নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

উৎসর্গঃগতকাল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখতে যাওয়া পাকিস্তানী সমর্থকদের..

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪


কয়েকদিন আগের কথা। রাস্তায় হঠাৎ এক স্কুল ফ্রেন্ডের সাথে দেখা। প্রায় ১০ বছর পর দেখা, দাড়ি রাখছে, একেবারে চেনাই যায় না। জোর করে বাসায় ধরে নিয়ে গেল। আন্টি তো আমারে দেইখা বিশাল খুশি, কতদিন পর দেখা। ড্রইংরুম পার হয়ে ওর রুমে ঢুকতেই চোখে পড়ল শহীদ আফ্রিদি আর সাইদ আজমলের বিশাল দুইটা পোস্টার, দেয়ালে ঝুলতেছে। একটা ধাক্কা লাগলো, বন্ধুরে জিগাইলাম,
---দোস্ত, এই পোস্টার এইখানে?
---কেন, সমস্যা কি?
---এরা তো পাকিস্তানের খেলোয়াড়।
---তো কি হইছে?
---তুই কি পাকিস্তান সাপোর্ট করছ?
---হ।
---কেন?
---আজিব তো, মুসলমান তো মুসলমানকেই সাপোর্ট করবে। কেন করি এইটা জিগানোর মানে কি?
---কিন্তু ৭১রে...
---আরে, রাখ তোর ৭১। তগোর মত কিছু আঁতেল পাবলিক আছে খেলার প্রসঙ্গ আসলেই রাজনীতি টাইনা আনে। আরে, ৭১রে কি হইছে না হইছে তুমি দেখছ? তুমি তখন ছিলা? পাকিস্তানী প্লেয়াররা ৭১রে ছিল? তারা কি কাউরে খুন করছে? হুদাই ফাল পারো ক্যা? তারা আমাদের মত মুসলমান, আমাদের ভাই। ভাই হইয়া ভাইরে সমর্থন দিব না?
---কিন্তু ওরা তো ৩০ লাখ মানুষরে...
--- আরে বুঝঝি, বুঝঝি। পাইছস তো খালি ওই এক ডায়ালগ, ৩০ লাখ মানুষ মরছে, ৩ লাখ মাইয়ারে রেপ করছে। ৩০ লাখ মানে বুঝস? ৩ এর পরে কয়টা শুন্য দিলে ৩০ লাখ হয় সেইটা জানস? এতো সহজ?
---তাইলে তুইই ক, একাত্তরে কি হইছিল...
---একাত্তরে ষড়যন্ত্র হইছিল, ষড়যন্ত্র। দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্ররে ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র। সেই ষড়যন্ত্র ঠেইকাতে পাকিস্তানী আর্মির দেশপ্রেমিক সেনারা আগায়া আসছিল। শুন, মুজিব যদি ইন্ডিয়ার লগে ষড়যন্ত্র কইরা পাকিস্তান না ভাঙতো, তাইলে আজকা মুসলমানেরা কত শক্তিশালী হইত একবার ভাইবা দেখ। তার বদলে আজকে আমরা ইন্ডিয়ার অঙ্গরাজ্য, সারাদিন ৩০ লাখ আর ৩ লাখের হিসাব নিয়া কান্নাকাটি করতেছি। বাহ বাহ...
ঠিক সেই মুহূর্তে ওর ছোট বোন ঘরে ঢুকলো। ঢুকেই কোন দিকে না তাকায়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে ভাইয়ের কাছে যেয়ে বলল, ভাইয়া, টাকা দে।
---কেন?
---লন কিনবো। কালকে মার্কেটে পাকিস্তানী লন দেখে আসছি, নতুন আসছে। আম্মুকে টাকা দিতেছে না। দে না ভাইয়া, প্লিজ...
হঠাৎ তার আমার উপর চোখ পড়ল। থতমত খেয়ে কিছুক্ষন তাকায়া থাকলো, তারপর চিনতে পারল। জিজ্ঞাসা করলাম, কেমন আছ জেসমিন?
--- এই তো ভাইয়া ভালো। আপনি কেমন আছেন?
---ভালো। আচ্ছা জেসমিন, তোমার বয়স তো এইবার ১৬ হইল, তাই না?
---(একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে) ইয়ে মানে, হ্যাঁ।
---ওদের বয়সও ছিল তোমার মতই। এই ১৫-১৬ হবে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে টাঙ্গাইল থেকে পাকিস্তানী সেনারা যখন পালায়ে গেল, তখন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটা ঘাঁটিতে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কিছু বাংকার দেখতে পায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা একটা বাংকারে নেমে মেয়েগুলোকে দেখতে পান। কারো গায়ে এক টুকরো কাপড় নেই, পাকিস্তানী পশুগুলোর কামড় আর আঁচড়ে ক্ষতবিক্ষত পুরো শরীর, নিথর পড়ে আছে। দ্রুত উপরে উঠে সেই মুক্তিযোদ্ধা চাদর আর শার্ট খুলে আনলেন বাকিদের গা থেকে, ঢেকে দিলেন মেয়েগুলোর শরীর। তাদের তুলে আনার সময় হঠাৎ তার চোখে পড়ল ঘরের কোনায় কি যেন স্তুপ হয়ে আছে। কাছে গিয়ে স্থির হয়ে গেলেন তিনি। চার-পাঁচটা মেয়ে, একটা স্তুপের মত, স্তনগুলো খুবলে তুলে নেওয়া হয়েছে, দু পায়ের ফাঁক দিয়ে রক্তের স্রোত এসে জমাট বেঁধে গেছে। এক পাশে আরেকজনের বুক পর্যন্ত টান দিয়ে ফেড়ে ফেলা হয়েছে, পাশে একটা বেয়নেট, জমাট রক্তে কালো হয়ে গেছে রঙটা।
