নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাছাটা কিন্তু আপনার দিকে- উষ্ণ থাকুক বাংলাদেশ।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৩



পাছা দেখিয়ে মানুষটা রেলস্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শুয়ে আছে। শীতে থরথর করে কাপছে দেহটা। পাঠক, পাছাটা কিন্তু আপনার দিকে। শীত চলে এসেছে। দেহকে উষ্ণ রাখতে আপনার সব প্রস্তুতিতো সম্পন্ন। কিন্তু আপনার পাশেই সুবিধাবঞ্চিত গরীব মানুষদের কথা ভেবেছেন কি ?



হিমু পরিবহন সিলেট কাউন্টার থেকে আজ আমরা কয়েকজন সিলেটের ক্বীন ব্রিজ এলাকা ও সিলেট রেল স্টেশনে গিয়েছিলাম। আগে থেকেই হুমায়ূন প্রেমীরা নিজ নিজ বাসা ও এলাকা থেকে গরম কাপড় সংগ্রহ করে বস্তাবন্দি করে রেখেছিলাম। ঐতিহ্যবাহী এমসি কলেজে পূর্বনির্ধারিত পাঠচক্র ছিল। হুমায়ূন আহমেদের হিমু সিরিজের প্রথম বই- ময়ূরাক্ষী ! দারুন জমেছিল আড্ডাটা। বইয়ের বিভিন্ন লাইন ধরে ধরে আলোচনা। এই উপন্যাসের আলোচিত বাক্যগুলো হলো- "সুন্দরী মেয়েরা খুবই অহংকারী হয়। তারা সবসময় তাদের চাপাশে একদল মুগ্ধ পুরুষ দেখতে চায়। ", " হাসিতে খুব সহজেই মানুষ চেনা যায়। সব মানুষ একই ভঙ্গিতে কাঁদে। কিন্তু হাসার সময় একেক জন একেক রকম করে হাসে। সেরকম একটি হাসির নাম - প্রতারনার হাসি। তবে এ যুগের মেয়েদের হাসি দিয়ে প্রতারিত করা খুবই কঠিন। ", "পুরুষ হচ্ছে সোনার চামচ, সোনার চামচ বাঁকা হলেও ভাল ! " বন্যা, সুমাইয়া, অভি, দিয়া, রিমন, নিশান, সৈকত, সুমন, বিশ্বজিৎ, মিনহাজ, আমান, মোতাহের, রাশেদসহ সবাই মিলে আড্ডাটা দারুন জমিয়ে তোলেছিল।



পাঠচক্র শেষে আমরা সবাই সংগৃহীত কাপড়গুলো গ্রেডিং করলাম। তারপর সব কাপড় নিয়ে চললাম বন্দরের পুরানপুল (ক্বীন ব্রীজ) এর দিকে। নদীরপারে সারি সারি চেয়ার রাখা। উচ্চ বিত্তরা পরিবার বন্ধু নিয়ে ফুচকা/চটপটি খেতে এখানে আসেন। আমরা বস্তা নিয়ে হাটি। আমাদের চোখগুলো গরীব অসহায় মানুষ খুঁজে। কয়েকজন বুড়ো মানুষকে কাপড় দিলাম।একটা মহিলা আমাদের দেখে এগিয়ে আসলো। উনাকে দুইটা সোয়েটার দিলাম। এবার বস্তা নিয়ে সোজা ক্বীন ব্রীজের উপর উঠে গেলাম। মানুষের স্রোত এখানে, কেউ কারো দিকে তাকায় না, জীবনের গতিতে সবাই চলেছে সামনের দিকে। একজন বুদ্ধি প্রতিবদ্ধি অসহায় ছেলে হাটতে পারছিল না। কাউন্টারের সবাই ছেলেটিকে কাছে ডেকে নিয়ে আসলো, পরম মমতায় তাকে পড়িয়ে দেয়া হলো একটা গরম সোয়েটার। ছেলেটি কি বুঝলো কে জানে, এক গাল হাসি উপহার দিল আমাদের।



রেল স্টেশনে অনেক ভীর। পরিচিত কয়েকজনকেও পেলাম। কাউন্টারের সবার হাতেই ছিল ব্যাগ। ইদানিং দেশবিরোধীরা রেল ও সড়কপথে নাশকতা চালাচ্ছে। তাই আমাদের দেখে সবাই কেমন জানি সন্দেহের চোখে তাকাচ্ছিল। খোড়া একটা বাচ্চা ছেলের কাছে গিয়ে কেউ একজন বস্তা থেকে সাদা সোয়েটার পড়িয়ে দিল। তখন ষ্টেশনের সবাই হাসিমুখে আমাদের দিকে তাকালো- না, এরা ভাল লোক। হাতে কাপড়ের বস্তা দেখে রেল ষ্টেশনের উদ্বাস্তুরা আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো। এতো মানুষ সামাল দেয়া মুশকিল। সবাইকে আমরা সারি বেধে বসতে অনুরোধ করলাম। কে শোনে কার কথা। হুরমুরি লেগে গেল। আমরা প্রায় সবাইকে কিছু না কিছু দিলাম। এরপর আমরা ঢুকলাম প্ল্যাটফর্মের ভেতর। রেলপুলিশ, সাদা পোশাকের পুলিশের সহযোগীতা পেয়েছি আমরা। প্ল্যাটফর্মের ভেতর মুটামুটি ভীর। সবার চোখে মুখেই উৎকন্ঠা। শীত না ভ্রমনক্লান্তির বোঝা গেল না। কেউ ট্রেন থেকে নামল, কেউবা ট্রেনে উঠবে। আমরা রেল লাইন ধরে এগুই। যাকে পাচ্ছি তাকেই দিচ্ছি। কাউন্টার কয়েক ভাগে ভাগ হয়ে শীতবস্ত্র বিতরন হচ্ছে। বুড়ো জোয়ান শিশু- বাদ যাচ্ছে না কেউ। এক জায়গায় জটলা বেঁধে বসে আছে কানা ভিক্ষুকের দল। সারাদিন ভিক্ষা করার পর বসে খোশ গল্প করছে। আমরা পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছি সেটা হয়তো তারা লক্ষ্য করে নাই। নিজ থেকেই এগিয়ে গেলাম। কনকনে হাওয়ায় বেচারারা জবুথবু ছিল। কাউন্টারের বন্ধুরা একে একে সবাইকে শীতের কাপড় উপহার দিল। আজকের সন্ধ্যায় এরকম বহু মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে সিলেট কাউন্টার। তবু আমরা খুব খুশি হতে পারিনি। আমাদের সামান্য প্রচেষ্টায় মাত্র কয়েকজনের মুখে ক্ষণিকের জন্য হাসি ফুটিয়েছি। কিন্তু সারা বাংলাদেশে অসংখ্য গরীব মানুষ শীতে কাবু হতে যাচ্ছে। প্রিয় বন্ধুরা, আপনারা যারা গরম কাপড় শরীরে জড়িয়ে কিংবা লেপ-কম্বল জড়িয়ে আমার এ লিখাটি পড়ছেন হাতজোড় করে অনুরোধ করছি- শীতার্ত গরীব অসহায়দের পাশে এগিয়ে আসুন। এই শীতে উষ্ণ থাকুক বাংলাদেশ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.