নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউঃ বাংলাদেশের কালচার

২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:০৫



লেখকঃ আবুল মনসুর আহমদ
প্রকাশকঃ আহমদ পাবলিশিং হাউস
দামঃ ১৪০ টাকা

আমাদের সাহিত্যের পরিধি খুব বেশি ছোট না হলেও গভীরতা কিংবা ব্যাপকতা যথেষ্ট নয়। আমাদের দেশ, ভাষা, সংস্কৃতি নিয়ে নির্মোহ ভাবে লেখা বই পরিমানের দিক দিয়ে অপ্রতুল এবং মানের দিক দিয়ে খুবই নিম্ন মানের। ইতিহাস বিভাগের পাঠ্য কিছু বই আছে সেগুলা অনেকটা উইকিপিডিয়ার মত। এক গাদা তথ্যে ভরা; তার পাঠ নেই। এর আগে 'আমাদের জাতিসত্তার বিকাশধারা' নামে একটি বই পড়েছিলাম। সেটিও অসাধারণ তবে খানিকটা উইকিপিডিয়া এবং লেখক আবেগাক্রান্ত হয়ে গেছেন।

আবুল মনসুর আহমদের 'বাংলাদেশের কালচার' বইটি পড়লাম। মাত্র ১৬৬ পৃষ্ঠার একটা বই তবে আমার শেষ করতে দুইদিন লেগেছে। বইটা পড়ে আমার প্রথম প্রতিক্রিয়া হল, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি নিয়ে এই অপ্রতুল সাহিত্যের ভীরে এই বইটা অনেকটা আলোক বর্তিকার মত। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির মত জটিল, গুরুগম্ভীর বিষয় তিনি ছন্দোবদ্ধ কবিতার মত বলে গেছেন। সুখপাঠ্য বর্ণনা, পড়তে গিয়ে একটুও বিরক্তি আসে না। তবে ভাঁড়ামো নেই, বা নেই কোন কৃত্রিমতা। কিছু অংশ পড়ার পড়েই আপনিও হয়ে যাবেন বইয়ের একটা অংশ। থামতে বাধ্য হবেন। আপনাকেও ভাবতে হবে।

আমাদের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির অতীত গৌরব, বর্তমান সংকট এবং ভবিষ্যৎ রুপরেখা অসাধারণ গভীর এবং প্রানবন্ত আলোচনা করেছেন। কিছু অপ্রিয়, কঠিন সত্য কথা অবলীলায় বলেছেন। বলেছেন আমাদের ইতিহাস নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন তত্ত্ব নিয়ে। পশ্চিম বাংলার সাথে আমাদের সম্পর্ক নিয়ে। করেছেন আমাদের ধর্মীয় ইতিহাস এবং উৎসব নিয়ে প্রচলিত ভুল ধারনার চমৎকার তথ্য ভিত্তিক বিশ্লেষণ। প্রায় প্রতিটি লাইনই মার্ক করার মত। আমি এত বেশি হাইলাইট ব্যবহার করেছি শেষ কবে মনে পরে না। কিছু অংশ উল্লেখ করছি,

“পদ্মফুল এবং বসরাই গোলাপ যেমন করে একই বাগিচায় নিজ নিজ স্থানে প্রস্ফুটিত হতে পারে, ভারতের বুকে তেমনি হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতি নিজ নিজ স্বকীয়তায় বাড়তে দিতে হবে”।

“আমরা ভুলে যাই, রাষ্ট্রীয় জাতি হিসেবে আমরা নতুন হলেও সভ্য মানুষ এবং কৃষ্টিমান জাতি হিসেবে আমরা শিশু নই। আমাদের মাতৃভূমির নাম বাংলা। এটা প্রাচীন সমতট দেশ। হঠাৎ জলধি হতে ভেসে উঠা চারণভূমি নয়। অন্তত দুই হাজার বছরের প্রাচীন কাহিনী এর ইতিহাসের পৃষ্ঠা উজ্জ্বল করে রেখেছে। আধুনিকতম ধর্মের উম্মত হিসেবে, তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সভ্য জাতি হিসেবে আমরা প্রায় সাতশ বছর এই দেশ পার্শ্ববতী দেশসমূহ কৃতিত্বের সংগে শাসন করেছি। সে শাসন বিজয়ীর বেশে উচ্চাসনে বসে করি নাই। এ দেশকে মাতৃভূমি জ্ঞান করে জনগনের সাথে মিশে তাদের মধ্য হতে তাদেরই নেতা হিসেবে খাদেম হিসাবে শাসন করেছি। জীবনের শেষে মাতৃভূমির মাটিতে মিশে আছি”

