নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাশিয়ার চিঠিঃ শ্রমজীবী মানুষদের প্রতি কবিগুরুর ভালবাসার নিরব সাক্ষ্য

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৪৩


বুক রিভিউঃ
বইয়ের নামঃ রাশিয়ার চিঠি
লেখকঃ শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রাশিয়ার চিঠি” আর একটি অসাধারণ কালজয়ী রচনা। রিভিউ লেখার আগে বইয়ের কিছু অসাধারণ লাইন লেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।
“সমান হতে পারলে তবেই সত্যকার সহায়তা সম্ভব। অধিকাংশ মানুষ কে তলিয়ে রেখে, অমানুষ করে রেখে, তবেই সভ্যতা সমুচ্চ থাকবে, এ কথা অনিবার্য বলে মেনে নিতে গেলে মনে ধিককার আসে”।
-পৃষ্ঠাঃ ৭
‎....নিজের মুনাফার খাতিরে সেই দুঃখকে এরা বাড়িয়ে চলতে ভয় পায় না, হতভাগ্য চাষীকে দুর্ভিক্ষের কবলের মধ্যে ঠেসে ধরে শতকরা দুশো তিনশো হারে মুনফা ভোগ করতে এদের হৎকম্প হয় না।
‎-পৃষ্ঠাঃ১৩
‎...কেবলই ভাবছি আমাদের দেশ-জোড়া চাষীদের দুঃখের কথা। আমি জানি ওদের মতো নিঃসহায় জীবন অল্পই আছে, ওরা সমাজের যে তলায় তলিয়ে সেখানে জ্ঞানের আলো অল্পই পৌছয়, প্রাণের হাওয়া বয় না বললেই হয়।
-পৃষ্ঠাঃ ১৫
-‎‎...চাষীর রক্ত নিয়ে মোটা মুনফার সৃষ্টি করে দেশে রওনা করে, সেই মৃতপ্রায় চাষীদের শিক্ষা দেবার জন্যে তাদের কোনোই দ্বায়িত্ব নেই?
‎-পৃষ্ঠাঃ৪১ ‎
‎....যাদের আমরা ছোটো করে রেখেছি মানবস্বভাবের কৃপণতাবশত, তাদের আমরা অবিচার করেই থাকি। তাদের দোহাই দিয়ে ক্ষণে ক্ষণে অর্থসংগ্রহ করি; কিন্তু তাদের ভাগ্যে পড়ে বাক্য, অর্থটা অবশেষে আমাদের দলের লোকের ভাগ্যেই এসে জোটে। মোট কথাটা হচ্ছে, দেশের যে অতিক্ষুদ্র অংশে বুদ্ধি বিদ্যা ধন মান সেই শতকরা পাচঁ পরিমাণ লোকের সঙ্গে পঁচানব্বই পরিমাণ লোকের ব্যবধান মহাসমুদ্রের ব্যবধানের চেয়ে বেশি। আমরা এক দেশে আছি অথচ আমাদের এক দেশ নয়
‎-পৃষ্ঠাঃ‎৭৮

শ্রমজীবী কৃষকদের জন্য কি অসাধারন মমতাপূর্ণ লেখা!! আহা! আহা! পড়লে মন ভক্তিতে ভরে যায়। বিশ্বসাহিত্যে কৃষকদের নিয়ে গল্প, উপন্যাস, কবিতা আছে বিস্তর কিন্তু তাদের প্রতি মমতা রেখে আমাদের আচরণ নিয়ে এমন নগ্ন সত্য কথা খুব কম মানুষই লিখেছেন।
তবে তারচেয়ে অসাধারণ ব্যাপার হল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাবু নিজেই ছিলেন জঘন্য অত্যাচারী জমিদার। তার সামান্য কিছু নমুনাঃ
"জমিদার হিসেবে ঠাকুর পরিবার ছিল অত্যাচারী। গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল। বুট পরে প্রজাকে লাথি মেরেছেন,পায়ে দলেছেন দেবেন ঠাকুর। এটাই রেকর্ড করেছিল হরিনাশ মজুমদার। যিনি মহর্ষি বলে পরিচিত, তিনি এ রকমভাবে মানুষকে পদাঘাতে দলিত করেন। গ্রাম জ্বালাবার কথাও আছে। আবুল আহসান চৌধুরীর কাছে এর সমস্ত ডকুমেন্ট আছে। সমগ্র ঠাকুর পরিবার কখনো প্রজার কোনও উপকার করে নাই। স্কুল করা,দীঘি কাটানো এসব কখনো করে নাই। মুসলমান প্রজাদের চিট করার জন্য নমঃশূদ্র প্রজা এনে বসতি স্থাপনের সাম্প্রদায়িক বুদ্ধি রবীন্দ্রনাথের মাথা থেকেই বের হয়েছিল। কাঙাল হরিনাথ মজুমদার তার ‘গ্রাম্য বার্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকায় ঠাকুর পরিবারের প্রজা পীড়নেরর কথা লেখে ঠাকুর পরিবারের বিরাগভাজন হয়েছিল।”
- ড. আহমদ শরীফ
[দৈনিক বাংলাবাজার, ১৪ এপ্রিল ও ১মে ‘৯৭]
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সামন্তবাদী প্রজাপীড়ক জমিদার ছিলেন। তাঁর দফায় দফায় খাজনা বৃদ্ধি এবং জোর-জবরদস্তি করে তা আদায়ের বিরুদ্ধে ইসমাইল মোল্লার নেতৃত্বে শিলাইদহে প্রজা বিদ্রোহ ঘটেছিল"।
[জমিদার রবীন্দ্রনাথ, অমিতাভ চৌধুরী, দেশ, শারদীয় সংখ্যা, কলকাতা ১৪৮২]
রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের প্রাইভেট সেক্রেটারি অমিয় চক্রবর্তী একবার বিশাল জমিদারীর একটি ক্ষুদ্র অংশ দরিদ্র প্রজাসাধারণের জন্য দান করার প্রস্তাব করেছিলেন ।রবীন্দ্রনাথ ইজি চেয়ারে আধ শোয়া অবস্থা থেকে সোজা হয়ে বসে বলেছিলেন-
‘‘বলো কি হে অমিয়! আমার রথিন তাহলে খাবে কি?’’
[অন্নদা শংকর রায়ের রচনা থেকে উদ্ধৃত, রবীন্দ্রনাথের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, আবু জাফর, বইঘর, চট্টগ্রাম ১৯৮৫]
১৮৯৪ সালে রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে জমিদারীতে খাজনা বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। গরীব মুসলমান প্রজারা তাঁর পায়ে পড়লো, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ নির্মমভাবে তা আদায় করলেন । পরে সেই বাড়তি আয়ের টাকায় মার্কিন কোম্পানীর কাছ থেকে ডেবরাকোল জমিদারী খরিদ করেছিলেন । এ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের প্রবন্ধকার শ্রী অরবিন্দু পোদ্দার লিখেছিলেনঃ
“জমিদার জমিদারই । রাজস্ব আদায় ও বৃদ্ধি, প্রজা নির্যাতন ও যথেচ্ছ আচরণের যেসব অস্ত্র চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাংলার জমিদার শ্রেণীর হাতে তুলে দিয়েছিল, ঠাকুর পরিবার তাঁর সদ্ব্যবহারে কোনও দ্বিধা করেনি। এমনকি জাতীয়তাবাদী হৃদয়াবেগ ঔপনিষদিক ঋষি মন্ত্রের পুনরাবৃত্তি এবং হিন্দু মেলার উদাত্ত আহবানও জমিদার রবীন্দ্রনাথকে তাঁর শ্রেণীস্বার্থ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি"।
[শ্রী অরবিন্দু পোদ্দার, রবীন্দ্রনাথ ও রাজনৈতিক গ্রন্থ দ্রষ্টব্য]

