নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুনিয়ার মজদুর এক হও

০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ২:২৫


সবির মিয়া দু'দিন পরে সাইটে কাজে গিয়েছে, বৃষ্টির জন্য দু'দিন কাজে যেতে পারে নি। সবির মিয়া একজন রাজমিস্ত্রি, রোজ তিনশত টাকা পায়। সকাল নয়টায় কাজে যায়, আসে ছয়টায়। মাঝে দুপুরের খবারে বিরতি এক ঘন্টা।
যেদিন বৃষ্টি থাকে সেদিন কাজ বন্ধ, টাকাও বন্ধ। আকাশ খারাপ দেখলে শুধু আল্লাহকে ডাকে, যেন বৃষ্টি না হয়।

সবির মিয়ার সংসারে সাতটা মুখ, মা বাবা তিনটা বাচ্চা আর তারা স্বামী স্ত্রী দু'জন। যেদিন কাজ বন্ধ থাকে, সেদিন এই মুখ গুলোতে খাবার তোলা কষ্ট হয়ে যায়।
দুইটা বাচ্চা স্কুলে যায়, ওদের স্কুল খরচ, মা বাবার ঔষধ খরচ, ঘড় ভাড়া, ভবিষ্যৎ সঞ্চয় হিসাবে বউ একটা সমিতি চালায়।

তিনশত টাকায় সব কিছু করতে গিয়ে সবির মিয়া হিমশিম খায়।
সবির মিয়া সাত তলা একটা বাড়ির কাজ করছে, এক বিরাট বড়লোকের বাড়ি। কি সুন্দর বাড়ি, যতদিন কাজ করে ততদিনই...!

তারপর এমন একটা বাড়িতে পা রাখার দুঃসাহস হয় না, বাড়ির কাজ শেষ হলে, কোন দিন তাদের একটু বসতেও বলেনা। আরো তাদের দেখে যেন নাক সিটকায়।
অথচ এমন সুন্দর বাড়ি তৈরিতে, বাড়ির ইট সুরকির সাথে সবির মিয়ার মত শ্রমিকদের কত ঘাম মিশে আছে।

বিকেলে' নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের লিডার' আলমগির ভাই এসেছেন।
খুবই শিক্ষিত ও একজন ভাল মানুষ। শ্রমিকদের খুব আদর করেন, সব শ্রমিকদের একসাথে জড় করে বললেন, "কাল 'মে দিবস' সকাল নয়টায় সবাই পৌরসভায় থাকবে, সেখান থেকে দশটায় রেলী বের হবে। রেলীর শ্লোগান হবে, দুনিয়ার মজদুর এক হও, এক হও......, কেউ খাবে, কেউ খাবে না....,তা হবে না, তা হবে না...!"

মাথার মধ্যে বাধার জন্য সবাইকে লাল কাপড়ের পট্টি দিয়ে গেছে।
আরও বললো, "মে দিবস উপলক্ষে কাল কাজ বন্ধ।"
সবির মিয়া চিন্তায় পড়ে যায়। একদিন কাজ বন্ধ থাকা মানে, একদিনের কাজের টাকা বন্ধ। আর কাজের
টাকা বন্ধ থাকা মানেই সংসারটা টানা হ্যাঁচড়ায় পড়া।

সাহস করে সবির মিয়া, আলমগির ভাইকে জিজ্ঞেস করে ভাই এই দিনে কি হইছিলো, কাজ বন্ধ না থাকলেই তো ভালা ছিলো, একদিন বন্ধ করলে তো ভাই লস হয়া যায়। রোজের তিনশ টেহাডা মাইর.....!"

আলমগির ভাই অবাক হয়ে বললেন, " আরে পাগল, এই দিনটা তো তোদের জন্যই, তোদের মত শ্রমিকদের শ্রমকে আট ঘন্টা করার জন্যই তো এই দিনে কত রক্ত ঝরল।"
এই দিনের ইতিহাস বলি শোন,"মে মাসের প্রথম তারিখ হল 'শ্রমিক দিবস'।
১৮৮৬ সালের ১লা মে (আমেরিকার) শিকাগো শহরে শ্রমিকদের দাবি ছিল, প্রতিদিন মাত্র আট ঘন্টা শ্রম দিবে, মুজুরির টাকা বৃদ্ধি, কাজের উন্নতর পরিবেশ ইত্যাদি।
এই দাবীগুলোর জন্য শ্রমিক সংগঠন শিল্প 'ধর্মঘটের' ডাক দেয়।
৩মে ধর্মঘটী শ্রমিকদের এক প্রতিবাদ সমাবেশে পুলিশের গুলি বর্ষণে ৬জন শ্রমিক মৃত্যু বরণ করে।
এর প্রতিবাদে পরের দিন শিকাগোর 'হে মার্কেটে' শ্রমিক সমাবেশে, কারখানার মালিকদের বোমা বিস্ফোরণে ৪জন শ্রমিক নিহত হয়।

ধর্মঘট সংটিত করার জন্য 'আগষ্ট স্পাইস' নামে এক শ্রমিকের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়।

