নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

খৃষ্টিনিয়াটি এবং ক্রিসমাসঃ বিস্তারিত আলোচনা

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩৬

ইসলাম সব সময়ই তার অনুসারীদের অন্য ধর্ম সম্পর্কে পড়তে উৎসাহিত করে। যেমনঃ
“এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক”
[আলে ইমরান -৬৪]
আপনি তাদের ধর্ম না অধ্যয়ন করলে কিভাবে বুঝবেন কি এক। বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ইসলাম খৃষ্টান ধর্মের সবচেয়ে বেশি প্রশংসা করেছে। যেমন,
“মুসলমানদের সবচেয়ে নিকটতম বন্ধু হল খৃষ্টানরা। খৃষ্টানদের মধ্যে আলেম রয়েছে, দরবেশ রয়েছে এবং তারা অহঙ্কার করে না”।
[মায়িদাঃ৮২ ]
“তারা সবাই সমান নয়। আহলে কিতাবদের মধ্যে কিছু লোক [খৃষ্টান] এমনও আছে যারা অবিচলভাবে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করে এবং রাতের গভীরে তারা সেজদা করে”।
[আলে ইমরান-১১৩]
এসব বাদ দিলেও, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে অনুসারীর হিসাবে বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ধর্ম সম্পর্কে অধ্যয়নের অভিজ্ঞতা অসাধারন।

জিসাসের অন্তর্ধানঃ সেন্ট পল এবং সেন্ট বারনাবাস

খৃষ্ঠধর্মের ইতিহাসে অনান্য ধর্মের মত বেশ কিছু বড় বড় মোড় আছে। জিসাস [PBUH] এর অন্তর্ধানের পরে খৃষ্ঠধর্ম কয়েকটা ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এর মধ্যে কিছুদল ছিলো যারা বিশ্বাস করতো জিসাসকে হত্যা করা হয়নি, তিনি আবার ফিরে আসবেন, তিনি ঈশ্বর নন। সেন্ট বারনাবাস, সেন্ট পল খৃষ্ঠধর্মের সবচেয়ে প্রভাবশালি ব্যক্তি ছিলেন সে সময়ে। সেন্ট পল খৃষ্ঠধর্মে বেশ কিছু সংস্কার আনেন। ক্রমেই সবচেয়ে প্রভাবশালী ধরমগুরু হিসেবে অভিভূত হন। সেন্ট পলের মূল কথা ছিল, জিসাস এসেছেন পূর্বের সব আইন বন্ধ করতে।

ট্রিনিটির সূচনা

প্রথম শতাব্দীতে ট্রিনিটির ধারনা ছিল না খৃষ্ঠধর্মে। সেন্ট পলও ট্রিনিটি নিয়ে কিছু বলেননি। তবে পলিন খ্রিষ্টয়ানিটিতেই ট্রিনিটি ধরনাটি দ্বিতীয় শতাব্দীর শেষের দশকে চালু হয়। সেন্ট আগস্টিন এবং সেন্ট টেরটোলিয়ান ট্রিনিটি ধারনা প্রতিষ্ঠার পেছনে সবচেয়ে প্রভাবশালি ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধরা হয়। ক্রমেই পলিন খ্রিষ্টয়ানিটি সবচেয়ে প্রভাবশালী ধারায় পরিণত হয়।

