নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবর্জনা

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৯

ইসমাইল সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন।
তার হাতে বাজারের ব্যাগ। ব্যাগে লাউ আর চিংড়ি। তাকে বাসা থেকে পইপই করে বলা দেয়া হয়েছে, এইসব বাজার যেন না নেয়া হয়। হাতে ফর্দ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। ফর্দ অনুযায়ী বাজার নেয়ার কথা। ইসমাইল সাহেব নিয়েছেনও। বাড়তি নিয়েছেন লাউ আর ঘেচো চিংড়ি। কেনার সময়ই তার জিভটা কেমন টলমল করে উঠল। আহা, কত দিন প্রিয় খাবারগুলো খাওয়া হয় না। ছেলে, ছেলের বউ, নাতি, কারোরই মুখে রোচে না এসব। কিন্তু ইসমাইল সাহেবের খুব ইচ্ছ হয়! বোম্বাই মরিচে ডাল ভর্তা, লাউয়ের সাথে ঘেচো চিংড়ি, কুমড়ো ফুলের মচমচে বড়া! তিনি ভাবেন আর জিভের আগায় জল জমে যায়। সেদিন দু'খানা বড় কচু নিয়ে এসেছিলেন। পানি কচু। গ্রামের বাড়ির সামনের ডোবাটায় হত। কচুর মূলের অংশগুলো গোল চাকতি চাকতি করে কেটে তেলে ভেজে মরচের ঝোল দিলে, আহা! সাক্ষাৎ অমৃত!! অনেক সাহস করে তেমন দুখানা কচু নিয়ে এসেছিলেন। জেসমিন কিছু বলে নি। কাজের মেয়ে আকলিমাকে বলেছিলেন কেটে ফ্রিজে রেখে দিতে। তারপর হয়ত ভুলে গেছে! সেই কচু আর রান্না হয় নি। ইসমাইল সাহেব নিজ থেকে কিছু বলেনও না। বুড়ো জিভ কেবল মাঝে মাঝে জলজলে হয়ে পড়ে! নিজেকে সামলে নিয়ে ইসমাইল সাহেব বাসার দিকে পা বাড়ান! আজকের বাজার দেখেও হয়ত খুব রাগ করবে জেসমিন। এমনিতে পুত্রবধু হিসেবে জেসমিন খারাপ না। কিন্তু রাগটা একটু বেশি, এই যা! কথায় কথায় তেঁতে ওঠে। তা অবশ্য দোষের কিছু না। নিজের মেয়ে থাকলেও হয়ত রাগত। জেসমিন একটু কড়া ধাতের মেয়ে। তা ইসমাইল সাহেব কিছু মনে করেন না। তাছাড়া বউ নেই, আর কোন ছেলে মেয়ে নেই, একটা মাত্র ছেলে রাজীব, ছেলের বউ, আর নাতি ছাড়া কে-ই বা আছে। সুখে দুঃখে এক সাথেইতো থাকতে হবে!! এই বুড়ো বয়সে একা একা গাঁয়ে থাকাও সম্ভব না। শহরে আসাতে রাজীবদের যে খানিক সমস্যা হয় নি, তা না। কিন্তু আর কদিনইবা বাঁচবেন! ইসমাইল সাহেব বাজার নিয়ে ঘরে ঢোকেন। বাসার পরিস্থিতি কি কে জানে! রান্না ঘরে আকলিমা কিছু একটা করছে। ইসমাইল সাহেব বাজারের ব্যাগটা আকলিমার হাতে দিলেন। আকলিমা কথা বলল না।আকলিমা বাজারগুলো একে এক ফ্রিজে তুলে দিতে লাগল।তিনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগে দেখছেন। সুযোগ পেলেই লাউ চিংড়ির কথা বলবেন। ব্যাগটা তিনি আলাদা করে রেখেছেন। এই মুহূর্তে আকলিমা ফ্রিজ থেকে একটা পুঁটলি বের করল। তারপর ইসমাইল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল, 'খালুজান, এই কচু ঘচু আর আইনেন না বাসায়। ফ্রিজে জায়গা নাই। আইজ আপায় খুব রাগ হইছে! বলছে এইগুলা ফালাই দিতে। যান, এইগুলা নিচে ফালাই দিয়া আসেন'।
ইসমাইল সাহেব বললেন, 'না না, অসুবিধা নাই। এইগুলান খাওয়া আসলে স্বাস্থ্যের জন্যও খারাপ। পচা পানির জিনিস। কি না কি হয়। তারওপর গলা চুলকায়। দে, আমার কাছে দে, ফালাই দিয়া আসি'। ইসমাইল সাহেব টুক করে পোঁটলাটা লুকানো লাউ চিংড়ির ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেন। তারপর টুকটুক করে হেঁটে নেমে আসেন সিঁড়ি বেয়ে। ভারি ব্যাগ নিয়ে উঠতে যতটা কষ্ট হয়েছিল, নামতে তারচেয়ে অনেক বেশি আরাম। তিনি টুকটুক করে নামতে থাকেন। ফের যখন উঠবেন, তখন অবশ্য হাতে কোন ব্যাগও থাকবে না। উঠতে কষ্টও হবে কম। ভাবতে ভাবতে ইসমাইল সাহেব খানিক আনন্দ অনুভব করেন। আনন্দই জীবন। তিনি ডাস্টবিনের জঞ্জালের ভেতর ব্যাগটা ছুড়ে ফেলবেন, এই মুহূর্তে বাচ্চা দুটোকে দেখেন। নোংরা বস্তা নিয়ে কি সব খুঁজছে। তিনি ঈশারায় ডাকলেন। তারপর হাতের ব্যাগটা তুলে দিলেন। তুলে দেয়ার আগ মুহূর্তে আবার ব্যাগটা খুললেন। উঁকি দিয়ে দেখলেন চিংড়ি, লাউ, কচুর গোল গোল চাকতি। ইসমাইল সাহেবের জিভ আবার ভিজে উঠতে চাইছিল। অদৃশ্য লাউ চিংড়ির তরকারির সুবাসে মুখের ভেতরের ঘন থুঃথুঃগুলো জলের মতন লালা হয়ে যাচ্ছিল। ইসমাইল সাহেব ভিজে লালা মেখে ওঠা মুখ সামলাতে থুঃ করে একদলা থুঃথুঃ ফেললেন। অথচ, সামনের শিশু দুটি, হেঁটে যাওয়া পথচারী, আর তার মাথার উপরে ইলেকট্রিকের তারের উপর বসা সারি সারি কাঁকের ভাবল, ইসমাইল সাহেব বুঝি থুঃথুঃ ফেলেছেন ডাস্টবিনে জমে থাকা আবর্জনার গন্ধে!
------------------------------------------------
আবর্জনা/ সাদাত হোসাইন

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭

মু.ই.মা ইমন বলেছেন: হুঁ ... পাল্টে যাবেই চিন্তাধারা

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল।

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

শুভকামনা :)

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪৪

মি. ফেসবুকিস্ট বলেছেন: অসাধারন জীবনের গল্প!শুভকামনা :)

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৫

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভালো লাগলো গল্পে ।

৬| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৫

নাসির ভাই বলেছেন: ভালো লাগলো।

৭| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৯

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: ইসমাইল সাহেব শেষ পর্যন্ত আর স্মাইল দিয়ে গল্পটা শেষ করতে পারলেন না। গল্পের শেষে এসে পেলাম ভিন্ন একটা পারস্পেক্টিভ থেকে ইসমাইল সাহেবের অবস্থান আবার বাসাতেও তাঁর ঠিক একই অবস্থা - ভালো লাগলো ব্যাপারটা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.