নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তোমরা মানুষ, আমরা মানুষ, তফাৎ শুধু শিরদাঁড়ায়

যাযাবর চিল

i agree to disagree...

যাযাবর চিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বইমেলার শহর ফ্রাংকফু্র্ট (ট্রাভেলগ)

১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৯


ইতিহাসের চারজন মহোত্তর সাহিত্যিক হলেন উইলিয়াম শেক্সপিয়ার, লিও তলস্ততয়, ম্যাক্সিম গোর্কি এবং ফন গ্যোথে।

ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর না, ইতিহাসের অন্যতম প্রথম বুর্জুয়া শহর না, পৃথিবীর দশটি আলফা শহরের একটি না কিংবা জগৎ বিখ্যাত যাদুঘরও না। ফ্রাংকফু্র্টের সাথে আমার পরিচয়ের কারন এখানেই বিশ্বের বৃহত্তম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। আর এই শহরেই জন্ম নিয়েছিলেন মহাকবি ইয়োহান ভলফগাং গ্যোথে। তবে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি না বলি এই ফ্রাংকফু্র্টের অদূরেই জন্ম নিয়েছিলেন জার্মানির ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং মানব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী দশজন ব্যক্তির একজন ইয়োহানেস গুটেনব্যার্গ। সেই ফ্রাংকফু্র্ট যাচ্ছি।

ফ্রাংকফু্র্টের ইতিহাসটা বেশ বহুমুখী আর বৈচিত্রময়, তাই ঠিক কোন জায়গা থেকে শুরু করবো ঠাহর করতে পারছিলাম না। ঠিক এই জায়গাতে আমাকে থামিয়ে দিলো এক তরুণ কবি ছোট ভাই। বললো, ভাই! আপনার চোখ শুধু ইতিহাস কেন দেখে!? একটু বর্তমানে আসেন। আজকের দুনিয়াটাও দেখেন! ওর কথায় যুক্তি আছে। আমার কাছে ইতিহাসই বেশি আদরের। এই ভালবাসার কারনটা ব্যাখ্যা করে বললাম, ইবনে খালেদুন বলেছিলো এক ফোঁটা পানি যেমন অন্য ফোঁটাটির মত ঠিক একই ভাবে বর্তমান অতীতের মত। এই যে ফ্রাংকফু্র্ট শহরে সব বুর্জুয়া ব্যাংক, বুর্জুয়া বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর সদর দপ্তর; ইউরোপের বাণিজ্যিক রাজধানী। মজার ব্যাপার হল পবিত্র রোম সাম্রাজ্যের রাজ-রাজা এবং গির্জার বিশপদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে থাকা(তারা কেউ থাকতো না) এই ফ্রাংকফু্র্ট গড়ে উঠেছিলো ইতিহাসের অন্যতম প্রথম বুর্জুয়া শহর হিসেবে।

আর যারা ইতিহাস নিয়ন্ত্রন করে তারা বর্তমানকে নিয়ন্ত্রন করে। যারা বর্তমানকে নিয়ন্ত্রন করে তারাই ভবিষ্যত নিয়ন্ত্রন করে। পূর্ব বাংলার রাণীকে দেখেও সেটা না বুঝলে চলবে!?



এরপরেও ওর কথাই কবুল করলাম। ফ্রাংকফু্র্ট দেখবো বর্তমানকে হয়ে অতীতকে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে আমার ম্লেচ্ছ বন্ধু আইজ্যাকের কালো রংয়ের বিএমডাব্লুতে চেপে বসলাম। গাড়িতে একমাত্র আমারই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স নাই। দূরের রাস্তা, কফি নেবার জন্য একটা দোকানে দাঁড়ালাম আমরা। এক পেয়ালা কফি হাতে নিয়ে আইজ্যাক এক মোক্ষম খোঁচা মারলো, তুই গাড়ি চালা; আমার ঘুম পাচ্ছে। বললাম, শুধু কাগজটা নাই দেখে। তোদের এই মোজাইক করা মেঝের মত মসৃণ আর ফুটবল মাঠের মত চওড়া রাস্তায় গ্যাদা বাচ্চারাও গাড়ি চালাতে পারবে। আমি ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছি, যেখানে বাস, জিপ, ট্রাক, সাইকেল, রিক্সা, ঠেলাগাড়ি একত্রে চলে। বর্ষাকালে এদের সাথে নৌকাও চলে। এবার সবাই একটা বিষম খেলো। কি!? একই রাস্তায় গাড়ি এবং নৌকা!? কিভাবে সম্ভব!? কহিলাম, জ্বী! আমাদের মূলুকে ট্রাক এবং নৌকার মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওদের সবার মস্তিস্কের বাম পাশের লব একটু বিগার হয়ে গেল। এইমাত্র ওরা একটা তথ্য শুনেছে কিন্তু মস্তিষ্কের নিউরন সেটা প্রক্রিয়া করতে পারছে না।

