নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

তামিম ইকবাল ও বাংলাদেশের ক্রিকেট!

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:১৮

ওয়েল, লেটস মুভ!
১৯৯৭ এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটের খোঁজ খবর কতটা রেখেছি মনে নেই। তবে এটা মনে আছে, বাজারে নিখিল দর্জির দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। আমি তখন হাফ প্যান্ট পড়া ছোট্ট বালক। বড় বড় মানুষের পেছনে কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন লং অন, লং অফ, ওভার দ্যা টপ, আপিস, এরাউনড দ্যা উইকেট, ওভার দ্যা উইকেট... কিচ্ছু বুঝি না, কিন্তু কান খাড়া করে দাঁড়িয়ে রেডিওর ধারাভাষ্য শুনি। তখন এমসিসি (মেরিলিবন ক্রিকেট ক্লাব) ফী বছর এই দেশে ক্রিকেট খেলতে আসত। চারদিনের ম্যাচ। সেই ম্যাচে বাংলাদেশ জাতীয় দল খেলত। আতাহার, ফারুক, নান্নু, আকরাম, বুলবুল রা। বাংলাদেশ হরহামেশা ২৫ রানে ছয় উইকেট থাকত। আমি তাও দাঁড়িয়ে থাকতাম। এনামুল হোক মণি মাঝে মাঝেই ত্রানকর্তা হতেন। একবার ৮৬ রান করে ফেললেন। ধারাভাষ্যকার আব্দুল হামিদ খান কান্দেন, আমি গালের কাছে হাত নিয়ে দেখি আমার গালও ভেজা! ধুত্তর ক্রিকেট। ভরা বাজারে লোকজনের সামনে কাদতেছি! এইটা কেমুন লজ্জা শরমের কথা!!
আইসিসি ট্রফি গেল, বিশ্বকাপ গেল! বাংলাদেশ বিশ্বকাপে পাকিস্তানরে হারাল। বাংলাদেশের মানুষ তখন ফুটবল বাদ দিয়ে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যায়। বাজারে পেন্সিল ব্যাটারির রেডিওর দাম বেড়ে গেল। কারণ কাজ কাম নাই, সবাই কানের ধারে রেডিও নিয়ে ঘোরে। আর খানিক পরপর শরীর ঝাঁকি দেয়। সেই ঝাকির ভাষা জুড়ে ক্রিকেটের চার, ছয়, আউট প্রতিভাত হয়। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ খেলতে গেল কেনিয়ায়, কেনিয়ার তখন হেভি রাগ আমাদের উপর। দলে তখন মরিস অদুম্বে, স্টিভ টিকলো, আসিফ করিম, টমাস অবুয়া, অদোয়া, হিতেশ মোদী। পৃথিবীর যেকোন টিমরে কাঁপাই দেয়ার ক্ষমতা তারা রাখে। আইসিস ট্রফির হারের শোধ তুলল কেনিয়া। প্রতি ম্যাচে তারা করে ৫০ ওভারে ৩০০, ৩৫০, আর আমরা টেনে টুনে ২০০। সমস্যা কোথায়? সমস্যা ওপেনিঙে। ক্রিজে যাওয়ার সাথে সাথে দুই উইকেট শেষ। ওপেনারদের মাঠে নামতে দেখে ওয়ান ডাউন, টু ডাউন ব্যাটসম্যানদের কেউ একজন গেছে ওয়াশরুমে। কেবল প্যান্টের জিপার খুলছে, দরজায় ধরাম ধরাম শব্দ, বাইরা, বাইরা, উইকেট গেছে! এই হল অবস্থা! মোহাম্মদ রফিক তখন ৯ নাম্বারের হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। তারে প্রায়ই ওপেন করতে হয়। বিশ ত্রিশ ম্যাচ শেষে হঠাৎ করে একদিন এক ফিফটি মারে। জাতী তখন লুঙ্গী কোমরে বেঁধে নাচে! রয়েল বেঙ্গল টাইগার একটা, মোহাম্মদ রফিক। এরে আজীবন ওপেনিং ব্যাটসম্যান করা হইল। কিন্তু রফিকের আজীবন ওপেনিং ব্যাটসম্যান থাকা হয় না। খালেদ মাসুদ পাইলট থেকে শুরু করে সুজন, মণি, ফারুক, নান্নু পর্যন্ত ওপেনিং করে! ফলাফল ২ থেকে শুন্য তে নামে। শুন্য থেকে ১ এ যায় না। দামাল সামার লীগে তখন ইমরান হামিদ পার্থ নামে ভয়ংকর এক ওপেনার ছিলেন, আবাহনীতে খেলতেন। রানের বন্যায় লীগ ভেসে যেত, তার এক ভয়াবহ রোগ, তিনি ন্যাশনাল টিমে আসলেই ব্যাটিং করা ভুলে যান, তারে দেখলে মনে হয় ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান। উপায় কি? উপায় শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। আর? আর মেহরাব হোসেন অপি।
বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির ইতিহাসে একটা সন্ধিক্ষণ। এই প্রথম বাংলাদেশ দলের ওপেনিং ব্যাটসম্যানরা ক্রিজে গেলেও ওয়ান ডাউন, টু ডাউনরা মোটামুটি স্বস্তি নিয়ে হলেও ওয়াশরুমে যাওয়া শুরু করল। সম্ভবত ৯৮তে, জিম্বাবুয়ে আসছে বাংলাদেশে, অপি আর বিদ্যুৎ মিলে ১৭৫ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপ করল। আমার ধারণা এই ১৭৫ পর্যন্ত আমি একবারও শ্বাস নেই নাই। নিব কেমনে!! শ্বাসের কথা গেছি ভুলে!! অপি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সেঞ্চুরী করল, ১০১। বিদ্যুৎ সম্ভবত ৬৭। তুমুল সম্ভাবনাময় এই জুটি সম্ভাবনা শেষ করতে সময় নিল না। আমার মনে হয়, অপি আসলে একটা ফ্লুক ছিল, ক্লাস বলতে যা ছিল, সেটা হল বিদ্যুৎ। আমার সুদীর্ঘকাল ধরে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা ওপেনারের নাম শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ। সেই ধারণা ভাঙ্গাল তামিম। এই প্রসঙ্গে পরে আসি, তার আগের কথা সেরে নেই। বিদ্যুৎ বাংলাদেশ দলের সেই ওপেনার, যার একটা ইনিংস পুরো টিমের ওপর প্রভাব ফেলত। মনে আছে, এমসিসির সাথে এক চার দিনের ম্যাচে, বাংলাদেশ ফলোঅন করতে নামছে, সেই ফলোঅনের ফার্স্ট ইনিংসেও বিদ্যুত অপরাজিত সেঞ্চুরী, ফলোঅন করতে নেমে সেকেন্ড ইনিংসেও সেঞ্চুরি। একটি চারদিনের ম্যাচের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরী! সেই সময়কার বাংলাদেশ দলের ওপেনার!! বিদ্যুৎ টিকল না, কেন