নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

এটা বাংলাদেশ !

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৩৩



সিলেটে যে ঘটনাটা ঘটলো বৃহত্তর সিলেটে জন্ম নেয়া এবং বর্তমানে সিলেটে বসবাসরত হিসেবে আমার খুবই লজ্জা লাগছে। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের মতো একজন নাগরিক যিনি সিলেটের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক হিসেবে কাজ করে এ অঞ্চল তথা সমগ্র দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন। অথচ তাকে এই সিলেটেই অপদস্থ হতে হলো। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে আমরা এখান থেকে তাড়াতে চাইছি- এ চিন্তায় কাল সারা রাত থেকেই আমার ঘুম আসছেনা। বাঙ্গালী দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেয়না এটা পুরানো অভ্যাস, কিন্তু ইচ্ছে করেই ভাল দাঁতে ইট মেরে রক্তাক্ত করা এটা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়।



অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে বারবার পিছিয়ে গেল এদেশের মানুষের পরিশ্রম, মেধায় ও প্রজ্ঞায় আমরা কিন্তু ঠিকই এগিয়ে চলেছি। বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন এই বাংলাদেশ। বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ভাষা ও কৃষ্টিকালচার। বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্কৃতিগুলো আমাদেরকে করেছে আরো সমৃদ্ধশালী। সিলেটের হাসনরাজা, রাধারমন, আব্দুল করিমের গান শুনেই আমি বড় হই। ছোটবেলা থেকেই জেনে এসেছি সিলেটে একজন আছেন যিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলেন , তরুনদর স্বপ্ন দেখান তিনি হচ্ছেন প্রফেসর জাফর ইকবাল। জাফর স্যারকে সরাসরি প্রথম দেখি সিলেটের কোন একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। সেদিন যাকে পেয়েছি তাকেই বলেছি - "জাফর ইকবালকে আজ দেখলাম" "জাফর ইকবালকে আজ দেখলাম"...শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম ভাল সাবজেক্ট পাওয়ার আশায় নয়, জাফর স্যার আছেন সে জন্যই। এই বুড়ো বয়সে ও মুহাম্মদ জাফর ইকবাল আমার দেখা সেরা স্মার্টদের একজন। সিকৃবিতে যেদিন "আমার বন্ধু রাশেদ" সিনেমাটি দেখানো হয় তখন তিনি ছিলেন উত্তরদাতা আমি ছিলাম সমন্বয়ক। একটার পর একটা প্রশ্ন আসছিল তিনি খুব গুছিয়ে উত্তর দিতে থাকলেন । গনজাগরনে চৌহাট্টায় জাফর স্যার আমাদের সবার মতোই মাটিতে বসে থাকতেন । সবার শেষে মাইক নিয়ে মৌলবাদিদের গালে চপেটাঘাত করতেন । তারপর বহুবার বিভিন্ন কারনে শাবিপ্রবির এ বিল্ডিং এর চেম্বারটিতে গিয়েছি স্যারের সাথে দেখা করার জন্য । সর্বশেষ গিয়েছিলাম এ মাসের ১৩ তারিখ তার অগ্রজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে । সেদিন স্যারের মনটা খুব খারাপ ছিল । সেই জাফর স্যার সিলেট ছেড়ে চলে যাবেন এটাতো ভাবাই যায় না। সাস্টিয়ানদেও সাথে কাল আমিও দাড়িয়ে ছিলাম জাফর স্যার যাতে পদত্যাগ না করে। এ মানুষটিকে যেতে দেয়া ঠিক হবে না।



