নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ধর্ষণের ভয়াবহতা

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৪

যুদ্ধ মানেই নারী নির্যাতন, যুদ্ধ মানেই ধর্ষণ। কিন্তু ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ধর্ষণের ভয়াবহতা দেখা যায় সেটা কেবল আর দশটা যুদ্ধের মত ছিল না।
[ শাহনাজ পারভিনের গবেষণা ধর্মী গ্রন্থ “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীর অবদান” শীর্ষক বইটি থেকে 'নির্যাতনের স্বরূপ' দেয়া হল (পৃষ্ঠা: ১৬৩ থেকে ১৬৫)। নির্মম এবং বেদনাদায়ক তথ্যগুলো সংবেদনশীল ও দুর্বল চিত্তের পাঠকদের জন্য হানিকারক হতে পারে। ]
নারী নির্যাতন ১৯৭১ - নির্যাতনের স্বরূপঃ
(১) পাঞ্জাবী সেনারা প্রতিটি যুবতী মহিলা ও বালিকার পরনের কাপড় খুলে একেবারে উলঙ্গ করে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিয়ে বীভৎস ধর্ষণে লিপ্ত হতো।
(২) পাকসেনারা অনেক সময় মেয়েদের পাগলের মতো ধর্ষণ করে বক্ষের স্তন ও গালের মাংস কামড়াতে কামড়াতে রক্তাক্ত করে দিত, বর্বর পাকসেনাদের উদ্ধত ও উন্মত্ত কামড়ে অনেক কচি মেয়ের স্তনসহ বক্ষের মাংস উঠে এসেছিল; মেয়েদের গাল, পেট, ঘাড়, বক্ষ, পিঠের ও কোমরের অংশ পাকসেনাদের অবিরাম দংশনে রক্তাক্ত হয়ে যেত।
(৩) সাধারণত যে সকল বাঙ্গালি যুবতী প্রমত্ত পাশবিকতার শিকার হতে অস্বীকার করতো তাদেরকে তৎক্ষণাৎ নরপশু পাঞ্জাবি সেনারা চুল ধরে টেনে এনে স্তন ছিঁড়ে ফেলে দিয়ে, ওদের যোনি ও গুহ্য দ্বারের মধ্যে বন্ধুকের নল বেয়নেট ও ধারালো ছুরি ঢুকিয়ে দিয়ে বীভৎসভাবে হত্যা করতো।
(৪) অনেক উচ্চপদস্থ পাঞ্জাবি সামরিক অফিসার মদ খেয়ে হিংস্র বাঘের মতো উলঙ্গ বালিকা, যুবতী ও বাঙ্গালি মহিলাদের উপর সারাক্ষণ পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করতো। বহু অল্প বয়স্ক বালিকা নরপশুদের উপর্যুপরি ধর্ষণ ও অবিরাম অত্যাচারে রক্তাক্ত দেহে কাতরাতে কাতরাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতো।
(৫) অনেক সময় প্রাণ ভয়ে অন্যান্য মেয়েরা স্বেচ্ছায় পাক নরপশুদের সম্মুখে আত্মসমর্পণ করতো। তাদেরকেও একদিন ধরে ছুড়ি চালিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশ কেটে বীভৎসভাবে হত্যা করে আনন্দ উপভোগ করতো পাকসেনারা।
(৬) অনেক যুবতী মেয়েকে মোটা লোহার রডের সাথে চুল বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হতো। পাকসেনারা প্রতিদিন সেখানে যাতায়াত করতো, কেউ এসে সেই ঝুলন্ত উলঙ্গ দেহে উন্মত্ত ভাবে আঘাত করতে থাকতো, কেউ তাদের বক্ষের স্তন কেটে নিয়ে যেত, কেউ হাসতে হাসতে তাদের যোনিপথে লাঠি ঢুকিয়ে আনন্দ উপভোগ করতো, কেউ ধারল চাকু দিয়ে কোনো যুবতীর পাছার মাংস আস্তে আস্তে কেটে আনন্দ করতো, কেউ উঁচু চেয়ারে দাঁড়িয়ে উন্মুক্ত বক্ষ মেয়েদের স্তনে মুখ লাগিয়ে ধারাল দাঁত দিয়ে স্তনের মাংস তুলে নিয়ে আনন্দে অট্টহাসি করতো। এসব অত্যাচারে কোনো মেয়ে কোনো প্রকার চিৎকার করতে তার যোনিপথ দিয়ে লোহার রড ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে তৎক্ষণাৎ হত্যা করা হতো।