টিকল না, জানি না। কতটা নির্বাচকদের দায়ভার আর কতটা বিদ্যুতের সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ! বিদ্যুৎ ক্রিকেট থেকে চলে গেল, ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করল, কি মনে করে বছর পাঁচেক পরে আবার ব্যাক করল। ঘরোয়া ক্রিকেটে রানের বন্যা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্টে ব্যাক করে ৫৬ আর ৪৮। তারপর কি হল মনে নেই। একদিন শুনলাম, সে আর ক্রিকেট খেলবে না। বিদ্যুৎ অধ্যায় শেষ। বাংলাদেশের ওপেনার অধ্যায় শেষ। এরপর দেখলাম জাভেদ ওমর বেলিম গোল্লা। এই লোকরে পারলে সবাই গালাগালি করে। যা ইচ্ছা তাই বলে। সে একটা গালির ডিসকোর্স হয়ে গেছিল, আরে তুইত দেখি একটা জাভেদ ওমর, এই ধরনের বিশেষণ দেশের আনাচে কানাচের সকল শম্বুকগতির ব্যাটসম্যানেরাই শুনেছে বলে মনে হয়! তখন শ্রীলংকায় জয়াসুরিয়া আর কালুভিতরানার যুগ। ওপেনিঙে এরা নামলে বিপক্ষ দলের পেসাররা বল করা নিয়ে এরে ও ঠেলাঠেলি করে। কেউ ভয়ে বল করতে চায় না। প্রথম ১৫ ওভারের ৩০ গজ রেস্ত্রিকশনের পুরা ফায়দা এই দুই ব্যাটসম্যান উঠায়। বলে বলে ডাউন দ্যা উইকেট, ওভার দ্যা ফিল্ডার!! সেই সময়ে জাভেদ ওমর আমাদের!! আমরা তারে গালি দেই, স্যনডেল ছুড়ে মাড়ি। কিন্তু কেউ বোঝে না, যেই টিম ৫০ ওভার খেলতে পারে না, সেই টিমে কালুভিতরানা, জয়াসুরিয়া দরকার না, দরকার আসলে ১১ জন জাভেদ ওমর। জাভেদ ওমর ঠিকই ঠুকঠুক করে একপাশে থেকে গেলেন, কিন্তু অন্যপাশে? শুরু হল চমৎকার সব দৃশ্য, অ্যাজ এ, তো কাল সে, কাল সে তো, পরশু আরেকজন? মৃদুল নামে এক ব্যাটসম্যান আসল, সম্ভবত একদিন খেলছে, বাদ। মাহফুজুর রহমান মুন্না নামে একজন আসল, এক ম্যাচ শেষে বাদ। ওপেনিং পজিশন তখন কারবালার প্রান্তর! হান্নান সরকারের কথা মনে আছে? সে আসল, রাজিন সালেহ, ওপেনার, অলক কাপালি ওপেনার, মাঞ্জারুল ইসলাম রানা নামের এক বাহাতি স্পিনার, যিনি পরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান, তিনি এলেন, ওপেনার হিসেবে, সম্ভবত, দুয়েকটা ম্যাচে হাবিবুল বাশার সুমনও ওপেনিঙে এসেছেন, সুজন, পাইলট, রফিক, ওহ, নাইমুর রহমান দুর্জয়ও কিন্তু ওপেনার ছিলেন ... উহু!! স্কোর বোর্ডে সেই শুন্য রানে দুই উইকেট, এক রানে ৩ উইকেট, ৩ রানে ৫ উইকেট, পঁচিশ রানে ৬ উইকেট। রেগুলার দৃশ্য। বাংলাদেশ তারপরও ১২০ পঁচিশ করে, টেল এন্ডারদের কল্যানে। শান্ত, মণি এদের কারণে। ওপেনিঙের অবস্থা তখন এমন যে বোর্ড সভায় না কি একবার সিদ্ধান্তও