নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় নতুন করে লেখার মত কিছুই এখনও হয়ন....

সাইফুল১৩৪০৫

সবার সাথে শিক্ষণীয় পোস্ট শেয়ার করতে চাই। আমার দ্বারা যদি কেউ উপকৃত না হয়, তো ক্ষতির শিকার হবে কেন?

সাইফুল১৩৪০৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গ্রামের ঈদ আনন্দ শুধুই স্মৃতি!

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৮

সেই ছোটবেলা থেকেই ঈদ উদযাপন করেছি গ্রামে। পড়ালেখা গাঁয়ের স্কুল কলেজেই। তাই শহরে ঈদ করা হয়ে ওঠেনি। প্রায় তিন বছর পূর্বে চট্টগ্রামে একবার ঈদ করেছিলাম। এবার আছি ঢাকায়। মনে হয় না ঈদ আনন্দ শহরে আছে।

শহরে ঈদের দিন বিনোদন পার্কগুলো ভরে ওঠে দর্শনার্থীদের পদচারণায়। গ্রামে বসে বাংলাদেশ টেলিভিশনে এসবই দেখতাম। গ্রামে এমন বিনোদন পার্ক নেই। তবুও শহর ছেড়ে মানুষগুলো গ্রামে চলে যায়। কারণ সব আনন্দ যে গ্রামেই! আমার স্মৃতিতে পনের বছর আগের যে গ্রাম্য ঈদ ছিল তা আর ভাসে না। বর্তমান সময়ের গ্রাম্য ঈদ আর শহরের ঈদ দুটোই সমান লাগে।

রমজান মাস শুরু হতে না হতেই আমরা মার্বেল কিনতাম। সেই মার্বেল দিয়ে নানা ধরণের খেলায় মেতে উঠতাম। মার্বেল খেলায় আমি ততটা পারদর্শী ছিলাম না। তবে খেলাটা আমার খুব পছন্দ হত। এটা ছোট বাচ্চাদের খেলতে দেয়া উচিৎ বলে আমার মনে হয়। এই খেলা বাচ্চাদের গণিতের প্রাথমিক হিসাব কষতে সহায়ক। যখন কলেজে পড়ি তখন এক বাচ্চার মা-বাবা খুবই শঙ্কিত হয়ে বলেছিল তাদের বাচ্চা যোগ-বিয়োগই বোঝে না।

আমি তখন সেই বাচ্চার হাতে বিশটা মার্বেল দিতে বলেছিলাম। এরপর তার হাতে মার্বেল দেয়া হল। তখন বাচ্চাটা কয়টি মার্বেল অন্যান্য ছেলের কাছে হেরে আসল, কয়টা লাভ করল তার সবই হিসেব করা শিখল। এক সপ্তাহ পর তার যোগ-বিয়োগের সমস্যা হয়নি। অ্যাবাকাস আমরা চিনতাম না। তবে অ্যাবাকাসের গুটি দিয়েই খেলতাম সারাদিন!

ঈদের ১৫-২০ দিন আগে থেকেই গ্রামের মা-চাচীরা ধানের আঁটা গরম পানিতে সিদ্ধ করে কাঠের পিঁড়ির উপর হাতের তালু দ্বারা ঘষে ঘষে সেমাই বানানোর কাজ করতেন। মায়ের পাশে বসে বসে সেমাই তৈরিতে ব্যস্ত থাকত মেয়েরা। বাজারে কেনা সেমাই পাওয়া গেলেও হাতে বানানো সেমাইয়ের কদর একটু বেশিই ছিল।

তাছাড়া এটি বানানোর সময় কতশত সুখ-দুঃখের গল্প হত, পাড়া-প্রতিবেশীর খোঁজ নেয়া হত, কলের সেমাই আর লাচ্ছা সেমাই তার সবটাই কেড়ে নিয়েছে। সেমাই তৈরির সময় শহর থেকে যারা যেত তারা বসে থাকত। আমরা ছেলেরা গ্রামের এমাথা-ওমাথা ঘুরে বেড়াতাম আর শহর ফেরতদের সাথে দেখা করতাম। মেয়েরা অবশ্য আট-দশ বাড়ি ঘোরার সুযোগ পেত।

