নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিচয় নতুন করে লেখার মত কিছুই এখনও হয়ন....

সাইফুল১৩৪০৫

সবার সাথে শিক্ষণীয় পোস্ট শেয়ার করতে চাই। আমার দ্বারা যদি কেউ উপকৃত না হয়, তো ক্ষতির শিকার হবে কেন?

সাইফুল১৩৪০৫ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোজা, রেডিও, ঘন্টা ও হারানো স্মৃতি!

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:২৫

কথাগুলো আমার ছোটবেলার। সে সময় আমাদের ইউনিয়নটা অনেক বড় ছিল। বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনের ফলে ইউনিয়নটা অনেক ছোট হয়ে গেছে। সে সময় মানুষের মাঝে অনেক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি ছিল। এখন হয়তো আর আগের মতো নেই। অনেকটা শহুরে ছোঁয়া লেগেছে।

আমাদের বাড়িটা রাস্তার সাথেই। তাই সে পথ দিয়ে প্রচুর মানুষ চলাচল করত। তখন অনেক হাঁটুরের সে পথ দিয়ে যাওয়ার সময় ইফতারের সময় হয়ে যেত। তাই আমরা নিয়মিত ইফতারের জন্য আমাদের বাহির বাড়িতে ইফাতারি সাজিয়ে রাখতাম। অনেকেই ওখানে হালকা ইফতার সেড়ে নিতেন। অনেকে আবার নিজেদের কাছে থাকা ইফতারির উপকরণ আমাদের ইফতারির বাটিতে দিতেন। এখন ইউনিয়ন ছোট হওয়ায় এই প্রয়োজনটা হয়তো আর নেই। তাই আজকাল আর রাখা হয় না।

সে সময় আমাদের গ্রামে কোনো মসজিদ ছিল না। তাছাড়া গ্রামের মসজিদগুলোতে মাইক ছিল না। থাকলেও সেগুলোর ব্যাটারিতে চার্জ থাকত না। রোজার শুরুতে যেসব মসজিদের ব্যাটারিতে চার্জ দিয়ে আনতো, দেখা যেত ১০-১২ দিনের মধ্যেই সেসব ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যেত। এরপর হয়তো ব্যাটারি চার্জে দিয়ে ঈদের ২-৩দিন আগে নিয়ে আসত। কারণ এই মাইকটাই আবার ঈদগাহ ময়দানে টাঙ্গানো হতো। তখন জেনারেটরে ব্যাটারি চার্জ দিতে কমপক্ষে ৭ দিন সময় নিত। মূলত জেনারেটরগুলো বাজারের প্রয়োজনে সন্ধ্যা থেকে রাত ৯-১০ টা পর্যন্ত চলত।

ইফতারির সময় বোঝার জন্য তখন আমরা ঘড়ির ওপর নির্ভর করতে পারতাম না। কারণ সবার ঘড়িতেই ১-২ মিনিট পার্থক্য থাকত। অর্থাৎ পাশাপাশি দুইটা ঘড়িতে দুই রকম সময় সেট করা থাকত। সে সময় রেডিওই ছিল আমাদের ইফতারের সময় বোঝার একমাত্র উপায়।

বিকেল হতে না হতেই রেডিও নিয়ে বসে পড়তাম। প্রথমে ঢাকা ক থেকে প্রচারিত হেফজুল কোরআন অনুষ্ঠান চলত। হেফজুল কোরআন শেষ হলে বাংলাদেশ বেতার রংপুর টিউন করতাম। সে সময় রংপুর বেতারের সিগনাল আবার বর্তমান সময়ের মতো শক্তিশালী ছিল না। রংপুর বেতারের ফ্রিকুয়েন্সির কাছেই আবার থাকত রাজশাহী বেতারের ফ্রিকুয়েন্সি। যেটার সাউন্ড খুব কম হতো। অবশ্য রাজশাহীর আরেকটা ফ্রিকুয়েন্সি থাকত। যেটায় জোড়ালো শব্দ হয়। তাই যাতে ভুল না হয় তাই আমার বাবা আমাদের বুঝিয়ে দিতেন ঠিক কোন বরাবর রেডিওর কাঁটাটা নিতে হবে। তাছাড়াও আমরা খুবই মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। কারণ আজানের আগেও বেতারের নাম বলত। সেই সাথে কোন অঞ্চলের ইফতারের সময় তা জানিয়ে আজান দিত। মূলত দুর্বল সিগনাল থাকার কারণে অনেকের রেডিও থাকলেও ভুল টিউনের ভয়ে থাকত।

