নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাগজপত্র অনুযায়ী বৈধ বেকার ...

নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম

কাগজপত্র অনুযায়ী বৈধ বেকার ....

নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের জন্য আমি কিছুই করতে পারলাম না ।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২৮



রাত ৩টা জ্যৈষ্ঠর রাত । দিনের বেলায় প্রচন্ড ভাপসা গরম পড়লেও রাতের শেষভাগে এসে আবহাওয়া টা বেশ ঠাণ্ডা হয়ে এসেছে । পূর্ণিমার চাঁদ পূর্ব দিকে ঢলে পড়েছে । চাঁদের আলোর মত চারপাশটা সোনালি মনে হচ্ছে । সদর হসপিটালের উত্তরের বারান্দায় রোগীর লোকজনের বসার জন্য বেঞ্চ দেওয়া হয়েছে । বেঞ্চ বারান্দার উত্তর পূর্ব কোনে গ্রীলের পাশে পাতা । বেঞ্চের এক মাথায় আমি বসে আর আরেক মাথায় ৫০ উর্ধ্ব মানব মূর্তি । পেশায় একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা । ভাবলেশহীন । হাটু ভাজ করে দুই পা বেঞ্চের উপর উঠানো । শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য হাত দিয়ে দুই হাটু ধরে রেখেছেন । বারান্দার গ্রীল দিয়ে পলকহীন ভাবে পূর্নিমার চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছেন । পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় তাঁর মুখের অবয়বটা বোঝা যাচ্ছে । ক্লান্ত কিন্তু বিরক্ত নয় , শান্ত কিন্তু নির্জীব নয় । কাকতালীয় ভাবে এই মানব মূর্তির সাথে বছর দুয়েক আগে এখানেই আমার পরিচয় । যে সকল মানুষকে শুধুই শ্রদ্ধাই করতে ইচ্ছা করে , তিনি তাদের মধ্য একজন । দীর্ঘক্ষণ বসে আছি । একই যায়গাই । তিনি মাঝে মাঝে গ্রীল থেকে চোখ ফিরিয়ে বেঞ্চের দিকে তাকাচ্ছেন । নিঃশব্দ চারপাশ । মাঝে মাঝে রোগীর ট্রলির চাকার শব্দ কানে আসছে ।
--তোমার কি মনে আছে আম্মা কে নিয়ে এখানে কতবার আসলাম?
--জি না , সঠিক মনে নেই । তবে পাঁচ, ছয় বার হবে হয়ত ।
-- না , এবার দিয়ে সাত বার ।
-- জি ।
-- শেষ বার এসেছিলাম তিন মাস আগে । কখোনো মেডিসিনে, কখোনো সিসিউ তে । কখোনো মাঝ রাতে , কখনো শেষ রাতে , বা কখনো দিনের বেলায় ।
--আপনি যে ভাবে আপনার মায়ের সেবা করেন , আমি কাউকে দেখিনি এভাবে তাঁর মায়ের সেবা করতে ।
-- আমি তো কিছু করতে পারছি না মায়ের জন্য । যুদ্ধের আগে পরে যে ভাবে মা আমাদের বুকে পিঠে করে নিয়ে ঘুরেছেন, সেটা কল্পনাতীত । ছোটতে আমার খুব অসুখ হত । সামান্য জ্বর আসলেই মা সব কিছু বাদ দিয়ে আমার মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকতেন ।
-- শেষ তিন দিন আপনি পানি ছাড়া কিছুই খান নি ।
-- আমার মা তো পানিও খেতে পারছে না । আমি খাবার খাবো কি ভাবে?

বর্ষণ মুখর শ্রাবণের সকাল । কোন এক বিশেষ কারণে আকাশও আজ তাঁর সবগুলো দ্বার খুলে দিয়েছে । অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে । বেশ কয়েক বছরে এমন বৃষ্টি দেখা যায় নি । বাড়ির গেট পুরোটাই খুলে রাখা হয়েছে । এমন বৃষ্টির দিনে খুব বেশি জরুরি কিছু না হলে মানুষ বাড়ি থেকে বের হয় না । কিন্তু এমন মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে এই বাড়িতে অনেক মানুষের সমাগম । কেউ বের হচ্ছে । কেউ ঢুকছে । কেউ ছাতা মাথায় দিয়ে । কেউ ভিজতে ভিজতে । এত মানুষের সমাগমের সত্বেও বাড়ির মধ্য পিনপতন নীরবতা। যা একটু শোনা যাচ্ছে সেটা টিনের চালে পড়া বৃষ্টির শব্দ । বাইরে থেকে কেউ এসে দাড়াচ্ছে । একে একে সবার মুখের দিকে তাকিয়ে , কিছুক্ষণ পর চলে যাচ্ছে । কেউ তাকিয়ে আছে চাল থেকে ঝরে পড়া পানির দিকে , কেউ তাকিয়ে আছে গেটের দিকে । উঠানের এক পাশের থাকা তুলসী গাছটা আলতো বাতাসে এদিক ওদিক নড়ে পাতার পানি ঝরিয়ে নিচ্ছে । গেট দিয়ে ঢুকতেই স্যার দৌড়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন । আমার কাধে মাথা দিয়ে আমাকে শক্ত করে ধরে রাখলেন । জীবনে প্রথম বারের মত বুকের ডান পাশে হৃদস্পন্দন অনুভব করছি । হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক। শরীরটা কাঁপছে । আমি স্যারকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম । স্যারের শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি । উনার মুখে কোন শব্দ নেই । মনে হচ্ছে , পাহাড় সমান কান্না জমে আছে । হৃদস্পন্দন আর শরীর কাপুনি দিয়ে জানান দিচ্ছে । আস্তে করে আমার কানের কাছে বললেন, আমি মায়ের জন্য কিছুই করতে পারলাম না । শো শো শব্দে বৃষ্টি বাড়ছে। হয়ত এক রত্নগর্ভা মায়ের সন্তানের চোখের জল আমার কাঁধ বেয়ে পড়ছে, হয়ত না ।

নাজমুল ইসলাম সাদ্দাম
২১ অগ্রহায়ণ, ১৪২৫ ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:০৩

ওমেরা বলেছেন: লেখাটা ভাল লাগছিল কিন্ত বুঝতে একটু সমস্যা লাগল।

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: মা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.