---(বন্ধু হঠাৎ থামায়ে দিল) তুই এইসব কইত্তে জানলি?
--- মেয়েগুলোকে ট্রিটমেন্টের জন্য রেডক্রসের টিমের কাছে হ্যান্ডওভার করার সময় এক ব্রিটিশ সাংবাদিক জানতে চাইছিলেন, তখন ওই মুক্তিযোদ্ধা তাকে এই ঘটনাটা জানান। পরবর্তী সময়ে এই মানুষটা মানসিক ভারসাম্য হারায়ে ফেলেন, তিনি নাকি সবসময় সবখানে ওই পাঁচটা মেয়ের লাশ দেখতে পাইতেন।
জেসমিন আমার দিকে তাকায়া ছিল, বিস্ফোরিত দৃষ্টি। আমার তখন নিজের উপর কন্ট্রোল নাই...
--- যে পাকিস্তানী লন কিনতে তুমি আজকে কান্নাকাটি করতেছ, সেই পাকিস্তানের সেনারা বিনা অপরাধে তোমার মত এরকম অসংখ্য মেয়েকে ঢুকায়ে খোঁচাইতে খোঁচাইতে মেরে ফেলছে, দুই পা ধরে দুই দিকে টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেলছে। তাদের গায়ে তখন এক টুকরাও কাপড় ছিল না। তারপরও তুমি পাকিস্তানী লন পড়বা?
বন্ধু কি যেন বলতে চাইল, হাত তুইলা থামাইলাম। আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেছে তখন...
--- চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বধ্যভূমির জাস্ট একটা গর্ত থেকেই পাওয়া গেছিল ১১০০ মাথার খুলি, সেখানে এরকম গর্ত ছিল অসংখ্য। মুক্তিযুদ্ধের পর এক পাকিস্তানী টর্চার সেল থেকে পাওয়া গেছিল এক ড্রাম চোখ, বাঙ্গালীদের চোখ। এই মানুষগুলারে কারা মারছিল জানিস? পাকিস্তানী সেনারা মারছিল। কেন মারছিল জানিস? পাকিস্তান টিকাইয়া রাখার অজুহাতে, পাকিস্তানের জন্য। তুই যাদের মুসলমান ভাই বইলা বুকে টাইনা নিতেছিস, তারাও ওই পাকিস্তানের জন্যই খেলে, পাকিস্তানের জন্য গর্ব বোধ করে। তাই আমি পাকিস্তান সমর্থন করি না। কেননা পাকিস্তান সমর্থন করলে তোর বোনের মত মিষ্টি চেহারার ওই নিস্পাপ মেয়েগুলার সাথে বেইমানি করা হবে, পাহাড়তলি বধ্যভূমির মত এরকম হাজারো বধ্যভূমির অসংখ্য শহীদের সাথে বেইমানি করা হবে, তাদের তাজা রক্তের সাথে বেইমানি করা হবে। তুই বেইমান হইতে পারস, শুয়োরের পয়দা হইতে পারস, আমি না। বিদায়...
আজকে আধুনিক প্রজন্মের আপডেটেড পোলাপান খেলার সাথে রাজনীতি মিশাইতে মানা করে, আফ্রিদি আর আজমল তাদের মুসলমান ভাই। প্রজন্ম ভুলে যায় রাহেলা বেগমের কথা, ২৫শে মার্চের সেই বিভীষিকার রাতে পাকিস্তানী সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে খাটের নিচে লুকাইছিল, ১৫ দিনের দুধের বাচ্চাটারে প্রচণ্ড আতংকে নিজের অজান্তেই শক্ত করে চেপে ধরছিল বুকের মধ্যে, একটু পর দেখে কি, দম আটকে বাচ্চাটা মারা গেছে। রাহেলা পাগল হয়ে গেছিল, সবসময় একটা পুতুল কোলের ভেতর সাবধানে লুকায়ে রাখত, আপনমনে বিড়বিড় করত, খোকন সোনা চাঁদের কনা...
প্রজন্ম, কি ভয়ংকর আতংকিত হইলে একটা দুধের বাচ্চা এইভাবে মায়ের কোলে মারা যায়, চিন্তা করতে পারো? কত নিকৃষ্ট অমানুষ হইলে মায়ের কোল থেকে বাচ্চাকে টান দিয়ে নিয়ে দেয়ালে আছড়ে ফেলে মাকে ধর্ষণ করতে পারে ওরা, কল্পনা করতে পারো? কতটা নৃশংস বর্বর হইলে এক রাতের মধ্যে ৫০০০০ মানুষকে ইসলামের নামে মেরে ফেলা যায়, একবার ভাবো তো? এইগুলা রূপকথা না প্রজন্ম, এইগুলা তোমার জন্মইতিহাস। একটা শুয়োরও তার জন্ম ইতিহাস অস্বীকার করতে পারে না, তুমি কেমনে অস্বীকার করো? কেমনে পাকিস্তান সমর্থন করো? কেমনে?