(৭) অনেক সময় মেয়েদের হাত পিছনের দিতে বেঁধে ঝুলে রাখা হয়েছিল। পাঞ্জাবি সেনারা সেই ঝুলন্ত উলঙ্গ মেয়েদের এলোপাথাড়ি বেদম প্রহার করতো। এভাবে প্রতিদিন বিরামহীন প্রথারে মেয়েদের শরীর থেকে রক্ত ঝরত। কোনো মেয়ের সামনে দাঁত ছিল না, ঠোঁটের দুইদিকের মাংস কামড়ে টেনে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল এবং প্রতিটি মেয়ের আঙ্গুল লাঠি ও রডের অবিরাম পিটুনিতে ভেঙ্গে থেঁতলে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এক মুহূর্তের জন্যও এসব অত্যাচারিত লাঞ্ছিত মেয়েদের প্রস্রাব পায়খানা করার জন্য বাঁধন খুলে দেয়া হত না। অবিরাম নির্মম ভাবে ধর্ষণের ফলে অনেক মেয়ে ঝুলন্ত অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করতো।
(৮) অনেক বন্দি বাঙালি মেয়েদেরকে নদীতে শিকল বাঁধা অবস্থায় স্নান করতে যেত দিত। স্নান করতে একটু দেরি হলেই পাকসেনারা তাদের ঘাঁটি থেকে শিকল ধরে টানাটানি করতো। অনেক সময় শিকলের টানাটানিতে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় রক্তাক্ত দেহে সেই মেয়দেরকে ঘাঁটিতে পৌঁছতে হতো।
(৯) প্রথম অবস্থায় ক্যাম্পে পাক হানাদারদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে অনেক বাঙালি মেয়েরা পরিধানের ওড়না বা শাড়ির ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করলে এরপর থেকে পাকসেনারা মেয়েদের বিবস্ত্র অবস্থায় বন্দি করে রাখে।
(১০) বর্বর পাকসেনারা গর্ভবতী মহিলাকেও নির্মমভাবে ধর্ষণ করে। এতে অনেকেই মৃত্যুবরণ করে।
(১১) পাকসেনারা হঠাৎ গ্রামে অভিযান চালিয়ে পলায়নরত মহিলাকে তাড়িয়ে জোর করে ধরে প্রকাশ্যে দিবালোকে পথে প্রান্তরে ধর্ষণে লিপ্ত হতো।
(১২) পাকসেনারা হঠাৎ কোনো বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পিতার সামনে মেয়েকে ও স্বামীর সামনে স্ত্রীকে পাশবিক অত্যাচার চালাত।
(আরিফ রহমানের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যা এবং ধর্ষণের পেছনে মনস্তত্ত্ব এবং ত্রিশ লক্ষ শহিদ-বাহুল্য নাকি বাস্তবতা থেকে আমরা পাই)
আমরা বিভিন্ন সময়ে দাবী করেছি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রচুর ধর্ষণ হয়েছে। সুসান ব্রাউনমিলার কিংবা ড. জিওফ্রে ডেভিসের মতে সংখ্যাটা তিন থেকে চার লাখ। বাঙালী গবেষক ড. এম এ হাসান কিংবা ড. মুনতাসীর মামুনের মতে এই সংখ্যাটা ছয় লক্ষাধিক। নয় মাস ধরে চলমান সংগ্রামের কথা চিন্তা করলে মনে হতে পারে এত কম সময়ে এত বেশি ধর্ষণ করা বুঝি অসম্ভব। ৯২,০০০ পাকিস্তানী সৈন্য যদি সম্মিলিত ভাবে ধর্ষণ করে থাকে তাহলে তাদের প্রত্যেককে গড়ে একাধিক ধর্ষণে লিপ্ত হতে হয়।
আমরা আজ খুঁজে দেখার চেষ্টা করবো কি কারণে পাকিস্তানী সৈন্যরা এত ধর্ষণ করেছিলো?