“সব জমিদার খাজনা আদায় করত একবার, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের এলাকায় কৃষকদের থেকে খাজনা আদায় করত দুইবার। একবার জমির খাজনা দ্বিতিয় বার কালী পুজার সময় চাদার নামে খাজনা”।
[ইতিহাসের নিরিখে রবীন্দ্র-নজরুল চরিত্র, শাহবুদ্দীন আহমেদ]

অসততা, দ্বিমুখীতা, অনৈতিকতা, কুটিলতা, চাটুকারিতা সবই বলা যায়.........

অনেকদিন আগে একটা কথা শুনেছিলাম, রবীন্দ্রনাথ যদি নরকের বর্ণনা দেন তাহলে স্বর্গ না আপনার নরকেই যেতে ইচ্ছে করবে। কথাটার কিছুটা যোক্তিকতা পেলাম রাশিয়ার চিঠি পড়ে অথবা এমনো হতে পারে এই বইয়ের জন্যই রবীন্দ্রনাথকে ঘিরে এই প্রবচন।
‎লাল দানবের হাতে বিপর্যস্ত ছিল গোটা রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়া। সাইবেরিয়ার বন্দী শিবির, লক্ষ লক্ষ চার্চ আর মসজিদ ধ্বংস করে গুরো করে দেওয়া, মধ্য এশিয়ায় লক্ষ লক্ষ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে গড়ে উঠা সোভিয়েতের জীবন্ত কারাগারকে তিনি এত চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন আপনার কাছে সত্যিই অসাধারণ মনে হবে।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:১০

ব্লগার_প্রান্ত বলেছেন: আপনি আহমদ সফার ''যদ্যপি আমার গুরু'' বইটি পড়তে পারেন, আশা করি ভালো লাগবে (পড়েও থাকতে পারেন আমি সেদিন পড়লাম , বাস্তবতা বড়ই বিচিত্র)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:৩২

যাযাবর চিল বলেছেন: জী, পড়েছি।

২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৪:২৬

অক্পটে বলেছেন: আপনার বর্নণাও খুব ভালো লেগেছে। তবে এই প্রথম আমি এক অন্য রবীন্দ্রনাথকে জানলাম।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:০৬

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: কেউই ফেরেশতা নয়। বিশেষত রবীন্দ্রনাথকে সবাই শ্রদ্ধা করে সাহিত্যিক হিসেবে, মানবতাবাদী হিসেবে নয়। রবীন্দ্রনাথ আর দশজন সাধারন মানুষের মতই যৌতুক দিয়ে মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

কিন্তু সমালোচকরা যতই বলুক না কেন, তিনি অবশ্যই বিবেকবর্জিত ছিলেন না।

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৯:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: খুব ভালো বই। আমি পড়েছি।
এই বই সবার পড়া দরকার। বারবার পড়তে হবে।

৫| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯

আল ইফরান বলেছেন: ফিউডাল লর্ডদের আচরনের এই দ্বিমুখীতা সর্বজনবিদিত, জমিদার হিসেবে রবীন্দ্রনাথও তার ব্যতিক্রম নন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.