নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭ই নভেম্বর একটি ধোকা

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

বুদ্ধি হবার পর থেকে দেখতাম, ৭ই নভেম্বর দিনটা জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ঠিক বুঝতে পারতাম না। স্বাধীনতা দিবস বুঝি, বিজয় দিবস বুঝি কিন্তু এই সংহতি দিবসটা কি বস্তু? বিএনপি-জামাতজোট ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সরকারীভাবে মহাসমারোহে একদল মানুষ সিপাহী জনতার ঐতিহাসিক বিপ্লবের দিবস হিসেবে দিনটা পালন করতো। এই বিপ্লবের কারন কি ছিল, কেন হইছিল-- আশেপাশের পরিচিতদের এই প্রশ্ন করলে প্রায় কেউই উত্তর দিতে পারতো না। আজো পারে না। কেবল পোষা ময়নার মত মুখস্ত আউড়ে যায়, " ৭ই নভেম্বর স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াকে সিপাহী জনতা এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের মাধ্যমে মুক্ত করে আনে,তারপর জিয়া বহুদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের প্রবর্তন করেন, দেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেন ইত্যাদি ইত্যাদি ভ্যা ভ্যা ভ্যা...
৭ই নভেম্বর, ১৯৭৫। ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্ট। শেরে বাংলা নগর। অফিসার্স ক্যান্টিন।
পরোটা আর গরুর মাংস দিয়ে নাস্তা করছেন জেনারেল খালেদ মোশাররফ, লেফট্যানেন্ট কর্নেল এটিএম হায়দার এবং কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা। এর আগে রাত ১২টার দিকে শ্রেণীহীন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রোমান্টিসিজম মাখা অভিলাষ বাস্তবায়নে পুরো ক্যান্টনমেন্টকে উন্মত্ত ষাঁড়ের মত খেপিয়ে তুলে খালেদের বিরুদ্ধে ক্যু করেছে জাসদের বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা; সুপরিকল্পিতভাবে খালেদকে ভারতের চর, দেশ বিক্রি করে দেওয়া দালাল হিসেবে প্রচার করে গণ্ডায় গণ্ডায় লিফলেট বিলিয়ে প্রত্যেকটা সেনার মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিচিত্র এক স্লোগান, "সেপাই সেপাই ভাই ভাই, অফিসারের রক্ত চাই",বন্দীবস্থা থেকে বের করে এনেছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারী মেজরদের অর্ডারদাতা জেনারেল জিয়াকে, বঙ্গবন্ধু হত্যায় বিচারের মুখোমুখি হবার অপেক্ষায় ছিল যে। বের হয়েই জিয়া তাহেরকে জড়িয়ে ধরে বলেছিল,বন্ধু! তোমার এই উপকার আমি কোনোদিনই ভুলব না...
খালেদ সবই শুনেছেন।কিন্তু তার পাথুরে শান্ত মুখাবয়ব দেখে তা বোঝার উপায় নেই।মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০ম বেঙ্গল রেজিমেন্টটা খালেদ নিজের হাতে বানিয়েছিলেন, এই রেজিমেন্টের সেনারা সবাই তার খুব আপন, খুব চেনা।এদের নিয়েই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চিন্তা ঘুরছিল হয়তো মাথায়, হঠাৎ করেই শোরগোল উঠলো বাইরে। আচমকা একজন বিপ্লবী হাবিলদার আর কয়েকজন সৈন্য নিয়ে মেজর জলিল আর মেজর আসাদ প্রবেশ করলো ক্যান্টিনে।পাশেই ১০ম বেঙ্গলের কমান্ডার কর্নেল নাজমুল হুদা, সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ না করেই সেনাপ্রধানের সামনে চিৎকার করে সে বললঃ
-- আমরা তোমার বিচার চাই।
পাথুরে চোয়ালবদ্ধ খালেদের গলাটা আশ্চর্যরকম শান্ত শোনাল-- "ঠিক আছে, তোমরা আমার বিচার করো",আমাকে তোমাদের কমান্ডিং অফিসারের কাছে নিয়ে চলো।"
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল বাগিয়ে হাবিলদার চিৎকার করে বললোঃ আমরা এখানেই তোমার বিচার করবো।"
