নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সালমা রুহী

সালমা রুহী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের কাছে লেখা চিঠি

০৪ ঠা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:০৯


মা...মাগো,

তুমি কেমন আছো?
জানো মা, প্রায় সাত বছর হলো তোমাকে দেখি না, তোমাকে মা ডাকতে পারি না।
কিভাবে দেখবো বলো? "সাত বছর আগে তুমি তো আমাদের ছেড়ে, এই নিষ্ঠুর পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছো না ফেরার দেশে।"

মনে পড়ে মা, বাবা যাওয়ার পরে তুমি বলতে, "আকাশের ঐ উজ্জ্বল তারাটা আমাদের বাবা।"
"আজকের আকাশের পাশাপাশি দুইটা উজ্জ্বল তারা কি তুমি আর বাবা, আচ্ছা মা বাবা কি আগের মতই আছে.....?"

মা, তুমি কি আমাদের উপর রাগ করেছিলে," কারন তোমার চিকিৎসা যে দেরী হয়ে গিয়েছিলো?"
এখানে আমাদের কি দোষ বলো, "তোমার পেটের ব্যথার জন্য যতবার তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছি, ততবার ডাক্তার বলেছে তোমার পেটে আলসার, তোমাকে আলসারের চিকিৎসা দিতো।"

মাগো, "আমরা কি জানি তোমার পেটে আলসার না ক্যান্সার বাসা বাঁধছে।"

যখন জানলাম তখন তো অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো। তবু মা হাল ছাড়ি নি, আমি আর ভাইয়া তোমাকে অপারেশনের জন্য নিয়ে গেলাম।

অপারেশন সাকসেসফুলও হলো, আল্লার কাছে শুকরিয়া করলাম। ভাবলাম আল্লাহ তোমাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিলেন।

মা তোমার আর আমার রক্তের গ্রুপ এক, ডাক্তার যখন বললেন, "অপারেশনের সময় রক্ত লাগবে।"
আমি খুশি হয়ে গেলাম, "আমি আমার মাকে রক্ত দিব, আমার জীবন ধন্য মনে করলাম।"

রক্ত দিতে গিয়ে শুনি ডাক্তার আমাকে বলছেন, " আমি রক্ত দেওয়ার জন্য ফিট না , কারণ তোমার অপারেশনের আগে তিন দিন হাসপাতালে তোমাকে নিয়ে না খেয়ে, না ঘুমিয়ে অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছি। আমার শরীরে অনেক ধকল গেছে, তখন আমার ক্লান্ত শরীরের রক্ত ডাক্তার নেয়নি। "

ভাইয়ার বন্ধু সাদি ভাই তোমাকে রক্ত দিলো। অপারেশনের পর তোমার জ্ঞান ফিরে আসলে তুমি সাদি ভাইকে ডেকে বললা, "বাবা তুমি আমাকে রক্ত দিয়ে ঋণী করে ফেললা, আমার গায়ে তোমার রক্ত।"

খুশিতে দিন গুনছি তোমাকে নিয়ে বাড়ী ফিরবো, তুমি আস্তে আস্তে ভালো হয়ে যাচ্ছো, হাসপাতালের বেডে শুয়ে ফোনে বাড়ীতে সবার সাথে কথা বলছো।

ডাক্তার তোমাকে সারাদিন শুধু স্যালাইননের উপর রাখছে, কোন খাবার দিচ্ছে না। তুমি খেতে চাইতে কিন্তু ডাক্তার বলতো, "এত বড় অপারেশনে এখন খাবার দেওয়া যাবে না।
পেটের অর্গান গুলো কাঁটাছেড়া হয়েছে, রোগী এখন খাবার হজম করতে পারবে না বমি হবে আরও দুইটা দিন দেখি তার পর দিবো।"

মা তুমি চা খেতে খুব পছন্দ করতে, ভাত না খেয়ে থাকতে পারতে কিন্তু চা না খেয়ে থাকতে পারতে না।
একদিন আমাকে আস্তে আস্তে বললা," মারে, ডাক্তার কে না দেখিয়ে আমাকে একটু চা খাওয়াবি...!

মাগো, তোমার ভালোর কথা চিন্তা করে সেদিন তোমাকে চা খাওয়াইনি।
জানো মা," আজো চা খেতে গেলে তোমার কথা মনে হলে গলার কাছে কি যেন এসে আটকে যায়.....!"

অপারেশনের পাঁচদিন হয়ে গেছে, সকালেও তুমি ভাল ছিলে। হাসপাতালের বেডে আমি নিজ হাতে তোমাকে গাঁ মুছিয়ে কাপড় বদলে দিলাম।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে তোমার কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসলো....। ডাক্তার আসলেন, তোমার পালস.বিপি. চেক করে বললেন, "রুগীর পালস. বিপি. ডাউন হচ্ছে, তাড়াতাড়ি আই.সি.ও তে ভর্তি করেন।"

মাগো, তুমি সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মৃত্যুর সাথে লড়াই করলে, জীবন আর মৃত্যুর লড়াইয়ে মা তুমি হেরে গেলে.....!