হয়েছিল যে ১১ নাম্বার থেকে ক্রমানুসারে ব্যাটিঙে নামানোর!! এই ভয়াবহ অবস্থায় তুমুল সম্ভাবনা নিয়ে এলেন নাফিস ইকবাল, এবং যথারীতি আলোর ঝলকানি দেখালেন, এবং নিভে গেলেন। তখন (তার খালু বা অন্য কোন আত্মীয়) ফারুক আহমেদ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা ব্যাক্তি, কিন্তু নাফিস ইকবাল টিকলেন না। আসলেন শাহরিয়ার নাফিস। ঝলমলে আলোর পূর্বাভাষ, এবং... এবং আবার দেখি আশরাফুল, হ্যা, উনিও ওপেনিঙে!! মেহরাব জুনিয়রের দিন বেশি দিন হয় নাই, আশা করি তার নামও ভুলে গেছেন... ও, সেইদিনের সেই নাইম ইসলামও কিন্তু ওপেনিং করছে, ভুলে যাই, ওহো, জুনায়েদ সিদ্দিকী? সেও ওপেনার!! আসলে কার পজিশন কি দলে? ধুর, এই দলে পজিশন বলতে কিছু নাই... এরা সবে মিলে করি কাজ হাড়ি হাড়ি নাহি লাজ দলের সদস্য। এরা সকলেই ওপেনার...
আর? আর একটা ব্যাপারও ছিল, রীতিমত কান্নাকাটি, বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের কান্নাকাটি!! সেই কান্নাকাটি আফসোসের নাম, একজন বাহাতি ব্যাটসম্যান, একটা মাত্র বাহাতি ব্যাটসম্যান... কিন্তু... শুন্য এ বঙ্গ বালুচর... কি করা যায়?
কি করা যায়? একবার ইয়ন বিশপ ঠাট্টা করে বললেন, বাংলাদেশ টিম ওপেনিং পজিশন ছাড়াই খেললে কেমন হয়? এমনিতেই তো এই দলে ৯ জন ব্যাটসম্যান!! মানে, ওপেনিং দুইজন ছাড়া!! এরা থাকলেও যা, না থাকলেও তা। ঘটনা বেশি দিন আগের না!! আমাদের দর্শকদের তখন কিছু আসে যায় না। আমরা টিভির সামনে গিয়ে দাঁড়াই ৫ ওভার পর। বাংলাদেশ ৯ রান ৩ উইকেট। নিয়মিত দৃশ্য। আমরা অপেক্ষায় থাকি, পাইলট আর রফিক কখন নামবে? কখন সুজন? মাঝে মাঝে ৫ ওভার পর টিভির সামনে গিয়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায়, দুহাতে চোখ কচলে তাকিয়ে দেখি বাংলাদেশ ১৫ রান বিনা উইকেটে!! ও আল্লাহ!! একী কাণ্ড!! একী অবিশ্বাস!!
ফিল্ডিং রেস্ত্রিকশনের ১৫ ওভারে বাংলাদেশের রান থাকে ৩০, ৩৫ বা চল্লিশ। চল্লিশ হলে সেদিন ঈদ!! ঈদ উল আজহার ঈদ না, ঈদ উল ফিতরার ঈদ। জীবন বড়ই আনন্দময়। আমরা বলি, পাইছিরে, পাইছি, অবশেষে ওপেনিং ব্যাটসম্যান পাইছি!! পরে ১৪ ম্যাচে ওপেনিং পার্টনারশিপ ১০ রান একসাথে করতে পারে না। আমরা আবার সেই নির্লিপ্ত ভঙ্গীতে ফিরে যাই। স্বাভাবিক দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি দেখি। ৫ ওভার পর টিভি দেখি!! ১০ ওভার পর টিভি দেখি!!
