নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় নতুন করে লেখার মত কিছুই এখনও হয়ন....

সাইফুল১৩৪০৫

সবার সাথে শিক্ষণীয় পোস্ট শেয়ার করতে চাই। আমার দ্বারা যদি কেউ উপকৃত না হয়, তো ক্ষতির শিকার হবে কেন?

সাইফুল১৩৪০৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিকিৎসক-রিপ্রেজেন্টেটিভ সম্পর্ক : ওষুধ নাকি উপঢৌকন?

০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ৮:৩৫

সকালবেলা ফেজবুকে ঢুকতেই একটা সংবাদ লিঙ্কে চোখ আটকে গেল। সাথে সাথে লিঙ্কে প্রবেশ করলাম। ঘটনাটি নেত্রকোণার। সেখানকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক চিকিৎসককে কোনো এক ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ মারধর করেছে। কারণ হিসেবে জানা গেল, রিপ্রেজেন্টেটিভ তার কোম্পানির ওষুধ লেখার জন্য চাপ দিয়েছিল। আর চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে সেই কোম্পানির ওষুধের নাম নেই।

এই যে, চিকিৎসক আর রিপ্রেজেন্টেটিভের মধ্যকার সম্পর্কটা কিন্তু এমন নয়। কয়েক বছর আগে ঢাকার কয়েকটা হাসপাতালে আমাকে ছোটাছুটি করতে হয়েছে। সেখানে দেখতাম রোগীকে বসিয়ে রেখে ৮-১০ জন করে রিপ্রেজেন্টেটিভকে চিকিৎসক সাহেব চ্যাম্বারে নিয়ে নিচ্ছেন। এখানেই কমপক্ষে ৪০-৪৫ মিনিট রোগীকে বসিয়ে রাখা হচ্ছে!

এদেশের মার্কেটিং জবের মধ্যে ওষুধ কোম্পানির জবটাকে আমার কাছে বেশি অমানবিক মনে হয়। এখানে এন্টিবায়োটিক বিক্রির ওপরও টার্গেট দেওয়া হয়। আর একারণে একজন মার্কেটিং অফিসার রাত দিন ছুটে চলেন টার্গেট পূরণের লক্ষ্যে। আচ্ছা, মানুষ যদি অসুস্থ না হয় তবে কিভাবে টার্গেট পুরণ করবে? বসে বসে মানুষের অসুখ হওয়ার দোয়া করবে? আমি ঢাকার এক নামকরা হাসপাতালের ফার্মেসীর সামনে রাত ২টার সময়েও ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভকে বসে থাকতে দেখেছি।

এইতো গত কয়েক মাস আগে চিকিৎসকের চ্যাম্বার থেকে বের হওয়ার পর, চিকিৎসকের কম্পাউন্ডার আমার প্রেসক্রিপশনের ছবি নিলেন। পাশাপাশি বলে দিলেন হাসপাতালের নিচে যেন আমি কাউকে প্রেসক্রিপশন না দেখাই। অথচ এই কম্পাউন্ডারকে দেখলাম সেই ছবিখানা কোনো এক রিপ্রেন্টেটিভকে দিয়ে টাকা কামাচ্ছে!

এদেশের চিকিৎসকও কিন্তু দুধে ধোয়া তুলসি পাতা নন। গতকাল এক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন চোখে পড়ল। দেখলাম যতগুলা ওষুধ লিখছে ততগুলা ওষুধের প্রয়োজনই নাই। চিকিৎসক যখন নিজের চিকিৎসার ওপর ভরসা পান না তখনই হয়তো বেশি করে ওষুধ দেন। যাকে আমরা বলি ককটেল ওষুধ। কোনো না কোনো একটা ওষুধে কাজ হবেই এমন ধারণা থাকে। এছাড়াও প্রেসক্রিপশনের প্রায় সবগুলা ওষুধই আমার কাছে অপরিচিত। অপরিচিত হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, যারা রিপ্রেজেন্টেটিভের কাছ থেকে উপঢৌকন নেয় রিপ্রেজেন্টেটিভরা তাদের কাছেই গিয়ে ওষুধগুলো প্রোমোট করে। আর যারা উপঢৌকন নেয় না, তাদের কাছে প্রোমোট করতেও হয়তো আসে না। আমি চাইও না কেউ আসুক আমার কাছে। আমি নিজ দায়িত্বে ওষুধের ভালো-মন্দ যাচাই করে নিই।


এভাবে চিকিৎসক ও রিপ্রেজেন্টেটিভের সম্পর্ক যখন ভালো ওষুধের জন্য না হয়ে উপঢৌকনের সাথে হয় তখন যা ঘটে-

