নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাইদুর রহমান

স্বপ্ন ও ভালোবাসা

আমি একজন সহজাত মানুষ। সরল জীবন জাপন পছন্দ করি। অল্পদিনের এই পৃথিবীতে এসে কোন কিছুকেই গভীর ভাবে নেইনা। জীবনের উদ্দেশ্য লিখে রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের মতো অমরত্ব লাভ করা। কিন্তু সময় আমাকে বেঁধে রাখে। এই জন্য নিজের এই ইচ্ছার প্রতিফলনের সম্ভাবনা খুঁজে পাইনা। তবে এখনও আশা ছারিনাই। সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমি জটিল হলেও পৃথিবীতে আমি অনেকটাই সুখী মানুষ।

স্বপ্ন ও ভালোবাসা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার গল্প-অনাকাংখিত ভালোবাসার কাছে

১০ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৫৩


একটা ক্লান্ত দুপুর। ছোট্র একটা ব্রীজ পেরিয়ে গ্রাম। এ গ্রামে হিন্দু-মুসলিম পরিবার একেবারে পাশাপাশি। এমন গ্রাম আর দেখা যায় না। গ্রামের গিয়ে বাড়ীর দরজা ধাক্কা দিতেই এক ষোড়শী মেয়ে দরজা খুলে দিলো। আমি যে কি দেখলাম তা বুঝে উঠতে পারলাম না। এ গ্রামে এর আগেও দু-একবার এসেছিলাম। কিন্তু সহজে এখানকার লোকেরা ঘরে বসতে দেয়না। প্রয়োজন থাকলে বাইরেই কথা বলে সেরে নেয়। আমাকে ঘর্ম ক্লান্ত দেখে মেয়েটা বললো-
আসুন, ভেতরে আসুন?
বললাম, না-না সমস্যা নেই।
আপনার বাবা নেই, উনাকে একটু ডেকে দিন, আমি উনার কাছেই এসেছি।
বাবা তো বাংলোতে গেছেন। উনি জমিদার সাহেবের বাংলো দেখাশুনা করেন।
বিদ্যুত নেই। কিছু কিছু গ্রামে বিদ্যুতের এমন অবস্থা যে বিদ্যুত যায় না আসে।
দরজার সামনে দাড়িয়ে কথা বলার এই পর্যায়ে রিমা বললো, আগে ভেতরে আসুন পরে কথা বলি। ভেতরে বসলাম। ঘরের ভেতর একটা জানালা পর্যন্ত নেই। অনেকটা অন্ধকার রুমটার মধ্যে। রিমা দাড়িয়ে আছে। ওর শরীর দিয়ে যেন আলো ঝড়ছে। কাচা হলুদের চেহারা। আধো অন্ধকার রুমটার ভেতরেই যেন শরীরটা চকচক করছে আলোতে।
বললাম- উনি কখন আসবেন?
আধাঘন্টা সময় লাগবে।
বললাম, তাহলে আমি বাইরে কোথাও অপেক্ষা করি?
না-না সমস্যা নেই। আপনি বাইরে কোথায় অপেক্ষা করবেন। তাছাড়া এখানে কোন অপেক্ষার জায়গাও নেই। রিমার ভরাট স্বাস্থ্য। দেখে মনে হলো বিয়ে হয়েছে। তারপরও কৌতুহল বশত: জিঙ্গেস করলাম, তোমার কি বিয়ে হয়েছে? শুনে একটা যেন হাফ ছাড়লো, তারপর বললো- হ্যা, চার মাস হলো আমার বিয়ে হয়েছে। আমার স্বামী ঢাকায় চাকরী করেন।
রিমা লেখাপড়ায় খুব ভালো ছিলো। স্কুলের টিচাররা ওর মেধা দেখে বলেছিলো, মেয়েটা হবে গোবরে পদ্মফুল ফোটার মতো। রিমা যেমনি সুন্দর তেমনি মেধা। একদিন সে অনেক বড় হবে। কিন্তু গরীব বাবা-মায়ের কাছে রিমা বাড়ন্তটা যেন বড়ই দু:শ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলো। তাই এস.এস.