব দিল না। আমি হতভম্ব চোখে তাকিয়ে দেখলাম সেই সৌম্য চেহারার মানুষটা আর তার গাড়ীর ড্রাইভার মিলে আমাকে টেনে হিঁচড়ে গাড়ী থেকে নামালেন। তারপর সুনশান রাস্তার পাশে একটা ঝোপের কাছে ছুড়ে ফেললেন। প্রবল ব্যথায় আমি কুকিয়ে উঠলাম। আমার ভাঙা পা, ভাঙা পাঁজর। আমি পরে রইলাম সেই ঝোপের ভেতর। আমার ব্যাগ? ব্যাগের ভেতর ল্যাপটপ, ক্যামেরা, টাকা, আমার পকেটের মোবাইল ফোন? আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে মানুষটার দিকে তাকালাম, মানুষটা হাসল। খানিক আগে আমার মাথায় হাত রেখে মৃদু হাসা সেই মানুষটার এই হাসি দেখে আমি চমকে উঠলাম। সেই হাসির আড়ালে কি করে এই ভয়ংকর হাসি লুকিয়ে ছিল? আমি বিভ্রান্ত দৃষ্টিতে মানুষটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি। আমি আসলে মানুষ চিনি না।

২/
কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম জানি না। ঘুম ভাঙল হাত ধরে টানাটানির কারণে। কেউ একজন হাত ধরে টানছে। আমি চোখ মেলে তাকালাম। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, আমার হাতে আমার প্রিয় হাতঘড়িটা এখনও রয়ে গেছে! কণ্ঠার হাড় বের হয়ে যাওয়া হতদরিদ্র চেহারার এক লোক আমার হাত ঘড়িটা ধরে টানছে। আমার হঠাৎ হাসি পেল। হায় মানুষ!! আমার পাঁজরের কাছ থেকে রক্ত চুইয়ে পড়ছে। আমি আর কতক্ষন বাঁচব? মানুষটা ঘড়িটা নিয়ে চলে যাবার পর আর কতক্ষন?
মানুষটা চলে গেল না। আমাকে অবাক করে দিয়ে ঘড়িটাও খুলে নিল না। সে অদ্ভুত কায়দা কসরত করে, আমার হাত ধরে টেনে আমাকে তার পিঠের উপর তুলে নিল। তারপর রাস্তায় দাঁড়ানো তার ভ্যান গাড়িটার উপর। তারপর আমার কিছু মনে নেই। হাসপাতালের ধবধবে সাদা বিছানায় আমার যখন জ্ঞান ফিরল। হতদরিদ্র চেহারার ক্লিষ্ট মানুষটা তখনও দাঁড়িয়ে। আমি চোখ মেলে তাকাতেই সে দাঁত বের করে হাসল। দাঁত না মাজা লালচে হলুদ দাঁত। বিশ্রী কালো মাড়ি। কিন্তু ওই বিশ্রী কালো মাড়ি আর লালচে হলুদ দাঁতের মানুষটার দিকে আমি অপলক চোখে তাকিয়ে রইলাম। তাকিয়েই রইলাম। আমি মানুষ চিনতে ভুল করেছি। আমি আসলে মানুষ চিনি না!

আমি আসলেই মানুষ চিনি না

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

িপএমকনক বলেছেন: আপনার প্রতি শুভ কামনা রইল ভাল থাকেন,,
আমার মনে হয় দৃর্ঘটনার সময় অনেক মানুষ এ ধরনের চুরি করা কাজে ব্যস্ত থাকে ,,,,,, আবার অনেকে নিজেকে বিলিয়ে দিযে মানুষ কে রক্ষা করে থাকে। কিন্তু দৃর্ঘটনার মত সময় যেখানে মানুষের ১০০% মানবতা দিতে হবে সেখানে ও মনুষত্ব হীন আচরন চলে,,

২| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:১৮

বিডি আইডল বলেছেন: এইগুলার সাথে আর্থ-সামাজিক অবস্হা ছাড়াও অনেক কিছুই জড়িত। এর বিপরীত ভুরি ভুরি চিত্রও কিন্তু এই বাংলাদেশেই পাবেন। রানা প্লাজার ঘটনা দেখুন। বাবুর মত এক নাম না জানা লোক কয়েকশ লোকের প্রাণ বাচিঁয়ে নিজের প্রাণই দিয়ে দিয়েছে।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৩১

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ভাল লিখেছেন +++

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:০২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: :( :( :(কষ্ট পেলাম পড়ে । ভাল লেখনী । :)

৫| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:১৬

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: মানুষের মত আর যা কিছু......................

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.