নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন মানুষ অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না?

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৩৯


থানা থেকে ফিরলাম। জ্বি হ্যাঁ, পুলিশি ঝামেলা শেষে থানা থেকে ফিরলাম। তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো অনেক আগেই শেয়ার করা উচিত ছিলো। আয়নাবাজি নিয়ে আমরা কি পরিমান ঝামেলায় পরেছিলাম সেগুলো তখন বলিনি। ইনফ্যাক্ট আজও বলবো না। কখন আইনের মারপ্যাচে আমাকে গ্রেফতার করা হয়, বলা তো যায় না! তবে কদিন আগে সিলেটের এমসি কলেজে নার্গিস নামে একটি মেয়েকে কুপানোর সময় আশেপাশের মানুষ কেন এগিয়ে যায়নি আজ তা সামান্য হলেও বুঝলাম। সেগুলো একটু বলতে চাই।

আরে ভাই, রাখেন আপনার মানবতা। নিজে বাঁচলে বাপের নাম। যেহেতু তারা কিশোর তাই নাম পরিচয় প্রকাশ করছিনা। কলেজের ছাত্র। অপরিচিত একটা এলাকায় বন্ধুরা মিলে কোচিং শেষ করে চা খেতে গিয়েছিলো। টিস্টলের এক কোনায় গাজা টানছিলো আরেকদল ছেলে। গাজাখুঁরদের প্রকাশ্যে নেশা না করতে অনুরোধ করে চার বন্ধু। আকুল আবেদন জানায়, “ভাই আমার এই বন্ধুটার শ্বাসকষ্ট আছে, প্লিজ অন্য কোথায় গিয়ে টানেন“। যা হবার তাই হলো-হাগা নাই পুটকির, ডাক কত! তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো গাজাখুঁরেরা, “অই ব্যাটা তোর বাপের এলাকায় আসছস? চিনস আমাদের?......” এক কথায় দুই কথায় লেগে গেলো তারা। গাঞ্জুটেরা হাতে পাইপ-লাঠি নিয়ে নিজ এলাকা থেকে ধাওয়া দিলো চারবন্ধুকে। সিলেটের নাইওরপুল পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে দুই পার্টি। পড়বি তো পড়, এক্কেবারে মালির ঘারে। দু পার্টি থেকে চারজন করে আটজনকে নিয়ে যাওয়া হলো কতোয়ালি থানায়। চারবন্ধুর একজন আমার আত্মীয় (নাম প্রকাশ করছি না)। আমি ফোন পেলাম সন্ধ্যায়।
-ভাইয়া, আমাকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বাসায় বলার সাহস পাচ্ছি না। আপনি উদ্ধার করে নিয়ে যান প্লিজ।
-কি করেছিস তুই?
-আমি কিচ্ছু করিনি।
- পুলিশ হুদাই কাউকে ধরে নিয়ে যায় না।
-আপনি আসেন প্লিজ।
সাত-পাঁচ না ভেবেই থানায় রওয়ানা দিলাম। সে যদি অপরাধী হয়, আমি চাই শাস্তি পাক। আমার আপন ভাই যদি সত্যি কোন অপরাধ করে, তাহলেও চাইবো তার যাতে শাস্তি হয়। কিন্তু কি তার অপরাধ সেটা জানার অধিকার নিশ্চয়ই আমার আছে। কতোয়ালিতে ঢুকতেই এক কনস্টেবল আমার সাথে যে ব্যবহারটা করলো তাতে মনে হলো আমি নিজেই বড় সন্ত্রাসী। উপরে বড় বড় করে লেখা আছে “পুলিশ আপনার সেবায় নিয়োজিত।” এই যদি হয় সেবার নমুনা! তবু সামলে নিলাম, দেশতো শান্তিতেই আছে। সুতরাং যেই গরু দুধ দেয়- তার লাথি খাওয়াও ভাল।

