নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই পৃথিবীতে সংখ্যালঘু কে?

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:২৬



আয়েশ করে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠেই বাজার করতে বেড়ুলাম। বাসায় মা,দাদী, রিহান, শশী, রাহিম ও সৈকত এসেছে। হাওর থেকে কিছু বোয়াল মাছ কিনেছিলাম। কিছু সবজি, রিহানের বিস্কুট আর দাদীর জন্য কমলা কিনতে শিবগঞ্জ যাবার জন্য রিকশা নিলাম। মোটর চালিত রিকশায় উঠলাম যাতে দ্রুত পৌঁছুতে পারি। কিচেনমার্কেট আসার আগেই আমাদের রিকশার সামনে পুলিশ। একলোক পুলিশের পা ধরে হাও মাও করে কাঁদছে। অপরাধ কি করেছে জানি না তবে লোকটা পুলিশের বাবার বয়সী হবে। বিপদ আঁচ পেয়ে আমার রিকশাওয়ালা সাই করা রিকশা ইউটার্ন নিলো।
আমি বললাম, আরে আরে কই যান?
-ভাই সামনে পুলিশ
-পুলিশ তো ভয় পাওয়ার কি আছে?
-পাম ছাইড়া দিবো, রিকশা লইয়া যাইবো। গরীবের রিকশা একবার নিলে আর ফেরত পামু না। ট্যাকা নাই যে ঘুষ দিয়া ছাড়াইয়া আনমু।
কি বলবো কিছু বুঝতে পারছি না। তবে রিকশাওয়ালার শেষকথাগুলো এই বিকাল অব্দি কানে বাঁজছে-গরিবের লাইগ্যা কোন আইন নাই। গরিবের সম্মান নাই। গরিব মরলে কান্দনের কেউ না

ইদানিং কিছু একচোখা মানবতা দেখছি। যেমন একদল নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে তারা চানাচুর খাচ্ছেন অথচ পাশের দেশের সংখ্যালঘুদের ঘর বাড়ি পুড়ালে-হ্যান করেঙ্গে ত্যান করেঙ্গে। নিজ চোখে দেখেনি অথচ এদের অনেকেই ”বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও বড় গণহত্যা মায়ানমারে ঘটছে” এরকম বিবৃতি দিয়ে ফেলছেন। নিজ দেশের হিন্দু বা সাওতাল পল্লীতে যে দাও দাও আগুন জ্বলেছে তার উত্ত্বাপ তাদের গায়ে লাগে নি। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান বাদেও আমরা যে সৃষ্টির সেরা জীব “মানুষ” এটা ভুলে যাই।

এই পৃথিবীতে সংখ্যালঘু কে? বাংলাদেশে হিন্দুরা সংখ্যালঘু? মায়ানমার বা ভারতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু? উহু সংখ্যালঘু কোন ধর্মের মানুষ নয়। সংখ্যালঘু হচ্ছে গরীব। আই রিপিট, পৃথিবীর বড় সংখ্যালঘু হচ্ছে গরীব। মূলত গরীব সংখ্যালঘুরাই মার খাচ্ছে। কদিন আগে শাবিপ্রবির এক বিতর্কে অনুষ্ঠানে তথ্যটা পাই। নাসিরনগরের গ্রামে যেদিন হিন্দু গরীবদের ঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো, ঢাকায় সেদিন বড় একটি হোটেলে অই একই ধর্মাবলম্বীদের বড় একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিলো। সারাদেশ তোলপাড়, অথচ ঢাকার বড় হোটেলের বড় আনন্দ আয়োজন কিন্তু বন্ধ হয়নি।

যে আমেরিকা ও ইজরাইল ফিলিস্তিনে বোমা মেরে মুসলিম নারী শিশুদের হত্যা করছে সেই আমেরিকা ও ইজরাইলের বড় মিত্র শক্তি কিন্তু নবী মুহাম্মদের দেশ সৌদি আরব। বাংলাদেশের কোন মুসলিমকে দেখেছেন সৌদিদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে? তো কনক্লুশনটা কি হলো? সব কিছুই টাকা ও ক্ষমতার হাতে বন্দী।

সিলেটের স্বঘোষিত দানবীর রাগীব আলীর হাতে যখন ক্ষমতা ছিলো তখন টাকা দিয়ে তিনি মানুষ কিনতেন। কবি কিনতেন, রাজনীতিবিদ কিনতেন, শিক্ষক কিনতেন। তখন রাগীব আলীকে নিয়ে বই বেড়ুতো, সমাজের বিশিষ্টজনেরা তাকে নিয়ে শ্লোগান দিতো, সংবর্ধনা হতো। ভাত ছিটালে যেমনটা কাকের অভাব হয় না। আজ রাগীব আলী মাইনকার চিপায় পরে জেলে, সব কাওয়া কা কা কা কইরা ভাগছে। অন্য কোথাও গিয়ে ময়ূর পাখ খুঁজছে। ট্যাকা নাই, কিচ্ছু নাই।

আমার বাজার শেষের দিকে। দাদীর জন্য কমলা কিনবো। দোকানদারের সাথে দামদর চলছে।
-কমলা হালিতে না কেজিতে?
-স্যার, হালিতে ৬০ টাকা, কেজিতে ১৩০ টাকা। ক্যামনে নিবেন?
-কেজিতেও দেন। হালিতেও দেন। বাসায় গিয়ে বলবো এককেজি একহালি কমলা আনলাম।
-স্যার আপনি বড় রসিক মানুষ। হা হা হা।
পাশে পুরাতন একটি লুঙ্গি ও শার্ট পরা পঞ্চাশোর্ধ্ব ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। পোশাকে বলছে তিনি নিম্ন আয়ের লোক। বাসায় কেউ অসুস্থ হয়তো। অথবা অন্যের বাসায় কাজ করেন, কমলা কিনতে পাঠিয়েছে। দোকানের কমলায় হাত দিতেই দোকানি খ্যাক করে উঠলো।
-অই মিয়া কমলায় হাত দেও ক্যারে?
-কমলা কিনতাম বাবাজি।
-কিনবা না চুরি করবা?
-তওবা আস্তাগফিরুল্লাহ। ইতা কিতা মাতেন বাবাজি।
-কিনলে আমারে কইবা, হাত দিও না।

ঘটনার আকষ্মিকতায় আমি নিজেও লজ্জা পেয়ে গেলাম। শার্ট প্যান্ট পরে এসেছি বলে আমি “আপনি/স্যার” সম্বোধন পাচ্ছি। আর পাশের বুড়ো লোকটি “তুমি/চোর” সম্বোধন পাচ্ছে। রিকশাওয়ালার কথা মনে পরে গেলো-গরীবের লাইগ্যা কোন আইন নাই। গরীবের কোন সম্মান নাই। সম্মান নামক জিনিসটা টাকা পয়সা, ক্ষমতা, পোশাকেই সীমাবদ্ধ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.