খালেদ বুঝতে পারলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী মেজরদের মত ওদের অর্ডারটাও কমান্ডিং অফিসারের কাছ থেকে আসেনি।কমান্ডিং অফিসারদের এরকম অর্ডার দেবার দূরদর্শিতা থাকে না। দে আর স্পেসিফিক, দ্যা অর্ডার ইজ স্পেসিফিক। উদ্যত বন্দুকের সামনে একটা পলকও পড়ল না, ঠাণ্ডা চোখে ঋজু ভঙ্গিতে বসে থাকা মানুষটাকে হঠাৎ অকুতোভয় টাইগার বলে বিভ্রম হলঃ
--ঠিক আছে, তোমরা এখানেই বিচার করো।
ট্যাঁরররর শব্দে গর্জে উঠলো অটোম্যাটিক। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন খালেদ মোশাররফ। সেই খালেদ মোশাররফ, যিনি যুদ্ধক্ষেত্রে কমান্ডার হিসেবে কিংবদন্তী ছিলেন, সেক্টর কমান্ডার হয়েও যুদ্ধক্ষেত্রের পেছনে বসে যুদ্ধ পরিচালনার বদলে অস্ত্র হাতে বাঘের গর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়তেন শত্রুর ওপর, এক হাতে সিগারেট টানতেন আর আরেক হাতে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে স্টেনগান চালাতেন, যুদ্ধ করতে করতে যুদ্ধ পরিচালনা যার নীতি ছিল...
সেই খালেদ মোশাররফ, যার অসমসাহসী পরিকল্পনায় পাকি জেনারেল টিক্কা খানের দম্ভ ভরে দেওয়া ঘোষণা( জুন মাসের মধ্যেই ঢাকা চট্টগ্রাম রেললাইন খুলবে,মুক্তিদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হবে) মাটির সাথে মিশে গিয়েছিল। সেই যুদ্ধে একশ'র উপর পাকিস্তানি সেনা বেঘোরে মরেছিল, কিন্তু পাকবাহিনী মেজর সালেক আর ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিনদের হারাইতে পারে নাই, ওই রেললাইন আর কখনই চালু হয় নাই...
সেই খালেদ মোশাররফ, ৭১রের ২৩ শে অক্টোবর যুদ্ধক্ষেত্রে আচমকা পাকিস্তানী মর্টার শেলের আঘাতে যার মাথার বাম পাশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল, ব্রেনের একটা বিশাল অংশ প্রায় অকেজো হয়ে কোমায় চলে যাওয়ার পরও মেডিক্যাল সায়েন্সের অবিশ্বাস্য মিরাকল হয়ে যে বেঁচে উঠেছিল আবারো, বেশ কয়েকবার অপারেশনের পরেও সেই শেলের অনেকগুলো স্পিন্টার যার মাথা থেকে বের করা যায় নাই...
সেই খালেদ মোশাররফ, ১৪-১৫ বছর বয়সী ইয়াং প্লাটুনের(ওয়াই প্লাটুন) এর দুর্ধর্ষ কিশোরদের যিনি দূরের সদাসতর্ক পাহারারত পাকিস্তানী আর্মির বাংকার দেখিয়ে বলতেন, "যে গ্রেনেড চার্জ করে ওই বাঙ্কার ধ্বংস করবে সে আমার হাত ঘড়িটা পাবে।" সেই খালেদ, মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে যার ললাটে ছিল এ মাটির বীর সন্তানের জয়টিকা, মাথায় বীর উত্তমের শিরোনাস্ত্র আর মাথার বামপাশে মগজের ভেতর আজীবন ধরে বয়ে বেড়ানো পাকিস্তানী গোলন্দাজ বাহিনীর মর্টার শেলের স্পিন্টার...
সেই খালেদ মোশাররফ লুটিয়ে পড়লেন। স্বাধীনতার মহান আদর্শ আর দীপ্তিমান চেতনার অনির্বান শিখা জ্বালিয়ে রাখতে "দ্যা লাস্ট স্ট্যান্ড" হবার অপরাধে তার বিচার করলো তারই অনুগত কিছু সেনা, মুক্তিযুদ্ধের যে মেজর জলিলকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এলেছিল খালেদ, সেই খালেদের উপর রাইফেলের পুরো ম্যাগাজিন খালি করতে একবিন্দু কাঁপলো না জলিলের হাত। অর্ডারটা বরাবরের মতই এল পর্দার ওপারের এক চাপা কণ্ঠ থেকে। রাত চারটার দিকে ফোন এল। না, কমান্ডিং অফিসারের কাছে না, এক সামান্য মেজরের কাছে। মেজর জলিলের কাছে। কালো সানগ্লাসের আড়ালে থাকা সেই নির্দেশদাতা চোস্ত উর্দু বলতে পারলেও তার কণ্ঠটা কখনই শুদ্ধ উচ্চারনে বাঙলা বলতে পারেনি... কখনই না...