অত্যন্ত বিনয়ের সাথে জানতে চাইলাম, তাদের অপরাধটা কী? চোখ লাল করে আমার প্রায় কলার ধরে একজন বললো, “ওরা ইভটিজার, এলাকার লোকের সাথে মারামারি করছে, তাই ধইরা আনছি।” ইভটিজারদের কঠিন শাস্তি হোক মনেপ্রাণে চাই। কিন্তু এই চারবন্ধুকে আমি ভালমতন চিনি। এরা সিনেমা বানায়, যথেষ্ট ক্রিয়েটিভ। আর যাই হোক, ইভটিজার হবার মতো পারিবারিক শিক্ষা ওদের নেই। কনস্টেবলকে অনুরোধ করলাম বড় অফিসারের সাথে যাতে আমাকে আলাপ করিয়ে দেয়া হয়। বড় অফিসারকে শুরুতেই আমি আমার নিজের ও চাকুরীর পরিচয় দিলাম। বিনিময়ে আমি বসার অনুমতি পেলাম। আমার সাথে আর যারা সাধারণ গার্জিয়েন ছিলেন, তাদেরকে প্রায় গলাধাক্কার মতো বের করে দেয়া হলো। হায় আমাদের সমাজ, এখানে ক্লাস বুঝে আলাপ হয়।
অফিসার বললো তাদের এখানে কিছু সিস্টেম ফলো করতে হয়, অপেক্ষা করুন। চার বন্ধুর যে দোষ নেই অফিসার নিজেও স্বীকার করলো। আসলে তিলকে তাল বানানো হয়েছে। মনে মনে স্বস্তি পেলাম। যাক নির্দোষে ছেলেগুলোর তাহলে কিছু হবে না। সামান্য উত্তম-মধ্যম দিয়ে হয়তো ছেড়ে দিবে।

এরপর আসলো লাল টিশার্ট পড়া আরেক অফিসার। সে আমাকে বললো, কোচিং শেষ ছেলেরা চা খেতে গেলো কেন? কোচিং শেষে তারা মায়ের কোলে ঘুমাতে চলে যাবে, স্বাধীন দেশে বাইরে ঘুরতে যেতে পারবে না। কিছু বুঝাতে গেলাম। লাভ হলো না। আমি বলি একদিকে, সারিন্দা বাজে আরেক দিকে। আশচর্য্য হলাম এই অফিসার চোখের পর্দা ছিড়ে আমাদের কাছে “খরচা-পাতি” চাইলো। শুনেই মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হলো। প্রথমতো নির্দোষকে দোষী বানিয়ে জেলে ঢুকিয়ে রাখা। তারউপর যারা অপরাধ দমন করবে তারা নিজেরাই আরেকটা অপরাধ করছে। ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলো এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা ফিট করা আছে, বাইরে গিয়ে টাকাটা যাতে হস্তান্তর করা হয়। ভেজা বেড়ালটা টাকা পেয়ে খ্যাতখ্যাত করে হাসলো। আশ্চর্যের শেষ সীমানায় পৌঁছুলাম যখন দেখি মাছের বাজারের মতো এখানেও ঘুষের টাকা যাতে আরো বেশি দেয়া হয় তা নিয়ে কথা কাটাকাটি হচ্ছে। পুলিশের চাকুরী ভাই। সে নিজে লাখ লাখ টাকা দিয়ে চাকুরী পেয়েছে। সুদে আসলে পাবলিককে মাইনকার চিপায় ফেলে সে টাকা উসুল করতে হবে না? অফিসারটার জন্য হঠাৎ আমার মায়া লাগলো। আহারে বেচারা, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হবার জন্য মোটা ভুড়িতে কত জিলাপীর প্যাঁচ।


এবার ঘুষখোরের বড় অফিসারের কাছে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো। তিনি শুনালেন আরো মধুর বাণী। “বাবারা তোমরা স্টুডেন্ট মানুষ, অতো প্রতিবাদের দরকার কি?” হায় আমার দেশ, হায় আমার পুলিশ। আগে শুনতাম যারা পড়ালেখা করে তারাই সবার আগে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। আর এখন অন্যায়ের প্রতিবাদ যাতে না হয় সে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ঝামেলা করে লাভ নেই, নাকে খৎ দিয়ে আমি ওদেরকে ছুটিয়ে আনলাম।
প্রথম প্যারায় ফিরে আসছি। সিলেটে নার্গিস নামে একটি মেয়েকে কোপানো হচ্ছে, কেউ এগিয়ে আসছে না। আরে ভাই আসবে কেন? এটা তো মগের মুল্লুক। এদেশে অপরাধীর শাস্তি হয়না। যেচে পড়ে কেউ ভালো কাজ করলে এরকম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
তবে আমি আশা ছাড়ছি না। চারটি ছেলে আজ যেভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে, বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় কোণায় এরকম ভালো মানুষ আছে। অন্যায়-অনাচারের বিরুদ্ধে একদিন সত্যি সত্যি দেশের সকলেই কাকতাড়ুয়া হবে। বিপদের সময় পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ বুরহান ভাই, মিজান, নাহিদা। জয়বাংলা।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২০