আজান শোনার সাথে সাথেই আমাদের কাজ ছিল ঘন্টা বাজানো। এই ঘন্টাটায় আবার খুব জোড়ালো শব্দ হতো। কত গ্রামের কতশত মানুষ এই ঘন্টা শোনার জন্য কান পেতে থাকত তার হয়তো কোনো হিসেব মেলানো যাবে না। এই ঘন্টা দিয়ে আমরা সেহরীতে সবাইকে তুলে দিতাম। ঈদের চাঁদ উঠলে জানিয়ে দিতাম। আজ হয়তো এই ঘন্টার প্রয়োজন নেই। হয়তো অনেকেই এটাকে মাশআলা দিয়ে বিদআত কিংবা হারাম বলবেন। কিন্তু সে সময় এরচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা আর আমাদের কাছে ছিল না।

এখন গ্রামে একটু পরপর মসজিদ হয়েছে। গ্রামে সৌরবিদ্যুত হয়েছে। পল্লী বিদ্যুতের খুঁটি বসেছে। মসজিদ থেকেই পুরো ইউনিয়ন কাঁপিয়ে আজান হয়। এই আজানে ইফতার হয়, মাইকে সেহরিতে ডাকা হয়। কিন্তু ছোটবেলার মতো রেডিও শুনে আর ঘন্টা বাজানো হয় না। যে ঘন্টাধ্বনি শোনার জন্য দূর-দূরান্তের রোজাদার ব্যক্তিরা কান পেতে থাকতেন। এখন হাতে হাতে অ্যালার্ম সিস্টেম হয়েছে। সবাই সঠিক সময় জানতে পারছে। যার যার মতো সময় দেখে ইফতার করছে, সাহরীতে উঠছে। আর আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়েছে। এই আত্মকেন্দ্রিকতায় যে সুখ নেই তা হয়তো আমরা বুঝতেছি। কিন্তু সময়ের প্রয়োজনেই সব পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। তবে ভালোবাসাটাও পরিবর্তিত হয়ে গেল কেন?

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর স্মৃতি।
অতীতে জীবন এখনকার মতো এত সহজ ছিলো না।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪০

সাইফুল১৩৪০৫ বলেছেন: ঠিক। তবে এখন জীবন সহজ হলেও মানুষের মাঝে আগের মতো আন্তরিকতা আর ভালোবাসা দেখি না।

২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ১:৪৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:

নষ্টালজিয়া !!
সেইস্বর্ণালি স্মৃতি কো্নদিনও
ভোলার নয়।
পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়।
ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।
আয় আর একটিবার আয় রে সখা প্রাণের মাঝে আয়।
মোরা সুখের দুখের কথা কব প্রাণ জুড়াবে ......

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪১

সাইফুল১৩৪০৫ বলেছেন: স্মৃতি ভোলা যায় না। কিন্তু স্মৃতি মনে রাখলেও জ্বালা কমে না, বরং বাড়ে।

৩| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৪০

ওমেরা বলেছেন: আপনার লিখাটা খুব ভালো লাগছিল মনোযোগের সাথেই পড়তেছিলাম।
সময়ের প্রয়োজনেই সব পরিবর্তন হয়েছে আর সব পরিবর্তনের মাঝে ভালোবাসা পরিবর্তন না হয়ে কি পারে?

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪০

সাইফুল১৩৪০৫ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।

৪| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:১১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪২

সাইফুল১৩৪০৫ বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:৩৯

মোঃমোজাম হক বলেছেন: খুব ভাল লাগলো, সেইসব দিনগুলি আর ফিরে পাবোনা :(

১৫ ই এপ্রিল, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪২

সাইফুল১৩৪০৫ বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.