সি’র ফাইনালটা দেবার আগেই রিমা চলে গেল স্বামীর নিয়ন্ত্রণে। স্বামী গাড়ী চালক। রিমার বিয়ে বাবদ যৌতুক একলক্ষ টাকা দেবার কথা। পঞ্চাশ হাজার টাকা বিয়ের সময় দিয়েছে। আর বাকী টাকা দিলেই রিমা শশুর বাড়ী যাবে। ওর বড় ননদের বাড়ী পাশের গ্রামে। ননদের জামাই বিয়েটা ঠিক করেছেন। কিন্তু রিমার বাবা পঞ্চাশ হাজার টাকা যোগার করতে পারছেন না বিধায় রিমাকে শশুর বাড়ী নিয়ে যাচ্ছেনা ওর ননদের জামাই। আর এ কথা গুলো বলতে বলতে অনেকটা কান্না আপ্লুত হচ্ছিলো রিমা। ওকে বললাম, কেদো না, শক্ত হও। সব ঠিক হবে। প্রায় আধঘন্টা পরও ওর বাবাকে আসতে না দেখে বললাম, মনে হয় ওনার দেরী হবে। আমি না হয় ফোনে কন্ট্রাক করে নেব। এই বলে ওর ফোন নম্বরটা নিয়ে চলে এলাম।
পরদিন সকালে একটা ফোন করলাম, রিমা ফোনটা রিসিভ করেই বললো-
কেমন আছেন?
ভালো আছি, তুমি? জ্বি ভালো।
তোমার বাবা কোথায়? উনিতো একটু আগেই বের হয়ে গেল।
বললাম, তুমি কি উনাকে আমার কথা বলেছ?
হ্যা, বাবাতো আপনার ফোনের অপেক্ষায় ছিলো। বললাম, তোমার কথা শুনে আমি ওনার পেমেন্টটা পাশ করে দিয়েছি। যেদিন মনে করবে উনি যেন আমার অফিসে এসে নিয়ে যান। ওপাশ থেকে একটা হাসি দিলো, বললো, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
দুদিন পরে রাত দশটায় রিমার একটা ফোন পেলাম। এতো রাতে ফোন! বললাম, হ্যালো-
বললো, কেমন আছেন? বললাম, ভালো।
বাবা যদি কালকে যায় তাহলে কি আপনারা পেমেন্টটা দিতে পারবেন? বললাম, হ্যা। তা-কেন?
কালকে না পেলে আমার খুব বিপদ হবে। আমার ননদের জামাই আজ বাবাকে শাসিয়ে গেছে। কাল টাকা না পেলে আমি কোনদিন আর শুশুর বাড়ী যেতে পারবোনা।
বললাম, ঠিক আছে, কিন্তু এমন করা তো ঠিক না। তাছাড়া এভাবে অন্যায় করা আবার জোড় করে...।
বুঝতে পারলাম ফ্যামিলিটা খুব অসচেতনতার মধ্যে আছে। তাই ওকে বললাম, কাল পাবে। কিন্তু তোমাকে একটা কথা বলি, যে কোন সমস্যা তুমি আমাকে বলবে। আমি যতটুকু পারি তোমাকে সহযোগিতা করবো।
রিমার বাবা টাকা নিয়ে গেছে দুদিন হলো। হঠাত মনে হওয়াতে একটা ফোন দিলাম, রিমা ফোন পেয়ে জিঙ্গেস করলো, কেমন আছেন? বললাম ভালো। তুমি ভালো আছো? কোন উত্তর দিলনা। চুপ করে রইল। বললাম, তুমি কি এখন শশুর বাড়ীতে?
বললো, না।
কেন?
কাল আমার ননদের জামাই এসেছিলো। বাবাকে বলেছে, শশুর বাড়ীতে কোন টাকা দিবেন না। এমনি নিয়ে গেলে নিবে না হলে এখানেই থাকবে। আমি আছি আপনাদের পাশে। আর যদি আমার কথা না শোনেন তাহলে আপনার মেয়ের কপালে দু:খ আছে। এদিকে আমার স্বামী বলেছে, টাকা নিয়ে যেন শশুর বাড়ী যাই। না হলে ও আমাকে আর কোনদিন নেবে না। বাবা ননদের জামাইয়ের কথা মেনে চুপ আছে। বললাম, অর্থ তোমাকে কোন দিন সুখ দিবেনা। আর তোমার ননদের জামাইয়ের মনে হয় কোথাও স্বার্থের ব্যঘাথ ঘটেছে। এ জন্য উনি এগুলি করছেন। যাই হোক তুমি শান্ত ভাবে চিন্তা করে সিন্ধান্ত নেবে। কখনও না ভেবে কোন সিন্ধান্ত নেবে না। সমস্যা হলে আমাকে জানাবে।
আজ পনের দিন পেরিয়ে গেছে রিমা আর ফোন করেনি। মনে হয় সব সমস্যার সমাধান হয়েছে। যাক, তাহলে মেয়েটা শশুর বাড়ী পৌছেছে। রাতে শোবার আগে হঠাতই মনে পড়ে গেল রিমার কথা। ডিম লাইটটা জ্বালিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন পর ফোন বাজছে শুর করলো। টেবিলে এগিয়ে গিয়ে মোবাইলে চোখ বুলাতেই দেখি রিমার ফোন। মনে মনে ভাবলাম, মেয়েটা বেশীদিন বাচবে। ফোন রিসিভ করতেই, ওপাশ থেকে