আমি যখন ভার্সিটি ভর্তি পরীক্ষা দিই তখনকার কথা বলি। আজ বিকালে একটা ভার্সিটি পরীক্ষা দিয়েই স্টেশনে দৌড়াই । কারন কাল বাংলাদেশের আকে মাথায় যেতে হবে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার জন্য। পরশু আবার আরেকটা। বয়স কম, মনে হতো এডভেঞ্চারে আছি। সারারাত এডভেঞ্চার করে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যা পড়ে এসেছিলাম সব বাসে বা ট্রেনেই রেখে আসতাম। বাবার টাকা আর মায়ের দুশ্চিন্তার কথা নাই বা বললাম। যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র একমাত্র তারাই এ সমস্যাটির কথা বুঝতে পারবে। যারা কলেজের গন্ডি পেড়–তে পারেননি কিংবা বাবার কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দমতো সাবজেক্টে ভর্তি হয়ে যায় তারা এটি বুঝতে পারবে না। তাই আমি অবশ্যই বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পরীক্ষা নেয়ার পক্ষে। অনেকে আবার সিলেটের শাবিপ্রবির সাথে যশোরের যবিপ্রবির মানের তুলনা করছেন। আরে ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ আর সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজের মানেরও তো পার্থক্য আছে। কিন্তু একই প্রশ্নে কিন্তু পরীক্ষা হয়। সবচেয়ে মেধাবীরা “চয়েস” এর ভিত্তিতে মেডিকেল কলেজগুলিতে স্থান পায়। সেরকমটা এখানেও হবে। আমাদেরতো গর্ব হওয়া উচিত বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেখানে পুরানো ধারা থেকে বেড়–তে পারেনি শাবিপ্রবি সাহস দেখিয়ে ফেলেছে। যেমনটা তারা এসএমএস এর মাধ্যমে ভর্তি ফরম কাটার বুদ্ধিটি দিয়ে বাংলাদেশে ভর্তি পরীক্ষা কতো সহজ করে দিয়েছে। আমি শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নয়, একজন কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হিসেবে যেসকল বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি (কৃষি বিজ্ঞান, ফিসারিজ, এনিম্যাল সায়েন্স, ভেটেরিনারি, কৃষি প্রকৌশল, কৃষি অর্থনীতি, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক্স ইত্যাদি) পড়ানো হয় সবগুলোর ভর্তি কার্যক্রম একসাথে হওয়ার দাবী জানাই। এতে করে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি ও অভিবাবকদের দুশ্চিন্তা কমবে। অনেক সময় পেড়িয়ে গেছে- কাঁচায় না নোয়লে বাঁশ, পাঁকলে করবে টাশ টাশ।



এবার আসি সিলেটের কিছু "সচেতন মানুষ" এর কথায়। চিঙ্কু বাম কি জিনিস আমি বুঝিনা, জামাত পন্থি আওয়ামী-লীগ, জামাত নির্ভর বিএনপি এগুলো আবার কি? তবে ফেইসবুকীয় ভাষার এ চরিত্রগুলো সিলেটের জন্য কতো যে ভয়ংকর হবে, তা আগে বুঝিনি। আমি যখন টুকটাক সাংবাদিকতা করতাম তখন এ বিষয়গুলো খুব কাছ থেকে দেখি। এখানকার কয়েকজন রাজনীতিবিদদের চেতনা (সবার কথা বলছি না) মাইকে সীমাবদ্ধ। সভা সমাবেশে মাইক পেলে ১৯৭১ আমার চেতনা। সভা শেষে বাসায় গিয়ে ১৯৭১এর বিশ্বাসঘাতকদের সাথে চায়ের সাথে পরোটা, ব্যবসার পার্সেন্টেজ নিয়ে আলাপ। টাকার বিনিময়ে কোন কোন আওয়ামী লীগ নেতা চাকুরীর বিএনপি-জামাতী প্রার্থীর নামে সুপারিশ করেন। একই ব্যাপারটি আওয়ামী প্রার্থীর বেলায়ও ঘটে। চেতনা বা আদর্শ বলতে কিছু নেই। এখানকার আমজনতা তাই মজা করে বলে- "সব রসুনের একই পাছা" আরো ভয়ংকরের নমুনা দেখলাম যখন সিলেটের মানুষদের এলাকাপ্রীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের মতামত না নিয়েই ; সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ও হীন স্বার্থের উদ্দেশ্যে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সৃষ্ট সর্বদলীয় ভুঁইফোঁড় সংগঠন তথা কথিত "সচেতন সিলেটবাসী" শাবিপ্রবির আভ্যন্তরিন একটি বিষয়ে হস্তক্ষেপ করলো। সত্যি বলতে কি তাঁদের হীন উদ্দেশ্য সাধারণ সিলেটবাসীর সমর্থন করা তো দূরের কথা; যাদের জন্য এই আয়োজন অর্থাৎ খোদ ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরাও (কয়েকটা ছাগু বাদে) তা সমর্থন করেনি। অবশ্য করার কথাও না! কারণ সাধারণ সিলেটবাসী কিংবা ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা কেউই নির্বোধ কিংবা মূর্খ না যে তাঁদের জন্য পঞ্চাশ শতাংশ কোটা বরাদ্দ রাখতে হবে। কৌটা রাখা হয় প্রতিবন্ধি ও কম যোগ্যতাসম্পন্ন লোকের জন্য। অথচ কোটার দাবি তুলে 'সচেতন সিলেটবাসী' নামক সর্বদলীয় ভুঁইফোঁড় সংগঠন সিলেটের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সহ সাধারণ আমজনতা কে চরমভাবে অপমানিত করেছে। গুটি কয়েক সিলেটীদের জন্য সমগ্র সিলেটীদের মানুষ এখন গালাগালি করছে। সিলেটবাসীর এ অপমানের দায় কে নেবে? একটা বিষয় আরো পরিস্কার হওয়া দরকার। স্কুল-কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু একদম ভিন্ন। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্বশাসিত। বিশ্ববিদ্যালয় কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের না। এটি সমগ্র বিশ্বের পাঠশালা। স্থানীয় জনপ্রতিধিরা সাহায্য করবেন কিন্তু তাদের স্বার্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপিয়ে দিতে পারেন না। অচিরেই বাংলাদেশে স্কুল-মাদ্রাসা-কলেজ কে শিক্ষামন্ত্রনালয়ে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা মন্ত্রনালয় গঠন করা জরুরী। একটা বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই বাইরের মানুষের কথায় চলতে পারে না।



