নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

যারা রাজনিতীর সাথে খেলা মেলান না অথচও ধর্ম মিলান তাদের জন্যে

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৯

পাকিস্তানীদের বীর্জে কোনও পাকি জারজ এ দেশে জন্মে নি। এ দেশে পাকি-জারজ জন্মেছে পাকিস্তানীদের মূত্র পান করে।আর ঐ সব পারজগুলো আজ ও পাকিস্তানীদের মূত্র পান করে যাতে জারজ দ্বারা ভরে যায় লাখো শহীদের রক্তে ধোয়া সোনার বাংলা। তারা ধর্ম শিখতে যায় মায়ের ধর্ষকদের কাছে। তাদের মুখোশ উন্মোচনে আপনি পাবেন কাফের কিংবা নাস্তিক সম্মোধন। তারা হাজার বার রাজাকার হতে চায় গর্বের সাথে। ধর্মকে তারা বানিয়েছে হাতী এবং প্রজন্মকে করছে অন্ধ।
হানাদার হঠানোর মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়ী। কিন্তু মুক্তির যুদ্ধ আজ ও শেষ হয় নাই। আজ ও বাংলার মানুষ মুক্তি চায়,বাংলার মানুষ ব্যাচতে চায়,বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়।আবার একটি যুদ্ধ করতে হবে। এ যুদ্ধ রাজাকারদের দোসরদের বিরুদ্ধে,এই যুদ্ধ প্রকৃত স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার।
আমাকে শুভেচ্ছা বার্তা-আতিকুল ইসলাম জুয়েল
যারা রাজনিতীর সাথে খেলা মেলান না অথচও ধর্ম মিলান তাদের জন্যে
"প্রতিটি মেয়ের মুখমণ্ডল বিষণ্ণ, বিমর্ষ ও বিষময় দেখেছি। মিলিটারী জীপে ও ট্রাকে যখন এভাবে যুবতী মেয়েদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আনা হতো তখন পুলিশ লাইনে হৈচৈ পড়ে যেত, পাঞ্জাবী বিহারী ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ জিভ চাটতে চাটতে ট্রাকের সম্মুখে এসে মেয়েদের টেনে হেচড়িয়ে নামিয়ে দিয়ে তৎক্ষণাৎ দেহের পোশাক পরিচ্ছদ কাপড় চোপড় খুলে তাদেরকে সম্পূর্ণ ভাবে উলঙ্গ করে আমাদের চোখের সামনেই মাটিতে ফেলে কুকুরের মত ধর্ষণ করত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও অঞ্চল থেকে ধরে এ সকল যুবতী মেয়েদের সারাদিন নির্বিচারে ধর্ষণ করার পর বৈকালে আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং এর উপর তাদেরকে উলঙ্গ করে চুলের সাথে লম্বা রডের সাথে বেঁধে রাখা হতো। রাতের বেলায় এসব নিরীহ বাঙ্গালী নারীদের উপর অবিরাম ধর্ষণ চালানো হতো। আমরা গভীর রাতে আমাদের কোয়ার্টারে বসে মেয়েদের আর্ত চিৎকার শুনে অকস্মাৎ সবাই ঘুম থেকে ছেলে মেয়ে সহ জেগে উঠতাম। সেই ভয়াল ও ভয়ঙ্কর চিৎকারে কান্নার রোল ভেসে আসত। “বাঁচাও, আমাদের বাঁচাও, তোমাদের পায়ে পড়ি, আমাদের বাঁচাও, পানি দাও, এক ফোটা পানি দাও, পানি পানি।”...সুবেদার খলিলুর রহমান, রাজারবাগ পুলিস লাইন।
.
বিস্তারিতঃ
.
"১৯৭১ সনের ২৯শে মার্চ সকাল দশটায় আমরা মিল ব্যারাক পুলিশ লাইনে উপস্থিত হয়ে আমাদের প্রিয় পুলিশ সুপার মিঃ ই, এ, চৌধুরী, পুলিশ কমান্ডেন্ট মিঃ হাবিবুর রহমান, ডি, এস, পি লোদী সাহেব, রেঞ্জ রিজার্ভ ইন্সপেক্টর মিঃ মতিউর রহমান সবাইকে উপস্থিত দেখলাম। মিঃ ই, এ, চৌধুরী সাহেব ক্ষুধার্ত, আহত, ক্ষতবিক্ষত সিপাহীদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন। লাইনে মুহূর্তে কান্নার রোল পড়ে গেল। তিনি লাইনের মধ্যে প্রবেশ করে প্রতিটি সিপাহীর আহত, ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখলেন, তার দু’চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু পড়ছিল। তিনি অবিলম্বে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। তিনি বললেন, তোমাদের কোন অসুবিধা নাই, তোমরা নীরবে তোমাদের কাজ করে যাও।” আমি তোমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখবো।
.
