নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজপত্র অনুযায়ী বৈধ বেকার ...

নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম

কাগজপত্র অনুযায়ী বৈধ বেকার ....

নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষায় রইলাম ( ছোট গল্প )

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৩






বিকাল ৪টা । ফাল্গুনের বিকেল । ফাল্গুনের বিকেলের একটা বিশেষত্ব আছে । বিকেলের শুরু হতে হতেই পশ্চিম আকাশে রক্তিম আভা চলে আসে । দেখে মনে হয় কেউ হয়ত লাল আবির ছড়িয়ে দিয়েছে । গাছের আড়ালে মাঝে মাঝে সূর্যটা উকি দিচ্ছে । রেল লাইনের পাশের এই গাছের নিচে নাহিয়ান প্রায়ই আসে । আজকেই শেষ বেলার সূর্যটাকে কেন জানি একটু বেশিই ভাল লাগছে । নাহিয়ান সিগারেট টানছে । ডার্বি সিগারেট । তার ডার্বি সিগারেট খাবার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি আছে । একটা ব্যানসন এর দামে এক প্যাকেট ডার্বি হয়ে যায় । চাইলে আয়েশ করে অনেক ক্ষন খাওয়া যায় । আর একটা বড় কারনো নাহিয়ানের কাছে মনে হয়, দরকার তো নিকোটিনের । আর এর জন্য শরীরকে সর্বত্তোম নিকোটিনটাই সরবারহ করাই ভাল । অবশ্য নাহিয়ানের বন্ধুদের এতে দ্বিমত আছে । তারা আর সব খাবার ভাল খেতে চাইলেও ভালো নিকোটিন নিতে নারাজ । পৃথিবীতে এই মনে হয় একটা জিনিস যেটা মানুষ বেশি টাকা দিয়ে কম মাত্রার নিকোটিন চাই । রুপা সিগারেট খাওয়াটা পছন্দ করে না । নাহিয়ান রুপার কাছ থেকে ২ মাস সময় নিয়ে নিয়েছে । ২মাসের মধ্যই সিগারেট ছেড়ে দিবে বলে ।
ট্রেন লাইন ধরে একটা ট্রেন চলে গেল । মেইল ট্রেন । কম খরচে যাওয়া আসা করার জন্য বেশ সুবিধা । অবশ্য সেটা , নাহিয়ানের মত যাদের হাতে অগাধ সময় এবং মাসের বড় একটা সময় টাকা শুন্য মানিব্যাগ পকেটে থাকে । মেইল ট্রেনের আরো একটা বড় সুবিধা, পকেটে টাকা না থাকলে টিটিদের সাথে খুব বেশি কথা কাটাকাটি করতে হয় না । একটু বুঝায়ে বললে মনে হয় এরা দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই ।
রুপা অনেকক্ষণ ধরে পিছনে এসে দাড়িয়ে আছে । এই মেয়েটাকে নাহিয়ান কোন ভাবেই ছাড়তে পারে নি । অনেক চেষ্টা করেছে । বুঝিয়েছে যে তার সাথে বিয়ে করা সম্ভব নয় । রুপা বেশ বাস্তববাদী । তার কথা, বিয়ে যে ছেলেখেলা নয় সেটা আমি জানি । সৃষ্টিকর্তার সেই খেলাটার শেষটা আমি দেখতে চাই ।
তারা রেল লাইন ধরে পশ্চিমে এগুতে থাকে । রেল লাইন ধরে হাটার অন্য রকম একটা মজা আছে । পা মেপে মেপে হাটা যায় । চাইলে আনমনে অনেক দূর পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া যায় । সূর্য তাদের সাথে হাটতে হাটতে ক্লান্ত । সূর্য পাটে বসবে বসবে প্রতিদিনই এই সময় রুপা নাহিয়ানের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখে ।
