নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ The First Muslim, The Story of Muhammad

২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:১৮



প্রশ্নঃ পৃথিবীর ইতিহাসে কোন ব্যক্তির প্রশংসা করে সবচেয়ে বেশি বই লেখা হয়েছে? উত্তর- মুহাম্মাদ সা.। বিপোরীত প্রশ্ন, কোন ব্যক্তির সমালোচনা করে সবচেয়ে বেশি বই লেখা হয়েছে? প্রশ্ন সম্পূর্ণ উল্টো হলেও উত্তর কিন্তু সেই একই- মুহাম্মাদ সা.!
সহজ প্রশ্ন, সহজ উত্তর। এই উত্তরের জন্য কোন পুরস্কার পাবেন না। মুহাম্মাদ সা. জীবনকাল ৬৩ বছর। তবে মাঝে মাঝে একটা ব্যাপার আমরা অনুধাবন করতে ভুলে যাই, এই ৬৩ বছরের প্রথম ৪০ বছর সম্পর্কে তেমন কোন তথ্য নেই। ৪০ থেকে ৫৩ বছর পর্যন্ত আমরা কিছু জানি। বিস্তারিত জানি আমরা উনার জীবনের শেষ ১০ বছর সম্পর্কে। নির্দিষ্ট করে বললে মুহাম্মাদ সা. এর সম্পর্কে যতটা জানি তার প্রায় ৮০% ভাগই হল মদিনার দশ বছরের জীবনকাল আর মক্কার ৫৩ বছরের জীবন সম্পর্কে ২০%। কারন খুবই স্বভাবিক, মদিনার দশ বছর তিনি ছিলেন একাধারে প্রশাসনিক রাষ্ট্রনায়ক, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান এবং আধ্যাত্নিক রাসূল। অন্যদিকে মক্কায় তিনি ছিলেন নির্যাতিত।
সব ধরনের সমালোচকের মতে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হলেন মুহাম্মাদ সা.। খুবই অল্প সংখ্যক মানুষ এই মতের বিরোধিতা করেন। তবে কেউই মুহাম্মাদ সা.কে শীর্ষ তিন জনের বাইরে রাখেননি। সব ধরনের ধর্ম এবং দর্শনের জ্ঞানী মানুষদের মুহাম্মাদ সা. এর জীবন নিয়ে একটা আগ্রহ রয়েছে। "The First Muslim" বইটি লিখেছেন একজন ইহুদি লেখিকা ল্যাসলি হ্যাজেলটন। তুলনামূলক ধর্ম বিশ্লেষণে বর্তমান সময়ে অন্যতম প্রধান লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয় ল্যাসলি হ্যাজেলটনকে।
বইয়ের শুরুতে লেখক বলেছেন মুহাম্মাদ সা. জীবন ছিল আশ্চর্যজনক ভাবে বহুমুখী এবং বৈচিত্র্যময়, তাই মুহাম্মাদ সা. সম্পর্কে মিলিয়ন এমনকি বিলিয়ন শব্দ পড়ার পরেও যখন নতুন একটি বই পড়বেন মনে হবে নতুন কিছু পড়ছি। প্রথমেই মুগ্ধ থেমে গেলাম। 'stating the obvious' সমাজবিজ্ঞানের সেই বিখ্যাত তত্ত্ব!!
লেখক অজ্ঞেয়বাদী(Rational) দৃষ্টি থেকে মুহাম্মাদ সা. এর জীবন বিশ্লেষণ করেছেন। যারা আধ্যাত্মিকাকে জ্ঞান দিয়ে বিশ্লেষণ করতে চান তাদের কাছে ভাল লাগবে। তবে বইটা যেহেতু একদম একাডেমিক, তাই আধ্যাত্নিকতা তেমন একটা পাওয়া যাবে না। সিরাত(মুহাম্মাদ সা. জীবনী) আমার খুবই প্রিয়। এ পর্যন্ত অনেকগুলো সিরাত পড়ার সুযোগ হয়েছে। শুনেছি ১০৫ টিরও বেশি লেকচার। এর মধ্যে বইটা অনেকগুলো কারনে অনন্য। বইটিতে লেখক অনেকগুলো মৌলিক ব্যাপারে নতুন করে বিশ্লেষণ করেছেন। বইটা বিভিন্ন পার্টে বিভক্ত। প্রথমে পর্বে তিনি যে বিষয়গুলো তুলেছেন,