কথা বলতে বলতে গাড়ি জর্মন অটোবানে চলে আসলো। ওরা কফি নিলেও আমি ভেতো বাঙালি নিয়েছি আমাদের ভ্রমণের সেই চিরায়ত সঙ্গী বাদাম। তীর বেগে গাড়ি চলা শুরু করলো। বাদাম খেতে খেতে রাস্তার পাশের পাহাড়ি দৃশ্য দেখতে লাগলাম। এপ্রিল মাস, পুরোদমে গ্রীস্মকাল শুরু হবার কথা কিন্তু এখনো পাহাড়ে তুষার জমে আছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার ব্যাপারটা বোধহয় মিথ্যে না! ওজনাবুর্গ এবং মুনস্টার হয়ে ফ্রাংকফু্র্ট রেল ইস্টিশন হল আমাদের গন্তব্য। কিছু কিছু জর্মন শব্দ আমার বেশ প্রিয়, তার মধ্যে একটা হল রেল ইস্টিশন। রেল ইস্টিশনের জর্মন হল বানহফ। কেন্দ্রীয় রেল ইস্টিশনের জর্মন হল হাউপবানহফ। ফ্রাংকফু্র্টের যোগাযোগ ব্যবস্থা চমৎকার। জমিনের উপর দিয়ে এবং জমিনের নিচ দিয়ে, দুইদিক দিয়েই। আর আছে বিমানবন্দর।

জর্মন প্রবাসীরা ফ্রাংকফু্র্ট বলতেই বোঝে ফ্রাংকফু্র্ট বিমানবন্দর, এটা ইউরোপের দ্বিতীয় ব্যস্ততম বিমানবন্দর। প্রতি বৎসরে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ ফ্রাংকফু্র্ট বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করে। প্রতিদিন কত জন এটা জানতে পাঁচ কোটিকে ৩৬৫ দিয়ে ভাগ করলেই হবে। তবে আমি আদার ব্যাপারী, একের পরে ঠিক কয়টা শুন্য দিলে কোটি হয় এটা বের করতে কয়েক মিনিট লেগে যাবে। তাই সে ঝক্কিতে গেলাম না। মনে পরলো ছাত্রলীগের মফস্বল এলাকার এক জেলার সহ-সভাপতি এক বছরে পাচারই করেছিলো দুই হাজার একশ কোটি টাকা। আর আমি বড় বড় পাশ দিয়ে বিরাট বৃত্তি পেয়েও কয় শূন্যে কোটি হয় সেটাই জানি না। ছোট বেলায় শুনতাম যার নাই কোন গতি সেই হয় সহ-সভাপতি। তারই এই অবস্থা। বাংলাদেশের মানুষ উপলব্ধিও করতে পারেনা তাদের উপর কি ভয়াবহ জুলুম চলে।