রিমার কান্না জড়িত কন্ঠস্বর, আমাকে একটু বাচান।
বললাম, কোথায় তুমি!? আর কি হয়েছে!?
আমি গ্রাম থেকে পশ্চিমে অদুরে শীতলপাটি ব্রিজের নিচে দাড়িয়ে।
শীতলপাটি ব্রিজ সে তো গ্রাম থেকে অনেক দুর! কিন্তু তুমি ওখানে!?
সে অনেক কথা। প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে যান।
এমন অবস্থায় মুহুর্তেই ঘুমভাবটা দুর হয়ে গেল। বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডা। একটা চাদর গায়ে দিলাম। তাড়াতাড়ি মটরসাইকেলটা বের করে রওনা দিলাম শীতল পাটি ব্রিজের কাছে। থ্রি গিয়ারে গাড়ী চলছে। এদিকে মনে একটা উদ্দীপনা জমেছে আমার। রিমার কিসের বিপদ? নাকি এগিয়ে যাচ্ছি নিজেই কোন বিপদে? কিন্তু প্রথম দিনই রিমার চোখে দেখেছিলাম অন্য এক অনুভুতির ছায়া। দেখে ছিলাম অন্য এক মায়া। এক অধীর দৃষ্টি। ষোড়শী বয়সে এ দৃষ্টিটা সবারই থাকে। তাই কিছু মনে করিনি আমি। কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই কি ওর বিপদ!? আর এ বিপদে কেবল আমাকেই নির্ভরযোগ্য মনে করলো রিমা? আর কাউকে না! প্রশ্ন জাগে মনে। নাকি অন্য কিছু! নাকি আমিও ভেতরে ভেতরে ওর প্রেমে পড়েছিলাম। এর জন্যই কি এভাবে ছুটে চলছি ওর কাছে? ভাবনার অতল গহবরে সময় চলে যায়। এরই মধ্যে ব্রিজের কাছে গাড়ী থামাই। প্রচন্ড কুয়াশা পড়ছে চারপাশে। আলোকিত জোস্নায় কুয়াশার সাদা আভায় চারপাশে কিছু দেখা যাচ্ছে না। কোন সারা শব্দ নেই। ভয়ও লাগছে। তারপরও একটা ডাক দিলাম- রিমা। এরপরও কোন সারা শব্দ নেই। কি করবো! আরে আমি তো ফোন করতে ভুলে গেছি। ওর নম্বরে ফোন দিলাম।
বললাম, আমি তো ব্রীজের উপরে, কোথায় তুমি?
ও বললো আমি নিচে আছি, উপরে আসছি।
দেখি নিচ থেকে বের হয়ে এলো। ওকে দেখে মুতুর্তেই কিংকতব্যবিমুঢ় হয়ে গেলাম। ওর শরীরে ছেলোয়ার কামিজ ওরনা ছাড়া কিছুই নেই। বললো, তারাতারি চলেন, না হলে আমাদের বিপদ হয়ে যাবে। গায়ে জড়ানো চাদরটা ওকে দিলাম। ও নিতে চাইলো না। বললো, আপনার ঠান্ডা লাগবে। বললাম, এখন এসব চিন্তা করো না। যাবার সময় ওরা তোমাকে দেখলে চিনে ফেলবে তুমি মাথা আর মুখে চাদর মুরি দাও। আমরা চললাম। ও আমার মোটর সাইকেলের পেছনে গায়ে চাদর জড়ানো। গাড়ী জোড়ে চালাচ্ছি। ওকে বললাম, শক্ত করে ধরে থাকতে। গ্রামের ভেতর আসতে আরো বিশ মিনিট লাগবে। ওকে বললাম, তোমাকে বাসায় পৌছে দিলেই তো হবে? বললো, বাসায় পৌছি দিলে আমার আরো বিপদ হবে। বললাম, তাহলে! বললো আমাকে অন্য কোথাও নিয়ে যান। আমি আপনাকে সব পরে বলছি। আমার মনে ভয় সঞ্চারিত হলো। আমি কি কোন বিপদের কারণ হচ্ছি? নাহ্, রিমা তো এমন নয়! কিন্তু এতো রাতে ওকে কোথায় নিয়ে যাব? বাসায় নিলে সবাই কি ভাববে? আর মেইন রাস্তা দিয়ে এতো রাতে যাওয়াটাও নিরাপদ নয়। না কিছু ভাবতে পারছিনা ! এদিকে আসতে আসতে ওর গ্রামের প্রায় কাছাকাছি এসে গেছি। সামনে রাস্তাটা ভাঙ্গা। এখানে একটু থামতে হবে। ষ্ট্রাট থামিয়ে বললাম একটু নামো, ভাঙ্গা রাস্তাটুকু পেরিয়ে গেলেই আর সমস্যা নেই। ভাঙ্গা রাস্তা পার হতেই দেখি সামনে দিয়ে চার-পাচজন এগিয়ে আসছে। আমি গাড়ীতে উঠেছি। ও উঠবে। এমন সময় ওরা সামনে। ওদের দেখে ও চাদর মুরি দিয়ে ওপাশ হলো।
