নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাতাসে ভাসা একটি গল্প এবং সেকুলারদের মূর্খতার নমুনা

০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১০

“আমাদের মহানবী (সা.)কাবা শরিফের ৩৬০টি মূর্তি অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। দেয়ালের সব ফ্রেসকো নষ্ট করার কথাও তিনি বললেন। হঠাৎ তাঁর দৃষ্টি পড়ল কাবার মাঝখানের একটি স্তম্ভে। যেখানে বাইজেন্টাইন যুগের মাদার মেরির একটি অপূর্ব ছবি আঁকা। নবীজী (সা.) সেখানে হাত রাখলেন এবং বললেন, ‘এই ছবিটা তোমরা নষ্ট কোরো না।’ কাজটি তিনি করলেন সৌন্দর্যের প্রতি তাঁর অসীম মমতা থেকে”।

এই গল্পটি আন্তর্জালে ভেসে বেড়াচ্ছে গত কয়েকদিন। টকশোগুলোতে ইমরান সরকারসহ কয়েকজন এই গল্প বলেছেন। থিওলজি আমার প্রিয় বিষয়, এর মধ্যে প্রফেট সা: এর জীবনী [সিরাত] আমার বিশেষভাবে প্রিয়। ইসলামি স্কলার, নাস্তিক, সমালোচক, গবেষকসহ সব ধরনের লেখকেরই ১৫-২০ টা সিরাত পড়েছি। লেকচার শুনেছি ১৫০ টিরও বেশি। দেখছি একাধিক ডকুমেন্টারি। কোথাও এই ঘটনার উল্লেখ পাই নাই। তারা কোথায় পেলন এই গল্প!? অনেক খোঁজাখুঁজি করলাম। আগের পড়া বইগুলো আবার রিচেক করলাম। ফলাফল শূন্য। সিরাতের প্রধান-অপ্রধান, আস্তিকের লেখা-নাস্তিকের লেখা কোন বইতেই এই ঘটনার উল্লেখ নেই। ছবির ব্যাপারে শুধু এই বর্ণনা আছে, কাবায় ইব্রাহিম আ: এবং ইসমাইল আ: এর ছবি ছিলো। রাসুলুল্লাহ সাঃ এই ছবিগুলো অনান্য মূর্তির সাথে ধংস করেন [The Selected Nectar: 465-66]।
অবশেষে জ. ই. মামুনের পোস্ট [https://goo.gl/I4XNAU ] থেকে সুত্র পেলাম । Alferd Guillaume, একজন অক্সফোর্ড প্রফেসর উনার বইয়ের ৫৫২ পৃষ্ঠায় নাকি এই ঘটনার উল্লেখ আছে। আন্তর্জাল থেকে বইয়ের PDF নামিয়ে ৫৫২ নম্বর পাতা বের করলাম। তাতে লেখা,
“Hanif and other traditionists: Quraysh had put pictures in the Ka'ba including two of Jesus son of Mary and Mary (on both of whom be .peace!). I. Shihiib said: Asma' d. Shaqr said that a woman of Ghassan joined in the pilgrimage of the Arabs and when she saw the picture of Mary in the Ka'ba she said, 'My father and my mother be your ransom! You are surely an Arab woman!' The apostle ordered that the pictures should be erased except those of Jesus and Mary.”
[বইয়ের PDF link- https://goo.gl/3M7Fbu ]

প্রথম কথা, এই অংশের অনুবাদটি যে করেছে সে একটা গণ্ড মূর্খ। ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে তার সামান্য জ্ঞানও নাই। এই অংশের অনুবাদ কিভাবে ওই গল্প হয়?

দ্বিতীয় কথা ইতিহাস এবং ইসলামে এই বইয়ের কোন ক্রেডিবিলিটি নেই।
কারন এক- তার বইয়ের নাম THE LIFE OF MUHAMMAD "A TRANSLATION OF ISl;IAQ'S SIRAT RASOL ALLAH WITH INTRODUCTION AND NOTES BY A. GUILLAUME
মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রাঃ ইতিহাসের প্রথম সিরাত লেখক। তিনি ৮৫ হিজিরিতে জন্ম গ্রহন করেন। কিন্তু ইবনে ইসহাক রাঃ মূল সিরাত গ্রন্থ হারিয়ে গেছে। উনার বই আর নেই। উনার ছাত্র ইবনে হিশাম বইয়ের রিভাইজড একটা কপি লিখেছিলেন। সেটি বর্তমানে আছে। এই পৃথিবীতে যত সিরাত গ্রন্থ আছে সবই ইবনে হিশামের রিজাইজড সিরাতের কপি পেস্ট। লেখক ইবনে ইসহাকের নাম দিলেও ভূমিকাতে বলেছেন এটি ইবনে হিশামের সিরাতের অনুবাদ। অর্থাৎ লেখক অযাচিতভাবে ইবনে ইসহাকের নাম ব্যবহার করে দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া A. Guillaume তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা স্কলার না। আন্তর্জালে উনার প্রোফাইল দেখলেই বুঝবেন [https://goo.gl/Jb2x2w]