এক- মক্কায় বৃষ্টির প্রভাব।
দুই- মক্কার মানুষের মনস্তাত্ত্বিকতা। কেন মক্কার মানুষ শিশুদের বেদুইনদের কাছে পালিত রাখতো, এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা।
তিন- মক্কার মানুষের আবেগ এবং সামাজিকতা।
চার- মক্কার মানুষের উপর আবহাওয়ার প্রভাব।
প্রথম পর্বের পরের অংশে তিনি মুহাম্মাদ সা. এর পরিবার এবং গোত্র নিয়ে আলোচনা করেছেন। একটা ব্যাপারটা বেশির ভাগ মানুষ, এমনকি মুহাম্মাদ সা. এর মুসলিম জীবনীকারাও ভুল করেন, আমাদের পাঠ্য বইতেও ভুল আছে, সে ভুল হ্যাজালটন করেন নি। সেটা মুহাম্মাদ সা. এর দাদার নাম সম্পর্কিত। উনি পরিচিত ছিলেন আবদ আল মুত্তালিব নামে, আব্দুল মুত্তালিব না (উনার নাম শায়বা)। এর সাথে সাথে লেখক মক্কার রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে একটা চিত্র তুলে ধরার চেস্টা করেছেন।
পরের অংশে লেখক কিছু অভিনব প্রশ্ন তুলে কিছু প্রসঙ্গ ব্যাখ্যা করেছেন। যেমন-
এক- কেন মুহাম্মাদ সা. এর মা আমিনা আব্দুল্লাহের মৃত্যুর পরে দ্বিতীয় বিয়ে করেননি যেটা আরবের সমাজে খুবই সাধারণ ঘটনা।
দুই- আমিনা কেন মদিনায় গিয়েছিলেন।
তিন- বেদুইন জীবন থেকে মক্কার শহরের জীবনে অভস্থ হতে মুহাম্মাদ সা. কি কি সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন।
চার- মক্কার মেষ চরানোর প্রথা।
পাঁচ- মুহাম্মাদ সা. পরবর্তী জীবনে বেদুইন জীবন এবং মেষ চরানোর অভিজ্ঞতার প্রভাব।
Lesley Hazleton মুহাম্মাদ সা. এর সাথে খাদিজা রা. এর বিয়ে এবং দুইজনের পারিবারিক জীবনের বর্ণনা করেছেন একদম মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। ২৫ থেকে ৪০ বছর সম্ভবত ব্যক্তি মুহাম্মাদ সা. এর জীবনের পরমতম সময়। তখন তিনি একজন সম্মানিত ধনী ব্যবসায়ী, মক্কার অভিজাত বনু হাশিম গোত্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এবং কিংবদন্তী আবদ আল মুত্তালিবের সবচেয়ে প্রিয় নাতি হিসেবে সকলের সমীহের পাত্র, খাদিজা- সুন্দরী স্ত্রী যিনি তাকে অত্যান্ত ভালবাসেন, চরজন সুন্দরী মেয়ে, দুইজন ছেলে স্থানীয় (যায়িদ এবং আলী)।
তবে তিনি সা: এই জাগতিক সাচ্ছন্দ্য নিয়ে সুখি ছিলেন না শেষ পর্যন্ত। তিনি সমাজের অনাচার এবং আধ্যাত্মিক শুন্যতা নিয়ে মনসিক অশান্তি এবং দ্বিধা-দ্বন্দে ছিলেন। এই অশান্তি দূর করতে, তিনি তার দাদার আবিষ্কৃত হেরা গুহাতে গিয়ে নির্জনে ধ্যান শুরু করেন, খুঁজতে থাকেন সত্যকে। যেভাবে ইব্রাহিম আ., মুসা আ., নূহ আ. খুঁজেছিলেন। তবে এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক হল এ সময়ে মুহাম্মাদ সা. এর ধর্মীয় দর্শন কি ছিল? তিনি সা. কোন দর্শনকে অবলম্বন করে ধ্যান করেন? হ্যাজেলটন এই প্রশ্নটি তুলেছেন তবে উপসংহারে আসেন নি বা আসতে পারেন নি। প্রকৃত প্রস্তাবে এই প্রশ্নের একদম গাণিতিক কোন উত্তর নেই। তিনি পৌত্তলিক ছিলেন না নিঃসন্দেহে তবে তিনি কি হুনাফা!? এটারও পরিস্কার উত্তর ইতিহাস দেয় না। তবে হুনাফাদের প্রভাব মুহাম্মাদ সা: এর জীবনে (৪০ বছর পর্যন্ত) প্রবলভাবে ছিল।
দ্বিতীয় অংশ শুরু হয়েছে মুহাম্মাদ সা. এর নবুওয়ত দিয়ে। কেন খাদিজা রা. সাথে সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন তা সম্পর্কে হ্যাজেলটন অভিনব ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মক্কায় ঘটে যাওয়া কিছু ব্যাপার নিয়ে লেখক অন্যভাবে আলোকপাত করেছেন। যেমন-
এক- কুরআনের পরিবেশবাদী অবস্থান।
দুই- মক্কায় কেন কুরআন অনিয়মিত ভাবে নাযিল হতো।
তিন- মদিনার আনসারদের ইসলাম গ্রহন।
চার- আবু তালিব এবং খাদিজা রা. মৃত্যুতে মুহাম্মাদ সা. মনের অবস্থা।
এরপর মদিনায় চলে যান মুহাম্মাদ সা.। মদিনায় তিনি একটা শক্তিশালী অবস্থানে আসীন হন। তিনি আরবের ইতিহাসে প্রথম পরিবার কেন্দ্রিক গোত্র থেকে বেরিয়ে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে একটা সমাজ নির্মান করেন। এই সময়ের যে দিকগুলো হ্যাজেলটন গুরুত্ব দিয়েছেন,
এক- মক্কার বাণিজ্য কাফেলায় মুহাজিরদের আক্রমন।
দুই- সরিয়াতুল নাখলার স্পর্শকারতা।
তিন- মদিনার ইহুদিদের সাথে নতুন মুসলিম কমিউনিটির সম্পর্কের রসায়ন।
চার- বদরের আকস্মিকতা এবং বিজয়ের রাজনৈতিক প্রভাব।
পাঁচ- আবু জাহেল এবং আবু সুফিয়ানের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পার্থক্য।
ছয়- মক্কা বিজয়ের পরে মুহাম্মাদ সা. এর মনোবৃত্তি।
সাত- হুনাইন যুদ্ধের ব্যক্তিগত দিক।
রাসূল (সা:) এর জীবনের শেষ দিকের বেশকিছু অপ্রচলিত বায়ান উল্লেখ করে তিনি বইটা শেষ করেছেন।
এই বইয়ের একটি শক্তিশালী দিক হল এই বইয়ে তিনি মক্কার বিভিন্ন প্রথার সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন শহরের প্রথার তুলনা দেখিয়েছেন এবং মুহাম্মাদ সা. এর আধ্যাত্মিক দর্শনের সাথে সেমেটিক নবী এবং গৌতম বুদ্ধের আধ্যাত্মিকতার তুলনামূলক বর্ণনা করেছেন। এই রকম বই খুব একটা নেই।
আর দুর্বল দিক হল এখানে বেশ কিছু অসচ্ছ বিষয় তিনি সামনে এনেছেন যা আসলে এত অল্প পরিসরে আলোচনা সম্ভব না। কমপক্ষে ৪০০/৫০০ পাতার বই লাগবে এই ব্যাপারগুলো বিশ্লেষণ করতে।
খুঁটিনাটি তথ্যঃ
বইয়ের নাম- The First Muslim, The Story of Muhammad
লেখক- Lesley Hazleton
কলরব- ৩২০ পৃষ্ঠা
প্রকাশক- Atlantic Books, London
প্রকাশকাল- ২০১৩
দাম- 8.99 Pound

