নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলপুরুষ

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১৬

রমেন হারিয়ে যাওয়ার আগের দিন উদ্ভ্রান্তের মতন আসল। বসল, উঠে দাঁড়াল, বসল। আমি বললাম, কি রে, বাথরুম চেপেছে?'
ও চমকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, 'ঠিক ধরেছিস, সেই কখন থেকে ধরেছে। অস্বস্তি হচ্ছিল খুব। কিন্তু কারণটাই বুঝতে পারছিলাম না, এতক্ষণ'।
রমেন দৌড়ে বাথরুমে গেল। আমি হাসলাম, 'মাথা পুরাই গেছে। প্রেম ছেলেটাকে ডোবাল। মরার আগ পর্যন্ত বোধ হয় আর ভেসে ওঠার চান্স নেই। সাধে কি আর বলে, প্রেমের মরা জলে ডোবে না'।
অথচ রমেনের মরা জলে ডুবল। শুধু ডুবলই না। ভেসেও উঠল। রমেন সাঁতার জানে না। ওর পায়ে কি একটা হয়েছিল, সেই থেকে কেমন বাঁকা! জলে নামতে বারন! কিন্তু, সে রেনু কে বলল, 'আমার খুব ইচ্ছে আমরা নৌকোয় ঘুরব। তখন ঝুম বাদলা দিন হবে। খইয়ের মত বৃষ্টির ফোঁটা ফুটবে জলের ভেতর। তুমি নৌকার গলুইয়ে বসে পা ডুবিয়ে বসে থাকবে জলে। শাড়িটা খানিক আগলে রেখো, আমি বৃষ্টির ফোঁটায় তোমার ভেজা ধবধবে পা দেখব'।
রেনু বলল, 'ঠ্যাঙ্গানি খেয়েছিস কখনও?'
রমেন হেসে বলেছিল, 'কত! রোজ খেতাম। তুমিই না দিতে'।
রেনু বলল, 'যা ভাগ! এক্ষুনি যা'।
রমেন যেত। রেনু তার বছর চারেকের বড়। একটা সময় পাশের বাড়ির রেনুদি কে দিদি ই লাগত। রেনু যখন স্কুলে রফিকের সাথে চুটিয়ে প্রেম করছে, তখনও রমেন দিব্যি চিঠি এনে দিত। লুকিয়ে খবর পৌঁছে দিত। রেনুদি'র কাছে গেলেই কি অদ্ভুত সুবাসে বুকের ভেতরটা ভরে যেত! কাঁপতও। রমেন সবকিছু দেরী করে বোঝে! এটাও বুঝল, রেনুদি'র বিয়ের দিন। তার কেমন কান্না পেতে লাগল। ফাঁকা লাগতে লাগলো বুকের ভেতর। কি যে কষ্ট! সেদিন দুপুরে মেঘ গম্ভির হয়ে বৃষ্টিও নামল। রমেন সেই বৃষ্টিতে ভিজে জারুল গাছটার তলায় বসে রইল। তার এতো কান্নাপাচ্ছিল! সে কাঁদলও। রফিক ভাই না, রেনুদি'র বর অবশ্য অন্য। সে তখন নৌকা করে ঘাটে ভিড়েছে। রমেন ফিরেও তাকাল না। তাকালেই বা কি! তার চোখ তখন ঝাপসা! রেনুদি চলে গেল সন্ধ্যেবেলা। রমেন বসেই রইল! অমন খইয়ের মতন বৃষ্টির ফোঁটার ভেতর দিয়ে রেনুদি গেল! রেনুদি ফিরল মাস তিনেকের মাথায়। বরটা হুট করে মরে গেল, কার এক্সিডেন্ট!
রমেন মনে মনে কি যে লজ্জা পেল! সে কি মানুষ খারাপ? না হলে রেনুদির বর টা 'নেই' হয়ে যেতেই, রমেনের বুকের ভেতরটা কেমন ঝলমলে হয়ে উঠল! কি অদ্ভুত! সেই রেনুদি! বয়সের তফাৎ! ধর্মের তফাৎ! বিভ্রম ও বিশ্বাসের তফাৎ! কিন্তু রমেন ধীরে ধীরে আবার যেন সেই সুবাস পেত! বিষণ্ণ রেনুদি মাঝে মাঝে হাসতও। রমেন সেদিন যেই বলল, তুমি শাড়িটা খানিক আগলে রাখবে, আমি বৃষ্টিতে ভেজা ধবধবে পা দেখব তোমার?'
রেনু হেসে বলেছিল, ঠ্যাঙ্গানি খেয়েছিস কখনও?'
রমেন ঠ্যাঙ্গানি খেয়েছি। আজও খেল! কেমন বেয়াড়া সব ইচ্ছেরা হুটহাট জেগে ওঠে। পুরুষ হয়ে যাচ্ছিল রমেন! রেনুকি আড় চোখে তা খেয়ালও করেছিল। সেদিন সেই খই ফোঁটা বৃষ্টির ভেতর, রেনু ঠিক ডাকল, তারপর বলল, 'তুইত সাঁতার জানিস না। নৌকা বাইবে কে!'
রমেন আর দাঁড়ায় নি, বাতাসের বেগে ছুটেছিল। সব নাও কি বাইতে শিখতে হয়? ও এমনি এমনি শেখা থাকে! সে নৌকোয় উঠে তাকিয়ে ছিল রেনুর দিকে। রেনু তার ধবধবে সাদা পায়ের অনেকটা মেলে দিয়েছিল রমেনের সামনে। খই ফোঁটা বৃষ্টির জলে রমেন তাকিয়ে ছিল। তার বুকের ভেতর কিছু একটা হচ্ছিল। চোখের ভেতরটা ক্রমশই ঝাপসা। রমেন জলে ডুবে যেতে যেতে দেখল, 'রেনু তাকিয়ে আছে! অথৈ জলের মতন! জলের রহস্যের মতন, ঢেউ ও ঢলের মতন'।
রমেন ডুবে যেতে যেতে ভেবেছিল, 'জগতে জলেরা হরেক রকম হয়! অথচ, পুরুষ চেনে কেবল তেষ্টার জল'।
--------------------------------------------------------------
জলপুরুষ/ সাদাত হোসাইন
২৮/০১/২০১৫

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: অনেকদিন পর সাদাত হোসেন.. :)
জলজ শুভেচ্ছা।।।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:১২

সাদাত হোসাইন বলেছেন: :)

২| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩

লাকমিনা জেসমিন সোমা বলেছেন: বাহ! ভালোই তো...!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.