ওদের একজন আমাকে জিঙ্গেস করলো, আপনি কি আসার সময় কাউকে দেখেছেন? বললাম, না দেখিনিতো?
বললো, উনি কে? বললাম, আমার স্ত্রী।
রিমা ওপাশ ফিরে আছে। একজন শুধু একবার পেছনের দিকে তাকিয়ে বললো, আচ্ছা যান। আমি আর দেরী না করে গাড়ী ছাড়লাম।
রিমা বললো, এরা আমার কাছেই যাচ্ছে।
রিমাকে নিয়ে মটরসাইকেলে গ্রামের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে কতদুর এসেছি মনে নেই। এক পুকুর পাড়ে জ্বালানো বিদ্যুতের লাইটের আলোতে রাস্তার পাশে একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়লো, সমবায় সমিতি নিখিলপুর। মনে হলো এখানে একবার এসেছিলাম আমাদের এক আর.এস এর বাড়ীতে। পাশেই কোথাও। ওর চাকুরীর কাগজপত্র নিয়ে তদন্তে এসেছিলাম। ভেবেই রবিউল কে একটা ফোন দিলাম। বললো, স্যার আমিতো বাড়ীতে এসেছি। বললাম, আমিও তো তোমাদের এলাকায়। বললো, স্যার কোথায়? বললাম নিখিলপুর সমিতি অফিসের কাছে। বললো, একটু অপেক্ষা করেন, আমি আসছি।
ববিউলের বড় ভাই ইটালী প্রবাসী। ভাবী বেড়াতে গেছে। ওই রুমেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা করলো রবিউল। রবিউলের সাথে দেখা হবার সময়ই ও ভাবী বলে সালাম জানিয়েছিলো রিমাকে। আমি তাই আর কিছু বললাম না। রবিউলের বাড়ীতে পৌছার পর ওর পরিবারও রিমার সম্পর্কে কেউ কিছু বললো না।
যৌতুকের বাকী পঞ্চাশ হাজার টাকা নিতে চেয়েছিলো রিমার ননদের স্বামী। ওর যৌতুক লোভী স্বামীও তাই বলেছিলো দুলাভাইয়ের হাতে না দিয়ে টাকা টা যেন রিমা নিয়ে চলে আসে শশুর বাড়ীতে। এ কথা শুনে ননদের জামাই ওর ননদ কে রাগ করে পাঠিয়ে দেয় ওর শশুর বাড়ী। আর সেই সাথে রিমাকেও যেতে বাধা দেয় সেখানে। এরপরও টাকা না পেয়ে শ্যালককে শিক্ষা দিতে ননদের জামাই রিমার বাবাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে রিমাকে শশুর বাড়ী নিয়ে অপহরণ করা হয়েছে এই অভিযোগে মামলা করে থানায়। এদিকে বাড়ীতে দেখলে পুলিশ মিথ্যা অপহরণ মামলা বলে রিমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে এই ভয় দেখিয়ে ওকে লুকিয়ে রাখে শীতলপাটি ব্রীজের নিচে। শুধু তাই নয় নিজের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে ওকে লুকিয়ে রেখে আরো লোকজন ডেকে আনতে যায় সে। নিজের নরক যন্ত্রণার পূর্বাভাস দেখে তাই সে ফোন করে। শুধু তাই নয় বাবাকে ঋণমুক্ত করতেই টাকা টা কাউকে না দিয়ে আমাকেই আবার ফেরতের উদ্দেশ্যে ফোন করেছে সে। রিমা এসব বলতে বলতে, টাকাটা ওর কাছে থেকে বের করে দিলো। কথা শুনে ওকে আর কিছু বলার ইচ্ছা রইলো আমার।