আমার সাথে আরও তিনজন সুবেদার, সুবেদার সফিকুর রহমানের সহকর্মীর সাথে আটজন হাবিলদার- মোঃ ফজলুল হক, আঃ ওয়াদুদ, আবদুল কুদ্দুস ও অন্যান্য বিশজন পুলিশ কনস্টেবল দিয়ে ঢাকা কোতোয়ালী থানার দায়িত্ব দেয়া হয়। আমরা থানায় প্রবেশ করে দেওয়ালে, মেঝেতে চাপ চাপ রক্ত দেখতে পেলাম, দেখলাম থানার দেওয়াল গুলির আঘাতে ঝাঁজরা হয় আছে, বুড়ীঙ্গার পাড়ে অসংখ্য মানুষের মৃতদেহ পেলাম, আমাদের পি, এর, এফ, এর কনস্টেবল আবু তাহেরের ( নং ৭৯৮) পোশাকপরা লাশ ভাসছে, আরও বহু সিপাহীর ক্ষত বিক্ষত লাশ দেখতে পেলাম। আমার চোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছিল, আমি দিশাহারা হয়ে কাঁদতে কাঁদতে আমার প্রিয় সিপাহী তাহেরের লাশ ধরতে গেলে পিছন থেকে এক পাঞ্জাবী সেনা গর্জ্জন করে কর্কশ ভাবে বলতে থাকে “শূওর কা বাচ্চা, তোমকো ভি পাকড়াতা হায়, কুত্তাকা বাচ্চা, তোম কো ভি সাত মে ‘গুলি করেগা” আমি আর্ম সাব ইন্সপেক্টর হওয়া সত্ত্বেও একজন সাধারণ পাক সেনা আমার সাথে কুকুরের মত ব্যবহার করলো। দুঃখে, অপমানে, লজ্জায়, আমি যেন অবশ হয়ে পড়লাম। প্রতিবাদ করতে চাইলাম সর্বশক্তি দিয়ে কিন্তু পারলাম না। প্রতিবাদ করার কোন উপায় ছিল না। তাই ওদের অসহ্য আপত্তিকর কার্যকলাপের প্রতিবাদ করি নাই, সবকিছু নীরবের সহ্য করেছি ওদের যথেচ্ছ কার্যকলাপের নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছি।
.
কোতোয়ালী থানার বরাবর সোজাসুজি গিয়ে বুড়ীগঙ্গার লঞ্চঘাটের পাড়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম বুড়ীগঙ্গার পাড়ে লাশ, বিকৃত, ক্ষত-বিক্ষত, অসংখ্য মানুষের লাশ ভাসছে পুলিসের পোশাক পড়া বীভৎস লাশ। দেখলাম বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ, বৃদ্ধা-যুবা, যুবক-যুবতী, বালক-বালিকা, কিশোর-শিশুর অসংখ্য লাশ। যতদূর আমার দৃষ্টি যায় দেখলাম বাদামতলী ঘাট থেকে শ্যামবাজার ঘাট পর্যন্ত নদীর পাড়ে অসংখ্য মানুষের বীভৎস পচা ও বিকৃত লাশ, অনেক যুবতীর লাশ দেখলাম, এই পূত-পবিত্র বীরাঙ্গনাদের ক্ষত-বিক্ষত যোনিপথ দেখে মনে হলো, পাঞ্জাবী সেনারা কুকুরের মত ওদের পবিত্র দেহের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদেরকে যথেচ্ছভাবে ধর্ষণ করে গুলিতে ঝাঁজরা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। অনেক শিশুর ও বালক-বালিকাদের থেতলে যাওয়া লাশ দেখলাম। ওদেরকে পা ধরে মাটিতে আছড়িয়ে মারা হয়েছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অশ্রুভরা চোখে আমি লাশ দেখলাম- লাশ আর লাশ-অসংখ্য নিরীহ বাঙ্গালীর লাশ- প্রতিটি লাশে বেয়নেট ও বেটনের আঘাত দেখলাম, দেখলাম কারও কারও মাথা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আছে, পাকস্থলি সমেত হৃৎপিণ্ড বের করা হয়েছে, পায়ের গিট হাতের কব্জা ভাঙ্গা, ঝুলছে পানিতে। সদরঘাট টার্মিনালের