ইতিহাস থেকে আমরা দেখতে পাই এই শতকের যুদ্ধগুলোতে যেসব ধর্ষণ হয়েছিলো সেগুলো সংগঠিত হয়েছিলো মূলত বিকৃতমনা সৈনিকদের যৌনলালসা পূর্ণ করার ইচ্ছায়। কিন্তু যখন ধর্ষণকে ব্যাবহার করা হয় একটা নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল অথবা ধ্বংস করে দেয়া কিংবা সেই জনগোষ্ঠীকে পরিবর্তন করে দেয়া (destroy a systematic Community or to Change a community) তখন সেটা হয় গণহত্যার প্রয়াসে ধর্ষণ (Genocidal Rape)।
আজ আমরা দেখবো আদৌ পাকিস্তানিরা ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সংগ্রাম চলার সময় কোন ধর্ষণ করেছিলো কি না? করে থাকলে কেন করেছিলো? এই ধর্ষণ গুলো কি ছিল নিছক বিকৃতমনা সৈনিকদের যৌনলালসা পূর্ণ করার ইচ্ছা নাকি Genocidal Rape।
স্বাধীনতার পর ধর্ষিতা বাঙালী মহিলাদের চিকিৎসায় নিয়োজিত অস্ট্রেলীয় ডাক্তার জেফ্রি ডেভিস গণ-ধর্ষণের ভয়াবহ মাত্রা দেখে হতবাক হয়ে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে আটক পাক অফিসারকে জেরা করেছিলেন যে তারা কিভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ-কারবার করেছিলো। অস্ট্রেলীয় চিকিৎসক বিচলিত হলেও পাক অফিসারদের সাচ্চা ধার্মিক হৃদয়ে কোন রকম রেখাপাত ঘটেনি। তাদের সরল জবাব ছিল,
“আমাদের কাছে টিক্কা খানের নির্দেশনা ছিল যে একজন ভালো মুসলমান কখনই তার বাবার সাথে যুদ্ধ করবে না। তাই আমাদের যত বেশী সম্ভব বাঙালী মেয়েদের গর্ভবতী করে যেতে হবে।”
“We had orders from Tikka Khan to the effect that a good Muslim will fight anybody except his father. So what we had to do was to impregnate as many Bengali women as we could.”
ধর্ষণে লিপ্ত এক পাকিস্তানী মেজর তার বন্ধুকে চিঠি লিখেছে;
“আমাদের এসব উ-শৃঙ্খল মেয়েদের পরিবর্তন করতে হবে যাতে এদের পরবর্তী প্রজন্মে পরিবর্তন আসে, তারা যেন হয়ে ওঠে ভালো মুসলিম এবং ভালো পাকিস্তানী”
“We must tame the Bengali tigress and change the next generation Change to better Muslims and Pakistanis”
(Tikka khan, one of the leading general of Pakistan on 1971.)
একাত্তরের সেপ্টেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের সকল ডিভিশান কমান্ডারের কনফারেন্সে এক অফিসার তুলছিল পাকিস্তানী সেনা কর্তৃক বাঙ্গালী নারীদের ধর্ষণের প্রসঙ্গ । নিয়াজী তখন সেই অফিসারকে বলেন, “আমরা যুদ্ধের মধ্যে আছি। যুদ্ধক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনাকে স্বাভাবিক বলে ধরে নিও।” তারপর তিনি হেসে বলেন, “ভালই তো এসব বাঙ্গালী রক্তে পাঞ্জাবী রক্ত মিশিয়ে তাদের জাত উন্নত করে দাও।”
(September 1971, in a conference of Pakistan army, an officer told to general Niazi about the mass rape done by the Pakistan army. General Niazi told to that officer-
“We are in war now, and in war it is normal”
Then he smiled and said-
“Isn’t it good?”)
