নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিরিয়ার কিভাবে এল

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

ফিলিস্তিনকে ছাপিয়ে সিরিয়ার মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সিরিয়াতে সবচেয়ে বড় গনহত্যা চলেছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু কিভাবে এই অবস্থার তৈরি হল? কিভাবে এক আরব ভেঙে এতগুলো দেশ হল? এই নোটে সেই কথাগুলো সংক্ষেপে তুলে আনার চেষ্টা করেছি। ।

প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশ সরকার তুরুস্কের সাথে আরবদের ঝামেলা তৈরি করতে একজন চর নিয়োগ দেয়। তার নাম ছিল থমাস এডওয়ার্ড লরেন্স (Thomas Edward Lawrence). এই থমাস এডওয়ার্ড লরেন্স পরে অত্যান্ত বিখ্যাত হয়ে যায় Lawrence of Arabia নামে একটি বিখ্যাত হলিউড মুভিও রয়েছে। মুভিটি তার ঘটনার একটি বিকৃত রোমানটি-সাইজ ভার্সন। এই কাজে সে আশাতীত সফল হয়। সে মক্কার গভর্নর শরীফ হোসাইন ইবনে আলী কে ওসমানীয়দের সাথে লড়তে ব্রিটিশ বাহীকে সহায়তা করতে রাজি করে ফেলে।
এই শরীফ হোসাইন ইবনে আলী সাহেব ছিলেন রাসুল সা. এর সারাসরি বংশধর (৪০ তম)।

১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার শরীফ হোসাইন ইবনে আলী এর সাথে গোপন আলোচনা শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় তিনি যদি ব্রিটিশদের ওসমানীয় খেলাফাত এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করেন এবং যুদ্ধে যদি ব্রিটিশ বাহিনী জয় লাভ করে তাহলে তাকে পুরো জাজিরাতুল আরব এর খলিফা বানানো হবে। শরীফ হোসাইন ইবনে আলী এতে রাজি হয়ে যায় এবং মুসলিম খেলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। ১৯১৫ সালের অক্টোবর মাস এর ২৪ তারিখ এই গোপন চুক্তিটি সম্পাদিত হয় যা হোসাইন-ম্যাকমোহন চুক্তি নামে পরিচিত। এই হেনরি ম্যাকমোহন ছিলেন মিশরে ব্রিটিশ সরকার এর হাই কমিশনার।

[হোসাইন-ম্যাকমোহন এ্যাগরিমেন্ট]
একই সময়ে ব্রিটিশ সরকার মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে আরও একটি অত্যন্ত গোপন একটি চুক্তি করে যা সাইক-পিকো এ্যাগরিমেন্ট নামে পরিচিত। এটি যুদ্ধে জিতলে ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া মধ্যপ্রাচ্যের কে কোন অংশটুকু পাবে তা নিয়ে চুক্তি। নভেম্বর ১৯১৫ সালে তারা এ আলোচনা শুরু করে। (একটু আগেই আমরা দেখলাম এর একমাস ব্রিটেন ইতিমধ্যে শরীফ হোসাইন ইবনে আলীকে পুরো জাজিরাতুল আরব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।) ব্রিটেন এর পক্ষে বিখ্যাত কূটনৈতিক মার্ক সাইক (Mark Sykes) এবং ফ্রান্স এর পক্ষে ফ্যান্সিস জর্জ পিকো (Francois Georges Picot) আলোচনায় অংশ নেন। ১৯১৬ সালের মে মাসে তারা চুক্তিটি সম্পাদন করে। এখানে মজার বিষয় এই যে যারা আলোচনায় অংশ নিয়েছিল তারা কেউ মধ্যপ্রাচ্যে সশরীরে যায় নি। তারা লিটারেলি মানচিত্রের উপর ভাগাভাগি করেন। মানচিএেই স্বাক্ষর করেন। এই সাইক-পিকো এ্যাগরিমেন্ট বর্তমান মধ্যপ্রাচ্য এর ম্যাপ এর আকার ঠিক করে দেয়।

(মূল মানচিত্র যার উপর ভাগাভাগি হয়। নিচে সাইক এবং পিকো এর স্বাক্ষর।)

ভাগাভাগির অংশ। সবুজ অংশ রাশিয়ার। লাল অংশ ব্রিটেন এবং নীল অংশ ফ্র্যান্স।
প্রশ্ন আসতেই পারে কিভাবে আমরা এমন অতি গোপনীয় চুক্তি এর খবর পেলাম। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিকরা জারদের হটিয়ে রাশিয়ার ক্ষমতা দখল করে। এর পর তারা জারদের দুর্নীতি জনগণকে দেখানোর জন্য অনেক গোপন দলিল ফাঁস করে দেয়। সেই সব গোপন দলিল এর মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।