শেডের মধ্যে প্রবেশ করে শুধু রক্ত আর রক্ত দেখলাম- দেখলাম মানুষের তাজা রক্ত এই বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে। এই টার্মিনাল শেড ছিল ২৫শে মার্চের কালো রাত্রিতে ওদের জল্লাদখানা। ওরা বহু মানুষকে ধরে এনে ঐ টার্মিনালে জবাই করে বেটন ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে টেনে হিঁচড়ে পানিতে ফেলে দিয়েছে। অসংখ্য মানুষকে এভাবে নদীতে ফেলে দেওয়ার পরিষ্কার ছাপ দেখতে পেলাম সেই রক্তের স্রোতের মধ্যে। শেডের বাইরের প্রাঙ্গণে দেখলাম অসংখ্য কাক ও শকুন মানুষের সেই রক্তের লোভে ভীর করেছে। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বের হয়ে পূর্বদিকে পাক সেনাদের সদর আউট পোস্টের দিকে দেখলাম নদীর পাড়ের সমস্ত বাড়িঘর ভস্ম হয়ে ওদের নৃশংসতা ও বীভৎসতার সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখালাম রাস্তার পার্শ্বে মিউনিসিপালিটির কয়েকটি ময়লা পরিষ্কার করার ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে, সুইপাররা হাত পা টেনে হেঁচড়ে ট্রাকে লাশ উঠাচ্ছে, প্রতিটি ঘর থেকে আমাদের চোখের সামনে বহু নারী-পুরুষ, বালক-বালিকা, কিশোর-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধার লাশ সুইপাররা টেনে ট্রাকে উঠাচ্ছিল। পাঞ্জাবী সেনারা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে কুকুরের মত নির্মমভাবে প্রহরা দিচ্ছিল। ভয়ে সন্ত্রাসে আমি আর এগুতে পারলাম না। পুর্বদিকে রাস্তা দিয়ে আমি সদরঘাটের কাপড়ের বাজারের নীরব নিথর রাস্তা ধরে সদরঘাট বেপটিস্ট মিশনের চৌরাস্তার সম্মুখে দিয়ে নওয়াবপুরের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। আমাদের কারো শরীরে পুলিশের পোশাক ছিল না- আমি এবং আমার সাথে আরও দু’জন সিপাহী সাধারণ পোশাক পড়ে দায়িত্ব পালন করছিলাম।
.
কাপড়ের বাজারের চারদিকে রূপমহল সিনেমা হলের সম্মুখে সর্বত্র বিভিন্ন বয়সের অসংখ্য মানুষের ইতস্ততঃ ছড়ানো বীভৎস লাশ দেখলাম, বহু যুবতী মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত লাশ দেখলাম।
.
খৃষ্টান মিশনারী অফিসের সম্মুখে, সদরঘাট বাস স্টপেজের চারদিকে, কলেজিয়েট হাইস্কুল জগন্নাথ কলেজ, পগোজ হাইস্কুল, ঢাকা জজকোর্ট, পুরাতন স্টেট ব্যাংক বিল্ডিং, সদরঘাট গির্জা, নওয়াবপুর রোডের সর্বত্র, ক্যাথলিক মিশনের বাইরে এবং ভিতরে আদালত প্রাঙ্গণে বহু মানুষের মৃতদেহ দেখলাম। রাস্তায় রাস্তায় দেখলাম পুলিশের পোশাক পড়া বহু মৃতদেহ, রায় সাহেব বাজার ব্রিজ পার হয়ে নওয়াবপুর রোডে পা দিয়েই দেখলাম বিহারীদের উল্লাস ও উন্মত্ত লাফালাফি, ওরা পশুর মত অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে অসংখ্য বাঙ্গালীর লাশ পাড়িয়ে জয়ধ্বনি করে মিছিল করে নওয়াবপুরের রাস্তায় বের হয়ে পড়ছিল। পাঞ্জাবী সেনা কর্তৃক নির্বিচারে