আর এই ধর্ষণের পক্ষে তিনি যুক্তি দিয়ে বলতেন,-“আপনারা কি ভাবে আশা করেন একজন সৈন্য থাকবে, যুদ্ধ করবে, মারা যাবে পূর্ব পাকিস্তানে এবং যৌন ক্ষুধা মেঠাতে যাবে ঝিলমে?”
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার আবদুল রহমান সিদ্দিকী তার East Pakistan The Endgame বইতে আরও লেখেন- “নিয়াজী জওয়ানদের অ-সৈনিকসুলভ, অনৈতিক এবং কামাসক্তিমূলক কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত করতেন। ‘গত রাতে তোমার অর্জন কি শেরা (বাঘ)?’ চোখে শয়তানের দীপ্তি নিয়ে জিজ্ঞেস করতেন তিনি। অর্জন বলতে তিনি ধর্ষণকে বোঝাতেন। পাকিস্তানী জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা “অ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি” বইতে লিখেছেন, নিয়াজী ধর্ষণে তার সেনাদের এতই চাপ দিতেন যে তা সামলে উঠতে না পেরে এক বাঙালি সেনা অফিসার নিজে আত্মহত্যা করেন। এখানেই শেষ নয়। ধর্ষণের অবিচ্ছিন্নতা প্রমাণের জন্য রয়েছে কিছু প্রামাণ্য ছবি।
“বেগ সাহেবের জন্য ভালো মাল পাঠাবেন। রোজ অন্তত একটা।” মাল বলতে এখানে বাঙালী মেয়েদের কথা বলা হয়েছে।
“বেগ সাহেবের জন্য ভালো মাল পাঠাবেন। রোজ অন্তত একটা।” মাল বলতে এখানে বাঙালী মেয়েদের কথা বলা হয়েছে।

সিলেটের শালুটিকরে পাকিস্তানী ক্যাম্পের দেয়ালে পাকি সৈন্যদের আঁকা কয়েকটি ছবির দিকে দৃষ্টিপাত করছি।
সিলেটের শালুটিকরে পাকিস্তানী ক্যাম্পের দেয়ালে পাকি সৈন্যদের আঁকা কয়েকটি ছবির দিকে দৃষ্টিপাত করছি।

এর থেকে বড় প্রমাণ বোধহয় আর হয় না
এর থেকে বড় প্রমাণ বোধহয় আর হয় না
এবারে দৃষ্টিপাত করি আরও কিছু ঘটনার দিকে, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির গ্রন্থ “যুদ্ধ ও নারী”তে উঠে আসে অনেক তথ্য যা পাঠকদের নিঃসন্দেহে আগ্রহ জোগাবে।
এক. “যুদ্ধ শেষে ক্যাম্প থেকে কয়েকটি কাঁচের জার উদ্ধার করা হয়,যার মধ্যে ফরমালিনে সংরক্ষিত ছিল মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশ। অংশগুলো কাটা হয়ে ছিল খুব নিখুঁতভাবে।”- ডাঃ বিকাশ চক্রবর্তী, খুলনা।
দুই. এরপর তারা আমাদের সব মেয়েকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে লাইন করে দাঁড় করাল। আমাদের বাচ্চারা চিৎকার, কান্নাকাটি করছিল। এই পরিস্থিতিতে আর্মিরা বলল, তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে বাচ্চাদের পা ধরে ছিঁড়ে ফেলবে…।-জোহরা, ছাতনী (দত্তের বাগান), নাটোর।
তিন. ধর্ষিতা মেয়েরা চিৎকার করে আমাদের বলতেন ‘আমরা তো মরে যাব, আপনারা যদি কেউ বেঁচে যান তাহলে আমাদের কথা আমাদের বাড়িতে গিয়ে বলবেন।’… পাকিদের নির্যাতনের ধরন ছিল বীভৎস। তারা মেয়েদের স্তন কেটে ফেলত, যৌনাঙ্গে রাইফেল ঢুকিয়ে গুলি করত; এমনভাবে নির্যাতন করত যে সে প্রক্রিয়া আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারছি না, এসব আমি নিজের চোখে দেখেছি।-মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আবু ইউসুফ, ফরিদপুর।
