নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী হয়ে কেউ জন্মায় না। সমাজ একটি মেয়েকে নারী হিসেবে তৈরি করে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:০২


নারী হয়ে কেউ জন্মায় না। সমাজ একটি মেয়েকে নারী হিসেবে তৈরি করে। এই সমাজে একজন নিপীড়িত নারী বিচার চাইতে গেলে তাকে হতে হয় আরো নানা ধরনের হয়রানির শিকার। আদর্শিক ক্ষেত্রে এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি, উন্নয়নের নীতি ও পরিকল্পনাকে অস্বীকার করে। এই ধরনের আদর্শিক ক্ষেত্র সমাজে এমন এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গড়ে ওঠে যা শুধু পুরুষ প্রধান মূল্যবোধকে প্রবর্তন, আরোপণ ও আত্মস্থ করতে সহায়তা করে এবং এমন এক শোষণ কাঠামোকে টিকিয়ে রাখে- সেখানে নারী অধস্তন অবস্থায় বিরাজ করে। এসব প্রক্রিয়া বাংলাদেশের সামাজিক রীতিনীতি, অভ্যাস, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং সামাজিক আইনে বিদ্যমান এমন অনেক সামাজিক নিয়ম, ধর্মীয় বিশ্বাস ও রাষ্ট্রীয় নীতি আছে যা অনেক ঘটনাকে ‘ব্যক্তিক’, ‘লজ্জাজনক’ এবং প্রকাশ করা উচিতি নয় বলে মনে করে। এ ধরনের বেশির ভাগ ঘটনাই নারীকে কেন্দ্র করে ঘটে। ঘরে বাইরে নারীকে বিভিন্নভাবে নির্যাতিত হতে হয়। কিন্তু নারী প্রকাশ্যে এর প্রতিবাদ করে না কারণ সমাজে এটাকে লজ্জার ব্যাপার বলে মনে করা হয়। উপরন্তু সেই নির্যাতিত নারীই লজ্জা অনুভব করে এবং ঘটনার জন্য নারীকেই দায়ী করা হয়। নারীর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির অভাব এখনো আমাদের সমাজের প্রতি পদে পদে। বাংলাদেশে নারী নিপীড়ন বেড়ে চলেছে। নারীরা আজ পদে পদে নিগ্রহের শিকার হচ্ছে অফিস আদালত, রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও। তারা বখাটেদের হাতে রাস্তাঘাটে যেমন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে তেমনই ঘরেও স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজন, আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী, গৃহকর্মী দ্বারা নির্যাতিত হচ্ছে। খুন হচ্ছে, জখম হচ্ছে; কেউ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। সমাজের শিক্ষিত, অশিক্ষিত নারীরা এমনকি গ্রাম ও শহরে সব জায়গায় নারীরা আজ অনিরাপদ। সমাজে নারী নিপীড়ন ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। প্রকাশ্যে আমরা নিপীড়নের কিছু ঘটনা দেখেছি। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে যে হারে নারী নিপীড়ন বাড়ছে তা রীতিমতো চিন্তার বিষয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, বাসে, কর্মস্থলে এমনকি দুর্বৃত্তদের দ্বারা গৃহেও ধর্ষিত হচ্ছে নারী। চাকরির প্রলোভন কিংবা মিথ্যা প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নারীর সম্মানহানি করা হচ্ছে আবার তার এসএমএস বানিয়ে নারীকে করা হচ্ছে ব্ল্যাকমেইল। রাস্তায় বখাটেদের দ্বারা ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। পয়লা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি প্রাঙ্গণে নারী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার ফুটেজ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ কিছু করতে পারেনি। এর প্রতিবাদ জানাতে পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ সদস্য কর্তৃক এক নারীকে টেনে হেঁচড়ে, লাথি মেরে নির্যাতন করা দেখে মনে হয় পুলিশ বাহিনী যেন নারী নিগৃহীত হওয়াকে কোনো আমলই দেয় না। রক্ষকই এখানে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করে। কিছু দিন আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে একজন রোগীর দর্শনপ্রার্থীকে একজন আনসার সদস্য নিপীড়ন করে। কুড়িল বিশ্বরোড়ে গারো সম্প্রদায়ের এক তরুণী মাইক্রোবাসে ধর্ষিত হয়। ট্রাকে ধর্ষিত হয় আরেকজন তরুণী। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গেছে। নারীরা তার কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে এসব অমানবিক পৈশাচিক ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে। পথে-ঘাটে, যানবাহনে, গৃহে কোথাও কি নিরাপত্তা পাবে না নারী?