সেই আমরা, আটপৌরে ক্রিকেট দর্শক, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সন্ধিক্ষণ দেখে আসা দর্শকরা হঠাৎ করে মাদাম তুসোর জাদুঘরের মোমের মূর্তির মতন হাত ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, স্থানুর মতন, নড়তে ভুলে যাই!! ছেলেটার নাম কি? বড় বড় চোখ করে চায়? ফার্স্ট বোলাররা নতুন বলে বাউন্স দিল, ছেলেটা ডাক করল না, চিত কাইত হয়ে ক্রিজে পরে গেল না, বাতাসে চাবুক চালানোর মতন করে পুল করল, বল চলে গেল... কে এই ছেলে!! ক্রিজের মাঝখানে এসে ফার্স্ট বোলারের চোখে চোখ রেখে আগুন দৃষ্টিতে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিল!! পরে বাউন্সারটাকেও আছড়ে ফেলল সীমানার বাইরে? প্রথম ১৫ ওভারে ডাউন দ্যা উইকেট, ফ্রন্টফুট, ব্যাকফুট, লফটেড শট!! বোলারের নাম কি? ধুত্তর বোলারের নাম, ইউ কান্ট প্লে অ্যা বোলার, ইউ ক্যান প্লে অনলি অ্যা বল... কে এই ছেলে? বাংলাদেশ দলে ওপেনিং করে!! কে?
তামিম ইকবাল!!
ছেলেটার নাম তামিম ইকবাল!! বাংলাদেশ ক্রিকেটের ওপেনিংএর ইতিহাসকে বা হাতের উইলোয় ঘা মেরে কাঁপিয়ে দেয়া এক ব্যাটসম্যান। নতুন করে গাঁথুনি দেয়া এক ব্যাটসম্যান। টানা চার বছর তিনি কাঁপিয়ে দিলেন বাংলাদেশের ওপেনিং ব্যাটিঙের সকল রেকর্ড। সব ভেঙে চুরে হুরমুর করে তার পায়ের কাছে লুটাল। ২০০৭ বিশ্বকাপে মাত্র ৫২ রানের এক ইনিগস খেলে পুরো ইন্ডিয়া টিমের মেরুদণ্ড ভেঙে দিলেন। জহির খান তেড়ে এলেন, তিনি বলটাকে তার দিকে ছুড়ে দিয়ে ইশারায় পপিং ক্রিজ দেখিয়ে দিয়ে যেন বললেন, যা, বল কর। জহির খান বল করলেন, বাউন্সার, তিনি লং অন দিয়ে পাঠালেন সবচেয়ে দূরের গ্যালারীর মাথায়, ছক্কায়, পরের বল, চার, পরের বল চার... পুরো ভারত, দেড়শ কোটি মানুষের দেশ, ৩০০ কোটি চোখ, চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি, হু ইজ দিস টাইগার??? ছেলেটার নাম তামিম ইকবাল!! ইন্ডিয়ার সাথে টেস্টে ১৫২, হু ওয়াজ দ্যা বোলারস? এক্সকিউজ মি, আই ডু নট প্লে বোলারস, আই প্লে বল অনলি... তামিম ইকবাল... লর্ডস? ডু ইউ নো? হোয়াট ইজ লর্ডস? তামিম ইকবাল জানেন লর্ডস কি? তিনি মাঠে গেলেন, গিয়ে বললেন, আমি লর্ডসের বোর্ডে আমার নাম দেখতে চাই... ইংল্যান্ডের বাউন্সি পিচ। শচিন শেওাগ, সৌরভ, হালের ধনি, কহলিরা গিয়ে সারমেয় হয়ে থাকেন, তামিম ৯৮ (সম্ভবত) বলে সেঞ্চুরি করলেন। পরের টেস্ট, আবারও সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডের মাটিতে... সেই বাংলাদেশ, সেই ওপেনিং পজিশন! সেই বাংলাদেশের ওপেনার ব্যাটসম্যান!! আপনারা চোখ কচলান না, আমি কচলাই। গাঁয়ে চিমটি কাটি! আমার অবিশ্বাস্য লাগে। মনে হয় স্বপ্নের চেয়েও বেশি কিছু! এ অসম্ভব!!
