নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝিনুকের মালা

২০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১০


'নীলাঞ্জনা' আমি ডাকতাম নীলা।
ক্লাশ 'সিক্স' থেকে 'নাইন' একসাথে পড়েছি। নীলাকেই আমার সব'চে প্রিয় বান্ধবী বলা যায়। স্কুলে আমি আগে গেলে নীলার জন্য জায়গা রাখতাম, নীলা আগে গেলে আমার জন্য জায়গা রাখতো। এক সাথে টিফিন খাওয়া, ছুটি হলে একসাথে গল্প করতে করতে বাড়ী ফেরা.........
নীলা আর আমি দরকারে একজন আরেকজনের জন্য জীবন দিতে পারবো, এত ঘনিষ্ঠতা আমাদের।

নীলা আমাদের স্কুলের দপ্তরির মেয়ে। উনাকে আমরা 'খালেক চাচা' বলে ডাকি।
ইদানিং নীলা প্রায়ই স্কুল বন্ধ করে, জিজ্ঞেস করলে বলে শরীর খারাপ থাকে। এলাকার ডাক্তার দেখিয়ে ঔষধ খাচ্ছে, কিন্তু তেমন কোনো ফল পাচ্ছে না।

সে ভালো ছাত্রী ছিলো, সবসময় তার রোল এক থেকে তিনের মধ্যে থাকতো.......
সামনে পরীক্ষা এভাবে শরীর খারাপ চললে যে তার পরীক্ষা খারাপ হবে।
নীলার বাবা নীলাকে ঢাকা নিয়ে গেলেন, সেখানে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানা গেলো, নীলার হার্টের ভালব নষ্ট হয়ে গেছে। যত দ্রুত সম্ভব অপারেশন করাতে হবে। অনেক টাকার প্রয়োজন, দপ্তরির এই সামান্য বেতনে অপারেশন সম্ভব না........

স্কুলে সব ক্লাশ থেকে টাকা উঠানো হলো। এলাকার অন্যান্য স্কুল থেকেও টাকা উঠানো হলো। পত্রিকায়ও সাহায্য চাওয়া হলো। নীলা ঢাকা যাচ্ছে অপারেশনের জন্য, আমরা সব বান্ধবীরা গেলাম নীলাকে বিদায় দিতে। আমাকে জড়িয়ে নীলার সে কি কান্না!!!! আমিও অনেক কাঁদলাম। নীলা যাবার সময় আমাকে একটা ঝিনুকের মালা দিয়ে গেলো.......
নীলাকে ছাড়া স্কুলে একদম ভালো লাগে না, খালি অপেক্ষা করছি কখন নীলা আসবে??

একদিন স্কুলে গিয়ে শুনি নীলার অপারেশন সাকসেসফুল হয়নি, টাকার অভাবে অপারেশন করাতে দেরি হয়ে গেছে।

খালেক চাচার মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না, তাকালেই নীলার কথা মনে পড়ে যেতো। চাচাও আমাকে দেখলে এগিয়ে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতেন, "মারে তোমারে দেখলে আমার নীলার কথা বেশি মনে পড়ে....."
মেট্রিক পরিক্ষার বিদায় অনুষ্ঠানে, আমাদের কান্না দেখে স্যারেরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না।
"আজ তো তোমাদের মতো আমার মেয়েও স্কুল থেকে বিদায় নিতো, কিন্তু আমার মেয়ে তো এই পৃথিবী থেকেই বিদায় নিয়ে নিলো........!" কথাগুলো বলতে গিয়ে খালেক চাচা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।

নীলার দেওয়া সেই ঝিনুকের মালাটা আজো আমার কাছে আছে।
এত বছর পরেও নীলার কথা মনে পড়লে, নীলার দেওয়া সেই ঝিনুকের মালাটা সযত্নে স্পর্শ করি, কারণ মালাটাতে যে এখনো নীলার হাতের স্পর্শ লেগে আছে.........!!!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৫

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: খুবই দুঃখজনক। নীলার জন্য প্রার্থনা রইল।

২| ২০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:০০

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: প্রীয়জন হারানো ব্যাথা অনেক কষ্টের। নীলার কথা মনে করে নীলার জন্য দোয়া করবেন। নীলার পরপারের জীবন সুখের হউক। ভাল থাকুক নীলা যেখানে আছে।

৩| ২০ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩৬

তারেক ফাহিম বলেছেন: দুঃখ জনক

৪| ২১ শে মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:১৪

খাঁজা বাবা বলেছেন: অত্যন্ত কষ্টের

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.