আমরা বাঙ্গালীরা খুব রসিক ও হুজুগে। যা পাই তা গোগ্রাসে গিলি- ভাল মন্দ বিচার করি না। যারা সিলেটীদের গালি গালাজ করছেন তারা একটিবার ভেবেছেন কি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কতভাগ রেমিটেন্স এ অঞ্চলের মানুষ দিয়ে থাকে। এ অঞ্চলেই হাসন রাজা, বাউল শাহ আব্দুল করিম, বিপ্লবী সুহাসিনি দাশ, জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গনি উসমানি, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, এম সাইফুর রহমান, আবেদ খান, সুবীর নন্দী, সালমান শাহের, রোশনারা আলীর মতো লোকরা জন্ম নিয়েছেন। এখানকার চা, সাতকরা, কমলালেবু সারা বাংলাদেশের গর্ব। সিলেটের মতো সুন্দর ও সবুজ আবহাওয়া বাংলাদেশে অন্যান্য জায়গায় কমই আছে। সুতরাং সিলেটকে অযোগ্য - অস্পৃশ্য বলার কিছু নাই। যা কিছু হবে যোগ্যতার ভিত্তিতেই হবে । সিকৃবিতেও যেমন চট্টগ্রামের মেয়ে মেধাতালিকায় চান্স পেতে পারে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও মৌলভীবাজারের ছেলে নিজ যোগ্যতায় চান্স পেতে পারে। মনের মিল থাকলে কুমিল্লার মেয়েকে যেমন হবিগঞ্জের ছেলে বিয়ে করতে পারে তেমনি চাকুরিতে ভাল পজিশন নিয়ে রাজশাহীতেও সুনামগঞ্জের মানুষ থাকতে পারে। ছোট্ট একটা দেশ- এতো বিভেদ কেন ? প্রত্যেকটা এলাকায়ই ভাল মানুষ খারাপ মানুষ আছে। বরং খারাপ মানুষের তুলনায় ভাল মানুষ বেশি আছে । ভাল মানুষেরা চুপ করে থাকেন আর খারাপরা লাফালাফি করে, তাই খারাপটাই আমাদের চোখে পড়ে।





এটা বাংলাদেশ। হিন্দু-মুসলমান সবার দেশ। ঢাকাইয়া, চাটগাইয়া, রাজশাহীর, খুলনার, বরিশাইল্যা, সিলেটী, রংপুরী সবাই মিলেই বাংলাদেশ। কালার দেশ-ধলার দেশ, কৃষকের দেশ- অফিসারের দেশ, ছাত্রের দেশ-গৃহিনীর দেশ, ফকিরের দেশ-বেশ্যার দেশ, লম্বার দেশ-খাটোর দেশ, নারী-পুরুষ-শিশুর দেশ। এটা বাংলাদেশ।



https://www.facebook.com/Gaanwala

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০২

তিক্তভাষী বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

আমার প্রতিষ্ঠানে জেলাভিত্তিক কিছু সমিতি আছে। আমাকে অনেকবার আহবান জানানো সত্ত্বেও আমি আমার নিজ জেলা সমিতির সাথে যোগ দেইনি। অনেকে জিজ্ঞেস করে- দেশের বাড়ি কোথায়? উত্তরে আমি বলি - বাংলাদেশে, আর আপনি যদি গ্রামের বাড়ি কোথায় সেটা জানতে চান তাহলে সেভাবেই প্রশ্নটা করুন।

আমার এতটুকুন একটা দেশে কত বিভাজন!

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩২

খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেছেন: ঠিক করেছেন। এ বিভাজন দেশের জন্য ক্ষতিকর ।

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৭

কলাবাগান১ বলেছেন: "এটা বাংলাদেশ। হিন্দু-মুসলমান সবার দেশ। ঢাকাইয়া, চাটগাইয়া, রাজশাহীর, খুলনার, বরিশাইল্যা, সিলেটী, রংপুরী সবাই মিলেই বাংলাদেশ। কালার দেশ-ধলার দেশ, কৃষকের দেশ- অফিসারের দেশ, ছাত্রের দেশ-গৃহিনীর দেশ, ফকিরের দেশ-বেশ্যার দেশ, লম্বার দেশ-খাটোর দেশ, নারী-পুরুষ-শিশুর দেশ। এটা বাংলাদেশ।"

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫১

খলিলুর রহমান ফয়সাল বলেছেন: এটাই বাংলাদেশ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.