“পূর্ব বাংলায় সংখ্যাব্যাক শব্দ পয়লা, দুসরা, তেসরা, চৌঠা ব্যবহার করা হয়। পরে আঠার পর্যন্ত সংখ্যার শেষে ‘ই’ যোগ করিয়া এবং তারও পরে সংখ্যা শব্দের উচ্চারণ ভেদে ‘আ’ বা ‘ই’ যোগ করিয়া শব্দ গঠন করা হয়। যথা তেরই, চল্লিশা, একাশিয়া ইত্যাদি। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যেও এইরুপ ব্যবহার হইত। কিন্তু পশ্চিম বংলার মধ্যযুগের সংস্কৃত ঘেঁষা সাহিত্য এক হতে চার পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ। পাঁচ হতে ‘ম’ ‘তম’ ‘তিতম’ প্রত্যয় যোগ করিয়া মানবাচক সংখ্যাকে দুরচ্চার সংস্কৃত শব্দ করা হইয়াছে। এ ব্যবস্থায় লিখিবার সময় সকল সংখ্যার পরে সংক্ষেপে ‘ম’ বসাইয়া কাজ হয় বটে, কিন্তু পড়িবার সময় ষষ্ঠষষ্ঠীতম, আস্টসপ্ততিতম ইত্যাদি উচ্চারণ করিতে হয়। এটার দুঃসাধ্যতা স্বীকৃতির ফলে অনেকেই ইদানীং পড়িবার সময় শুধু ‘তম’ উচ্চারণ করিয়া থাকে। যথা চল্লিশতম, বিরাশিতম ইত্যাদি। এটা কি যুক্তিসংগত না ব্যাকারন সম্মত। এর একটাও না। তবু এটাই করা হইয়া থাকে কারন বিকল্প সহজ শব্দটি বাংগাল।”

বইয়ের একটা মজার দিক হল বইটি লেখা হয় ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল এই সময়ে। আজ থেকে ৫০-৬০ বছর আগে। লেখকের করা অনেক প্রেডিকশন পরে মিলে গেছে।
আর কিছু বললাম না। বাকীটা পড়লে।
Happy reading

সমালোচনাঃ
বইয়ের প্রথম অংশে তিনি সব ধর্ম নিয়ে ঢালাও ভাবে একটা আলোচনা করেছেন। এটা বইয়ের একটা দুর্বল দিক। কারন ধর্ম নিয়ে কিছু পড়াশোনা না থাকলে এই ত্রুটি চোখে পড়বে না।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:২৬

ওসেল মাহমুদ বলেছেন: চমতকার আলোচনা করেছেন ! বইটির ই-কপি কি পাওয়া যাবে !?

২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:৫৫

যাযাবর চিল বলেছেন: পেতে পারেন।

২| ২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:৪৪

সালমান মাহফুজ বলেছেন: যেটা প্রত্যাশা করেছিলাম, বইটা নিয়ে আপনার নিজস্ব পর্যবেক্ষণ । কিন্তু সেটা পর্যাপ্ত পেলাম না । যা পেলাম, তা কিছুটা বিজ্ঞাপনধর্মী বাক্যে ঠাসা আর বইয়ের উদ্ধৃতি । উদ্ধৃতি দেখে বইটা পড়ার ইচ্ছে জাগল

সবশেষ আপনাকে অভিনন্দন আপনার চেষ্টার জন্য ।

২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১১:৫৪

যাযাবর চিল বলেছেন: আপনার বা কারো প্রত্যশা পূরণ করার জন্য যাযাবর লেখে না। ধন্যবাদ :)

৩| ২২ শে মে, ২০১৭ রাত ১:০০

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: বই থেকে উল্লেখিত অংশ পড়ে ভালো লাগলো। বর্ণনা করেছেন সুন্দর।

শুভকামনা বইটি ও আপনার জন্য।

৪| ২২ শে মে, ২০১৭ ভোর ৪:৪১

জগতারন বলেছেন:
লেখকঃ আবুল মনসুর আহমদ বাংলাদেশের সস্কৃতি ও কৃষ্টি নিয়ে বই লিখিবেন ভালো কথা, সেখানে আবার ইংরেজী (কালচার) ঢুকানোর দরকার কি? বুঝলাম না। এ সমস্ত ঢুকাইলে আবার বাংলিশ হইয়া যায় না?

২৩ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:০৫

যাযাবর চিল বলেছেন: কালচার শব্দটার বাংলা করা মুসকিল।

৫| ২২ শে মে, ২০১৭ সকাল ৮:২৩

খালিদ১২২ বলেছেন: THANKU FOR INTRODUCING BOOKS

৬| ২২ শে মে, ২০১৭ সকাল ১০:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: ধন্যবাদ ভালো একটি বইয়ের সন্ধান দেওয়ার জন্য।

৭| ২২ শে মে, ২০১৭ রাত ৮:১০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আবুল মনসুর আহমদের মতো প্রথিতযশা লেখকের বই পর্যালোচনার কাজটি কঠিন। আপনি সেটি ভালোভাবেই করতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।

৮| ২০ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:২৮

ইমরান আশফাক বলেছেন: বইটি পড়া দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.