নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ্যালো জয় !

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:১৭



আপনার নাম জয় কেন ? এ নামটি আপনি কেমন উপভোগ করেন ? এমনটিই ছিল তার কাছে প্রথম প্রশ্ন । মনেহলো আগে থেকেই তিনি জানতেন আমি এরকম একটি প্রশ্ন করবো। একারনেই হয়তো ঝটপট উত্তর দিলেন: “১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার জন্ম। আমার এবং বাংলাদেশের বয়স কিন্তু এক ! জয়-বাংলা শ্লোগানেই কিন্তু দেশ স্বাধীন হয়। আমার নানা তাই আমার নাম রেখেছিলেন জয়। মা সব সময় আমাকে বলেন- যত দিন বেঁচে থাকবি এমন কোন কাজ করবি না, যার কারনে তোর নানা ও এ নামের বদনাম হয়।” এ কথা শোনার পর রোজ ভিউ হোটেলের হল ঘরের সব তরুন-তরুনীরা করতালিতে ফেটে পরে। হ্যা কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের তরুন আইটি বিশেষজ্ঞ ও প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়-এর সাথে। সেন্টার ফর রিসার্স এন্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এ উদ্যোগে মাছরাঙ্গা টেলিভিশনের অনুষ্ঠান “লেটস টক” এ সজীব ওয়াজেদ জয় কথা বললেন সিলেটের তরুন তরুনীদের সাথে। উদিয়মান ও আলোচিত এই রাজনীতিবিদের সাথে আমিও কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলাম।

কয়েকদফা চেকিং এর আগেই আমার সার্বক্ষনিক সঙ্গী মোবাইল ও ক্যামেরাটি জমা দিতে হলো। সিকিউরিটি ব্যাবস্থা ছিল মারাত্মক। স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স একটা লোহার টুকরাও শরীরে থাকতে দেয় না। অনেকের কোমরবন্ধনী পর্যন্ত খুলিয়ে ছেড়েছে। সিলেটের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, বিতার্কিক সংগঠনগুলো থেকে বেছে বেছে সবাইকে এ অনুষ্ঠানে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এম এ জি ওসমানি মেডিকেল কলেজ, লিডিং ইইনিভার্সিটি, এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিই ছিল বেশি। ঢুকার আগেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উন্নয়নের ভিডিওচিত্র “আপনি জানে কি?” চলছিল। এ প্রচারনাগুলো আরো আগে শুরু হলে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে নেতিবাচক ধারনা গুলো পোষন করে তা সামান্য হলেও কমতো বলে আমি মনে করি। তবে “জয় বাংলা বলে আগে বারো” গানটি যখন বাজছিল শরীরের লোমগুলো দাড়িয়ে যাচ্ছিল। চমৎকার সুর ও সঙ্গীতায়োজন।

ব্যাক্তিগত প্রশ্ন দিয়েই লেটস টক অনুষ্ঠান শুরু। উপস্থাপক সাবলীর ভাষায় জয়ের সাথে দর্শকদের কানেক্ট করে দিচ্ছিলেন। মঞ্চ থেকে ঘোষনা আসলো- সিলেটের তরুনরা কি স্বপ্ন দেখে? কতো স্বপ্ন আমাদের হৃদয়ে! পুরো বাংলাদেশটাই আমাদের স্বপ্ন। এ দেশটা নিয়ে আমরা প্রতিদিন কতো স্বপ্নের মায়াজাল বুনি।

-আমি একজন চিকিৎসক। দেশের সবাইকে সুস্থ রাখবো এটা আমার স্বপ্ন।

-আমি একজন কৃষিবিদ। আমার স্বপ্ন দেশের কৃষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে।

-আমি ব্যাবসা করতে চাই, উদ্যোকতা হতে চাই।

-সব রাজনৈতিক দল এক হয়ে দেশটা এগিয়ে যাক।



স্বপ্নবাজ তরুনদের চোখ জ্বল জ্বল করে। চোখে মুখে দেশের প্রতি এমন দরদ দেখে অভিভূত জয়- আমার স্বপ্নের সাথে আপনাদের অনেক মিল। তবে শুনে খুশি হবেন আমার কয়েকটি স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে তার মধ্যে একটি বাংলাদেশ মিলেনিয়াম গোল অর্জন করেছে।



উপস্থিত সবাইকে এরপর কাগজ ধরিয়ে দেয়া হলো। ২০১৩ সালে এসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি কি ? বাংলাদেশ উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সম্ভাবনা কোনটি মনে হয়? দেশকে এগিয়ে নিতে সবচে বড় বাধা কোনটি? কতো মনের, কতো কথা। তারুন্যকেই বেশিরভাগ মানুষ বাংলাদেশের শক্তি বলে মনে করে। বাংলাদেশের উন্নয়নে সবচে বড় সম্ভাবনা হিসেবে কৃষি, গার্মেন্টস শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ইত্যাদি নাম উঠে আসে। দেশ এগিয়ে নিতে সবচে বড় বাধা হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, ধর্মান্ধতা, অসচেতন মানুষ ইত্যাদিকে দায়ী করেছে সিলেটের তরুনেরা।