শেষ এক সপ্তাহ যাবৎ, প্রতিদিনই রুপা রেল লাইনের সেই গাছের নিচে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে । কিন্তু নাহিয়ান আসে না । নাহিয়ান মোবাইলও ব্যবহার করে না । মোবাইল ব্যবহার না করার পেছনে তার যুক্তি, মোবাইল নাকি স্বাভাবিক জীবনকে ব্যাহত করে । রুপাদের সম্পর্কের ব্যাপারটা শুধুমাত্র রুমন জানতো । নাহিয়ানের বন্ধু । পরদিন ক্যাম্পাসে গিয়ে রুপা রুমনকে খুঁজে বের করে । রুপাকে দেখে রুমন তার মানিব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে রুপার হাতে দেয় । ক্লাস আছে বলে সে তাড়াতাড়ি চলে যায় ।
রপা রিক্সায় উঠে নাহিয়ানের দেওয়া চিঠিটা খুলে ।
“তোমার মনে আছে রুপা , আমরা দুজন রেল লাইন ধরে হাটছিলাম । হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল । সেদিন প্রথম তুমি আমার হাতটা শক্ত করে ধরেছিলে । আমার হাতটা কাঁপছিল । আমার সাহস হয়েছিল না তোমার হাতটা শক্ত করে ধরার । তোমাকে সারাজীবন এই ভাবে রাখিতে পারবো কি না এই ভয়ে বার বারই আমি পিছিয়ে এসেছি । জান রুপা আমি তোমাকে খুব বেশি ভালবাসতাম । শীতের রাতে স্টেশনে বসে থাকা কম্বল বিহীন একজন অসহায়ের একটু উত্তাপের যে আকুতি , তোমাকে পাবার জন্য আমার সেই আকুতি কাজ করত । খুব ইচ্ছে করত, খুব ভোরে , সূর্য উকি দেবার আগেই, তোমার হাত ধরে দূর্বা ঘাসের শিশির ঝরাবো । মনে হত তোমাকে নিয়ে হারিয়ে যায় , কোলাহল থেকে অনেক অনেক দূরে । যেখানে শুধু পাখির কিচির মিচির শোনা যায় । তোমাকে দেব বলে প্রতিদিনই রেল লাইনের পাশে থাকা দূর্বাঘাস দিয়ে নূপুর বানিয়েছি । তোমাকে আসতে দেখা সাহস হারিয়ে ফেলাছি । নূপুর পরিয়ে যদি ধরে রাখতে না পারি । ইচ্ছে ছিল চাঁদনী রাতে তোমার কাধে মাথা রেখে চাঁদটা দেখবো ।
রুপা তোমাকে আরো অনেক কিছু বলার ছিল । বসে থেকে আর লিখতে পারছি না । যখন তুমি এই চিঠিটা পড়ছো, আমার নিথর দেহ থেকে, শরীরের সেল, ব্যাকটেরিয়া গুলো মাংসো পচানোতে ব্যস্ত।
শেষ ২ মাস আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে । যেটা লাস্ট স্টেজ । ডাঃ বলেছিলেন ২ মাসের বেশি বাঁচবো না । তাই , শেষ কটা দিন তোমাকে কষ্ট দিব না বলে জানাইনি । অনেক অনেক ভাল থেকো । অপেক্ষায় রইলাম । ”

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:০৫

সুমন কর বলেছেন: শেষটা ভালো লাগল।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২৩

নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম বলেছেন: ধন্যবাদ ।

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৫০

জল্লু ঘোড়া বলেছেন: কেন জানি না লাভ স্টোরিগুলো আমি একেবারেই সহ্য করতে পারি না। কিছু দেবদাস ও রোমিওর স্ট্যাটাসের জ্বালায় ফেসবুক ছেড়েছি। আপনার গল্পটা যদিও ভিন্ন এবং ভালো তবু আমার কেমন জানি সহ্য হচ্ছে না।

কিছু মনে করবেন না ভাই। আমার মত পাগলের ভালো লাগা না লাগা নিয়ে আপনি ভাববেন না আশা করি। চালিয়ে যান। এধরনের লেখায় পাঠকের অভাব নেই।

১৩ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৪

নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.