সম্রাট কন্টাসটাইনের খৃষ্ঠধর্ম গ্রহন

খৃষ্টিনিয়াটির ইতিহাসে সম্রাট কন্টাসটাইনের খৃষ্ঠধর্ম গ্রহন সবচেয়ে বড় ঘটনার একটি। কেন কন্টাসটাইন খৃষ্ঠধর্ম গ্রহন করে সে ব্যাপারে অনেকগুলো মত প্রচলিত। এর মধ্যে একটা শক্তিশালী মত হল রাজনীতি। সে সময়ে রোমান সম্রাজ্য ক্রন্তিকাল অতিক্রম করছিলো। রোমানদের প্যাগান ধর্মে বেশকিছু কারনে সমস্যার মুখে পরে। খৃষ্ঠধর্ম ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এমতবস্থায় সম্রাট কন্টাসটাইন খৃষ্ঠধর্ম গ্রহন করেছিলো সম্রাজ্যের একতা টিকিয়ে রেখে এবং নিজের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে। খৃষ্ঠধর্ম গ্রহন করে কন্টাসটাইন নিজেই দেবতা সেজে বসে। খ্রিষ্টয়ানিটিতে দুইটি বিখ্যাত অভিধার [Term] জন্ম হয় কন্টাসটাইনের খৃষ্ঠধর্ম গ্রহনের পরেই। এই দুইটা অভিধা হল, এক- Shadow of God, দুই- Representative of God. Shadow of God হল চার্চ এবং Representative of God হল সম্রাট। এই দুই অভিধা উদ্ভবের পেছনে কন্টাসটাইনের থিংক ট্যাংকের বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। কারন কন্টাসটাইনের খৃষ্ঠধর্ম গ্রহনের যে গল্প প্রচলিত আছে এবং কন্টাসটাইনের পরের কাজ এই মতকে সমর্থন করে। গল্পটা হল এমন এক রাতে কন্টাসটাইন স্বপ্ন দেখেন যে জিসাস এসে কন্টাসটাইনকে আদেশ দিচ্ছেন খৃষ্ঠধর্ম গ্রহন করতে। ধর্ম গ্রহনের পরে, কন্টাসটাইন খৃষ্ঠধর্ম মতে কোন পদ পান না। কার্ডিনালদের কোন কনফারেন্সে অংশও নেননি। কিন্তু তারপরও তাকে চার্চের অভিভাবক ধরা হত। বলা হত তার সাথে স্বর্গীয় শক্তি এবং সাথী রয়েছে।

কাউন্সিল অব নাইসির

কন্টাসটাইন খৃষ্ঠধর্মের দল-উপদলের মধ্যে কলহ নিরসনের উদ্যোগ নেন। ৩০০ সালে সব কার্ডিনালদের [কার্ডিনাল-খ্রিষ্টান ধর্ম যাজকদের সবচেয়ে উঁচু পদ] নিয়ে বর্তমান তুরস্কের নাইসির শহরে একটি সম্মেলন আয়োজন করেন। এই সম্মেলন ঐতিহাসিক কাউন্সিল অব নাইসির নামে পরিচিত। এই সম্মেলনের বেশিরভাগ কার্ডিনাল পলিন খ্রিষ্টয়ানিটিকে খৃষ্ঠধর্মের বিশুদ্ধতম রুপ হিসেবে মত দেন। তবে সবাই নয়। সেন্ট আরিয়াস এর প্রবল বিরোধিতা করেন।আরিয়াসের বিরোধিতা প্রবল মতের সামনে টেকে না। সম্মেলন সংখ্যা গরিষ্ঠায় পলিন খ্রিষ্টয়ানিটিকে খৃষ্ঠধর্মের একক রুপ হিসেবে গ্রহন করে।
সম্রাট কন্টাসটাইন অন্য সব ধারার যাবতীয় লিটারেচারকে নষ্ট করার আদেশ দেন। আরিয়াস নাইসির থেকে পালিয়ে সিরিয়ার দিকে চলে যান। তাকে আর পাওয়া যায়নি। এবং ট্রিনিটি খৃষ্ঠ ধর্ম বিশ্বাসের একটি মৌলিক উপাদানে পরিনিত হয়।

ট্রিনিটির অর্থ কি?