জিম্বাবুয়ে সেবার ৩৩৭ করল, আমরা টিভি টুভি অফ করে কাজ কামে মন দিয়েছি, তামিম ইকবাল প্যাড পরে মাঠে নামার আগে ফিসফিস করে বলল, 'হারার আগে হাড়ি নাইরে... এতো হতাশা কিসের!! ১৫০ রানের ইনিংস (সম্ভবত)!! বাংলাদেশ ৩৩৭ তারা করে জিতল!! এই সেই তামিম ইকবাল, তামিম ইকবাল খান!! বাংলাদেশ ক্রিকেটে ওপেনিং এর সংজ্ঞা বদলে দেয়া নাম!! আর আপনি বলছেন, সে টিমে ভাইস্তা কোটায় খেলে? হি ইজ নট অ্যা ক্লাস? দেন, হু ইজ ক্লাস? ইউ? ইউ দ্যা ক্লাস?
কি করেছে তামিম ইকবাল? শেষ বছর দুই রান পায় নি? আচ্ছা একবারও কি ভেবে দেখেছেন, কত রান পায় নি? আপনি পরিসংখ্যান দেখেছেন? না কি, আমরা কান নিয়েছে চিলে বলে চিলের পিছনে ছুটি, কিন্তু হাত দিয়ে দেখি না, কান আসলেই আছে না নাই... তামিম যদি খারাপ করে থাকে, তাহলে কার তুলনায় খারাপ করেছে? অ্যাজ অ্যান ওপেনার? বলেন কার তুলনায় খারাপ করেছে? কতটা খারাপ করেছে? গত চারবছরে বাংলাদেশের টেস্টে আর কে কয়টা সেঞ্চুরি করেছে? চার বছরে টেস্টের ব্যাটিং গড় দেখেন? তামিমকে তার টিম এবং টিমমেটদের স্ট্যান্ডার্ডে মাপতে হবে, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়ার টিম বা খেলোয়াড়দের স্ট্যান্ডার্ডে না। একজন খেলোয়াড়ের খারাপ সময় আসতে পারে না? সেই খেলোয়াড়টা কে, সেটা দেখা জরুরী, খুব জরুরী...
একজন তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ক্রিকেটে প্রতি বছর আসে না, তাকে পেতে ৪০ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে, আর এতো সহজেই তাকে ছুড়ে ফেলতে চান? পেয়েছেন আর কাউকে? আর একবার শুরু থেকে এই লেখাটা পড়েন প্লিজ, তারপর একটু চুপ করে চোখ বন্ধ করে ভাবুন, তারপর পাশের মানুষটাকে বলুন, সুসময়ে পিঠচাপড়ানির চেয়ে দুঃসময়ে একটু সমর্থন, সামান্য একটু সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিন। এই ছোট্ট এতটুকু ঋণ তামিম ইকবালরা অবশ্যই ফিরিয়ে দিবে। অবশ্যই ফিরিয়ে দিবে!! অতীত তাই বলে!
অতীত কারা ভুলে যায় জানেন?
যাদের অতীত নেই! কিন্তু একজন Tamim Iqbal এর রয়েছে, তার রয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে বদলে দেয়ার অতীত! সেই অতীত এতো সহজে ভুলে গেলে চলবে?
না, চলবে না... তাহলে বরং আমি আর আপনিই থাকব অকৃতজ্ঞের দলে!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৪২

