নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুনির অনাহারী শৈশব

১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯


"আমি যামু না মা......আমি যামু না বাজান......ও বাজান, আমি তোমার কাছে আর লাল জামা চামু না। মা তোমার কাছে বারে বারে কমু না আমার পেডে ভুক লাগছে, ভাত দও। বাবুইন্না আমারে না দেকলে কাঁনবো, ছুটুইন্না আমারে ছাড়া ঘুমাইতো না......."

টুনির চিৎকার করে বলা কথাগুলো এক সময় ট্রেনের শব্দে মিলিয়ে গেলো। দিনমজুর অভাবী বাবার কলিজার টুকরাকে নিয়ে ট্রেন ঢাকার দিকে ছুটে চলল। স্টেশনে দাঁড়িয়ে মা মুখে আঁচল চাপা দিয়ে কাঁদছে , বাবা কাঁধের গামছা দিয়ে চোখ মুছছেন........
দিনমজুর লালু মিয়ার পাঁচজন ছেলে-মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসার। সবাইকে পেটভরে খাবার দিতে পারে না। মেজো মেয়ে টুনি, সাত-আট বছর বয়স। গ্রামের চেয়ারম্যানের মেয়ে ঢাকা থাকে, মেয়ের বাচ্চা রাখার জন্য মেয়ে-জামাই টুনিকে নিতে চাইছে। টুনি যেতে চাইছে না কিন্তু তার বাবা-মা চাইছে সে যাক, অন্তত তিনটা বেলা পেট ভরে ভাত খাইতে পাবে এই আশায়।

ট্রেনে উঠার পর থেকে টুনি শুধু কেঁদেই চলেছে। যে তাকে নিয়ে যাচ্ছে, সেই মামা টুনিকে এক প্যাকেট চিপস কিনে দিলো। সে তো কোনদিন আস্ত এক প্যাকেট চিপস খায়নি । সব ভাই-বোন মিলে ভাগ করে খেতো, ভাগ করে খেয়েও তারা কত খুশি ছিলো। আজ আস্ত চিপসের প্যাকেট পেয়ে ভাই বোনদের জন্য বুকটা হু হু করছে। টপ টপ টুনির চোখের পানি পড়ছে........
চোখের সামনে ভাসছে তার মা-বাবা আর ছোট ভাই বোনদের অনাহারী মুখ। মনে পড়ছে তার ফেলে আসা পরিবারটার কথা, তাদের সাথে কাটানো শৈশবের কথা। কেনো বাবা তাকে তাদের কাছ থেকে এতো দূরে পাঠালো?? ভালোই তো ছিলো তাদের সাথে খেয়ে না খেয়ে......!
টুনিকে ছাড়া তার ছোট ভাইটা ঘুমায় না। তার উপোস ভাই বোনদের ফেলে কি ভাবে সে পেট ভরে ভালো ভালো খাবার খাবে। উপোস ভাই বোনদের কথা মনে পড়লে তার গলা দিয়ে কি আদৌ ভালো খাবার নামবে.......!!!
ঢাকা ট্রেন থামলো, সবাই হুড়াহুড়ি করে নামছে। টুনি যে বাসায় যাচ্ছে সেই মামা মামিও নামছে তাদের বাচ্চাকাচ্চা আর ব্যাগপত্র হাতে নিয়ে, পিছনে টুনি। হঠাৎ মামা ঘাড় ফিরিয়ে দেখেন টুনি নাই। কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজি করলেন, টুনিকে না পেয়ে নেমে গেলেন। ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে......

টুনি ট্রেনের সিটের নীচ থেকে বের হলো, ততক্ষণে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। যখন যাত্রী ট্রেনে উঠছিলো সবাই বলছিলো, এই ট্রেন আবার রাতে নোয়াখালী ফিরবে।
চাই না তার পেট ভরে ভাত, চাই না তার ভালো ভালো খাবার, চাই না তার ভালো থাকা ।টুনি সেই ট্রেনে করে আবার ফিরে যাচ্ছে তার শৈশব কাটানো গ্রামে, ফিরে যাচ্ছে তার প্রানপ্রিয় অনাহারী পরিবারের কাছে, ফিরে যাচ্ছে তার উপোস থাকা মা-বাবা ভাই বোনদের কাছে...........

[#উৎসর্গ_শিশু_দিবসের_সকল_শিশুকে.....]
[#শিশুশ্রম_বন্ধ_হোক।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


জাতি মানে সালমান রহমান, কর্ণেল ফারুক, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, আলম ব্রাদার্স, বাদল, ফালু, আব্বাস, নোমানরা; বাকীরা টুনি

২| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২২

আহমেদ জী এস বলেছেন: সালমা রুহী ,




এ হলো জীবনের আর এক দিক ! ভালো লিখেছেন ।

"শিশুশ্রম বন্ধ হোক" খুব ভালো একটি শ্লোগান আমরা দিই বটে কিন্তু একটা কথা থাকে , আমাদের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে শিশুকে শ্রমে না লাগিয়ে বাবা-মায়ের যে চলেনা ! যে কথা আপনিও বলেছেন টুনির বাবার ইচ্ছেতে যে, অন্তত তিন বেলা পেট পুরে খেতে তো পারবে টুনি । সব বাবা-মায়েরাই অর্থনৈতিক টানা পোড়েনে এমনটা করতে বাধ্য হন । সমাজ -রাষ্ট্র এদের দায়ভার নেয়নি কখনও, নেবেও না ।
আমরা যা করতে পারি তা হলো এই -- শ্রমে নিযুক্ত সব শিশুদের সাথে মানবিক আচরণ করতে । এটা করতে নিশ্চয়ই পয়সা লাগেনা , রাষ্ট্রের মুখ চেয়ে বসে থাকতে হয়না ।

৩| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৮:২৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: শিশু শ্রম বন্ধ হোক

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:২৫

মিরোরডডল বলেছেন: সম্পূর্ণভাবে একমত

৫| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:২৩

সালমা রুহী বলেছেন: খুব সুন্দর একটি উক্তি। আমি একমত আপনার সাথে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.