নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকুর মা এ্যান্ড দ্যা এন্ড অফ এ্যা রিলেশন

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:৫৫



এক দেশে এক মা ছিল। প্রথম সন্তান টুকু যেদিন হলো সেদিন ছিল মায়ের জীবনের শ্রেষ্ঠ সুখের দিন। একটু কাঁদলেই-সোনা মানিক যাদু বলে, চুমা দিয়া লইতো কোলে। সারাদিন শুধু সন্তানকে নিয়েই চিন্তা। টুকু যখন আধো আধো কথা বলে, মায়ের হাসি আর দেখে কে? টুকুর মুখে প্রথম যেদিন মা ডাকটি শুনলো সারা রাত সে ঘুমাতে পারে না। একটু পরপর লাইট জ্বালিয়ে দেখে টুকুকে পিঁপড়ে ধরলো কি না, মশা কামড় দিলো কি না। আস্তে আস্তে টুকু হাঁটা শিখে যায়, দৌঁড়ানো শিখে যায়। ক্ষিদে পেলে মায়ের কাছে, প্রজাপতি দেখলে মায়ের কাছে, ভয় পেলে মায়ের কাছে। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরে টুকু আর তার মা। টুকু হওয়ার পর মা তার স্বামীর সাথেও দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। টুকুর আদর কমে যাবে ভেবে মা আর দ্বিতীয়বার সন্তান নেয় না।

টুকু আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। শিশুকাল পেড়িয়ে কৈশোরে পদার্পন। সন্তান বড় হচ্ছে মায়ের মনে খুশিও লাগে আবার ভয়ও লাগে। "আচ্ছা রে টুকু, তুই আমাকে কোন দিন ছেড়ে যাবি না তো।" "কি যে বলো না মা? তোমাকে ছেড়ে কৈ যাবো, তুমি তো আমার একমাত্র পৃথিবী।" মায়ের চোখে জল এসে যায়।

টুকু বড় হয়, মা বৃদ্ধ হয়। টুকুর এখন অনেক বন্ধু, অনেক কাজ। মায়ের কাছে আসার সময় নেই। মা সেদিন টুকুকে ডেকে জিজ্ঞেস করে- "হ্যারে টুকু, তুই তো আমাকে আর সময় দিস না। কি হয়েছে তোর?" টুকু হাসে- "মা তুমি এতো বোকা কেন? আমি এখন বড় হয়েছিনা, কতো কাজ আমার। এখন আর ন্যাকামি করো না তো। এমনিতেই অনেক স্ট্রেসে আছি।" সন্তান কষ্টে আছে মা চোখে মুখে ব্যাস্ত হয়ে যায়- "কিসের স্ট্রেস? বল তুই আমাকে, তোর সব কাজ করে দিচ্ছি।" ঠোট বাঁকিয়ে টুকু বলে- "এতো ড্রামা করার কি আছে মা। আমি কারো উপর ডিপেন্ডেবল হতে চাই না। যাও তো একটু, একা থাকতে দাও। শুধু শুধু পেইন দিচ্ছো।"

অভিমানী মা চোখের পানি আড়াল করে চলে যায়। খানিক বাদে আবার একটা নারিকেল তেলের কৌটা নিয়ে ফিরে আসে - "টুকু তোর মাথা গরম হয়ে গিয়েছে, আয় কাছে আয়, তেল দিয়ে দিই। তারপর আরাম করে ঘুমাবি। নো স্ট্রেস, নো পেইন।" মায়ের মুখে ইংরেজি শুনে হেসে দেয় টুকু। একটু নরম হয়ে বলে- "নারিকেল তেল এখন আর ভালো লাগে না মা।" "কেন ভাল লাগে না?" জ্বলে উঠলো মা- "যখন তুই ছোট ছিলি, তেল দিয়ে তোর মাথা না বানিয়ে দিলে তোর ঘুম আসতো না, তোকে ঘুম না পারাতে পারলে আমারো যে ঘুম আসতো না। এই দেখ দিনের পর দিন তোর জন্য নারিকেল তেলের কৌটা কিনি, থাকতে থাকতে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তোর তো ঘুম হয়, আমার তো ঘুম হয় নারে টুকু" "ওকে ওকে কাঁদতে হবে না। তুমি আমাকে মাফ করে দাও মা। তবে তোমার পায়ে পরি, নারিকেল তেল নিয়ে আমাকে আর চাপাচাপি করো না।" মা আর কিছু বলতে পারে না। পরদিন সকালে উঠে টুকুর ঘরে গিয়ে দেখে ওর মাথা থেকে বিদেশী অলিভ ওয়েলের ঘ্রান আসছে।

খাবার টেবিলে কথার ছলেই মা বলে-টুকু, এখানে আমার আর মন টিকছে না। তুই আমাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আয়।" টুকু যেন মুক্তি পেল-"ঠিক আছে মা, তোমার কথার অবাধ্য আমি হবো না। তুমি যা চাও তাই হবে।" মায়ের মনটা ভেঙ্গে যায়। হঠাৎ করে নিজেকে খুব বোকা মহিলা ভাবতে শুরু করে। টুকু ছাড়াও তার আরো সন্তান নেয়া প্রয়োজন ছিল। মৃত স্বামীর কথা ভেবে চোখের কোনে জল চলে আসলো।

বৃদ্ধাশ্রমে মায়ের ঘুম আসে না। সারাক্ষণ দরজায় তাকিয়ে থাকে, কান পেতে ঝিম মেরে শুয়ে থাকে-এই বুঝি তার টুকু আসবে। একদিন সত্যি সত্যি টুকু আসে। মা বলে ডাক দেয়। বালুময় মরুভূমিতে যেন বৃষ্টি নামলো-"টুকু তুই এসেছিস? তোর মুখটা এতো মলিন লাগছে কেন? কিরে কথা বল, টুকু, টুকুরে?" টুকুর চোখে মুখে রাজ্যের বিরক্তি-"কিছু টাকা দিতে এসেছিলাম। ভাবলাম একটু বসেও যাবো। কিন্তু শুরু করে দিলে ন্যাকামি, কতক্ষন বসতে পারবো বুঝতে পারছি না।" এমন কথা শুনার পর, টেবিলে রাখা ধারালো ছুরিটি নিয়ে টুকুর দিকে তেড়ে আসে মা-"হুমকি দিস না টুকু। তোকে ছাড়া আমি মরে যাবো না। চলে যা এখান থেকে, নইলে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবো।" পাগল পাগল বলে চিৎকার করে বৃদ্ধাশ্রম থেকে বেড়িয়ে যায় টুকু। মা নেতিয়ে পড়ে বিছানায়..টেবিলে একটি বাটিতে নারিকেল তেল টলমল করছে, পাশেই ফল কাটার ধারালো ছুরিটি চকমক করছে....

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৩:৪০

চাঁদগাজী বলেছেন:


কস্টের গল্প কম লিখবেন।

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:১২

অশ্রুকারিগর বলেছেন: প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। টুকুরা সেটা অবশ্যই পাবে।

৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৩৫

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভালো লিখছেন, কিন্তু লাগলো খারাপ। এইটা কোন কথা হইলো ভাই?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.