বাঙ্গালী হত্যার খুশীতে দেখলাম বিহারীরা রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা নিরীহ বাঙ্গালীদের লাশের উপর লাথি মারছে, কেউ প্রস্রাব করে দিচ্ছে, হাসতে হাসতে, রাস্তায় রাস্তায় বিহারী এলাকায় দেখলাম সরু বাঁশের মাথায় বাঙ্গালী বালক ও শিশুর লাশ বিদ্ধ করে খাড়া করে রাখা হয়েছে। দেখলাম উন্মত্ত বিহারী জনতা রাস্তায় পড়ে থাকা লাশ গুলিকে দা দিয়ে কুপিয়ে কুচি কুচি করে কেটে আনন্দ করছে, উশৃঙ্খল বিহারী ছেলেরা রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে উল্লাস করছে, রাস্তার দুই পার্শ্বে সর্বত্র আগুন আর আগুন দেখলাম। বিহারী জনতা রাস্তার পার্শ্বের প্রতিটি বাড়িতে প্রবেশ করে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল, জ্বলছিল বাঙ্গালীদের ঘর-বাড়ী ,আসবাবপত্র পণ্যদ্রব্য, পোশাক পরিচ্ছদ মুল্যবান জিনিসপত্র। ঠাটারী বাজারের ট্রাফিক ক্রসিংয়ে এসে দেখলাম একটি যুবক ছেলের বীভৎস লাশের উপর পেট চিড়ে বাঁশের লাঠি খাড়া করে লাঠির মাথায় স্বাধীন বাংলার একটি মলিন পতাকা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। লাশের উপর জয় বাংলার পতাকা ঝুলিয়ে রেখে বিহারী জনতা চারদিকে দাঁড়িয়ে থেকে হাসছে, উল্লাস করছে। দেখলাম লাশের গুহ্যদ্বার দিয়ে লাঠি ঢুকিয়ে আনন্দ প্রকাশ করছে। বিজয় নগরের রাস্তা ধরে আমি শান্তিবাগে আমার কোয়ার্টারের আসছিলাম- দেখলাম তখনও রাস্তার চারিপার্শ্বের ঘরবাড়ি জ্বলছে।
.
আমি কোতোয়ালী থানার দায়িত্ব পালন করতাম, ৩০ শে মার্চ কোতোয়ালী থানার মধ্যে আমরা কামরায় কামরায় প্রবেশ করে দেওয়ালের সর্বত্র চাপ চাপ রক্ত দেখলাম, দেখলাম থানার পায়খানা, প্রশ্রাবখানা ও অন্যান্য দেওয়াল গুলির আঘাতে ঝাঁজরা হয়ে গেছে।
.
১৯৭১ সনের মার্চ মাসের পর কোতোয়ালী থানার কোন বাঙ্গালী পুলিশকে বাহিরে টহলে পাঠানো হতো না, থানায় বসিয়ে রাখা হত। এক পাঞ্জাবী মেজর আমাদেরকে তদারক করে যেতেন মাঝে মাঝে এসে।
.
৫ই এপ্রিল আমাদের সবাইকে কোতোয়ালী থানা থেকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আনা হয়। পুলিশ লাইনে এসে আমাদের ব্যারাক কেন্টিন, আসবাবপত্র, পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুর ভস্ম ছাই দেখলাম। তিন নম্বর ব্যারাকে প্রবেশ করে আমার দু’জন প্রিয় সিপাহীর অগ্নিদগ্ধ লাশ দেখলাম-লাশের পায়ে শুধুমাত্র বুট ছিল, তাদের পোশাক পরিচ্ছদ সারা দেহ জ্বলে শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমার প্রিয় সিপাহী জাহাঙ্গীর ও আবদুস সালামের বীভৎস লাশ দেখে আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম। লাশের দিকে মাথা নত করে আমার দু’জন বীর সিপাহীকে সালাম জানালাম, অশ্রুসিক্ত নয়নে। পুলিশ লাইনের উত্তর পূর্বদিকের পুকুরের উত্তর পাড়ে শহীদ সিপাহীদের যথার্থ মর্যাদার সাথে সমাহিত করলাম।
.