আমিনুর রহমান বলেছেন:




তামিম নিঃসন্দেহে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান। তার কাছে চাওয়া বেশী বলেই যখন সে অফ ফর্মে থাকে বা বাজে খেলে তখনই সমালোচনার ঝড় উঠে।

২| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৫

সিষ্টেম ইন্জিনিয়ার বলেছেন: খুব সুন্দর তথ্যবহুল লেখা। সেই সময়ে বাংলাদেশের খেলার জন্য অপেক্ষা করতাম। অনেক অনেক দিন পর খেলা থাকতো। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটিং এ নামলে প্রথম ১০-১৫ ওভারেই ৫-৬ উইকেট হারিয়ে ধুকতে ধুকতে ৩৫-৪০ ওভার পর্যন্ত খেলে ১২০ এর কাছাকাছি করতো আর বিপক্ষ দল ২০-২৫ ওভারেই সেটা করে ফেলতো। এই জন্য আমি চাইতাম বাংলাদেশ আগে বোলিং করুক যাতে ৫০ ওভার বাংলাদেশের বোলিং দেখতে পারি ;) :D :P :)

৩| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৫

বোকামানুষ বলেছেন: দারুণ লিখেছেন

তামিম আমার প্রিয় ব্যাটসম্যানদের একজন

পোস্টে +++++++

৪| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০১

নাজমুল হাসান মজুমদার বলেছেন: আহারে , আবেগ মনে করাইয়া দিলেন । সেই আবেগ ।

৫| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৫

কলমের কালি শেষ বলেছেন: পোলা আমাদের বেশী আশাবাদী করে ফেলছে তাই একটু খারাপ খেললে গাইল দেই !! আমাগো আর কি দোষ !!... :#> :#> :!>

৬| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৬

শ্যাডো ডেভিল বলেছেন: নস্টালজিক কইরা ফেললেন ভাই :( আপনার লেখা পড়তে পড়তে টাইম মেশিনে চইড়া সেই সময়ে চলে গেছিলাম, আমার কৈশোরে।

৭| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৫৮

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
অসাধারণ এক পোস্ট।
ক্রিকেটের প্রতি টান, ভালোবাসার শুরুটা অনুভব করলাম।
আমাদের ক্রিকেটের বেড়ে উঠাটা যেন স্পষ্ট করে দিলেন, চোখে ভেসে আসলো সেসব দিন, সেসব মুখ। শুধু ধন্যবাদ জানাতেই লগইন করতে বাধ্য হলাম।

তামিম নিঃসন্দেহে আমাদের ওপেনিং এর সবচেয়ে বড় পাওয়া। এমনকি প্রতিপক্ষ বোলিং কে ভয় দেখানোর ক্ষমতা রাখা প্রথম ব্যাটসম্যান। তার এ যাবৎ অর্জন অসাধারণ। তারপরও তার অফ ফর্মে মানুষ গালাগাল, ক্ষোভ ছড়ায়, খারাপ লাগে এসব। তবে এর কারণ তামিম এর অতীত দূর্দান্ত পারফরম্যান্স, ভালোর পরে প্রত্যাশাটা আরও ভালোই থাকে।

তামিম বিচক্ষণতা, প্রজ্ঞায় আরো ক্ষুরধার হোক। আমাদের অনেক অনেকদিন আনন্দ দিক। তামিম সাকিব থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে ১০ হাজার রান না দেখতে পারাটা কষ্টের হবে।

৮| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৫

সকাল হাসান বলেছেন: ভাইয়া মাইন্ড করবেন না!
আপনার পোষ্ট দেখে বুঝলাম, আপনি খেলা কম দেখেন আর আবেগটা বেশি ফুটাতে চান!

জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে ৩৩৭ রানের টার্গেট দেয় নি, বাংলাদেশও ৩৩৭ চেজ করে জিতেনি!
জিম্বাবুয়ে ৩২০ রানের টার্গেট দিয়েছিল, বাংলাদেশ ঐটাই জিতেছিল!
এছাড়াও আরো কিছু কিছু স্ট্যাটে ভুল করেছেন!

হাবিবুল বাশার, অলক কাপালী এরা ওপেনিং-এ কখনো নামে নাই!

তামিম সম্পর্কে যা বলেছেন, তা ঠিকই আছে! তবে সেটা আবেগের দিক থেকে - ক্রিকেটের সেন্স থেকে এতটা ঠিক নেই!

লিখেছেন ভালই, তবে স্ট্যাট গুলো ভাল করে জেনে লিখলে ভাল হত!

৯| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:১০

কোলড বলেছেন: High on emotion, low of stat and logic. These are flat track bully and sadly a warrior is judged by the quality of the opponents.

We know Scipio because of Hannibal!

১০| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৪১

সবুজ স্বপ্ন বলেছেন: তামিম কি জিনিস সেটা আশাঁ করি সবাই বুঝতে পেরেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.