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:৩৫

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লাগল।

২| ২৫ শে জুন, ২০১৮ রাত ১১:৪৩

গায়েন রইসউদ্দিন বলেছেন: ধন্যবাদ, নতুন কিছু জানার সুযোগ হ'ল।

৩| ২৬ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:২০

রাকু হাসান বলেছেন: বই নিয়ে আলোচনা!! তার মানেই অন্যরকম ভাললাগা কাজ করে । বইটির সাথে পরিচিত হলাম । সুন্দর পাঠপ্রতিক্রিয়া দিয়েছেন । বইচি কি নীলক্ষেত বা বাংলাবাজার পাব ?

৪| ২৬ শে জুন, ২০১৮ ভোর ৫:১৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ব্লগে কোরানের কিছু আয়াত হুবুহু বঙ্গানুবাদ করলে অনুবাদকারি নাস্তিক উপাধি পায়।

আবার ওয়াজ মাহাফিলে টুপি, সাদা পাঞ্জাবি পড়ে কোরানে উলটাপালটা ব্যাখ্যা .. আর অনর্গল অকথ্য গালাগালি করলেও সে আলেম উপাধি পায়।

৫| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সকাল ৯:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমি নবিহির জীবনি নিয়ে অনেক বই পড়েছি।
কিন্তু আফসোস হুমায়ূন আহমেদ নবিজিকে নিয়ে একটা বই লেখা শুরু করেছিলেন- বইটা শেষ করে যেতে পারেন নি।

৬| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

টারজান০০০০৭ বলেছেন: ইসলাম সম্পর্কে লিখিত বিধর্মীদের কোন বই অথবা শিয়া , বেদাতি সুন্নি , কাদিয়ানী , বাহাই, জামাতি প্রভৃতি দ্বারা লিখিত হইলে কোন বিজ্ঞ আলেম দ্বারা সত্যায়িত হওয়ার পরই কেবল পড়া উচিত !! কারণ ইহাদের বেশিরভাগ লেখনীতেই ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে অথবা ভুল দৃষ্টিকোণ হইতে দেখার কারণে, এক বালতি দুধে দুয়েক ফোটা চোনা মিশ্রিত থাকেই, যাহা বিজ্ঞ আলেম না হইলে ধরা খুবই মুশকিল ! ইহাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশংকাই বেশি ! ইহা অনেকটা সাপ খেলার মতন হইয়া থাকে ! অভিজ্ঞ সাপুড়ে না হইলে সাপ খেলা যেমন উচিত নহে , সাপের বিষেই মরণ নিশ্চিত , তেমনি ধর্মীয় বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকিলে বা বিজ্ঞ আলেম কতৃক সত্যায়িত না হইলে উহা পড়াও বিষ গ্রহণের নামান্তর হইতে পারে !

বিষের কারণেই মওদুদী , সৈয়দ আমির আলী , কারেন ইত্যাদি লেখকের বই খুবই চিত্তাকর্ষক হইলেও বিষ না চেনা থাকিলে পড়া বিপদজনক ! নাহজ আল বালাঘা কি চমৎকার একখানা বই ! অথচ শিয়া দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা ! সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহর প্রবন্ধ পড়িলে মনে হইবে রাসূল স. ও কুরাইশের বিরোধ শুধু গোত্রে গোত্রে বিরোধ ছিল !

বিধর্মীদের লিখিত সীরাত গ্রন্থ সর্বশেষ যাহা পড়িয়াছি তাহা হইল "তোমাকে ভালোবাসি হে নবী " ! লেখক -- গুরুদত্ত সিং ! সত্যায়িত করিয়াছেন মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ (দা. বা.) !

৭| ২৬ শে জুন, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

কানিজ রিনা বলেছেন: কোথায় পাওয়া যাবে হ্যাজেলটন মোহাঃ সাঃ
নিয়ে লেখা জানলে কৃতজ্ঞ হব। আন্তরিক
অভিনন্দন।

৮| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:২৯

ইমরান আশফাক বলেছেন: বইটি পড়ার আগ্রহ আমারও হচ্ছে। ইস্, যদি বাংলা্য অনুবাদ পাওয়া যেত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.