ট্রিনিটি অর্থ ঈশ্বরের তিনটি রুপ। পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্না। পবিত্র আত্নার স্পর্শে জিসাস কুমারি মা মেরির গর্ভে জন্ম গ্রহন করেন। জিসাস হলেন ঈশ্বরের পুত্র। এবং তিনিই হলেন ঈশ্বর। বেশ জটিল হিসাব, বোঝা একটু কঠিন। ছবিটা ট্রিনিটির ব্যাখ্যা। খৃষ্টান মিশনারিরা ট্রিনিটি বোঝাতে পানি এবং ডিমের উদাহারন দেয়। যেমন পানির ৩ টি রুপ। পানির ৩ টা কঠিন, তরল এবং বায়বীয়। কিংবা ডিমে থাকে কুসুম, সাদা অংশ আর খোলস। ঈশ্বরের ৩ রুপ। তবে বাইবেলে ট্রিনিটি শব্দটি নেই।

জিসাস আঃ এর জন্মদিন

২৫ ডিসেম্বর খৃষ্ঠধর্ম বিশ্বাসিরা ক্রিসমাস ডে বা বড় দিন হিসাবে পালন করে থাকে। বলা বাহুল্য জিসাসের জন্ম ২৫ ডিসেম্বর হয়েছিলো কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ খোদ খৃষ্টানদের মধ্যেই রয়েছে। কেউ কেউ মনে করে জন্মদিন জুলাই মাসের চার তারিখ, কেউ বলেন নভেম্বর ১৮, কেউ বলেন মার্চ ২৮, কেউ সেপ্টেমবর ১১। বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে জিসাসের জন্ম তারিখ সম্পর্কে কোন তথ্য নেই তবে জন্মের সময় নিয়ে বাইবেলে একাধিক বর্ণনা রয়েছে, যেমনঃ
লুক [২:৯:৮],
“জিসাস জন্মের সময় একদল মেষ পালক তাদের ভেড়ার পাল নিয়ে বেথেলহামের পাশেই ছিল। একজন ফেরেশতা তাদের কাছে গিয়ে জিসাসের জন্মের সুখবর দেন”।
Luke 2:7
“and she gave birth to her firstborn, a son. She wrapped him in cloths and placed him in a manger, because there was no guest room available for them”.
ফিলিস্তিনের তুষার পড়া শীতে রাতে কেউ ভেড়ার পাল বাইরে রাখে না বা রাখালেরা বাইরে থাকে না। সেই রাতে ঠান্ডায় বাইরে খেজুর বাগানে একটা গামলাতে একজন শিশুর জন্ম দেওয়ার ঝুকি কোন মা- নেবেন না। এই ২৫ ডিসেম্বরের মত বেশ দুর্বল। তিনি শীতকালে না, গরমকালে জন্মনেন এই মত শক্তিশালী বেশি।
ইতিহাসে জিসাসের প্রথম জন্মদিন ২৫ ডিসেম্বর হিসেবে পালন করা হয় ৩৩৬ সালে। সেই সম্রাট কন্টাসটাইনের সময়ে। তারও কয়েক বছর পরে পোপ জুলিয়াস ২৫ ডিসেম্বরকে জিসাস [PBUH] এর জন্ম তারিখ বলে ঘোষণা করে।
পোপ জুলিয়াস ২৫ ডিসেম্বরকে জিসাসের জন্মদিন বললেও পোপ বেনেডিক্ট XIV উনার বই “Jesus of Nazareth: The Infancy Narratives” বলেছেন, আমরা যা জানি তার চেয়ে জিসাসের জন্ম আরোও অনেক আগে এবং ২৫ ডিসেম্বর জন্মের কোন প্রমান নেই।