মানবী বলেছেন: আপনি নিজেই বলেছেন, "তবু সামলে নিলাম, দেশতো শান্তিতেই আছে। সুতরাং যেই গরু দুধ দেয়- তার লাথি খাওয়াও ভাল।" তাই
দেশের বিরাজমান শান্তিরক্ষার লক্ষ্যেই গাঁজাখোর মাস্তানদের লালনপালন জরুরী আর সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে জনগণের সেবায় নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসন নিজেদের ভাগটাই চাই্ছে, বিরাজমান শান্তি বলে কথা!


"আমি বসার অনুমতি পেলাম। আমার সাথে আর যারা সাধারণ গার্জিয়েন ছিলেন, তাদেরকে প্রায় গলাধাক্কার মতো বের করে দেয়া হলো। হায় আমাদের সমাজ, এখানে ক্লাস বুঝে আলাপ হয়।"

-ব্যাপারটা স্পষ্ট হলোনা! এখানে সাধারণ কে আর অসাধারন কে?

আপনার অভিজ্ঞতার জন্য দুঃখিত। পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ২:২১

শিপন মোল্লা বলেছেন: বর্তমান দেশের নিত্তদিনের ঘটনা এটা । অদ্ভুত এক পাগলা ঘোড়ার পিঠে চরে দেশ চলছে আমাদের।
জয় বাংলা

৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ ভোর ৫:১৪

শূন্যতার প্রাপ্তি বলেছেন: বর্তমান দেশটাই যেনো ওদের, জনগনের বসে বসে আঙুল চোষা ছাড়া কিছুই করার নেই।

৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:২৫

মূল-উপদল বলেছেন: পুলিশের অথবা অন্যায়কারীর হাতে ডলা খাওয়া অথবা জীবন খোয়ানোর ভয়ে

৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৪৪

বিলুনী বলেছেন: এতখানিতো হতোনা ধানাই পানা্ না করে নির্বাচনে গেলেই তো গত । হেরে গেলেও কদিন বাদেই বীর বিক্রমে ফিরে আসা যেতো । তাহলে এখন আর এত কান্ড কির্তি দেখতে হতোনা । হা হতাস করলেও এখন মেডামের গুলশানের অফিসে দলীয় নেতাদের মিটিংএর জন্য কোরাম পুরা হয় না !!! এর দায়টা কার , কে দেশকে এ পর্যায়ে নিয়ে যেতে দারুনভাবে আপোষহীন হয়ে সহায়তা করল তার নিরপেক্ষ মুল্যায়নটা হোক আগে । ক্ষমতা পাইলে কে কাকে ছাড়ে যেমন এখানে লিখালিখির ক্ষমতা থাকায় যে যেমনভাবে পারে অপরকে কি নিয়ে সেভাবে অনেক জাযগায় দেখা শুধু কথায় নয় আরো শক্ত কিছু বলা হয়ে থাকে ।

৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:২৩

বিলুনী বলেছেন: নার্গিসের জন্য শেষ মহুর্তে সাহসী যে কয়জন এগিয়ে গেল তেমনভাবে সকলে এগিয়ে আসলে কেও ক্ষমতা দেখাতে পারবেনা , সকল ক্ষমতাশালীরাই দমে যাবে জনতার রোসানলে । আওয়াজ উঠুক সকলে আমরা সকলের তরে বিপদে আপদে থাকব তাদের পাশে । অত্যাচার অন্যায় ভেসে যাক সততার কাছে ।
পোস্ট লিখকের প্রতি শুভেচ্ছা রইল ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.