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

যোগী বলেছেন:
যারা আজ যে কোন কারনে পাকিস্থানকে সমর্থন করে তারা তার মায়ের ধর্ষক কে সমর্থন করে। ... তসলিমা নাসরিন কথাটা ভালো বলেছেন।

২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৯

ঐন্দ্রিলা নিশাত বলেছেন: খেলা দেখতে যেতে পারে, তবে যারা বাংলাদেশের মানুষ হয়েও ভারত পাকিস্তানের পতাকা বহন করেছে তাদের জন্ম নির্ণয় ন জানি

৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭

শফিক আলম বলেছেন: চোখ ভিজে যায়। এইসব কাহিনী যতবার পড়ি ততবার চোখ ভিজে যায়। আমার দেশের মা-বোনের অসম্মান, ইজ্জতের চেয়েও প্রিয় অত্যাচারীরা, শুধু ওরা মুসলমান বলেই! লজ্জা হয়না, ধিক আসে না ওদের প্রতি, যারা মুসলমান হয়েও এই অত্যাচারগুলো করেছিল? ইতিহাসকেও বিশ্বাস করতে চায় না ওরা, কি ভয়াবহ মাইন্ড-সেট!!

৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: তারা পাকি বীর্জের সঙ্করায়ন জাত

৫| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৭

মুদ্‌দাকির বলেছেন: এই তর্ক এই দেশে চলতেই থাকবে। আরো কমপক্ষে ৫০ বছর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.