যাইহোক টাকার কথা আসলেই আসে ব্যাংকের কথা। ব্যাংকের শহর ফ্রাংকফুর্ট, কমপক্ষে ৩০০ দেশি-বিদেশি ব্যাংক অব্যস্থিত এ শহরে। আর ব্যাংকের কথা বললেই আসে সুদ। আমার জ্ঞানে মানব ইতিহাসে সুদের সবচেয়ে ভাল উপমা দিয়েছে ফিরিঙ্গি সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়ার। শেক্সপিয়ার সুদকে তুলনা করেছিলো মানুষের মাংসের (Human flesh) সাথে। সুদ দেওয়া নিজের শরীর থেকে মাংস কেটে দেওয়ার মতই ভয়াবহ ব্যাপার। দুনিয়ার যাবতীয় অনাচারের মূলে আছে এই সুদ। অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস থ্রি জিরো বইতে লিখেছেন দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদের ৯০ ভাগের মালিক ১০ ভাগ মানুষ। এই নির্মম বেইনসাফি সম্ভব হয়েছে এই সুদের জন্য। সুদ আমি সর্বান্তরে যৃণা করি, তাই এ শহরের ব্যাংক এবং শেয়ার বাজারের মচ্ছব নিয়ে লিখতে মন চাচ্ছে না।

ফ্রাংকফুর্টের পুরো নাম ফ্রাংকফুর্ট আম মাইন। জর্মনরা ফ্রাংকফুর্টকে মাইন-হ্যাটনও বলে। এটা বলে ম্যানহাটনের অনুকরন করে। কারন ম্যানহাটনের মত ফ্রাংকফুর্টেও আকাশছোঁয়া অট্টালিকার ছড়াছড়ি। ফ্রাংকফুর্টে দশটি আকাশছোঁয়া অট্টালিকা রয়েছে, ইংরেজিতে যাকে বলে স্কাইস্ক্রেপার। কোন বিল্ডিং যদি ১৫০ মিটারের বেশি উঁচু হয় তাকে স্কাইস্ক্রেপার বলে। ইউরোপে ফ্রাংকফুর্টের চেয়ে বেশি স্কাইস্ক্রেপার আছে কেবল প্যারিস শহরে, চৌদ্দটি। ওদের কে একটু শুনিয়ে বললাম এই স্কাইস্ক্রেপারের জনক আমাদের মূলুকের মানুষ ফজলুর রহমান খান৷ তবে কথাটা পুরোপুরি ঠিক হল না। স্কাইস্ক্রেপারের জনক লুইস সুলিভান। ফজলুর রহমান খান টিউব ইন টিউব নামে স্থাপত্য শিল্পের এক নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছিলেন যার মাধ্যমে অতি উচ্চ (কমপক্ষে একশত তলা) ভবন স্বল্প খরচে নির্মাণ সম্ভব৷ তিনি এই পদ্ধতিতে ১৯৭৩ সালে শিকাগোতে নির্মান করেন সিয়ার্স টাওয়ার। ৪১২ মিটার উচ্চতার এই ভবন প্রায় ৩০ বছর ধরে বিশ্বের উচ্চতম ভবন ছিলো। টিউব ইন টিউব পদ্ধতি স্কাইস্ক্রেপার নির্মানে বিপ্লব নিয়ে আসে। গগনচুম্বী ভবনে ভরে যায় আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া আর ইউরোপের শহরগুলো।

যখন ফ্রাংকফুর্ট পৌছলাম দুপুর পেরিয়ে বিকেল হব হব করছে। শহরে প্রবেশের বেশ আগেই বড় বড় অট্রালিকাগুলো দৃশ্যমান হল। বেশ গোছানো এবং চমৎকার শহর ফ্রাংকফুর্ট। চমৎকার রোদ, নেমেই মনটা ভাল হয়ে গেল। দেশে থাকতে রোদ থাকলে বের হতাম না ঘর থেকে আর এখানে সবাই রোদ দেখলেই বের হয়।

স্বাগত জানাতে আমাদের এক আফ্রিকান-আমেরিকান বন্ধু আসলো। ইংরেজি ভাষার উপর অনেকেই অনেক পরীক্ষা চালিয়েছে, তবে আফ্রিকান-আমেরিকানরা ইংরেজিকে যতটা ব্যঞ্জনাময় বানিয়েছে আর কেউ তা পারেনি। এরা যখন কথা বলে খুব একটা বিরতি নেয় না। মনে হয় ঝনঝন করে ট্রেন চলছে! ওদের সম্মোধনটাও দারুণ, 'হে ইউ!' আবার বলে 'ইজ ইট ইউ!?' মানে আপনি, আপনি কিনা! কি দারুণ! এদের আরেকটা শব্দ রত্ন হল 'নাআ মিন?' 'ডু ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড হোয়াট ডু আই মিন' আন্তনগর ট্রেনের মত লম্বা এই বাক্যকে একটানে তারা বানিয়ে ফেলেছে, নাআ মিন! ওকে বললাম নাআ মিন শোনার পূর্ব পর্যন্ত আমার জীবনটাই তো অসম্পূর্ণ ছিলো।