শুধু মে মাসেরই নারীর প্রতি সহিংসতার কিছু প্রতিবেদন উল্লেখ করলে দেখা যায়, কুড়িলে গারো তরুণী নির্যাতিত, বাসে ট্রাকে গার্মেন্টকর্মীর ওপর নির্যাতন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী নির্যাতন। গোপালগঞ্জে রাতে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় ‘আমি বাগচী’কে এসিড নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা; নৌকায় পিতার সামনে দুই কন্যাকে ধর্ষণ এবং ঘরে ঢুকে মা ও মেয়েকে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা। কলাপাড়ায় যৌতুকের টাকার জন্য কুপিয়ে জখম করেছে স্ত্রীকে পাষণ্ড স্বামী। নড়াইলে গৃহবধূকে গাছের সাথে বেঁধে নির্মম নির্যাতন করেন সেনাদস্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। ঢাকা মেডিক্যালে ধর্ষিত হয় আনসার সদস্য দ্বারা তরুণী। খুনের ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গাজীপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ কয়েকজন নারী। রাজধানীর পল্লবীতে দিনদুপুরে প্রকৌশলীর স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
একটি বেসরকারি জরিপে গত চার মাসের প্রতিবেদনে দেখা যায়- যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৫৪ জন, ধর্ষিত হয় ১৫৮ জন, যৌন হয়রানি শিকার হয় ৫৩ জন, এসিড নিক্ষেপে আক্রান্ত হয় ২০ জন। নারী নির্যাতনের সব ঘটনা আমাদের গোচরে আসে না। আমাদের চোখের আড়ালে আরো বহু নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এক নারীকে তার স্বামী ও শ্বশুর কর্তৃক গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনের খবর আমরা দেখেছি। ঘরে ঢুকে মা মেয়েকে হত্যা করারও বেশ কয়েকটি ঘটনা এরই মধ্যেই ঘটতে দেখেছি। সম্পত্তির জন্য, প্রেমে সাড়া না দেয়া, যৌতুকের জন্য নারীদের জীবনও কেড়ে নেয়া হচ্ছে। অপহরণ হচ্ছে নারী, এসিড আক্রান্ত হচ্ছে নারী, লাঞ্ছিত, নিগৃহীত, খুন হচ্ছে নারী। দেশের গণ্ডি পার হয়ে নারী নিপীড়ন বাইরেও চলে গেছে। এখন যে আদম পাচার হচ্ছে সেখানেও নারী রয়েছে। তাদের ওপর অত্যাচার আরো বেশি হচ্ছে। এখন নারীর ওপর যেসব নির্যাতন চলছে তার প্রকৃতি আরো বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। কেন এভাবে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে, এর প্রধান কারণ অপরাধীদের কোনো শাস্তি না হওয়া এবং সচেতনতার অভাব। এভাবে চলতে থাকলে এ দেশে নারী উন্নয়ন তো নয়ই, কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী নির্যাতন একটি কুরুচিপূর্ণ ও জঘন্য অপকর্ম। একটি জঘন্য অপরাধ করার পরও যখন অপরাধী ধরা পড়ে না তখন সে পরবর্তী অপরাধ করতে পিছপা হবে না। তাদের পরবর্তী অপরাধ আরো বেশি ভয়াবহ হয়ে ওঠে। নারী নিপীড়নের ধারাবাহিকতায় পরপর একই ধরনের জঘন্য নারী নিপীড়নমূলক ঘটনা ঘটছে। নিপীড়নকারীকে যদি যথাযথ বিচারের আওতায় আনা যেত তাহলে জনগণ যেমন প্রশাসনের ওপর আস্থা রাখতে পারত তেমনি অপরাধীরা আর অপরাধ করার সাহস পেত না। এগুলো সমন্বয়তার অভাব নয় কি? নারীরা কি ঘর থেকে বের হবে না? পড়াশোনা করবে না? চাকরি-বাকরি করবে না? গৃহেও কি নারীরা নিরাপদ? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না, চেষ্টাও করছে বলে মনে হয় না। অপরাধীরা ধরা পড়ছে না। নারী নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করেও কোনো লাভ হয় না। তারা জামিন নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। অপরাধ করার পর বিচার না হলে অপরাধীর উৎসাহ বাড়ে। অপরাধও বাড়ে। আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী নারী, সংসদের স্পিকার নারী, বিরোধী দলের নেতা নারী। তারা নারী উন্নয়নের জন্য আন্তরিক। নারী উন্নয়নে অনেক কাজ হয়েছে। কিন্তু নারী নির্যাতন কমছে না। নারী নিপীড়ন বন্ধের জন্য কঠিন আইন চাই। এবং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ চাই। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তা প্রতিরোধ করার কোনো বিকল্প নেই। নারী নির্যাতন বা নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে বাংলাদেশে পারিবারিক আদালত, নারী ও শিশু নির্যাতন আইন, নারী শিশু নির্যাতন দমন আইন, যৌননিপীড়ন বিরোধী আইন প্রচলিত আছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, নারীর প্রতি সহিংসতা শুধু আইন করেই বন্ধ করা যাবে না, এ জন্য চাই সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। সামাজিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সরকার ও রাষ্ট্রকে আন্তরিক হতে হবে। সাধারণ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থা, স্বচ্ছতা প্রয়োজন। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতে না পারলে শুধু নারীর উন্নয়নই ব্যাহত হবে না দেশের উন্নয়নও পিছিয়ে যাবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:২৫

বক্রহীন বলেছেন: মাথায় গন্ডগোল থাকলে কেহ এই রকম চিন্ত করে ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:২২

বিজন রয় বলেছেন: নারী হয়ে কেউ জন্মায় না। সমাজ একটি মেয়েকে নারী হিসেবে তৈরি করে।
ঠিক কথা।
++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.