চার. পাকি বর্বরেরা প্রত্যেক মহিলাকে অবর্ণনীয় কষ্ট ও যন্ত্রণা দিয়ে ধর্ষণ করে। এরপর তাদের হত্যা করে। ধোপা যেভাবে কাপড় কাচে সেভাবে রেললাইনের ওপর মাথা আছড়ে, কখনও দু’পা ধরে টান দিয়ে ছিঁড়ে দু’টুকরা করে হত্যা করেছে শিশুদের। স্বাধীনতার অনেকদিন পরেও সেখানে মহিলাদের কাপড়, ক্লিপ, চুল, চুলের খোঁপা ইত্যাদি পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে আমি আমার ছোট বোনের ফ্রকের এক টুকরো কাপড় খুঁজে পাই।-বিনোদ কুমার, নীলফামারী।
পাঁচ. আমাদের পাশের বাড়ির একটি মেয়ে। সদ্য মা হয়েছে, আট দিনের বাচ্চা কোলে। ঐ সময় সে বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়াচ্ছিল। এমন সময় বাড়িতে আক্রমণ। ঘরে তখন কেউ ছিল না। এরপর যা হবার তাই হল, মেয়েটির উপর চলল অমানুষিক নির্যাতন। এরমধ্যেই দুপুর গড়িয়ে এল, পাকিরা খাবার খেতে চাইল। ঘরে কিছু না থাকায় ক্ষেত থেকে বেগুণ এনে দিতে বলল। ভীত মেয়েটি ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। মেয়েটির আসতে দেরি হচ্ছিলো দেখে পাকিরা তার বাচ্চাকে গরম ভাতের হাঁড়িতে ছুঁড়ে দিয়ে ঘর থেকে নেমে গেল। -ভানু বেগম, ছাব্বিশা, ভূয়াপুর, টাঙ্গাইল।
ছয়. “মার্চে মিরপুরের একটি বাড়ি থেকে পরিবারের সবাইকে ধরে আনা হয় এবং কাপড় খুলতে বলা হয়। তারা এতে রাজি না হলে বাবা ও ছেলেকে আদেশ করা হয় যথাক্রমে মেয়ে এবং মাকে ধর্ষণ করতে। এতেও রাজি না হলে প্রথমে বাবা এবং ছেলে কে টুকরো টুকরো করে হত্যা করা হয় এবং মা মেয়ে দুজনকে দুজনের চুলের সাথে বেঁধে উলঙ্গ অবস্থায় টানতে টানতে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।” -মোঃ নুরুল ইসলাম, বাটিয়ামারা কুমারখালি।
সাত. “আমাদের সংস্থায় আসা ধর্ষিত নারীদের প্রায় সবারই ছিল ক্ষত-বিক্ষত যৌনাঙ্গ। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছিঁড়ে ফেলা রক্তাক্ত যোনিপথ, দাঁত দিয়ে ছিঁড়ে ফেলা স্তন, বেয়োনেট দিয়ে কেটে ফেলা স্তন-উরু এবং পশ্চাৎদেশে ছুরির আঘাত নিয়ে নারীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতো।”-মালেকা খান, যুদ্ধের পর পুনর্বাসন সংস্থায় ধর্ষিতাদের নিবন্ধীকরণে যুক্ত সমাজকর্মী।
আট. “১৮ ডিসেম্বর মিরপুরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজনকে খুঁজতে গিয়ে দেখি মাটির নিচে বাঙ্কার থেকে ২৩জুন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথা কামানো নারীকে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাক আর্মিরা।”-বিচারপতি এম এ সোবহান।
নয়. “যুদ্ধের পর পর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেশ কিছু নারীকে। তাদের পোশাক এবং চলাফেরা থেকে আমরা অনেকেই নিশ্চিত জানতাম ওরা যুদ্ধের শিকার এবং ওদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই।”-ড. রতন লাল চক্রবর্তী, অধ্যাপক ইতিহাস বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