হালকা নাস্তা করে বললাম চল নদী দেখতে যাই। ফ্রাংকফুর্ট মাইম নদীর তীরে অবস্থিত। মাইম নদী বিখ্যাত রাইন নদীর একটা শাখা। আমার পূর্ব পুরুষের জীবিকার উৎস ছিলো নদী তাই নদীর প্রতি আমার ভালবাসা ওদের থেকে ঢের বেশি। নদীর পাশে বসতেই মনটা প্রসন্ন হয়ে গেল। তবে ঠান্ডা বাতাসের প্রতাপটা একটু কম হলে আরো ভাল লাগতো। নদীর পানির রঙ বেশ গাঢ় এবং শান্ত। মানে যথেষ্ট গভীর। শান বাঁধানো পারে কিছু ইয়ট বাঁধা। উদাস মনে নদী দেখছিলাম। এই সময়ে পাশে এসে জুটলো এক মাতাল রাশিয়ান। দিয়াশলাই চাইলো। নেই বলার পরেও পাশে বসলো এবং শুরু করলো যত অদ্ভুত কথা। সে জীবনে কি কি মদ খেয়েছে, খেলে কেমন লাগে। এখন তার নেশা উঠেছে ভয়াবহ, এলএসডি দরকার পাচ্ছে না তাই ভোদকা খাচ্ছে। এইসব হাবিজাবি। তারপর শুরু করলো তার প্রেমিকার কথা। তার ইরানি প্রেমিকা ছিলো, সেও আমার মত মুসলমান। তার মুসলমানদের খাবার খুব ভাল লাগে। তার প্রেমিকা দারুণ রান্না করতো। তারপর শুরু করলো তার নিজের ধর্মের কথা। ও কোন ধর্ম মানে না, শয়তানের উপাসক৷ বড় বড় শহরগুলোতে শয়তানের উপাসক অনেক, কেউ বলে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। কোন সন্দেহ নেই এই বিষয়গুলো আমার খুবই প্রিয় তবে তার মুখ দিয়ে ভদকার বিচ্ছিরি গন্ধ আসছে। মহাবিরক্ত লাগছিলো এই ম্লেচ্ছের বকর বকর শুনে। একটা বক্সে কিছু আঙ্গুর ছিলো নিতে গিয়ে সব ফেলে দিলো। আমার ধৈর্য্যের চরম সীমার কাছাকাছি চলে গেলো। একে কড়া করে একটা গালি দিতে পারলে কাজ হতো। কিছু মানুষ দারুণ গালি দিতে পারে। কিন্তু এই ব্যাপারে আমি একেবারেই অনভিজ্ঞ। মনে মনে জর্মন গালি চিন্তা করলাম। জর্মনদের গালিও বেশ অদ্ভুত। এখানে সবচেয়ে কঠিন গালি হল "পাখি"- 'দু বিস্ত আইনে ফুগেল' তুই একটা পাখি। এই আক্ষরিক অনুবাদ আসলে ভাবটা বহন করে না। এর প্রচন্ডতা বুঝতে হলে ভাবানুবাদ করতে হবে, এর বাংলা হবে "তুই একটা ছাত্রলীগ!" কিন্তু একে এতবড় গালি দেওয়াটা ইনসাফের কাজ হবে না। একটা ক্যান জুস খাচ্ছিলাম, মনে হচ্ছিলো এই জুস ওর মাথায় ঢেলে দিলে ব্যাপারটা ভাল হতো। ক্যানটা পাশে রেখেছিলাম সেটাও হুট করে নিয়ে মুখ লাগিয়ে খেলো৷ আমার যাবতীয় ধৈর্য্যে শেষ হয়ে গেল। উঠে হাঁটা দিলাম।

