নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন চাকুরীজীবির ডায়েরীতে লিখা হাজারও বায়না, সীমাবদ্ধতায় তা আর কখনই পূরন করা হয়নি । আমি সে ডায়েরীর খোঁজে ।

সাগর সাখাওয়াত

পাগল, শিউলী তলয়া কুঁড়িয়ে পাওয়া পুতুলের জন্য গারদের বাসিন্দা ।

সাগর সাখাওয়াত › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুই এমিলি জোলা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:১৪



পাথুরে শহরে নাকি প্রান থাকে না, মানুষ নাকি পাথর সাদৃশ্য হয়ে যায় । আমার তো মনে হয় নি কখনও । প্রত্যেক শিল্পীর দুটি জন্মভূমি একটি সে যেখানে জন্মে অন্যটি ফ্রান্স । একটি শহর বহু নামে ছন্দিত । কখনও রোমাঞ্চকর শহর, কখনও ভালোবাসার শহর । কখনও শব্দের জনকের শহর । শব্দ জনক বলতে কবির কথা বলেছি । এ শহরে ছবি এঁকেছেন ফ্লোরেন্স থেকে আসা ভিঞ্চি, হল্যান্ড থেকে আসা ভ্যান গগ, মার্কিন গায়ক জীম মরিসন তার শেষ বেলা কাটিয়েছেন, স্পেনিশ চিত্রশিল্পী পাভেলো পিকাসো । এছাড়া জননন্দিত ভিক্টোর হুগো,আর্তুর র্যাবো, ম্যানো, শার্লে বোদলেয়ার,আলবার্ট কামু, ম্যানো, এমিলি জোলা, জঁ জ্যনে,এ্যমে সেজার,ওজেন, নেরুদা,ম্যাক্সিম গোর্কিঅস্কার ওয়াইল্ড কবিতা লিখেছেন এ শহরে । বাংলা সাহিত্যের পদ্যের জনক এ সভ্যতার প্রেমে পরে হয়েছিলেন ধর্মান্তর, প্যারিসের অদূরের শহর ভার্সাইতে বসে লিখেছিলেন চর্তুদশ জাতীয় কবিতা বা সনেট । প্যারিসের পথে প্রান্তরের দৃশ্যপট, খাবার,সাহিত্য সব মিলিয়ে ভ্রমন অভিজ্ঞতায় লিখেছিলেন জনপ্রিয় উপন্যাস ছবির দেশে কবিতার দেশে । বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় উপন্যাস লালসালু'র লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ শায়ীত আছেন এশহরে ।



প্যারিসের এক জাঁকজমকপূর্ণ স্থান বাস্তিল । একসাথে এক আড্ডায় প্রজন্মের সেতুঁবন্ধন মুখোর হয়ে উঠছিলো অপেরা হাউজের পাশে । আট দশজন ছিলাম আমরা ইউরোপিয়ান,ল্যাটিন,আরব মিলে । হাতে গীটার, বই, পানীয় আর গলা ফাটিয়ে শোরগোল চেঁচামেচিতে ব্যস্ত । এর মাঝে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত এক ছেলে আমাদের সাথে যোগ দেয় । আড্ডার মাঝে কেউ বলছেন ভাই একটা গান বাঁধেন, অন্যকেউ কাবাবের প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বলতে লাগলেন ভাইয়া খাও । কথার চলে গাঁজা পাতার গন্ধে পরিবেশ ধোঁয়াটে হয়ে গেল । মিনিট পাঁচেক পরে পুলিশ এসে হাজির । এসেই আইডেন্টি আর চেক করা শুরু করা হল । সবার কাছে কিছুই পেল না শুধু কালো ছেলেটার পকেটে কিছু পাতা পাওয়া গিয়েছে । পুলিশ তাকে জেরার করছে আমরা তন্মধ্যে দাড়ানো । তো হাতের বাম দিকে তাকাচ্ছিলাম রাস্তার নাম চোখে পড়ল স্কয়ার গোর্কি । তো এরমাঝে মুলো চুরিতে ফাঁসী কখনই হয় না । তিনজন পুলিশের একজনকে লক্ষ্য করে জিজ্ঞেস করলাম একটি কথা বলতে পারি জনাব ? বললো বলতে, জিজ্ঞেস করলাম আমরা এখন যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছি এ জায়গাটির নাম গোর্কি । ম্যাক্সিম গোর্কি কে ছিলেন ? মামী পুলিশটি বললো, তিনি একজন কবি ছিলেন । যে রাস্তা কবির নামে সেখানে ছেলেপুলে প্রেমিক আর উদাস হবে না কেন ? হেসে দিয়ে বললেন লজিক পূর্ণ । আমাকে জিজ্ঞেস করা হল, কি করি ? ঝোলা থেকে বই বের করে বললাম বই পড়তে ও লিখতে পছন্দ করি । শব্দ প্রেমিক । আর কিছু বলল না ছেড়ে দিয়ে যাবার বেলায় বলল এনজয় করার জন্য । তার কাজ শুভ হোক সাথে বললাম সময় পেলে মা বইটি পড়বেন গোর্কির ।

