নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ভাল না খারাপ দূর থেকে নয়, কাছে এসে মিশে বন্ধু হয়ে দেখুন৷

খলিলুর রহমান ফয়সাল

ভাল আছি ভাল থেকো, আমার ঠিকানায় চিঠি লিখো

খলিলুর রহমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালদা কি শুধু মাত্র সিনেমা?

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩০

সিনেমার শুরুতেই মহা ধুমধাম করে ব্যাঙের বিয়ে!। বিয়ের জন্য ছায়ামণ্ডপ, পুষ্পমাল্য, গায়েহলুদ, আশীর্বাদ, ধান-দূর্বা, ভোজন—সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল। শুরু হলো “হালদা” সিনেমা। এটি কি শুধু মাত্র সিনেমা? হালদা একটি আন্দোলন, হালদা একটি প্রতিবাদ, হালদা একটি শিল্প।

পার্বত্য চট্টগ্রামের বাটনাতলী পাহাড় হতে উৎপন্ন হয়ে ফটিকছড়ির মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম জেলায় প্রবেশ করেছে নদীটি। ৮১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদী এবং এর মানুষদের নিয়ে গল্প বেঁধেছেন আমাদের তৌকির আহমেদ। পরিচালকের প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধা তৈরি হলো আজ।পৃথিবীর একমাত্র জোয়ার-ভাটার নদী হালদা, যেখানে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাতৃমাছ ডিম ছাড়ে এবং নিষিক্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়। আমার কাছে হালদা নদীকে ম্যাজিকাল মনে হয়। ভাবা যায়, সব প্র্যাগনেন্ট মাছেরা দলবেঁধে নদীতে চলে আসলো। আগেই বলে রাখি, সিনেমার শুরুতেই তিশাকে আমি একটি মাছ ভেবে নিয়েছি। দর্শক হিসেবে এটা আমার নিজস্ব ভাবনা। গল্প আগায় তার সাথে পাল্লা দিয়ে তিশা পুরো সিনেমাকা সামনে থেকে টেনে নিয়ে আসেন। অবশ্য তিশার পাশের জাদরেল শিল্পীদের কথা না বললে অবিচার হবে। দরাজ কন্ঠের দিলারা জামান, অফফ কি অভিনয়! জাহিদ হাসান বা মোশারফ করিম, ফজলুর রহমান বাবুরা তো আমাদের অভিনয়ের লিজেন্ড। হাসু চরিত্রে তিশার মা মোমেনা চৌধুরী কিংবা নাদেরের বড় বউ রূনা খান; কাকে ছেড়ে কার প্রশংসা করবো?

এবার কিছু এক্সক্লুসভ দৃশ্যের কথায় আসি। পানিতে ভাসা সাদা সাদা মাছের ডিম কখনো দেখেছেন? কিংবা ঘোলা নদীতে ভেসে থাকে সবুজ কচুরী পানা। তার উপর সাদা সাদা মেঘের ভেলা। একদম বাংলাদেশের সত্যিকারের দৃশ্য। চট্টগ্রামের ভাষা হলেও সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে ইংরেজি সাবটাইটেল দেয়া ছিলো। বুঝতে একটুও সমস্যা হয়নি। সংলাপ খুবই সরল, যেমনটা আমরা সবসময় কথা বলি সেরকম। কোন আদিখ্যেতা নেই, কোন গুরুগম্ভীরতা নেই। একটা সংলাপ বলি, “মাইনষের মইদ্যে যিমুন দানব আছে তিমুন ফেরেশতাও আছে।” কত সহজ ভাষায় সত্য কথা! অদ্ভুৎ লেগেছে বহুবছর পর “গাওছুল আলম বাবা” এর গানটা সিনেমায় ফিরে এসেছে। অবশ্য সিনেমার সঙ্গিত পরিচালক যখন পিন্টু ভাই একটা মুর্শিদী গান থাকবে না, ভাবাই যায় না। পিন্টু ভাইকে সেই ছোটবেলা থেকে চিনি। হবিগঞ্জের মাধবপুরের ছেলে পিন্টু ঘোষ অল্প বয়সেই গজল, বাউল, মারিফতি গেয়ে গেয়ে গলায় শান দিয়ে রেখেছেন। সারা সিনেমা জুড়ে পিন্টু ভাইয়ের সুরের মুগ্ধতা আবেশিত করে রেখেছে। গমগম লার শুনে যেমন প্রেমে হাবুডুব খেয়েছি নোনাজল গান শুনে হাহাকার তৈরি হয়েছে। তবে পিন্টুপত্নী সুকন্যা দিদিসহ ডুয়েট গান প্রেমের আগুন আমার কাছে বেস্ট লেগেছে। গানের একটা লাইন এরকম, “তুমি যত দূরে যাও তবু তুমি না হারাও, তিয়াস লাগার মতোই তুমি রয়ে যাও, প্রেমের আগুনে কি তুমিও পুড়াও?” কি কথারে ভাই। পিন্টু ভাই স্যালুট।