নদীর পার দিয়ে হাটতে লাগলাম। গুগল সাহেবের কথা অনুসারে ফ্রাংকফুর্টের জাদুঘরগুলো এই নদীর পাড়েই অবস্থিত। আচ্ছা, মিউজিয়ামের বাংলা জাদুঘর কেন? জাদুঘর কি মিউজিয়ামের বাংলা অনুবাদ নাকি মিউজিয়াম এবং জাদুঘর দুটো আলাদা শব্দ? এই প্রশ্ন মাথায় আসলো। জাদু ফারসি শব্দ জানি। তবে জাদুঘর শব্দটা কি বিশ্লেষণ করা যায়? করলে অর্থ ঠিক কি দাঁড়ায়? এটা কি বহুব্রীহি সমাস নাকি চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস? নাকি এই শব্দের কোন সমাসই হয় না? যেহেতু জাদুঘর দেশি এবং বিদেশি দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত মিশ্র শব্দ তাহলে এর সমাস হবে না সম্ভবত? কি জানি। মাথা কাজ করছিলো না। আমি স্কুল জীবনে ব্যাকারণের নৈব্যক্তিকে কখনোই ৩০/৩২ এর বেশি পায়নি। ব্যাকারণে আমার জ্ঞান খুবই সামান্য। বাংলা ভাল জানেন এমন কারো সাথে আলাপ করতে হবে!

গুগল সাহেব আরো জানালো এই শহরের সবচেয়ে বিখ্যাত স্টেডেল জাদুঘর আশেপাশেই কোথাও আছে। স্রষ্টা প্রদত্ত পদযুগলের উপর আরোহন করে সেদিক রওনা দিলাম। ফ্রাংকফুর্টের ধনকুবের ইওহান ফ্রিডরিশ স্টেডেল-এর নাম অনুসারে এই জাদুঘরের নাম। কারন উনার মৃত্যুর পরে উনার উইল করা টাকা থেকেই ১৮১৭ সালে উনার বাড়িতে এই জাদুঘর স্থাপিত হয়। ফ্রিডরিশ স্টেডেলের ব্যক্তিগত সংগ্রহও ছিল বেশ। আসলে সেই আমলে বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহ ধনকুবেরদের একটা নেশা ছিলো। অনেক সময় তাদের সম্মানের পারদ ওঠানামা করত শিল্পকর্ম সংগ্রহের উপর ভিত্তি করে। জাদুঘর অবধারিতভাবে বন্ধ। তাই ভেতরে ঢোকা হলো না। অবশ্য এটাও ঠিক এই শিল্পকর্মের ব্যাপারগুলো আমি ঠিকভাবে বুঝিও না। বার্লিন, অসলো, ভিয়েনা বা স্কোপির বিখ্যাত সব শিল্পকর্মের মর্ম খুব একটা বুঝি নাই। আমাদের সবারই শিল্পকর্মের সমঝদার বন্ধু থাকা দরকারি!

জাদুঘরের সামনে থেকে আবার হন্টন শুরু করলাম। একজনের বাসায় থাকার বন্দোবস্ত, বাস ধরতে হবে। ফ্রাংকফুর্টের যোগাযোগ ব্যবস্থা দারুন। পাতাল ট্রেন (উবান), মেট্রো (এসবান), বাস, ট্রাম সব রকমের ব্যবস্থাই আছে। এর মধ্যে উবানের গতি সবচেয়ে বেশি৷ তবে সূর্যের আলো আছে আরো বেশ কিছুক্ষন। অচেনা শহরে উদ্দেশ্যবিহীন ভাবে হাঁটার একটা মজা আছে। ফ্রাংকফুর্ট অনেকটা মিউনিখ বা অসলোর মতই তফাত শুধু গগনচুম্বী অট্রালিকা।

