নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিষন্নতা উচ্ছাসের উৎসব

বিষন্নতা উচ্ছাসের উৎসব

চলো পালাই

ভাসান জলে থাকি খড়কুটো হয়ে, কচুরীর ফাঁকে ।

চলো পালাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেলফি-ইশ্!

২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫১

সকালের কাগজটা ওল্টাতে পাল্টাতে এক জায়গায় এসে কয়েক মুহূর্ত থামল রাইন। ছোট্ট একটা খবর। কিন্তু ব্যাপারটা বেশ কাজের, অন্তত নিজের ছবি নিজে তোলার ‘বাতিক’ বেশ জাঁকিয়ে বসেছে যাদের মধ্যে, তাদের কাছে তো বটেই। খবরটা এ রকম, ভিনদেশি বিজ্ঞানীরা ভেবে-চিন্তে এক আয়না-ক্যামেরা বানিয়েছেন। যার সামনে দাঁড়ালেই উঠে যাবে নিজের ছবি। ত্যাঁড়াব্যাঁকা হওয়ার বা নড়ে যাওয়ার চান্সই নেই!

'কিন্তু তা হলে তো আসল মজাটাই চলে যাবে'! হই-হই করে বলে উঠল ইমন। চ্যাটে এ নিয়েই কথা হচ্ছিল ওদের।

সেল্‌ফি-র রমরমাটা বেশ ভাবাচ্ছে রাইনকে, ক’দিন ধরে। লোকে এখন মাল্টিপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে গিয়েও ইন্টারভ্যালের সময়ে টয়লেটে গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করে!

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক, দিল্লির জেএনইউ থেকে স্নাতকোত্তর করে গবেষণা করছে ইমন। দিল্লির ক্যাম্পাসে হস্টেল নাইটে এক দঙ্গল বং মিলে একটা ‘সেল্‌ফি’ তুলে সদ্য ফেসবুকে লাগিয়েছিল ওরা। জব্বর হয়েছিল ব্যাপারটা। ইমনের বক্তব্য, 'আজকাল তো ভালই লাগছে এটা। বেশ চট করে সেই মুহূর্তটা বা মুডটা ধরা পড়ছে। ফটোগ্রাফারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে অনেক সময়ে ওই স্বতঃস্ফূর্ততাটা হারিয়ে যায়, কিংবা একটু কৃত্রিম হয়ে যায় ব্যাপারটা। আমি যেমন একটু অস্বস্তিতে পড়ে যাই ফটোগ্রাফার হাসতে বললে। সেল্‌ফি-তে সে সবের বালাই নেই। একটু ত্যাঁড়াব্যাঁকা মুখগুলো বেশ বাস্তবটাকে রিফ্লেক্ট করে। তাই আমার তো মনে হয়, সেল্‌ফি-তে আমাকে কেমন দেখাচ্ছে, সেটা বড় কথা নয়। ওই মুহূর্তের মুডটাই বেশি জরুরি'।

হুঁ, হক্ কথা। এ কথাটাকে তো ফেলে দেওয়া যায় না! কিন্তু রাইনের আর এক বন্ধু উত্তর ২৪ পরগনার এক অংশে মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে কর্মরত প্রজ্ঞাদীপা যে আবার বলে বসল, 'সেল্‌ফি জিনিসটা কেমন সেলফিশ জিনিস যেন! নিজেকে আয়নায় দেখতে ভাল লাগে। সেল্‌ফি-তে সেই ভাল লাগা একটু দীর্ঘস্থায়ী করে রাখা আর কি! তবে কি জানিস'? যোগ করল প্রজ্ঞা, 'আমরা যারা একটু প্রান্তবাসী, জীবিকাগত কারণেই হাতিয়াড়া বা কার্তিকপুর যাদের মানচিত্রে পড়ে, তারা অত সেল্‌ফি-সচেতন নই। অচেনা লোককে যেমন আমরা ভাল বা মন্দ কোনওটাই বাসি না। জাস্ট আলাপ করে দেখতে পারি। সেল্‌ফি-ও তাই। তুলে দেখি। তবে তাতে পছন্দ বা অপছন্দ কোনওটাই নেই'।