মেয়েদের আরেকটি অত্যন্ত পছন্দনীয় কাজ ছিল মেহেদী পাতা পাটায় পিষে হাত রাঙ্গানো। একাজটি পুরোপুরি জমত ঈদের আগের রাতে। গভীর রাত পর্যন্ত তারা এটি করত। মেহেদী পাতা পেষার কাজ মেয়েরা করলেও আমরা ছেলেরা তার হিস্যা নিতে ছাড়তাম না। তাদের কাছ থেকে মেয়েদি নিয়ে হাতের আঙ্গুল আর নখ রাঙ্গাতাম।

মেহেদী পাতা নিয়ে ছেলেমেয়েদের মাঝে হালকা কিছু ঝগড়া-বিবাদও হত। এ ঝগড়া পারিপারিক পর্যায়ে যেত না। তবে এখন অবস্থা ভিন্ন। আমরা বরাবরই বলতাম আমাকে না দিলে তোমাদের মেহেদী গাছ রাতের আঁধারে কেটে ফেলব! ব্যস, গাছ বাঁচানোর ভয়ে এটুকুতেই মেহেদী দিত তারা! আমরা বিজয়ের হাসি হাসতাম। এইসব আনন্দ এখন টিউবের মেহেদীই শেষ করেছে। এখন মেয়েরা নানা রকমের সুন্দর সুন্দর নকশায় হাত রাঙ্গায় ঠিকই কিন্তু এই সুন্দরের মাঝে সেই আনন্দ অনেক আগেই চাপা পড়ে গেছে! সে সময় ঈদ কার্ড পাওয়া যেত। তবে গ্রামে তার প্রচলন খুবই কম ছিল।

ঈদেরদিন সকালে গোসল করে পাঞ্জাবী-পাজামা পড়ে নামাজে যেত পুরুষেরা। সাথে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা থাকত। বড়রা নামাজ পড়ত আর ছোটরা জুতা, স্যান্ডেল পাহারা দিত। নামাজ শেষে জুতা, স্যান্ডেল পাহারাবাবদ কিছু টাকা ইনকাম হত। সালামী বলতে কিছু ছিল না। এখন সালামী আছে কিন্তু পাহারাদার নেই। নামাজ শেষে গ্রামের প্রায় সবার বাড়িতেই ঘুরতে যেত শহর ফেরতরা। আমরাও থাকতাম সাথে।

মিষ্টিমুখ হত সেমাই, পায়েস দিয়ে। কেউ কেউ আবার গাছের পাকা পেঁয়ারা, জাম্বুরা, লেবু ইত্যাদি হাতে ধরিয়ে দিত। এখন ঈদের দিন গ্রামে শুধু নামাজ হয়। তারপর একেবারে নিকতাত্মীয় অর্থাৎ রক্ত সম্পর্কের বাবা-চাচা, ভাইয়ের বাড়ি ইত্যাদিতে ঘুরতে যায়।

এখন গ্রামেও আর আগের মত ঘোরাঘুরি করা যায় না। দিন যেমন তেমন রাত্রিরতো কথাই নেই! সবার ছেলেমেয়ে বড় হয়েছে! বড় হয়েছে বয়সে অথবা টাকায়। আবার কখন কার বাড়ির নাক ফুল হারায় সেটাও তো বলা যায় না! এখন টাকা পয়সায় মানুষ লাচ্ছা সেমাই খায়, পাতার মেহেদীর পরিবর্তে রেডিমেট মেহেদীতে হাত রাঙ্গায়। কিন্তু সেই ছেলেবেলার ঈদ আনন্দ আর গ্রামেও খুঁজে পায় না। কেন যেন গ্রামের মানুষগুলোও আজকাল শহুরে স্বভাবের হয়ে যাচ্ছে।

আজ যে ঢাকা শহরে, মানুষের ভীড় আর যানজটে অতিষ্ট সবাই। যেখানে নেই কোন নির্মল পরিবেশ সেটাও এককালে গ্রাম ছিল। ছিল বিস্তৃত কাঁশফুলের সমাহার। এসব আমি দেখিনি। আমার গ্রামের এক বয়স্ক দাদার কাছে শুনেছিলাম। যাইহোক ঢাকা শহরের শতকরা ৮০ ভাগেরও অধিক লোকের শৈশব কেটেছে কোন না কোন গ্রামেই। তাই হয়ত নাড়ির টানে বাড়ির পানে ছুটে চলে সবাই। কিন্তু পূর্বের ন্যায় ঈদ আনন্দ যে তারা পায় না এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। আহ্! পুরনো দিনের ঈদ কতইনা মজার ছিল।

আমার এই লেখাটি পূর্বে প্রকাশিত হয় যেখানে তার লিংক: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.