নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আসলে জল মিশে যায় জলে...

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭

সবুজ পাতা, বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায় গাড় সবুজ হল।
নীলু ভাবল, পাতারা সবুজ না হয়ে নীল হলে বেশ হত! হালকা নীল। তার নিজের একা একটা বাড়ি থাকলে সে সেখানে বড় বড় পাতাওয়ালা বিশাল বট গাছ লাগিয়ে রাখত। ছেয়ে ফেলত আকাশ। মেঘ হোক, বাদল হোক, সে মাথার ওপর তাকালেই দেখবে নীল আকাশ। নীলু হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির প্রথম ফোঁটায় ভিজে যাওয়া পাতাটাকে ছুঁল। ফোঁটাটা গড়িয়ে পড়ছে পাতার শরীর বেয়ে। নীলু আঙুলের ডগায় জলটুকু ধরল। তারপর পাতার শরীর বেয়ে গড়িয়ে পরা জল ফোঁটার দিকে তাকিয়ে রইল নির্নিমেষ।
ততক্ষণে মেঘ ডাকল,
বাতাস ফুরলো,
ডাকাবুকো দস্যু হয়ে বৃষ্টি নামলো।
নীলুর আঙুল ডগায় জমে থাকা বৃষ্টির সেই প্রথম ফোঁটাটা মিশে গেল অজস্র বৃষ্টিপাতে...
নীলু দাঁড়িয়েই রইল। বৃষ্টির তুমুল ছাঁটে তার নীল শাড়ীর আঁচল হঠাৎ জড়িয়ে গেল বুকের ভেতর। নীলু চোখ বন্ধ করে বারান্দার রেলিঙে আড় হয়ে দাঁড়াল। একটা ভয়ংকর মেঘের দুপুর, হঠাৎ ঝুপ করে তার বন্ধ চোখের ভেতর ভেসে উঠল! সেই দুপুরটা! সেই ভয়ংকর বৃষ্টির দুপুর! সে ঠিক এই বারন্দায় দাঁড়িয়ে ছিল, ঠিক এখানে, মাত্র এক বছর। মাত্র এক বছর আগে!
ঠিক এমন ঝুম করেই বৃষ্টি নেমেছিল।
মেঘ ডেকেছিল, বাতাস ফুরিয়েছিলো।
ডাকাবুকো দস্যু হয়ে বৃষ্টি নেমেছিল এমন।
নাসিম ফোন দিয়ে বলেছিল, ' নীলু, তুমি চট করে বারান্দায় এসে দাঁড়াতে পারবে? আমি 'একচোখ' দেখেই চলে আসব'।
নীলু বলেছিল, একচোখ আবার কি?'
নাসিম বলেছিল, 'এক চুমুক যেমন, তেমন। একচুমুক দেখে আসবতো আর বলা যায় না। তাই একচোখ...'
নীলু হাসেছিল, 'পাগল'।
নাসিম বলেছিল, 'নীল শাড়ীতে কিন্তু নীলু। আসব?'
নীলু জানত, না বলে লাভ নেই। সে বলেছিলল, 'এসো... তবে বৃষ্টি ফুঁড়িয়ে যাবার আগেই...'
নাসিম এসেছিলো, এই বারন্দার সাথেই ফুটপাত। ফুটপাতের গা ঘেঁসেই রাস্তা। বড় রাস্তা। রাস্তার ওপাশে আবার ফুটপাত। তুমুল বর্ষণে ভেসে যাওয়া সেই পথ বেয়েই নাসিম ছুটেছিল। রাস্তা পেরুলেই নীলু! ওই যে বারন্দায়, নীলু দাঁড়িয়ে... নীল নীলু... নাসিম ছুটেছিলল, লাল রঙের দোতলা বাসটাও। ঠিক রাস্তার মধ্যিখানে... কালো রাস্তার বৃষ্টির জমে থাকা জলেরা মুহূর্তে লাল হয়ে গেল। টকটকে লাল! নাসিমের শরীরটাও! নীলু ভয়ে, তীব্র ভয়ে চোখ বুজল। সে ভেসে যাচ্ছিল প্রবল বৃষ্টিপাতে। কালো রাস্তার মাঝখানে নাসিমের শরীরটাও। নীলু চিৎকার করেছিল! তীব্র চিৎকার। অজস্র বৃষ্টিপাতের শব্দে সেই চিৎকার ডুবে থাকল। নীলু নীল হয়ে ভিজে গেল জলে। তার চোখের ভেতর, গালের ভেতর, বুকের ভেতর... থৈ থৈ জল, অথচ নীলুর শরীর ভিজে যাচ্ছিল বৃষ্টির জলে...
নীলু সেই ভয়ংকর মেঘের দুপুর থেকে ফিরে এলো। সে তাকাল।
আঙুলের ডগা ছুঁয়ে সেই প্রথম বৃষ্টি ফোঁটার পাতাটা আবার ছুঁয়ে দিল। টুপ করে চোখের কোল গড়িয়ে জলেরা পড়ল? কিন্তু কই? নীলু তাদের কোথাও খুঁজে পেল না। সেই পাতার প্রথম ফোঁটাটাকেও না। হয়তো কোথাও আছে, বুকের ভেতর কোথাও। নীলু কেবল খুঁজে পেল না। চোখের জলেরা মিশে গেল বৃষ্টির জলে।
আসলে জল মিশে যায় জলে...
---------------------------------------------
জল মিশে যায় জলে-৪/ সাদাত হোসাইন
২২/০৮/২০১৪

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০১

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: বর্ণনাতীত সৌন্দর্য্য লেখার প্রতিটি বাক্যে ----------

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

মাহবু১৫৪ বলেছেন: ++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.