বিশ্বযুদ্ধে মিত্র শক্তি জেতার পর সাইক-পিকো এ্যাগরিমেন্ট অনুসারে ভাগাভাগি হয়। ফলে ফ্র্যান্স পায় সিরিয়া তার আশে পাশের এলাকা। ফ্র্যান্স প্রথমেই যে অপকর্মটি করে তা হল সিরিয়াকে ভাগ করে ফেলে জাতীয়তা বা, আদর্শ অনুসারে। লেবানন নামে আলাদা দেশই বানায় আরব খ্রিস্টানদের জন্য(যদিও এখন লেবানন এখন একটি বহুধর্মীয় দেশ।), দ্রুযিদের জন্য আলাদা অংশ নাম দিয়েছিল স্টেট অব জাবাল দ্রুযি , আল অয়াতি উপজাতিদের জন্য স্টেট অব আল অয়াতি, সুন্নিদের জন্য স্টেট অব দামাস্কাস এবং স্টেট অব আলাপ্পো।

ফ্র্যান্স প্রায় ৩০ বছর সিরিয়া এভাবে শাসন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সিরিয়া বিপ্লব হয় এবং সিরিয়ানরা ফ্রেঞ্চদের বের করে দেয় তবে লেবাননকে আর ধরে রাখতে পারে না। লেবানন আলাদা রাষ্ট্রই থাকে। ফ্রেঞ্চরা শাসনের সময় আল অয়াতি উপজাতিদের গ্রুপকে (আমাদের ভাষায় রাজাকার) বেঁছে নেয় এবং নানান সুযোগ সুবিধাদেয় সংখ্যাগরিষ্ঠ সুন্নিদের উপর ফ্রান্স এর পক্ষে পুলিশি করতে। এই আল অয়াতি উপজাতিরা ছিল সিরিয়ার সবচেয়ে নিষ্ঠুর, ডাকাত, অশিক্ষিত এবং অনেকটা বর্বর সম্প্রদায়। ইতিহাসে আল অয়াতি উপজাতিদেরকে একটি ডাকাত সম্প্রদায় হিসেবেই দেখা যায় তারা পাহাড়ের দুর্গম এলাকায় বাস করতো এবং সুন্নিদের গ্রাম এবং শহরগুলোতে ডাকাতি করতো। সুন্নিরা এই আল অয়াতিদের ভয় পেত। ফ্রেঞ্চরা এসে এই আল অয়াতিদের শিক্ষার ব্যবস্থা করে এবং প্রচুর সামরিক সহায়তা করে। ফলাফল ৩০ বছর পর যখন ফ্রান্স সিরিয়া ছেড়ে চলে যায় এক আল অয়াতি জেনারেল হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ার ক্ষমতা দখল করে। তারই ছেলে বাশার আল আসাদ এখন সিরিয়া এর ক্ষমতায়।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১২

চাঁদগাজী বলেছেন:



ইতিহাস বুঝলাম, বর্তমান গৃহযুদ্ধ ও হত্যাকান্ড কেন হচ্ছে, সেটা কই?

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪৪

যাযাবর চিল বলেছেন: একই কারন স্বাধীনতা !

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৮:৪৩

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আরব' রা প্রথমে শত্রুর সাথে হানাহানি করে, শত্রু শেষ হলে প্রতিবেশীর সাথে করে, যখন প্রতিবেশী শেষ হয়ে যায় তখন ভাই কে বেছে নেয়।

মধ্য প্রাচ্যে সেটা চলমান। সেখানে কখন শান্তি আসবে না, সাদা চামড়া খালি খালি তাদের পিছে লেগে থাকে। তাদের কে একলা ছেড়ে দেওয়া হউক। তারা নিজেরা নিজেরা জগরা করে একদিন শেষ হয়ে যাবে।

১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার শরীফ হোসাইন ইবনে আলী এর সাথে গোপন আলোচনা শুরু করে। ব্রিটিশ সরকার তাকে প্রতিশ্রুতি দেয় তিনি যদি ব্রিটিশদের ওসমানীয় খেলাফাত এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহায়তা করেন এবং যুদ্ধে যদি ব্রিটিশ বাহিনী জয় লাভ করে তাহলে তাকে পুরো জাজিরাতুল আরব এর খলিফা বানানো হবে।


অনেকটা জামায়াতি চরিত্র।

৩| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:০৬

পদ্মা_েমঘনা বলেছেন: ধন্যবাদ। অনেক কিছু জানলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.