বরের সঙ্গে স্টেটস্-এ থাকে রাইনের মাসতুতো দিদি পৌলোমী। সে-ও একই সুর গাইল, 'এটা যেন একটা অবসেশন হয়ে গিয়েছে। এমনকী, রাজনৈতিক সমাবেশ, প্রতিবাদ মিছিল বা শ্মশানে গিয়েও লোকে সেল্‌ফি তুলে ট্যুইট করছে। ক্রমশই বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে ব্যাপারটা'।

ফ্রান্স থেকে এ দেশে এসেছে বছর পঁচিশের পিয়ের-আঁতোয়ান। ফরাসি শিক্ষাকেন্দ্রেই তার সঙ্গে আলাপ রাইনের। এ শহরে এসে বাঙালি এক বিশেষ বান্ধবী জুটেছে তার। দোলের সময়ে রং মেখে যুগলে একটা সেল্‌ফি তুলে ফেসবুকে আপলোডিতও হয়েছে। তবে তা নিয়ে বেশি মাথা ঘামাতে রাজি নয় পিয়ের। তার ক্যাজুয়াল জবাব, 'কেউ কেউ নিজেকে দেখতে বেশি ভালবাসে। উপায় না থাকলে তারা নিজেদের ছবি নিজেরাই তোলে। আমি নিজেকে দেখতে ততটা ভালবাসি না। তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলারও নেই আমার'।

কিন্তু বিশেষজ্ঞেরা কী ভাবছেন এই সেল্‌ফি-জ্বর নিয়ে?

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল বললেন, 'সেলফিকে একটা সামাজিক শব্দ বা সোশ্যাল টার্ম বলা যেতে পারে। সেল্‌ফ অর্থাৎ আমি-টাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার প্রবণতা লুকিয়ে আছে যার মধ্যে। নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিত্বের চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটে এই প্রবণতায়। এমনিতেই বিশ্বায়নের এই ভোগবাদী সময়ে দশের মধ্যে এক হওয়া, অন্যকে টেক্কা দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা থাকে সকলের মধ্যে। সহাবস্থানের মন আর কারও নেই বললেই চলে। তার মধ্যে সর্বক্ষণ এই আমি-টাকে জানান দেওয়ার চেষ্টা কিন্তু কিছুটা নিরাপত্তাহীনতারই পরিচয় দেয়'।

মার্কিনি জার্নাল উল্টেও ওই একই কথা দেখতে পেল রাইন। আমেরিকার সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সেলফি তুলে যাওয়া একরকমের মেন্টাল ডিজঅর্ডার ছাড়া আর কিছুই নয়। অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার থেকেই না কি নিজেকে নিয়ে এতটা মত্ত হয়ে পড়ে মানুষ। সেটার আবার একটা গালভরা নামও দিয়েছেন মার্কিন মনোবিদরা- সেলফিটিস! এর মাত্রা যত বাড়ে, তত চারপাশের দুনিয়া ভুলতে থাকে মানুষ। আর পাত্তা না পেলেই শুরু হয় মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় পড়ে যাওয়া!

কিন্তু এখন তো খবরের কাগজে, নিউজ সাইটে, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে সর্বত্র সেলফি-রই রমরমা। চলচ্চিত্র-তারকারা তো বটেই (তাঁরা তো শো-বিজেই আছেন), রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, দেশপ্রধান কেউই বাদ যাচ্ছেন না সেই তালিকা থেকে। নীলাঞ্জনাদেবীর মত, 'সেখানেও নিরাপত্তাহীনতাটাই প্রকাশ পায় না কি? প্রতি মুহূর্তে আমাকে কেমন দেখাচ্ছে, সেটা সকলকে জানিয়ে আমাকে সকলের মনে বাঁচিয়ে রাখা। এটাই তো মূল ভাবনা'!

যাক্ গে, শেষ বারের মতো প্রশ্নটা ছুঁড়েছিল রাইন অভি-র দিকে। অভিনব মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ায় রিসার্চ করছে। সে তো শুনেই হেসে কুটিপাটি, 'প্রশ্নটা শুনে পুরো হুব্বা হয়ে গিয়েছি, বিশ্বাস কর! সেল্‌ফি নিয়ে যে এত প্রশ্ন হতে পারে, বাপের জন্মে শুনিনি'!



সুত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.