পৃথিবীতে এতো বাতাস, আর তুমি একফোটা বাতাস বুকে টেনে নিতে পারছো না। বাতাসের জন্য হাহাকার করে আমাদের ছেড়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিচ্ছো...!!

জানো মা, ডাক্তারি ভাষায় ঐ সময়টাকে কি বলে?
"এয়ার হাংগার... বাতাসের ক্ষুধা....!!!"
'এয়ার হাংগার ' শুরু হলে ডাক্তাররা বুঝে যায়, রোগীর চলে যাওয়ার সময় এসে গেছে।

ডাঃ গুলজার হুসেন উজ্জ্বল এসে বললেন, " আপনাদের মায়ের 'এয়ার হাংগার' শুরু হয়ে গেছে। শেষ দেখা......!"

তোমাকে শেষ বিদায়ের জন্য আমাকে আর ভাইয়াকে আই.সি.ইউ তে নেয়া হচ্ছে।
মা, আমি চোখ বুজে ছিলাম, "তোমার মৃত্যু যন্ত্রণার মুখ আমি কি ভাবে দেখি বলো....?"

"মা তুমিও কিন্তু চোখ মেলে আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখনি, হয়ত ভাবছিলা এই প্রিয় মুখগুলি ছেড়ে কিভাবে চলে যাবে.....!!

পরে বায়োপসির রিপোর্ট এ জানলাম তোমার পেটের ক্যান্সার লাষ্ট স্টেজে চলে গিয়েছিল। বয়সের জন্য এত বড় অপারেশনের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারো নি। ঘায়ে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল।
"মাগো আমাদের ক্ষমা করে দিও, আমরা তোমাকে বাঁচানোর সব চেষ্টাই করলাম কিন্তু বাঁচাতে পারলাম না....."

মা, তোমার শাড়ীগুলো এখনো আমার আলমারিতে ভাঁজ করা।
আলমারি খুললে এখনো মনে হয় শাড়ীগুলোতে তোমার গায়ের মা গন্ধ লেগে আছে।
কত সুন্দর করে শাড়ী গুলি পড়তে, নীল রাজশাহী সিল্ক শাড়ীটা পরলে তোমাকে কিযে সুন্দর লাগতো।

তোমার নবরত্ন তেল, বাবা জর্দা, তিব্বত স্নো সবই রেখে দিয়েছি যত্ন করে। এসব কিছুর ব্যাবহারে তোমার গা থেকে কি সুন্দর একটা গন্ধ আসতো। আমি চোখ বুজে থাকলেও তোমার উপস্থিতি টের পেতাম।
মাগো সবই তো আগের মতোই আছে, নেই শুধু মায়ের গন্ধটা....!!!!

মা তোমাকে চিঠিতো লিখলাম কিন্তু চিঠিটা পাঠানোর কোন ঠিকানা তো নাই মা.....!!
চিঠিটা তোমার প্রিয় নীল রাজশাহী সিল্ক শাড়ীর ভাঁজে রেখে দিলাম।

একদিন আমার মেয়েও এরকম একটা চিঠি লিখে, আমার প্রিয় শাড়ীর ভাঁজে রেখে দিবে।
"এটাই তো পৃথিবীর নিয়ম....!!!"

"বেহেশতের বাগানে বাবার সাথে ভাল থেকো মা......"

ইতি
'তোমার আদরের.....'

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২২

মৌরি হক দোলা বলেছেন: একদিন আমার মেয়েও এরকম একটা চিঠি লিখে, আমার প্রিয় শাড়ির ভাঁজে রেখে দিবে।
“এটাই তো পৃথিবীর নিয়ম....!!!”


সত্যিই এটি পৃথিবীর নিয়ম, সবচেয়ে বড় এবং কঠিন নিয়ম!

২| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: রূহী আপা। চমৎকার লেখনি। আমার সন্তান/পরিবার কিছুই নেই। তারপরও এই ভালবাসার বন্ধন অনুধাবন করতে পারি। ছুটির দিনের শুভেচ্ছা।

০৪ ঠা মে, ২০১৮ রাত ৯:২০

সালমা রুহী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০২

জাহিদ হাসান মিঠু বলেছেন:

আপনার চিঠি পড়তে পড়তে খুব কষ্ট হচিছল, তারপরও পড়ে শেষ করলাম।

বেহেশতের বাগানে আপনার বাবা- মা সুখে শান্তিতে থাকুক এই কামনা।

ভাল থাকুন, সব সময়।

০৪ ঠা মে, ২০১৮ রাত ৯:২৩

সালমা রুহী বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। অমীন।

৪| ০৪ ঠা মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪০

পবন সরকার বলেছেন: চিঠি পড়ে হৃদয় নাড়া দিয়ে উঠল।

৫| ০৫ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: অনবদ্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.