নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাদিয়া আক্তার

সাদিয়া আক্তার

সাদিয়া আক্তার › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন নারীর ধর্ষণ,নির্যাতন আর উৎপীড়নের পেছনে অন্য নারীরাও কি দায়ী নয়?

২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৩১

নারীর অপর নাম মমতাময়ী-মা, তাই না? মা সব দ্বায় আজ তোমাদেরই দিব। আমাদেরকে তুমি যে গর্ভ থেকে জন্ম দিয়েছো ওই ধর্ষকদেরও তো সেই একি গর্ভ থেকে জন্ম দিয়েছো। কিন্তু কেন আমাদের আর তোমার লক্ষ্যি ছেলেদের ভিন্ন শিক্ষা দিলে?
আমি নারী, আমি সহনশীলতার প্রতিক। কেন পৃথিবীতে আসার সাথে সাথেই বললে, "মা, তোমাকে সব মেনে নেওয়া শিক্ষে নিতে হবে, মা তোমাকে নমনীয় হতে হবে।" কেন সরাসরি বললে না, "মেয়ে তোমার সৌন্দর্য তোমার শরীরের সবস্থানে আছে তাই নিজেকে তোমার মানুষ ভাবলে চলবে না, তুমি বাচবে তবে তা ছেলেদের আশ্রয়ে, করুণায়।"
ছেলে তুমিতো মায়ের বড়ই আদরের আর গৌরবের। মুখ দেখেই বললে, "বাবা তুই সাহসী হ, নির্ভীক হ, বড় হ" কেন সরাসরি বললে না " ছেলে তুই যাই করিস তাতে কোন দোষ-পাপ নেই। তুইই জগৎ এর রাজা। তোর মার কাছে তোর সকল পাপ, পূর্ণে পরিনত করার অজুহাত আছে।"
আজ যখন এক বোন ধর্ষণ হয় তখন তারা সব ভাইদের বোন হয়ে যায় আর মাফ চেয়ে মহৎ সাজার সুযোগ হয়ে যায়।
কিন্তু মেয়েরা তখন কি করে? ছেলেদের পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে, ছেলে জাতির কাছে ন্যায় বিচার এর আহবান জানায়, আর শিকার হওয়া মেয়েটির কষ্ট উপলব্ধি করে শিউরে উঠে।
তখন কোথায় ছিলো এসব ভাইয়েরা যখন মেয়েদের দেখলেই খারাপ মন্তব্য করতে মন চেত? আর সকল মেয়েকেই একি দাঁড়িপাল্লায় মাপতে আর মাংস-পিন্ড চিন্তা করতে দ্বিধা হত না ? তোমার বোনকে,মাকে তখন মনে পড়েনি?
শুধু কি ধর্ষণ করেই নারীদের সম্মান হানি করা হয়েছে? যৌন-হয়রানী, চোখের লালসা দিয়ে ভক্ষণ, মানসিক নির্যাতন সবই অবলিলায় হচ্ছে। এমনকি ধর্ষণের পরে তার চরিত্র, তার পোশাক নিয়ে প্রশ্ন করে তাকে বার বার ধর্ষণ করা হয়। এখন তো আবার ডিজিটাল যুগ, তাই তার মৃত্যুর পরেও তার অর্ধ-নগ্ন রক্তাক্ত দেহের ছবি পোস্ট করতেও কেউ দ্বিধা করে না। তাও আবার হিজাবী এক মেয়ের। নারীকে ছোট করার চাহিদা শুধু পুরুষদের মাঝেই সীমাবদদ্ধ নয়। একজন নারীকে অন্য নারীরাও লাঞ্ছিত করে।
আমার প্রশ্ন সে সব ছেলেদের কাছে না, যারা নারীদের পোশাককে দায়ী করে, কারণ তুমি হীন। তোমার সাথে তর্ক করে লাভ নেই, তোমার শিক্ষা দরকার, শাস্তি দরকার। তোমরা এই অজুহাতেই সুযোগ খুজছো মাত্র, ঝাপিয়ে পরার।কিন্তু আমার প্রশ্ন সে সকল মা আর বোনদের কাছে যারা এমন মন মানসিকতাকে বাড়াতে সাহায্য করেছে।
নিজের ছেলে যখন প্রেম করল, দোষ হলো কার? যে মেয়েটির সাথে প্রেম হয়েছে সে মেয়েটির। দোষ হলো মেয়েটির পরিবারের শিক্ষার। মেয়েটি হয়ে গেল চালাক, ফাঁসিয়ে ফেলেছে আপনার অবুঝ ছেলেকে।
ভাই এর নামে যখন কেউ নালিশ করলো তার চরিত্র নিয়ে তখন দোষ হলো কার? আমার ভাইকে আমি চিনি, সে কখনই এমন করতে পারে না। আমার ভাইকে ছোট করার জন্যে এমন ষড়যন্ত্র। মেয়েটির পোষাক অথবা চরিত্রই তখন তোমার দেখার বস্তু কারণ সত্যটা তুমি মানতে পারবে না, তাই অজুহাত সরূপ মেয়েটাকে দ্বায় তো দিতেই হবে।
স্বামী যখন পরকীয়া করে তখন দোষ কার হলো?
মেয়ের চরিত্র ভালো না, বিবাহিত ছেলের জন্যে নিজেকে লেলিয়ে দিয়েছে, রূচিহীন হয়ে গেল মেয়েটি। সেই বিশাস-ঘাতক স্বামীকেই আবার ফিরে পেতে মেয়েটিকে ছোট করতে এমনকি ফকির-ওঝা করে মেয়েটির ক্ষতি করার চেষ্টাও করতে লাগো।
বাপের চোখ যদি খারাপ হয় তাহলে কার দোষ হলো?