হেসেন অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ফ্রাংকফুর্ট জার্মানির পঞ্চম জনবহুল শহর। প্রায় আট লক্ষ মানুষের বাস এ শহরে। প্রচুর আরবি, তুর্কি সাইনবোর্ড চোখে পরলো। ফ্রাংকফুর্ট একটা বহুজাতিক শহর। নানান দেশের মানুষ বাস করে এ শহরে৷ এই শহরের প্রায় ৫২ ভাগ মানুষই অভিবাসী পিতা বা মাতার সন্তান এবং ২৭ ভাগ মানুষের অন্যদেশের নাগরিকত্ব আছে। একটা মজার লেখা পড়েছিলাম কয়েকদিন আগে এখন ফ্রাংকফুর্টের ছয় বছরের কম বয়েসি বাচ্চাদের চার জনের তিন জনই অভিবাসী।

হাটতে হাটতে কোথায় আসলাম জানি না। শহরের একটা ভিন্নতা লক্ষ্য করলাম, ছোট ছোট গলির মধ্যেও ট্রাম লাইন। একটু দূরেই দেখতে পেলাম ফ্রাংকফুর্টের বাণিজ্য কেন্দ্র! এখানেই পৃথিবীর বৃহত্তম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। করোনায় সব বন্ধ। সুতরাং এখানে দূর থেকেই অবলোকন করে সন্তুষ্ট থাকতে হল। মুনি-ঋষিরা বলে গেছে - ' ঘ্রানং অর্ধনং ভোজনং'। যার সহজ অর্থ গন্ধই ভোজনের অর্ধেক। আচ্ছা দেখার ব্যাপারে এমন কিছু বলে নাই?!

অক্টোবর মাসের মাঝামাঝিতে পাঁচদিন ব্যাপী এ মেলা হয়। ৫০০ বছরেরও বেশি ধরে ফ্রাংকফুর্টে বইমেলা হচ্ছে! ভাবা যায়!? ঠিক কবে থেকে বই থেকে বইমেলা শুরু তা জানা যায় না। তবে ইয়োহানেস গুটেনব্যার্গ ফ্রাংকফুর্টের পাশেই মানজে ছাপা মেশিন আবিস্কারের পরে বইমেলার জৌলুস শুরু হয়। জার্মানি, ইউরোপ এবং বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই মেলায় পরিণত হয়। একশটি দেশের প্রায় ৭৩০০ বইয়ের দোকান বসে এই মেলায়। ইউরোপীয় রেনেসাঁসের সময়ে অবশ্য লাইপজিগ শহরের বইমেলা একটু বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলো। তবে সেটা কিছুদিনের জন্য। শুধু বইমেলা না বিশ্বের সবচেয়ে বড় গান-বাজনার মেলাও হয় এখানে। গানের ব্যাপারে আমার জ্ঞানের দৌড় লালন, ব্রায়ান অ্যাডামস আর জন ডেনভার পর্যন্ত। তাই এদিক আর ঘাটতে গেলাম না। বেলা শেষ হয়ে গেছে বেশ খানিক আগেই। এবার ফিরতে হবে। সখী, বেলা যে পরে এল জলকে চল..

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্ট দিয়েছেন। লিখেছেনও খুব সুন্দর করে। তবে ছবি আরো কয়েকটা দিলে দারুন হতো।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:২৬

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: ৭৩০০ বইয়ের দোকান !!! এই মেলা ঘুরে দেখতে আমার নিশ্চিত সপ্তাহখানেক সময় লাগবে।
ঢাকায় সদরঘাটের দিকে গেলে ঘোড়ার গাড়িকেও সাইড দেয়া লাগে।
ইবনে খালেদুন বলেছিলেন, এক ফোঁটা পানি যেমন অন্য ফোঁটাটির মত ঠিক একই ভাবে বর্তমান অতীতের মত। (মনে রাখার মতো একটা উক্তি)
অবশ্য এই লেখার অনেক উক্তি-ই মনে রাখার মতো ...


২০ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৪:১০

যাযাবর চিল বলেছেন: দেখতে পারবেন তবে কিনতে পারবেন না!

৩| ১৯ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:৪৮

রেজওয়ান ইসলাম বলেছেন: আপনার ভ্রমণ, অভিজ্ঞতা আর জার্মানির ইতিহাস ভাল লাগলো।

৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৪:৪৯

নান্দনিক নন্দিনী বলেছেন: কি আর করার!
তবু নতুন বইয়ের ঘ্রাণ আমার ভালো লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.