দশ. “কোন কোন মেয়েকে পাকসেনারা এক রাতে ৮০ বারও ধর্ষণ করেছে।”-সুসান ব্রাউনি মিলার, গবেষক।

এই সব খণ্ড খণ্ড জবানবন্দী এই কথাই প্রমাণ করে যে মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্ষণ সাধারণ কোন যুদ্ধের ধর্ষণ নয়। এটা পাক বাহিনী শুধুই প্লেজারের জন্য করে নাই, তারা এটা করেছে দায়িত্ব বোধ থেকে। শুধু প্লেজারের জন্য বেয়নেট দিয়ে যোনি পথ খুঁচিয়ে রক্তাক্ত করতে হয় নয়া, দাঁত দিয়ে স্তন ছিঁড়ে ফেলতে হয় না, দু দিক থেকে পা টেনে চিঁরে ফেলতে হয় না, একজনকে আশি বার ধর্ষণ করতে হয় না।
খুলনার একটি ক্যাম্প থেকে যখন কাচের জারে ফরমালিনে সংরক্ষিত ছিল মেয়েদের শরীরের বিভিন্ন অংশ পাওয়া যায় খুব নিখুঁতভাবে কাঁটা। যখন সিলেটের দেয়ালে ধর্ষকেরা সদম্ভে এঁকে রেখে যায় নিজেদের কৃতকর্ম, তখন বুঝে নিতে হয় এই ধর্ষণ দু’একজন সামরিক কর্মকর্তার বিচ্ছিন্ন মনোরঞ্জন নয়। তখন বুঝতে হয় তারা এসব করেছিলো একটা এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে, আর সেই এজেন্ডার কথা সৈয়দ সামসুল হক তার কালজয়ী নিষিদ্ধ লোবান উপন্যাসে লিখেছেন সবচেয়ে সুন্দর করে।
আমি তোমায় সন্তান দিতে পারব। উত্তম বীজ উত্তম ফসল। তোমার সন্তান খাঁটি মুসলমান হবে, খোদার ওপর ইমান রাখবে, আন্তরিক পাকিস্তানী হবে, চাওনা সেই সন্তান? আমরা সেই সন্তান তোমাদের দেব, তোমাকে দেব, তোমার বোনকে দেব, তোমার মাকে দেব, যারা হিন্দু নয়, বিশ্বাসঘাতক নয়, অবাধ্য নয়, আন্দোলন করে না, শ্লোগান দেয় না, কমিউনিস্ট হয় না। জাতির এই খেদমত আমরা করতে এসেছি। তোমাদের রক্ত শুদ্ধ করে দিয়ে যাব, তোমাদের গর্ভে খাঁটি পাকিস্তানী রেখে যাব, ইসলামের নিশানা উড়িয়ে যাব। তোমরা কৃতজ্ঞ থাকবে, তোমরা আমাদের পথের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তোমরা আমাদের সুললিত গান শোনাবে।”- নিষিদ্ধ লোবান, সৈয়দ শামসুল হক
সূত্র:
জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা: অ্যা স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওন কান্ট্রি
bn.wikipedia.org/wiki/বাংলাদেশের_স্বাধীনতা_যুদ্ধ…
bn.wikipedia.org/wiki/শর্মিলা_বসু…
archive.thedailystar.net/forum/2006/december/skewing.htm
sachalayatan.com/tanveer/17731
opinion.bdnews24.com/…/12/15/1971-rape-and-its-consequences/
opinion.bdnews24.com/…/rape-in-1971-in-the-name-of-pakistan/
ব্রিগেডিয়ার আবদুল রহমান সিদ্দিকীঃ East Pakistan The EndGame

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৯

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: বর্বর ফাকিস্তানিদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশের ভাষা নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.