সাটুরনালিয়া এবং ডিসেম্বর মাসের উৎসব

প্রাচীন ইউরোপের প্যাগানরা ডিসেম্বরের শেষের দিকে অনেক আগে থেকেই বেশ কয়েকটা উৎসব প্রচলিত ছিল। উত্তর গোলার্ধ ২২ ডিসেম্বর সবচেয়ে ছোট দিন এবং বড় রাত। তারা ভাবতো, সূর্য দেবতার অসুখ হয়েছে। তারা উৎসব পালন করতো যেন সূর্য আবার সুস্থ হয় উঠে তারাতারি। সবুজ গাছের ডাল ছিল সে উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ। সবুজ ডাল মনে করিয়ে দিতো, আবার সূর্য আলো দেবে। তুষার কেটে সুবুজে ভরে যাবে। [ক্রিসমার্স ট্রি এই উৎসব থেকেই নেওয়া]।

স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোতে এই সময়ে শীতকালে খাবার জন্য প্রচুর প্রাণী জবেহ করে মাংস সংরক্ষণ করা হতো। বছরের এই সময়ে তারা ফ্রেস মাংস পেতো। এই সময়েই ওয়াইন এবং বিয়ার ফ্রাগমেন্ট হয়ে খাবার উপযোগী হতো।

জার্মান প্যাগানরা তাদের প্রাচীন দেবতা ওডেনের উপাসনা করে উৎসব করতো এই সময়েই।

এ সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ছিল রোমে। ১৭ থেকে ২৫ ডিসেম্বর, এক সপ্তাহব্যাপী এই উৎসবের নাম ছিল সাটুরনালিয়া [Saturnalia]। এটা ছিল রোমের সবচেয়ে বড় উৎসব। প্যাগান রোমানদের কৃষি দেবতা স্যাটান এর সম্মানে ছিল এই উৎসব।
উৎসব নিয়ে রাজনীতি
ইউরোপের সব প্যাগানদের খৃষ্ঠধর্মের অধীনে একত্রিত করতে কন্টাসটাইনের একটা কমন উৎসবের দরকার ছিলো। তাই কন্টাসটাইন ইউরোপের সব প্যাগানদের উৎসবের দিন বিবেচনা করে সাটুরনালিয়ার শেষদিনকে জিসাস [PBUH] এর জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করে। ক্রিসমাসের সাথে জরিত সব কিছু যেমন ক্রিসমাস ট্রি, সান্তাক্লজ, ক্রিসমাস গিফট সবই বিভিন্ন প্যাগান উৎসব থেকে গ্রহন করা।

রেফারেন্সঃ
1. The Bible- New International Version
2. https://goo.gl/UkY2wP
3. http://barnabas.net/
4. https://goo.gl/5etyq7
5. https://goo.gl/pdQyEi
6. https://goo.gl/VQx4MU
7. Jesus of Nazareth: The Infancy Narratives: Pope Benedict XVI
8. https://goo.gl/HraRgx
9. https://goo.gl/1NZ18P
10. https://goo.gl/X614SD
11. https://goo.gl/RkrTKk

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


বুঝলাম, ইসলাম অন্য ধর্ম নিয়ে পড়তে বলেছে বেশী, অন্য ধর্ম গ্রন্হ পড়তে বলেছে বেশী, ভালো পড়েন; ইসলামের রসুল(স: ) কোন ভাষায় তোরাহ, বাইবেল পড়েছেন?

মুসলমানমানেরা সামগ্রিকভাবে কোন সাল থেকে কোরান সহজে পাচ্ছেন, এবং পড়ছেন? আগের দিনে আরবে কোন মুসলমান বাইবেল পড়লে মাথা আলাদা করে ফেলতো!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৮

যাযাবর চিল বলেছেন: তাই নাকি? ;)

২| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:০২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ :)

জ্ঞানার্জনের কোন বিকল্প নেই!
ভাল লাগলো আপনার পোষ্ট ++++

করুনা হয় মুর্খতার অহংকার দেখলে! না জানা অন্যায় নয়! কিন্তু না জানার বাহাদুরি ঘৃনার!

৩| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪১

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: কিছু কিছু বর্ণনা রুপ কথা মনে হলো।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:১৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: চাঁদগাজী সাহেবের জ্ঞানের বহর দেখে রীতিমত তাজ্জব হয়ে যাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.