ফ্রান্স এমন এক জায়গা যার সবকিছুই আপনাকে তাক লাগাবে । আমার কাছে অবাক লেগেছে এ দেশের রাস্তাগুলো, আপনি এ দেশে হাঁটলে কিংবা মেট্রো তে নতুবা উপশহরের ট্রেনে উঠলে কিংবা ট্রামে চড়ে বসলেন । এভিনিউউ বোদলেয়ার, রুই ম্যানো, এভিনিউ গাব্রিয়েল প্যারী, রুই ভিক্টোর হুগো, গার এমিলি জোলা, রুই ভিঞ্চি, এভিনিউ গ্যাগ । এদেশের রাস্তাগুলোর বেশীরভাগই কবিদের নামে । যা অন্যখন্ডের দেশগুলোতে দেখি নি । ফ্রান্সের বুঁকে সৃষ্টিশীল মানুষগুলোর অরন্য । এদেশের মানুষ ও তাদের কৃষ্টি কালচার কে ধরে রেখেছে যুগ যুগ শত বছর ধরে । আমার উপশহরের বাসার সবগুলোই কবিদের নামে । গতকাল মেট্রো লাইন ১০ ধরে যাচ্ছিলাম প্রায় চোখে পড়ে জনপ্রিয় সাহিত্যিক, উপন্যাসিক, সাংবাদিক এমিলি জোলা । এমিলি জোলা পুরো নাম এমিলি ওদার্দ শার্লে এন্তোয়ান জোলা । ২ রা এপ্রিল, ১৮৪০ সালে প্যারিসে জন্মগ্রহন করেন । তার বাবা ফ্রান্সিকো জোলা ছিলেন ইতালীয়ান ইঞ্জিনিয়ার যার জন্ম ভেনিসে ১৭৯৫ সালে ।




তার মা এমিলি অওভার্ট একজন ফরাসি ছিলেন । তার বয়স যখন কিন তখন তার পরিবারের সাথে প্যারিস ছেড়ে AIX-EN-PROVANCE এ চলে যান । চার বছর পরতার বাবা মৃত্যু বরণ করলে জোলা তার মায়ের সাথে বাবার অবসর ভাতায় বেড়ে উঠতে শুরু করেন । চিত্রশিল্পী পোল সেজানে তার বাল্য বয়সের বন্ধু যারা একসাথে বেড়ে উঠে । শুরু থেকেই জোলা রোমান্টিক ধাঁচের লিখা লিখতেন । কাজ করতেন একটি শিপিং ফার্মে । পরে HACHETTE) নাম একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন । একজন রাজনৈতিক সংবাদিক কর্মী হিসেবে জোলা কখনই নেপোলিয়ান থোয়া কে পছন্দ করতেন না । বিষয়টি তিনি চেপেও যাননি বরং সমলোচনা করেছেন নেপোলীয়ানের যে কি না রিপাবলিক ফ্রাঞ্চের রাষ্ট্রপতি ছিলেন । তার বিখ্যাত লিখার মাঝে নিনা,লা তেরা, লা মিরর,থেরেস কুইন,এরপর এমিলি দ্বিতীয় ফরাসি সম্রাটের পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ধারাবাহিক লিখতে শুরু করেন। জোলা এবং সেজানের মধ্যে বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিল। কিছুটা ছন্নছাড়া ভবঘুরে জীবনযাপন করতেন জোলা আর সেজান। একটি উপন্যাসে জোলা তাদের ছন্নছাড়া শিল্পী জীবনের জীবনচিত্র আঁকার পর তাদের জীবনে কিছুটা পরির্বতন আসে। জোলার জীবনে অপরাধীদের সঙ্গে মেশার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেল খাটার ঘটনাও আছে। তিনি বলতেন, 'সত্য সর্বদা চলমান এবং তাকে কখনোই থামিয়ে রাখা যায় না। ' তিনি সব সময় একটি নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখতেন। ১৮৯৮ সালের ১৩ জুলাই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ করে তিনি একটি খোলা চিঠি লেখেন এবং দৈনিক পত্রিকার প্রথম পাতায় তা প্রকাশিত হয়। একজন আর্টিলারি অফিসারের বেআইনি কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেন ওই চিঠিতে। এছাড়া বিচার ব্যবস্থার কিছু ত্রুটি এবং মামলার গুরুত্বপূর্ণ দলিল মুছে ফেলার কথাও তিনি বলেন। ফলে রাজরোষে পড়েন এবং ১৮৯৮ সালে তাকে কারাদণ্ড প্রদান করা হয় । তিনি কারাদণ্ড এড়াতে ইংল্যান্ডে আত্মগোপন করেন এবং দেশে ফেরেন তার পরের বছর। কেরানী থেকে লেখক হয়ে ওঠা এমিল জোলা ১৯০২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ৬২ বছর বয়সে ঘরের চিমনি বন্ধ হয়ে বিষাক্ত কার্বন-মনোঅক্সাইডজনিত গ্যাস আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর জন্য তার শত্রুদের দায়ী করা হলেও কোনো প্রমাণ ছিল না। তবে বলা হয়ে থাকে, শত্রুরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই তার ঘরের চিমনি বন্ধ করে দিয়েছিল। জোলাকে প্যারিসে সমাহিত করা হয়; কিন্তু মৃত্যুর ছয় বছর পর অর্থাৎ ১৯০৮ সালের ৪ জুলাই তার স্মরণে তাকে সর্বদেবতা মন্দিরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.