১৮৮৯ সালে ১৪জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশালিস্ট কংগ্রেসে ১লা মে' শ্রমিক দিবস' হিসাবে ঘোষিত হয়।
তখন থেকে' শ্রমিক দিবসটি' উদযাপিত হয়ে আসছে।

কুরআন শরীফের ১২টি সুরাতেও শ্রমিকদের ব্যপারে বলা হয়েছে।
আর হাদীসেও আছে,,,,,
হুজুর( সাঃ) বলেছেন," তোমরা শ্রমিকের মুজুরীর টাকা শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে দিয়ে দাও।"

এবার সবির মিয়ার মুখে হাসি ফুটলো। থাক তাহলে একদিনের রোজের টাকা না পাক, তবুও এই দিনটার জন্য যারা জীবন দিয়েছে, তাদের সম্মানে মাথা নুয়ে আসলো।
সেই শ্রমিকরা যদি আট ঘন্টা শ্রমের সময় না করতো, হয়তো বারো ঘন্টা কাজ করতে হতো।

'১লা মে' সকালে সব শ্রমিকরা রাস্তায় রেলী বের করেছে, মাথায় লাল কাপড় বেধে, হাতে কাস্তে কোদাল নিয়ে রাজপথ কাঁপিয়ে কি সুন্দর করে শ্লোগান দিচ্ছে, "দুনিয়ার মজদুর এক হও, এক হও.....!
কেউ খাবে, কেউ খাবে না.....! তা হবে না, তা হবে না.....।"

রেলিতে বেরিয়ে এই ভেবে সবির মিয়ার বুক গর্বে ফুলে গেছে, "সবাইতো শ্রমিকদের অবজ্ঞার চোখে দেখে, কামলা বলে, লেবার বলে, কখনো ভাবেনি তাদের মত শ্রমিকদের জন্যও বছরে একটা দিন আছে, সেই দিনটার নাম 'শ্রমিক দিবস'........!"

(উৎসর্গ - সকল শ্রমিককে, 'শ্রমিক দিবসের 'শুভেচ্ছা........।)

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ২:৩০

আবু আফিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ, আমাদেরও এই কামনাই থাকবে শ্রমিকরা তাদের কাজের মূল্যায়ন পাক।

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

সালমা রুহী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

২| ০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ২:৪০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
"শ্রমিক মালিক ভাই ভাই সোনার বাংলা গড়তে চাই"

৩| ০১ লা মে, ২০১৮ দুপুর ২:৫১

অনিন্দ্য অন্তর অপু (অঅঅ) বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা। ধন্যবাদ আপনাকে

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৪

সালমা রুহী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।

৪| ০১ লা মে, ২০১৮ বিকাল ৪:২৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: শ্রমিক মালিকের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ হো। শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার পাক এই কামনায়। আপনি সহ সবাইকে মে দিবসের শুভেচ্ছা।

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৪

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০১ লা মে, ২০১৮ বিকাল ৪:৩২

আখেনাটেন বলেছেন: দুনিয়ার মজদুর কখনও এক হতে পারে না কিংবা বলা ভালো হতে দেওয়া হয় না। সিস্টেম সেভাবেই দাঁড় করানো হয়েছে।
তাই তাদের অবস্থার উন্নতি সময়ের সাথে খুব একটা হেরফের নেই।

ভালো লাগল আপনার ভাবনা।

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৫

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ

৬| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১০:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লেখা।

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ৯:৫৫

সালমা রুহী বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ০১ লা মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৭

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: লাল আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দিগন্ত থেকে দিগন্তে,
কী হবে আর কুকুরের মতো বেঁচে থাকায়?
কতদিন তুষ্ট থাকবে আর
অপরের ফেলে দেওয়া উচ্ছিষ্ট হাড়ে?
মনের কথা ব্যক্ত করবে
ক্ষীণ অস্পষ্ট কেঁউ-কেঁউ শব্দে?
ক্ষুদিত পেটে ধুঁকে ধুঁকে চলবে কতদিন?
ঝুলে পড়া তোমার জিভ,
শ্বাসে প্রশ্বাসে ক্লান্তি টেনে কাঁপতে থাকবে কত কাল?
মাথায় মৃদু চাপড় আর পিঠে হাতের স্পর্শে
কতক্ষণ ভুলে থাকবে পেটের ক্ষুদা আর গলার শিকলকে?
কতক্ষণ নাড়তে থাকবে লেজ?
তার চেয়ে পোষমানাকে অস্বীকার করো,
অস্বীকার করো বশ্যতাকে।
চলো, শুকনো হাড়ের বদলে
সন্ধান করি তাজা রক্তের,
তৈরী হোক লাল আগুনে ঝল্সানো আমাদের খাদ্য।
শিকলের দাগ ঢেকে দিয়ে গজিয়ে উঠুক
সিংহের কেশর প্রত্যেকের ঘাড়ে।

সুকান্ত ভট্টাচার্য, ১লা মে-র কবিতা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.