গান ছেড়ে আবার সিনেমার দৃশ্যে ফিরি। বাচ্চারা সবুজ পাড় ধরে নদীতে লাফ দিচ্ছে। বালুর নৌকার দড়ি ধরে কয়েকটি শিশু টানাটানি করছে, তারপর হলুদ সরিষা ক্ষেতে বদি (মোশারফ করিম) হাসুকে (তিশা) একটি ফুল উপহার দিলো। সেই ফুলটি নিয়ে হাসু কেমন করে যেন একটি হাসি দিলো। আহ প্রাণ জুড়িয়ে আসে। আমি বোধহয় প্রথম কোন বাংলা সিনেমায় শীতের কুয়াশার দৃশ্য দেখলাম। জব্বারের বলিখেলা এবং নৌকাবাইচের চেয়েও ষোলগুটি খেলার ঘর দেখে আমার কি যে খুশি লেগেছে। ছোট বেলা কত খেলতাম ষোলগুটি। এখন বিলুপ্ত হলেও ষোলগুটি ছিলো বাংলাদেশের গ্রামীন পুরুষদের অন্যতম প্রধান খেলা। অলস অবসরে গ্রামের যুবক ও মধ্যবয়সী পুরুষেরা ষোলগুটি খেলে। মাটিতে দাগ কেটে শুকনো ডাল ভেঙ্গে গুটি বানিয়ে চলে এই দীর্ঘমেয়াদি খেলা। খেলার এত সহজ সরঞ্জাম গ্রামবাসীর উত্সব মুখর মনের বহিঃপ্রকাশকেই প্রমাণ করে। তৌকির আহমেদ আমাকে যেন সে স্মৃতিতেই ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন।

আমি হালদার গল্প বলবো না। আরেকটা দৃশ্যের কথা শেয়ার করি। মাচা থেকে কচি পুই লতা তুলছে হাসু, পেছনে আরেকটি গাছে পেঁপে ঝুলছে। তবে হৃদয় কাপিয়েছে আরেকটি দৃশ্য। দিলারা জামান দূর্ঘটনায় পা ভেঙে বিছানায় শুয়ে থাকেন। তার পূত্রবধূ তিশাকে কাছে ডেকে বলেন, “মাইয়া মানুষের নাম হারাইয়া যায়। বিয়ার পরে হয় সে বউমা বা বউ। কয়দিন পর শুধু মা।” দিলারার একটা নাম আছে-সুরুতবানু। খুব আকুতি নিয়ে তিনি তার পূত্রবধূকে বলেন, “আমারে সুরুত কইয়া ডাক দেও হাসু।” কি নির্মম সে দৃশ্য! এরকম আরো অনেক চমৎকার দৃশ্য দিয়ে হালদার গল্প বলেছেন তৌকির আহমেদ। হলে গিয়ে সিনেমাটা দেখে আসুন। গ্যারান্টি দিচ্ছি, হালদা দেখে ঠকবেন না।
বাংলা সিনেমার জয় হোক।

ছবিতে নন্দিতা সিনেমা হলে হালদা দেখার পর সিলেটের চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন কাকতাড়ুয়ার সদস্যবৃন্দ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:



হালদা শুধু সিনেমা নয়, পরিপুর্ণ জীবনব্যবস্হা?

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:৪৭

পাজী-পোলা বলেছেন: গ্যারান্টি দিচ্ছি, হালদা দেখে ঠকবেন না।
ডুবেও এই রকম অনেক কথা বলা হইছিলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.