নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন হাসিনার চলে যাওয়া

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০০

অল্প বয়সেই খালাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে হয় হাসিনা আলীর। ফুপুর বাড়ি হয়ে যায় হাসিনার শ্বশুর বাড়ি। ইসলাম ধর্মমতে ইসহাক্ব বিন ইব্রাহিম (আ)-এর দুই যমজ পুত্র ঈছ ও ইয়াকূব-এর মধ্যে ছোট ছেলে ইয়াকূব নবী হন। ইয়াকূবের অপর নাম ছিল ‘ইস্রাঈল’। নবীদের মধ্যে শুধুমাত্র হযর‌ত মুহাম্মদ (স) ও হযরত ইয়াকূব (আ) এর দুটি করে নাম ছিল। ইয়াকূবের ছেলে হযরত ইউসূফ (আ) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দর পুরুষ বলে কোরআনে উল্লেখ করা হয়। এ জন্যই হয়তো রজব আলী তার বড় ছেলের নাম রেখেছেন অন্যতম সেরা নবীর নামে-ইয়াকূব। অবশ্য আমাদের ইয়াকূবও শক্ত সামর্থ পুরুষ। কিন্তু বিয়ের পর হাসিনার মতো লাল টুকটুকে সুন্দরী বউ পেয়ে ইয়াকূবতো বাড়ি থেকে বেরয় না। তাই তাড়াতাড়ি করে রজব আলী বড় সংসারের বড় দায়িত্ব তুলে দিলেন বড় ছেলে আর বড় ছেলের বউয়ের কাছে। শুরু হয় নতুন সংগ্রাম।



ভাইদের নিয়ে ইয়াকূব জমিতে নেমে পড়েন। ১০ বিঘা জমি ২০ বিঘা হয়, ২০ বিঘা জমি ৪০ বিঘা হয়, এভাবে বাড়তেই থাকে। পুরো সংসারের লাগাম ধরেন হাসিনা। অন্ধকার থাকতেই খুব "বিয়ানে" ঘুম থেকে উঠে কাজ করতেন তিনি। চাল কুটা, মুনি খাওয়ানো, গরুর সেবা, পিঠা বানানো, স্বামীকে মাঠের জন্য তৈরি করা ইত্যাদি একা হাতে সামলাতেন। হাসিনার ননদদের একে একে বিয়ে হয়। ইয়াকূবের ভাইয়েরাও বিয়ে করে ঘরে নতুন বউ আনেন। একান্নবর্তী গ্রামের বড় গেরস্থ বাড়ি। ১৯৭১ সালে সংগ্রামের সময় হাসিনা-ইয়াকূবের ঘর আলো করে তাদের প্রথম সন্তান আসেন আমার মা-ফাতিমা।



ফাতিমা ছিলেন দস্যিমেয়ে। ভাই-বোন-বান্ধবীদের নিয়ে পুরোগ্রাম চষে বেড়াতেন। বালিকা বয়সেই এ দস্যিমেয়ে আমার বাবার ঘরে উঠেন। সুতরাং প্রথম সন্তান হিসেবে আমি যে খুব একটা সুবোধ বালক হবো, অন্ত:ত জেনেটিক্স তা বলে না। জন্মের পর থেকে সবাইকে জ্বালাতাম। এখনো জ্বালাই।



অত্যধিক পড়ার চাপ, কড়া শাসনের বেড়াজালে হবিগঞ্জ আমার কাছে "কষ্টের পৃথিবী".. তাই নানাবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল "পৃথিবীর স্বর্গ"। নানিবাড়ি গিয়েই আমার মায়ের প্রথম কাজ ছিল তার মায়ের কাছে আমার নামে নালিশ করা-"তোমার নাতি অমুক করে, তমুক করে"। নানির কণ্ঠস্বর মায়ের কণ্ঠস্বরের সাথে হুবহু মিল। মায়ের মতোই নানি আমাকে কড়া ধমক লাগাতেন-"চুপ করে বসে থাক, একটুকুও নড়বি না।" একটু চোখের আড়াল হলেই, কে শুনে কার কথা। সমবয়সী মামাদের নিয়ে দৌড় দিয়ে বিলে চলে যেতাম মাছ ধরতে কিংবা যেখানে মামা নানারা রোদে পুড়ে ফসল চাষ করে সেই মাঠে চলে যেতাম। সন্ধ্যে হলেই দুধমাখা ভাত এনে আমার সামনে ধরতেন নানি-"সবটা খাবি, একটুও ফালাবি না।" তারপর ঢুলুঢুলু সুরে নানি-মামারা গল্প বলতেন। কুপির আলোয় কি রহস্যময়, কি রোমাঞ্চকর ছিল সেই রাতগুলো। আহা, আমার সোনালী শৈশব।