বড় খাট। ও একপাশে শুয়ে আছে। আমি একপাশে। একটা কম্বল মাঝখানে টান করে ধরে আছি যেন দুজন। কাল সকালে কি করবো, আর কি বলবো এ ভেবে ঘুম আসছিলো না আমার। নানান ভাবনার আড়ালে কখন যে চোখ বুজে গেছে টেরই পাইনি
হঠাত ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। কানে ভেসে এলো কে যেন মুখ লুকিয়ে ডুকরে কাদছে। ওপাশ ফিরতেই দেখি রিমা কাদছে। ওর পাশে গিয়ে ওকে বললাম, কেদোনা, শান্ত হও। এতো রাতে কেউ শুনলে আমাকে মন্দ বলবে। ওর চোখের কাছে হাত দুটো নিয়ে গেলাম। ওর গাল বেয়ে অশ্রু ঝরছে। ওর চোখ দুটো মুছে দিতে উদ্যত হতেই ও এপাশ ফিরে আমার বুকের কাছে শক্ত করে মুথ লুকিয়ে ডুকরে কাদতে থাকলো। আমিও কেন যেন ওকে শক্ত করে ধরলাম। আমার হাতে ওর চুল গুলো আওড়াতে আওড়াতে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলাম। ও একটু থেমে বললো, আজ আপনি না থাকলে কি যে হতো! আমার জন্য আপনার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
বললাম ও কিছুনা।
বললো, আমার জন্য যা করেছেন তাতে আমি ঋণী
বললাম, এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।
বললো, যদি তাই হয়, তাহলে আর একটা দায়িত্ব পালন করুন
বললাম, সেটা কি?
আমাকে ভালোবাসুন।
গভীর রাত। বাইরে ঠান্ডা। ভেতরে গরম। দুটি শরীরের উত্তাপ মুহুর্তেই সব গরম কাপড় ফেলে দিতে হয়েছিলো নিচে। বিয়ের পর থেকেই আগুনে পুরতে পুরতে নিজেই তুষের আগুনের মতো উত্তাপ চলছিলো ওর শরীরে ও মনে। তাই আমার অনুর সম পরিমাণ বাধা হর মানলো ওর আকষর্ণের কাছে। ওর পরম ভালোবাসায় পৌছে গেলাম ওর দেয়া আর একটি দায়িত্ব পালনের কাছে। আত্মসন্মানবোধ অর্জন কারীর কাছে সব আত্মাই কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে। কাউকে আত্ম সন্মান দিলে সহজেই পাওয়া যায় তার মন। আর সেও তখন খুজে ফেরে ভালোবাসা পাবার এক অধিকার। আমার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে অনুরাগে মুখের কাছে এসে শুধু এটুকু বলেলো- অধিকার কেউ কাউকে দেয়না এটা আদায় করে নিতে হয়। ভালোবাসা নয় অর্থ প্রাপ্তি বড় হয়েছিলো ওদের কাছে। তাই রিমা কষ্টের নোনা জল পায়ে ঠেলে অনাকাংখিত ভালোবাসার কাছেই হার মানলো নিজে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:০৩

সায়ান তানভি বলেছেন: দারুন লিখেছেন। আপনার লেখার হাত খুব ভালো।

১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৫০

স্বপ্ন ও ভালোবাসা বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে আপনাকে অনেক ধন্য বাদ। ভালো থাকবেন।

২| ১০ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:৫২

সুমন কর বলেছেন: বর্ণনা আর গল্প ভালো লাগল।

১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:৫১

স্বপ্ন ও ভালোবাসা বলেছেন: একটা বাস্তব জীবনের ঘটনা এখানে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করেছি। ভালো লেগেছে জেনে আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.