দুই- ইবনে হিশামের সিরাতের মূল আরবি কপি এখনো আছে। এছাড়া এটি বাংলাসহ পৃথিবীর প্রায় সকল প্রধান ভাষায় অনুবাদ করা আছে। অন লাইনে পিডিএফ পাবেন। আপনি পড়েন, দেখুন এই ঘটনার উল্লেখ আছে কিনা। [ইংরেজির লিংক- https://goo.gl/rSp1UK]

এটা আসলে একটা অসত্য বচন। A Guillaume এর একটা আবিস্কার। এর কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। তাই আর কোন সাধারণ লেখক বা স্কলার, হোক সে মুসলিম বা ইসলাম বিরোধী কারো বইতে এই ঘটনার উল্লেখ পাবেন না। আর সত্য হওয়ার কোন কারন বা যোক্তিকতাও নেই।
এর কারন ব্যাখ্যা করছি,
আমার ইবনে লুসাই আল খুজায়ি সিরিয়ার আমাল কাইট সম্প্রদায়ের কাছ থেকে হুবাল মূর্তি নিয়ে আসার মধ্য দিয়ে মক্কায় পৌত্তিলকতা শুরু করেন। এটা কত সালে তা নিয়ে কুরআন বা হাদিসে নির্দিষ্ট তথ্য নেই। স্কলারগন বিভিন্ন মত দিয়েছেন, কয়েকশত থেকে কয়েক হাজার বছর। সবচেয়ে কম মত দিয়েছেন যারা, তাদের মতে খৃষ্টপূর্ব ২০০ বছর আগে। অর্থাৎ ক্যাথলিক খৃষ্টিয়ানিটির প্রভাব বিস্তারের ৫০০-৬০০ বছর আগে [জিসাস এবং মা মেরির ছবি মূলত ক্যাথলিকরাই বানায়]। আর খৃষ্টিয়ানিটির সাথে আরবদের সম্পর্ক কোন কালেই ভাল ছিল না। সে সময় পরাশক্তি ছিল খৃষ্টান ব্রাজেনটাইন এবং আগুন পুজারি পারস্যের স্যাসানেট। মক্কার মানুষ সব সময় পারস্যকে সমর্থন করতো। মক্কার মানুষ ছিল বনী ইসমাইল, তাদের নবী ছিল ইব্রাহীম আ: এবং ইসমাইল আ:। বনী ইসরাইল কিংবা তাদের নবীদের সাথে মক্কার মানুষের কোন রকম সম্পর্ক ছিল না। তারা কোন নবীর নামও জানতো না। মক্কায় কোন ইহুদি বা খৃষ্টান বাস করতো না*। তাই কাবা ঘরের মধ্যে জিসাস আ: এবং মেরি আ: এর ছবি আসার প্রশ্নই আসে না।

আমাদের দেশের সেকুলারা কতটা আন্তঃসার শূন্য মূর্খ সেটা দিনে দিনে ফেইসবুক এবং আন্তর্জালের জন্য প্রকাশ পাচ্ছে। শুধু নিজের মিডিয়াতে টিভি ক্যামেরার সামনে ভাব নিয়ে ফট ফট কথা বললেই জ্ঞানী হয় না।@

মক্কায় একজন খৃষ্টান দাস ছিল। তার নাম আদ্দাস। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আদ্দাসের সাথে দেখা হয় তায়েফ থেকে ফেরার পথে। আদ্দাস সেখানেই ইসলাম গ্রহন করেন।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৩০

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: এদেশের পাঠ্য বইয়ের সহি হাদিস - দেশপ্রেম ইমানের অংগ। বিদ্যা অর্জনের জন্য চিনে যাও।

বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে বেশি কিছু আশা না করাই ভালো।

২| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৩৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: শুধু নিজের মিডিয়াতে টিভি ক্যামেরার সামনে ভাব নিয়ে ফট ফট কথা বললেই জ্ঞানী হয় না

+++++++++

৩| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৪

মুফরাদ শেখ বলেছেন: little learning always dangerous!

৪| ০৮ ই জুন, ২০১৭ রাত ১১:৫৮

রুমি৯৯ বলেছেন: এ রকম একটি গল্প আমি পড়েছিলাম প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আহমেদের কোনো বই কিংবা তার কোনো ইন্টারভিউতে৷ বেশ কয়েক বছর আগে আমি আমার এক চাচাকে বলেছিলাম যিনি হজ্বব্রত পালন করেছেন এবং ইসলামী ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করেন৷ তিনি বলেছিলেন, কাবা শরীফে এরকম কোনো মূর্তি কিংবা ছবির কোনো অস্তিত্ব নেই৷ আজ লেখাটি পড়ে বিষয়টি ক্লিয়ার হলাম৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.