রাজনৈতিক সভায়, কাউকে যদি বক্তৃতা দিতে দেয়া হয় তাহলে তার বক্তব্যের দুই তৃতীয়াংশ থাকবে সভায় কে কে উপস্থিত রয়েছে তার নামের হাজারটা বিশেষন সহ পরিচিতি। এবং আশ্চর্যের কথা হচ্ছে এই, যে প্রায় প্রতিটি বক্তাই একই ভাবে মঞ্চে কে উপস্থিত রয়েছেন তার একটি বিশেষন খচিত পরিচিতি বক্তব্যের সারাটা অংশ দিয়ে থাকেন। বক্তব্যের বাকি এক তৃতীয়াংশে থাকে নিজ দলের নেতাদের তৈলমর্দন ও বিপক্ষ দলের নেতাদের কুৎসামর্দন। প্রোডাকটিভ কিছু নাই। আমি শুনি আর হাসি। তবে আজকের ব্যাপারটা একেবারেই ভিন্ন। কোন উপমা ছাড়াই প্রশ্ন হচ্ছে। সজীব ওয়াজেদ জয় হাসিমুখেই সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন।



-সরকার বদল হলে উন্নয়ন কাজ বন্ধ থাকে কেন?

-বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আরো উন্নত করা হচ্ছে না কেন?

-বাংলাদেশ কবে স্যাটেলাইট পাঠাবে?

-মোবাইল ইন্টারনেটের দাম কমানো হচ্ছে না কেন?

-আপনার সামনে নতুন কোন চমক আছে কি?

-আমেরিকায় ডেমোক্রেট-রিপাবলিকানরা জাতীয় স্বার্থে এক হতে পারলে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ- বিএনপি কেন এক থাকতে পারবে না? এতো এতো কেন !! তরুন ভোটার ও রাজনীতিবীদদের জবাবদিহিতা। এমন বাংলাদেশই তো চাই আমরা। জয় এক একটা উত্তর শেষ করেন আর চোখ ছোট করে হাসেন। মাঝে মাঝে আবার মঞ্চ ছেড়ে দর্শক সাড়িতে চলে আসেন।



কথায় কথা বাড়ে। কে কাকে দাওয়াত দিবে এ নিয়ে চলে রসিকতা। জয় রসিকও বটে। মাঝে মাঝে আবার গল্পও বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একজন প্রশ্ন করলে তিনি গল্পের ছলে উত্তর দেন- ধরুন আপনি এক জন বন্ধুকে আপনার বাসায় দাওয়াত দিলেন। রাতের অন্ধকারে আপনার সে বন্ধু আপনার ঘরে ডাকাতি করে পালালো। পাঁচ বছর পর সে বন্ধুটিকে আবারো দাওয়াত দিলেন এবং বন্ধুটি আবারো ডাকাতি করে পালালো আবার পাঁচ বছর পর আপনি কি সে বন্ধুটিকে আর দাওয়াত দিবেন ? হাসির রোল পরে যায় হল রুমে।



গৌরবোজ্জ্বল ছাত্ররাজনীতি জৌলুস হারিয়েছে। চাঁদাবাজি, মারামারি, টেন্ডারবাজি ইত্যাদি অপকর্মে লিপ্ত অধিকাংশ ছাত্রনেতা। এসব কারনে তরুন প্রজন্মের অনেকেই ছাত্ররাজনীতির নাম শুনলে নাক শিটকায়। অথচ ছাত্রদের হাত ধরেই বাংলাদেশের বড়বড় স্বাধিকার আন্দোলন হয়েছিল। সজীব ওয়াজেদ জয় তার রাজনৈতিক দলের ছাত্রদের সংগঠন ছাত্রলীগ নিয়ে তার চিন্তার কথা বলেন। শুধু মাত্র যারা বৈধ ছাত্র তারা ছাত্রলীগ করতে পারবে বলে ঘোষনা দেন। বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতিকে আমেরিকা ও ভারতের ছাত্রসংগঠন গুলোর আদলে রি-মডেলিং করা হবে বলেও আশ্বাস দেন।