দাদাবাড়ি-নানাবাড়ির প্রথম নাতি আমি। যার পর নাই সেরকম ননীর পুতুলের মতো আদর পেয়েছি। আমার মাও বড় আদুরে ছিল। এজন্য সব মামা-খালারা হয়তো তাদের "বড়পা" কে একটু হিংসেই করতো। বাড়িতে আতপ চাল বা বিন্নি চাল হলে, কুমড়া, শিম, আলু ফললে, বড় মাছ ধরা পরলে-আম্মা ও আমাদের পরিবারের জন্য আলাদা করে রাখতেন নানি, আর নানাকে দিয়ে এগুলো আমাদের বাসায় পাঠাতেন। সময়ের সাথে সব বদলায়। ইয়াকূব আলীর একান্নবর্তী পরিবারটি ভেঙ্গে কয়েকটুকরা হয়ে যায়। বুড়ো বাবা-মা এবং শিশু বাচ্চাদের রেখে আমার মাও পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছে কয়েক বছর হলো।



আম্মা মারা যাওয়ার পর নানা-নানি খুব নরম হয়ে গেল। গত ইদে নানি-দাদি-নানাকে নিয়ে বাসায় আসর বসালাম।



কেন জানি মনে হচ্ছিল বুড়া-বুড়িগুলো আর বেশিদিন বাঁচবে না। কথা প্রসঙ্গে বারবার নানি বলছিল-"ভাই, বিয়ে করবি কবে? মরার আগে তোর বউটা দেখে যেতে চাই।" আমি হাসি-"ধুরু নানি কি কন এগুলা?" পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দুই সুন্দরী মহিলা ঘরে সতিন আনতে চান। আমি বলেছিলাম- "নাতবউ দেখতে হলে আরো বহুবছর বাঁচতে হবে ডার্লিংরা!" আমার কথা শুনে ইয়াকূব আলী হাসতে হাসতে ফিট। সব হাসি শেষ। আমার নানি আজ সন্ধ্যায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন।



গত পরশু হঠাৎ করেই নানি অসুস্থ হয়ে যান। ফোনে গলাটা খুব দূর্বল লাগছিল। আমাকে বললো, "ভাই তুই আমার বড় নাতি। আমাকে এসে তুই দেখে যা।" আমি বলি- "আপনি সুস্থ হয়ে উঠেন, তারপর আসবো নে।" বাবা সকাল থেকেই বারবার বলছিলেন-"তুই আয় তুই আয়। তোর নানিকে দেখে যা।" দুপুরে কথা বলতে বলতে কেঁদেই দিলেন নানা। তিন ভাই মিলে তখনি সিদ্ধান্ত নিলাম- নানাবাড়ি যাবো। হরতাল অবরোধে একটা বাস পেলাম না আমরা। টার্মিনালে খুব অসহায় হয়ে পড়লাম আমরা তিন ভাই। সন্ধ্যায় নানা ফোন করলো-"ভাইরে তোর নানি আর নেই।"



কি জানি আমার মা বোধহয় খুব একলা হয়ে পড়েছিলেন। তাই নানিকে বারবার ডাকছিলেন-"আম্মা, তুমি চলে আসো। আমার একা একা ভালো লাগে না।" নানি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছিলেন, স্বামীর কাছে থাকবেন নাকি মেয়ের কাছে চলে যাবেন। অবশেষে সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন। আচ্ছা ইয়াকূব আলীর এখন কি হবে? তার লাল টুকটুকে বউ হাসিনা যে তাঁকে বড় একা করে চলে গেল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.