এটাতো অসম্ভব!! বাবাতো ছায়া বৃক্ষ মততার। সে বৃক্ষ কি ভক্ষক হয়। তাই খারাপ মেয়েটির হীন দৃষ্টিরই হবে।
তুমি মেয়ে, তোমার রূপই তোমার যোগ্যতার মাপকাঠি। আবার সেই রূপই তোমার কাল হবে।মেয়ে কালো, মোটা হলেও সমস্যা, মেয়ে সুন্দর চেহারার আর কাঠামোর হলেও সমস্যা।
কেন মায়েরা আমার পারলে না আগলাতে আরেক ঘরের কালো মেয়েকে? কেন বোনেরা আমার পারলে না নিজের রূপকে যোগ্যতার নামে অপব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে? কেন শিক্ষাতে পারলে না নিজের বাপ-ভাই-ছেলে-স্বামীকে রূপকে ভোগের সামগ্রী ভাবা থেকে বিরত রাখতে?
প্রতিটা মায়ের কাছেই তার সন্তান প্রিয়। প্রতিটা মা-ই তার সন্তানকে অগাদ ভালোবাসে কিন্তু তার প্রতি অন্ধ-ভালোবাসা তাকে মানুষ্যত্বহীন করে তুলছে না তো? আপনি তার ছোট ছোট খারাপ কাজকে ভুল বলে তাকে আড়াল করে,তাকে ভুল শিক্ষা দিচ্ছেন না তো?। সে হয়ত ভাবতে শুরু করেছে যে, আমি যাই করি না কেন তার কোন শাস্তি আমি কখনই পাবো না। অনেক মাকে বলতে শুনেছি "আমার রক্ত খারাপ হোক আর ভালো, আমি তো মা। তাই সন্তানকে ফালাতে পারব না।" কিন্তু সে জন্মদাত্রী মার জন্মের সময়ের সেই নাড়ী ছেড়ার ঋণ কি সে পুরুষত্বের আড়ালে ভুলে গেল? মেয়েদের অসম্মান করে এসে, সে যদি আশ্রয় মা-জাতির কাছেই পায় তাহলে এর বিচার আশা করার অধিকার কি আর নারীদের থাকে? মাতৃত্বকে অপমানিত করা থেকে রক্ষা করো, মা তুমি আমাদেরকে।
রাস্তায় একটি মেয়ে একা দাঁড়িয়ে থাকলে দশটি চোখ এখনও ভুক্ষার মত তাকিয়ে থাকে, এ চোখগুলো কোথেকে এসেছে? আপনার পরিবারের কারো নয় তো? এরাও তো কারো বাপ, কারো ভাই তাই না? কবে আপনি নিজের ঘরের পুরুষদের দোষ দেখতে শিখবেন? সবার বাপ-ভাই নিষ্পাপ হলে এরা কারা যারা সুযোগের প্রতিক্ষায় থাকে?
কয়জন নারী রাস্তায় অন্য নারীকে অপমানিত হতে দেখলে এগিয়ে আসেন? কিছু হীন-মানসিকতার পুরুষদের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কি অন্য পুরুষদেরই শুধু? একজন নারী হিসেবে অন্য নারীর পাশে দাঁড়ানোর দায়িত্ব কি আপনারও নয়?
এ কেমন মা হলে তুমি, অন্য মায়ের মেয়ের কষ্ট-আর্তনাদে তোমার চোখ ভিজে না? এ কেমন বোন হলে তুমি, আর এক বোনের ব্যথা তোমায় জাগ্রত করে না? এ কেমন স্ত্রী হলে তুমি, আর এক স্ত্রীর অসহায়ত্ব তোমার অনুভব হয় না? এ কেমন মেয়ে হলে তুমি আর এক মায়ের কান্না তোমার কানে যায় না?
পুরুষদের সহযোগীতা ছাড়া এ পরিবর্তন করা সম্ভব নয় তা মানি কারণ একটি জাতি নারী আর পুরুষের সম্মনয়ে গড়ে উঠে। তাই শুধু পুরুষদের মন-মানসিকতা বদলালেই চলবে না। কেন নারীরা অন্য সব জায়গার মত পতিবাদেও পিছিয়ে আছে? নারীদেরও বদলাতে হবে, প্রতিবাদী হতে হবে এবার। সে অপরাধী নিজের বাপ-ভাই-স্বামী-সন্তান যেই হোক না কেন, শাস্তি তাকে দেওয়াতেই হবে, তার পথ রুখে দাঁড়াতেই হবে।
আজ প্রশ্ন শুধু তনুর ধর্ষকদের শাস্তির নয়, আজ প্রশ্ন সে সকল নারী আর শিশুদের ও যারা বিচার পায়নি, যাদের উপরে নির্যাতনের খবরও হয়ত আমাদের কানে পৌছাতে দেওয়া হয়নি, আজ প্রশ্ন কার মা-বোন এর পরে শিকার হতে যাচ্ছে? দৃষ্টান্ত-মূলক শাস্তি যদি পহেলা-বৈশাখ এর পশুগুলোর হত তাহলে মানুষ একবার হলেও এমন কাজ করার আগে চিন্তা করত। জাগো বাঙ্গালী জাগো। এবার রুখে দাঁড়াও। জাগো নারী-সমাজ জাগো এবার নিজের সম্মান বাঁচাতে দাঁড়াও। রাস্তায় নামতে হবে, আমাকে, তোমাকে, সবাইকে। প্রতিবাদের ঝড় তুলতে হবে। যেকোন মূল্যেই ক্ষমা দেওয়া যাবে না এবার।বেশিদিন বাকি নেই যখন এই মানুষ রুপী পশুরা তোমার ঘরে ঢূকে তোমার মা-বোনকে নির্যাতন করতেও ভয় পাবে না।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৫

মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) বলেছেন: এই লেখাটির প্রতি মানুষের আগ্রহ এতো কম!

২৬ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:১৩

সাদিয়া আক্তার বলেছেন: ভাই, এটাই হ্য়। সত্যি কথা কেউ শুনতেও চায় না। মানুষ নিজেদের পুরানো খোলস থেকে বের হতে চায় না।

২| ২৬ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

রাকিব হোসেন গালিব্ বলেছেন: পরিবর্তন আসবে। আমি তুমি আমরা সবাই মিলে পারবো পরিবর্তন আনতে।সঙ্কীর্ণ মানসিকতার খোলসটা অনেক শক্ত তবে ওটাও ভাঙ্গবে একদিন ঠিক ই ভাঙবে

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭

ক্ষুদ্র খাদেম বলেছেন: ভালো কথা, ভালো কাজ মানুশের চোখে পড়ে না, আফসোস :(

৪| ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: সমস্যাটা আসলেও বহুমাত্রিক, যেটি আপনার লেখায় এবং ক্ষোভে কিছুটা ফুটে উঠেছে। তবে, অবশ্যই সবটা নয়। এমন মন্তব্যের জন্য আশাকরি মনঃক্ষুন্ন হবেন না। বিষয়টার পরিধীটাতো ব্যাপক, একটি ছোট লেখায় তা ফুটিয়ে তোলা সম্ভব নয়। সবাইকেই মানুষ হতে হবে, বিবেকসম্পন্ন মানুষ। এর কোনো বিকল্প নেই। তারপরেও আমার মনে হয় সবচেয়ে বড় বিষয়টা হলো রাজনীতি। যদ্দিন রাজনীতি দূর্বৃত্তমুক্ত না হবে, ততদিন কেউ গুম হবে, কেউ খুন হবে, কেউ ধর্ষিত হবে, কেউ দুটোই হবে। কোনো বিচার হবে না।

বিশেষ সালাম রইল নিজেকে প্রকাশের জন্য।

৫| ৩১ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২২

নকীব কম্পিউটার বলেছেন: সুশিক্ষার অভাবেই মানুষ দিন দিন পশুতে পরিণত হতে চলেছে। স্বর্ণ চেনার জন্য যেমন কষ্টিপাথর লাগে, তেমনি সুশিক্ষাকে যাচাই বা চিনতে হলে ‘ঐশী’ শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এর কোন বিকল্প পৃথিবীতে নেই। চিরকাল যার বিধান কার্যকর থাকবে এটি এমন এক সংবিধান। যাকে বিবেকবান মানুষেরা ঠিকই চিনতে পারে এবং মানতে চেষ্ঠা করে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.