বাংলাদেশের জন্মের পর থেকে যারা বিভিন্ন সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছেন তাদের প্রায় সবার বাড়িই সিলেট। উপস্থাপক এক পর্যায়ে বলেই ফেলেন -এখানেই হয়তো বসে আছেন আগামী দিনের অর্থমন্ত্রী । উপস্থাপকের সাহস পেয়ে এক তরুনতো বলেই ফেললেন- “আমার অনেক দিনের ইচ্ছা বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হবো।” আবারো হাসির রোল পড়ে যায়। কে জানে এই তরুনটিই হয়তো একদিন অর্থমন্ত্রী হয়ে টিভিতে সবার সামনে বলবে- “কি বলেছিলাম না একদিন? ” যাই হোক, জয় এবার সবার কাছে প্রশ্ন ছুড়ে দেন-বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হলে আপনি সবার আগে কি করবেন? কেউ বলে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দেব, কেউ বলে শিক্ষা ও প্রযুত্তি খাতে বেশি বরাদ্দ দিব, কেউ বলে কৃষি ও গবেষনায় বেশি টাকা ঢালবো, কেউ বলে দূর্নীতি কমাতে সরকারী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে দেব। আমার কাছে যখন মাইক আসলো সাত পাঁচ না ভেবেই বলে ফেললাম- “দেশের উন্নয়নের জন্য মন্ত্রীদের আসলে কথা কম বলে কাজ বেশি করতে হবে। অর্থমন্ত্রী অথবা যেকোন মন্ত্রী হলে আমি সবার আগে কথা কমিয়ে দেব।” সজীব ওয়াজেদ জয় সহ সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। ভুল বলে ফেললাম কি না, লজ্জ্বায় পড়ে গেলাম আমি!!



অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে কিন্তু প্রশ শেষ হয় না। সবার মাথায় হাজারটা প্রশ্ন কোনটা ছেড়ে কোনটা করবে। উপস্থাপকও আছেন মহা ঝামেলায়। কার হাত রেখে কার হাত ধরবেন। প্রশ্ন ছেড়ে কেউ কেউ আবার সরকারকে পরামর্শ দিতে চাইছেন। অনেক আইডিয়া- জয় শোনে আশ্চর্য হন। অনেকেই আবার জয়ের মাধ্যমে সরকারকে অনুরোধ করতে চান।

-মাদক বন্ধ করুন।

-শিক্ষিত বেকারদের চাকুরী দিন।

-রাজাকারের গাড়িতে বাড়িতে যেন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা না উঠে।



সবার শেষ প্রশ্ন- “আপনিতো রাজরীতিতে আগে এতো সক্রিয় ছিলেন না। হঠাৎ করে রাজনীতিতে আসলেন কেন?” এবার একটু গুছিয়ে বলেন জয়-“২০০১ এ বাংলাদেশের মানুষের উপর যে অত্যাচার হয় তা আমার মনে খুব দাগ কাটে। তারপরই সিদ্ধান্ত নিই, এভাবে চলতে দেয়া যায় না। বাংলাদেশে একটা পরিবর্তন আনতে হবে। সেই থেকেই রাজনীতি আসার সিদ্ধান্ত।” এক পর্যায়ে তিনি শিক্ষিত, সচেতন ও দেশপ্রেমিক স্মার্ট তরুনদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমন্ত্রন জানান।



অনুষ্ঠান শেষ হয়। হাসিমুখে জয় সবার সাথে ফটোসেশনে অংশ নেন ও হাত মেলান। অনেকেই আবার আমন্ত্রন জানান- সময় পেলে আমার ক্যাম্পাসে একদিন আসবেন। জয়ও উত্তর দেন- আসবো।



ছোটবেলার সে কবিতা নিশ্চই সবার মনে আছে- “আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে, তোমার ছেলে উঠলে মাগো রাত পোহাবে তবে।” নোংরাকে ফেলে রাখলে গন্ধই ছড়াবে, চলুন সবাই মিলে পরিস্কার করে ফেলি। সজীব ওয়াজেদ জয়ের মতো একজন শিক্ষিত তরুন বাংলাদেশকে অবশ্যই ভাল কিছু উপহার দিবেন। ভাল থাকুন জয়, ভাল থাকুক বাংলাদেশ।





খলিলুর রহমান ফয়সাল

প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।

https://www.facebook.com/Gaanwala

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫

আশমএরশাদ বলেছেন: সাবলীল বর্ণনা ।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১৭

খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:২২

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন: পড়লাম। সুন্দর একটি লেখা :)
নির্বাচিত কলামে যাওয়া উচিত।

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:৫৮

উপপাদ্য বলেছেন: আপনার লেখার ধরন বেশ সাবলীল। ভালো লেগেছে, স্টাইল ও বর্ননা।

কন্টেন্ট নিয়ে কোন কথা বলবোনা। কারন পুলিশ দিয়ে যে লোক মানুষকে নির্বিচারে হতয়া করার রাজনীতি করে তার উপরোক্ত বক্তব্যের সাথে কাজের মিল নেই। যেদিন জয়ের মতো সেলিব্রেটি রাজনৈতিক নেতাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল পাবো সেদিন নিশ্চয় শ্রদ্ধা থাকবে উনাদের জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.