পৃথিবীর ইতিহাসে গেরিলাযুদ্ধের সংজ্ঞা পাল্টে দেয়া অবিস্মরণীয় বীরযোদ্ধা কর্নেল এটিএম হায়দারকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে টেনে এল ওরা।পৈশাচিক কায়দায় বেয়োনেট চার্জ করার একপর্যায়ে ব্রাশফায়ার করা হল তার উপর, লুটিয়ে পড়লেন দুই নম্বর সেক্টরের হাজার হাজার দুর্ধর্ষ গেরিলার প্রিয় "হায়দার ভাই"।কর্নেল নাজমুল হুদা, সেই যে অমিতসাহসী বীরযোদ্ধা, পাকিস্তানী আর্মির উপর বাঘের গর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষটাকে বিনা অপরাধে মেরে ফেললো ওরা, ব্রিগেড কমান্ডার ছিল মানুষটা ওদের। একাত্তরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় লেঃ জেঃ অরোরা আর নিয়াজীর সাথে যে মানুষটা অভূতপূর্ব দৃঢ়পায়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের মুর্তি হয়ে, সেই আবু তাহের মোহাম্মদ হায়দারের পবিত্র রক্তে রাঙা হল চিরদুঃখী বাঙলা মায়ের আঁচল...
"চিন্তা করো না, আমি ভালো আছি। কাল চলে আসবো..."
স্ত্রী সালমাকে দেওয়া এই কথা রাখতে পারেননি মহাবীর খালেদ। ঠিক যেমনি নাজমুল হুদা পাননি স্ত্রীর প্রিয় মুখখানা শেষবারের মত দেখার সুযোগ।"আব্বা, আপনি চিন্তা করবেন না, আমি তাড়াতাড়িই চলে আসবো" বলে সেই যে গেলেন, আর ফেরা হয়নি এটিএম হায়দারের। প্রিয় বড় বোন, আদরের ছোটবোনটার পথ চেয়ে থাকা আকুল অপেক্ষা আজো শেষ হয়নি। আর কখনো ফিরতে পারেননি মানুষগুলো, ফিরতে পারেননি ৭৫ পরবর্তী সময়ে অভ্যুত্থান দমনের অজুহাতে নির্বিচার গণহত্যার শিকার হওয়া সশস্ত্র বাহিনীর হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা অফিসার। যে লাল-সবুজের বাঙলাদেশ তারা ছিনিয়ে এনেছিলেন পাকিস্তানী শকুনগুলোর গ্রাস থেকে, সেই বাঙলাদেশকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি...
জিয়া তার উপর অর্পিত দায়িত্ব নিখুঁত নিষ্ঠার সাথে পালন করেছিল,বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে বিদেশে দেশের দূত বানানো থেকে শুরু করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে রাজাকারদের স্বাধীন বাঙলাদেশের রাজনীতিতে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো-- খুব সুচারুভাবে অকল্পনীয় দক্ষতায় ৩০ লাখ শহীদের রক্তাক্ত এই জমিনের শিরায় শিরায় ঢুকিয়ে দিয়েছিল দূষিত পাকিস্তানী রক্ত। তাই আজো লাল-সবুজ পতাকার মাঝে কালো থাবা বসায় চাঁদতারা রঙের শকুন, লাল টুকটুকে সূর্যের এক রোদ্র ঝলমলে সকালে মিছিল করে বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করে কিছু সবুজ শুয়োর

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩

সাইয়িদ রফিকুল হক বলেছেন: একদল হারামজাদা ৭ই নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করে থাকে। এরা সরাসরি পাকিস্তানের দালাল।
এদের বাংলাদেশ থেকে বের করে দেওয়া উচিত।
দেশের পক্ষে লেখার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।

২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৫১

মহা সমন্বয় বলেছেন: আসলে এদের ধরে পিটানোর দরকার।

৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৬

কলাবাগান১ বলেছেন: "তাই আজো লাল-সবুজ পতাকার মাঝে কালো থাবা বসায় চাঁদতারা রঙের শকুন, লাল টুকটুকে সূর্যের এক রোদ্র ঝলমলে সকালে মিছিল করে বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন করে কিছু সবুজ......"

৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩০

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: সবাইকে ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.