১। অপ্রয়োজনীয় ওষুধ লেখা হয়। যে ওষুধটার হয়তো প্রয়োজনই ছিল না, অথবা না লিখলেও চলত এমন ওষুধ লেখা হয় শুধু উপঢৌকনের জন্য।
২। নামী-বেনামী ওষুধ লেখা হয়। যে ওষুধগুলা চিকিৎসকের আশপাশের দোকান ছাড়া পাওয়া যায় না। আশপাশের ওষুধের দোকানো না পাওয়া গেলে অনেক সময় দোকান ওষুধ পরিবর্তন করে দেন। যেটাও আবার অনুচিত।
৩। চিকিৎসার খরচ বেড়ে যায়। কারণ নিম্নমানের ওষুধে রোগ না ভালো হলে, পুনরায় চিকিৎসক ওষুধ পরিবর্তন করে অন্য ওষুধ দিয়ে দেন।

চিকিৎসক ও রিপ্রেজেন্টেটিভের সম্পর্ক বন্ধে করণীয়-

১। কোনো ওষুধ কোম্পানি রিপ্রেজেন্টেটিভকে ওষুধ বিক্রির জন্য টার্গেট দিতে পারবে না।
২। প্রেসক্রিপশনে ট্রেড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম লিখতে হবে (ট্রেড নাম- যেমন নাপা, জেনেরিক নাম হচ্ছে - প্যারাসিটামল)। চিকিৎসক যদি প্যারাসিটামল লিখত তবে কাস্টমার যেকোনো কোম্পানির প্যারাসিটামল নিতে পারত। এক্ষেত্রে আবার অবশ্যই প্রতিটা ওষুধের মান ঠিক রাখতে কর্তৃপক্ষের নজরদারি থাকতে হবে। এইতো ২-৩দিন আগে ওরস্যালাইন চেয়ে অনুরূপ প্যাকেটের ওরস্যাইনড পেয়েছিলাম দোকানির কাছ থেকে।

পরিশেষে, আমাদের দেশের মানুষদের অর্থলিপ্সা ও নীতি-নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। অন্যথায়, একটা সমস্যার সাথে আরেকটার লেজ লাগানো থাকায় সহজেই রিপ্রেজেন্টেটিভ-চিকিৎসকের মধ্যকার অমানবিক উপঢৌকন সম্পর্ক বন্ধ হবে না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:১৭

রানার ব্লগ বলেছেন: আমি কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ কে চিনি এদের আচরণ খুবি আপত্তি জনক, ডাক্তারের চেম্বারে এরা এমন করে থাকে যেনো বাবা দাদার পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি। রোগিদের হাত থেকে জোর করে প্রেসক্রিপসন টেনে নেয়া, বাজে আচরণ করা নিত্ত নৈমিত্তিক ব্যাপার। এরা ক্রমিনাল, এদের শাস্তি হওয়া জরুরী।

২| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১০:৪১

জুল ভার্ন বলেছেন: ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টেটিভরা স্রেফ বখাটে এবং পাড়ার মাস্তান স্বভাবের। ৯৫% লোভী চিকিতসকদের সব ধরনের নোংরা কাজের প্রধান সহযোগী ওরা।

৩| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ সকাল ১১:১৪

গফুর ভাই বলেছেন: প্রিয় লেখক ভালো লিখেছেন, আপনার কাছে জানতে চাই ওষুধ বিপননের ভালো উপায় কি হতে পারে। আমার দেখা ঢাকা ছাড়া মফস্বল শহরে বেশি লাভের আশায় তারা নামি ব্রান্ড রাখে নাহ এর পিছনে বড় কারন হল অতি মুনাফা লাভের আশা দোকানদ্দারের।আমার বড় ভাই ঢাকা মেডিকেল এর ডাক্তার , সে যখন এলাকায় প্রথম চেম্বার খুলে রোগি দেখে, কিছু ওষুধ দোকানদার আর পল্লি চিকিৎসক মিলে যাকে বলে ভিলজ পলিতিক্স শুর করল তখন বেশ ঝামেলা সহ্য করে সে তার চেম্বার করে যায় শেষে দেখা গেল তার জয় হয়।গ্রামের পরিচিত হওয়াতে সে প্রায় বিনামূল্য দামে চেম্বার করে।
আর গ্রামে ভয়াভহ অবস্থা নকল ওষুধ এর ছড়াছড়ি এর কারন হল গ্রামের মানুষ সচেতন কম তার উপর হলো ওষুধ সম্পর্কে মানুষ কম ওয়াকিবহল স্বাভাবিক কারন এটা কোন লাক্ক্স সাবান না যে সবাই চিনবে কোনটা আসল কোনটা নকল আর কোন ওষুধ অপ্রয়োজন ।

৪| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: ডাক্তারখানা থেকে বের হলেই হাত থেকে ছো মেরে এরা প্রেশক্রিপশন নিয়ে নেয়। ছবি তুলে তারপর প্রেসক্রিপসন দেয়। আসলে এদের জন্য আমার মায়া লাগে। এরা খুব চাপের মধ্যে থাকে। চাকরি বাঁচাতে তাদের এসব করতে হয়।

৫| ০৭ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:১৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: নির্লোভ ডাক্তার কিছু আছেন। ওষুধ কোম্পানিগুলি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ডাক্তারদের পিছনে। একটা ছোট ওষুধ কোম্পানিও মাসে ২ কোটি টাকা ব্যয় করে কয়েক হাজার ডাক্তারের পিছনে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.