নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাঁকা না শুন্য?

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৮

আমাদের ড্রয়িংরুমে চেয়ারটা ছিল।
বহু পুরনো, জীর্ণ। দাদীর খুব পছন্দের চেয়ার। তবে তিনি এখন আর চেয়ারটাতে বসতে পারেন না। বাতের ব্যাথায় সারাদিন শুয়ে থাকেন বিছানায়। চেয়ারটার ডান হাতলটা ভেঙে গেছিল। সনাতন মিস্ত্রী পেরেক গেঁথে ঠিক করে দিয়েছে। কিন্তু আজকাল আর চেয়ারটাতে কেউ বসে না। মেঝদা নতুন চাকুরী পেয়েছে। বড় চাকুরী। অনেক টাকা মাইনে। তিনি সোফা কিনে এনেছেন। লাল রঙের বাহারী সোফা। বসলে কোমর অবধি ডুবে যায়। সেখানে দাদীর ওই পুরনো জীর্ণ চেয়ারখানা বড্ড বেমানান। কিন্তু চেয়ারখানা সরাবার কথা কেউ বলে না। দাদী এখনও বেঁচে! তবে চেয়ারটার অবহেলা-উপেক্ষা তাতে কিছু কম হয় না। মেঝ বৌদি প্রায়ই গজগজ করেন, 'এই ঘেঁটো জিনিষখানা ড্রয়িং রুমটাকে ডাস্টবিন করে ফেলল। কেউ আসলে লজ্জায় মাথা কাটা যায়'।
রিমি, আমারদের সবার ছোট, আদরে আহ্লাদে মানুষ, রিমিও প্রায়ই ঠোঁট উল্টে বলে,'ওয়াও, দিস পিস অফ অ্যান্টিক শুড বি ডোনেটেড টু দ্যা ন্যাশনাল মিউজিয়াম! ছ্যাঃ!!
দাদী মারা গেল আগস্টের শেষ শুক্রবার। কান্নাকাটি তেমন হল না। যা-ও কিছু হল, লোক দেখানো! দাদীর লাশ দাফন শেষে আমরা সবাই গ্রাম থেকে ফিরলাম দিন তিনেক পর। ঘরে ঢুকেই মেঝদা হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। আমি, মেঝ বৌদি, রিমি, মেঝদা'র ৯ বছরের ছেলে সজল, বাবা, আর মা। মা মানে সৎ মা। আমাদের মা মারা যাবার পরে বাবা যাকে বিয়ে করেছেন, তিনি। আমরা সবাই!! এই ড্রয়িংরুমটা যেন আমাদের সেই চির চেনা কোন ড্রয়িং রুম নয়। অন্য কোন ঘর। অন্য কোন বাসা। নিজেদের কেমন আগন্তুক লাগছিল। কিন্তু কেন? সবতো সেই একই আছে, সেই একই। দেয়াল জুড়ে ছবি, পেইন্টিং, বিশাল এলইডি টিভি। লাল রঙের সোফা, বইয়ের সেলফ। সবই তো আছে। কি নেই!! বাবা বিড়বিড় করে বলল, 'চেয়ারটা? মা'র চেয়ারটা?' রিমি ক্ষীণ গলায় বলল, 'দাদীর লাশ নিয়ে গাঁয়ে যাওয়ার দিন কাজের বুয়াকে বলেছিলাম ওঁটা ফেলে দিতে!'
কথাটা রিমি বলল, সবাই শুনল। কেউ কিছু বলল না। অপেক্ষার প্রহর তাহলে ফুঁড়ল! সেই প্রার্থিত প্রহর। কিন্তু রোজ ড্রয়িংরুমের আড্ডায়, ভোরবেলা বের হবার সময়, কাজ শেষে ফিরবার সময় সব ক'জোড়া চোখ যেন অজান্তেই আটকে যায়, ওই ফাঁকা জায়গাটায়। যেখানে চেয়ারখানা ছিল। অবহেলায়, উপেক্ষায়, জীর্ণ, পুরনো চেয়ারখানা। ঠিক সেখানে। এত এত বছর! কত কত স্মৃতি। চেয়ারখানা ঠিক ওখানে ছিল। ওখানেই। আজকাল বাবা ড্রয়িং রুমে যান না। মেঝদাও না। বৌদি, আমি, খুবই কম। সেদিন রিমি হঠাৎ বলল, 'বাবা, তোমরা ভীষণ আটপৌরে। একটা চেয়ারইতো! কি এমন হল! ওই জায়গাটা শুন্য বলেই সবার খারাপ লাগছে। অন্য একটা চেয়ার বসিয়ে দিলেই হয়'।
কেউ অনেকক্ষণ কোন কথা বলল না। কথা বলল বাবা। ধীর, স্থীর, গভীর গলায়। বলল, 'মা'রে জায়গাটা শুন্য না, জায়গাটা ফাঁকা। ফাঁকা আর শুন্য এক জিনিস নারে মা'।
রিমি অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। বাবা কি বলছে, সে যেন বুঝতে পারছে না। বাবা আবার বলল, 'যেখানে কখনও কিছু থাকে না, ছিল না, কিংবা নেই, সেটা শুন্য। সেখানে কিছু রাখলেই সেই শুন্যতা ঘুচে যায়। শুন্যস্থান পূরণ হয়। কিন্তু ফাঁকা হয়ে যাওয়া কিছু কখনও পূরণ হয় না। কারণ, জগতে কেউ কারো মত হয় নারে, কারো জায়গায় আর কাউকে বসিয়ে দিলেই সে তার মত হয়ে যায় না'।
রিমি কোন কথা বলল না। সে তাকিয়ে রইল চেয়ারটার সেই ফাঁকা জায়গার দিকে। তাকিয়েই রইল। তার হয়ত আমাদের মায়ের কথা মনে পড়ছে। খুব মনে পরছে। কারন তার চোখ জুড়ে জল। সেই জল ছলছল চোখে সে হয়ত বাবার পাশে দাঁড়ান নতুন মা'কে দেখছে।
সে এখন জানে, ফাঁকা জায়গা কখনও পূরণ হয় না।
----------------------------------------------------------
ফাঁকা না শুন্য? / সাদাত হোসাইন
০৭/১১/২০১৪

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৫

ইসটুপিড বলেছেন: +

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: কষ্ট পেলুম । চমৎকার লেখা । +++

৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৭

সকাল হাসান বলেছেন: যেখানে কখনও কিছু থাকে না, ছিল না, কিংবা নেই, সেটা শুন্য। সেখানে কিছু রাখলেই সেই শুন্যতা ঘুচে যায়। শুন্যস্থান পূরণ হয়। কিন্তু ফাঁকা হয়ে যাওয়া কিছু কখনও পূরণ হয় না। কারণ, জগতে কেউ কারো মত হয় নারে, কারো জায়গায় আর কাউকে বসিয়ে দিলেই সে তার মত হয়ে যায় না

চমৎকার কথা!

আর জায়গাটা ফাঁকা তো বটেই, তবে এটাকে শূন্য বলাই শ্রেয়! ফাঁকা জায়গা পূরন করা যায়, কিন্তু শূন্যতা কখনও মেটানো যায় না!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.