পুলিশ লাইন থেকে পাঞ্জাবীরা চলে গেলেও রাজারবাগ পুলিশ লাইনে চরম ভয় ভীতি, সন্ত্রাস ও হতাশা বিরাজ করছিল। আমরা সব সময় মৃত্যু ভয়ে ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত থাকতাম। ঢাকা ডিস্ট্রিক্ট বিশেষ পুলিশ ফোর্সের রিজার্ভ ইন্সপেক্টর ছিলেন এ সময় বোস্তান খাঁ নামে এক চরম বাঙ্গালী বিদ্বেষী পাঠান ভদ্রলোক। এ ভদ্রলোক পুলিশ লাইনের দায়িত্বভার গ্রহন করেই চরম সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তিনি ৬ই এপ্রিল লাইনে বসেই বাঙ্গালী পুলিশের সাথে কুকুরের মত যথেচ্ছ ব্যবহার আরম্ভ করে দেন। লাইনে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যবান, শক্তি সমর্থ কনস্টেবলদের ধরে, হাড়ের গিরায় গিরায় বেদম ভাবে পিটুনি দেন। খুঁজে খুঁজে তার পছন্দ ও ইচ্ছামত যাকে ইচ্ছা তাকেই ধরে মুক্তিবাহিনী বলে ঢাকা সেনানিবাসে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা আর কোনদিন ফিরে আসেনাই। সাথে সাথে ঢাকা সেনানিবাস থেকে মিলিটারী ট্রাকে করে পাঞ্জাবী সেনারা হঠাৎ পুলিশ লাইনে উপস্থিত হয়ে বাঙ্গালী পুলিশদের তদারক আরম্ভ করে দিত। পাইকারীভাবে নাম ও নাম্বার জিজ্ঞাসা করতে করতে অকস্মাৎ অনেককে “তোম শালা মুক্তি বাহিনী হায়, চলো” বলে গরুর মত বুটের লাথি মারতে মারতে ট্রাকে উঠিয়ে নিয়ে যেত। আমি তখন পি, আর, এফ-এর ফোর্স সুবেদার ছিলাম। মিলিটারী ট্রাক লাইনে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমি যে কোন অজুহাতে লাইনের বাইরে চলে যেতাম। পাঞ্জাবী সেনারা লাইনে প্রবেশ করলে লাইনের সর্বত্র যেন সবার মুখে মৃত্যুর কালো ছায়া নেমে আসতো। বাঙ্গালী পুলিশ যার যার মত ব্যারাকে প্রবেশ করে ওদের দৃষ্টির আড়ালে থাকার চেষ্টা করত। কারণ ওদের দৃষ্টিতে পড়ে গেলেই ওরা যে কোন অজুহাতে বাঙ্গালী পুলিশদের বিপন্ন করতো, বিপদগ্রস্ত করে তুলতো।
.
১৯৭১ সনের মে মাসে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পশ্চিম পাকিস্তানী পাঞ্জাবী পুলিশ এসে গেলে রিজ্জার্ভ ইন্সপেক্টর কুকুরের মত অট্টহাসীতে ফেটে পড়ে বলতে থাকে “যাও শালা লোক শোয়ার কা বাচ্চা হামারা ব্যারাক ছোড়ো, হামারা আদমী আগিয়া, শালা লোগ, ভাগো”। একথা বলার সাথে সাথে বিহারী, পাঞ্জাবী, পাঠান পুলিশ ও পশ্চিম পাকিস্তানী পোশাক পরিচ্ছদ, আসবাবপত্র সবকিছু ব্যারাকের বাইরে ফেলে দিয়ে আমাদের ঘাড়ে ধরে বের করে দেয়। আমরা বাঙ্গালী পুলিশরা অসহায় এতিমের মত আমাদের পোশাক পরিচ্ছদ কুড়িয়ে নিয়ে লাইনের আস্তাবলে বারান্দায় গাছের নিচে উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে আশ্রয় গ্রহণ করি। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে যোগদান করার পর আমরা দেখেছি পাঞ্জাবী সেনারা মিলিটারী ট্রাকে ও জীপে করে প্রতিদিন স্কুলে, কলেজে, ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বালিকা, যুবতী মেয়ে ও সুন্দরী রমণীদের ধরে আনতে থাকে। অধিকাংশ বালিকা, যুবতী মেয়ের হাতে বই ও খাতা দেখেছি। প্রতিটি মেয়ের মুখমণ্ডল বিষণ্ণ, বিমর্ষ ও বিষময় দেখেছি। মিলিটারী জীপে ও ট্রাকে যখন এভাবে যুবতী মেয়েদের রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আনা হতো তখন পুলিশ লাইনে হৈচৈ পড়ে যেত, পাঞ্জাবী বিহারী ও পশ্চিম পাকিস্তানী পুলিশ জিভ চাটতে চাটতে ট্রাকের সম্মুখে এসে মেয়েদের টেনে হেচড়িয়ে নামিয়ে দিয়ে তৎক্ষণাৎ দেহের পোশাক পরিচ্ছদ কাপড় চোপড় খুলে তাদেরকে সম্পূর্ণ ভাবে উলঙ্গ করে আমাদের চোখের সামনেই মাটিতে ফেলে কুকুরের মত ধর্ষণ করত। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ও অঞ্চল থেকে ধরে এ সকল যুবতী মেয়েদের সারাদিন নির্বিচারে ধর্ষণ করার পর বৈকালে আমাদের পুলিশ হেডকোয়ার্টার বিল্ডিং এর উপর তাদেরকে উলঙ্গ করে চুলের সাথে লম্বা রডের সাথে বেঁধে রাখা হতো। রাতের বেলায় এসব নিরীহ বাঙ্গালী নারীদের উপর অবিরাম ধর্ষণ চালানো হতো। আমরা গভীর রাতে আমাদের কোয়ার্টারে বসে মেয়েদের আর্ত চিৎকার শুনে অকস্মাৎ সবাই ঘুম থেকে ছেলে মেয়ে সহ জেগে উঠতাম। সেই ভয়াল ও ভয়ঙ্কর চিৎকারে কান্নার রোল ভেসে আসত। “বাঁচাও, আমাদের বাঁচাও, তোমাদের পায়ে পড়ি, আমাদের বাঁচাও, পানি দাও, এক ফোটা পানি দাও, পানি পানি।”
.
মিলিটারী ট্রাক ও ভ্যানে প্রতিদিন পাঞ্জাবী সেনারা রাজধানীর বিভিন্ন জনপদ, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে নিরীহ বাঙ্গালী যুবক ছেলেদের চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে হেডকোয়ার্টারে অফিসের কক্ষে কক্ষে জমায়েত করে অকথ্য অত্যাচার চালাতো। হেড কোয়ার্টারে অফিসের উপর তালায় আমাদের প্রবেশ করা একেবারে নিষিদ্ধ ছিল। দিনের বেলায় পুলিশ লাইনে প্যারেডের আওয়াজের জন্য উপরতলা থেকে নির্যাতিত বন্দীদের কোন আর্তনাদ আমরা শুনতে পেতাম না। সন্ধ্যার পর আমরা আমাদের নির্দিষ্ট কোয়ার্টার থেকে তাদের আর্তনাদ শুনতে পেতাম। সন্ধ্যার পর পাক সেনারা বিভিন্ন প্রকারের বন্দীদের উপর অত্যাচার চালিয়ে যেত। আর লোহার রডের উপর ঝুলন্ত বালিকা, যুবতী নারী ও রূপসী রমণীদের উপর চলতো অবিরাম ধর্ষণ, নির্মম অত্যাচার। বন্দীদের হাহাকারে আমরা অনেক সময় একবারে দিশাহারা হয়ে পড়তাম, অনেক সময় প্রতিবাদ করতে চাইতাম। কিন্তু ওদের শক্তির মোকাবেলায় আমাদের কিছুই করার ছিল না, আমরা কিছুই করি নাই, করতে পারি নাই। এভাবে প্রতিদিন ‘মুক্তি হায়’ বলে যে সব নিরীহ বাঙ্গালী ছেলেদের চোখ বেঁধে পুলিশ লাইনে এনে হেড কোয়ার্টার অফিসে জমায়েত করা হত রাতের শেষে পরের দিন সকালে আর এ সকল বন্দীদের দেখা যেত না এবং সে স্থানে নতুন বন্দীদের এনে রাখা হত।
.
স্বাক্ষর/-
খলিলুর রহমান
২-৬-১৯৭৪
.
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্রের ৮ম খণ্ডের পেজ ২২-২৫ থেকে কম্পাইল করেছেন

তারপরও যখন আপনারা পাকি পতাকা নিয়ে মাঠে যান,ম্যারী মি আফ্রিদী বলেন এই বিকলাঙ্গ হাবা গোবা বুদ্ধি প্রতিবন্ধি দেখলে আমার বড় করুনা হয়,আহরে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩

বিজন রয় বলেছেন: ধন্যবাদ শেয়ারিং এ জন্য।
++++

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৩

মুসাফির নামা বলেছেন: ওরা বক ধার্মিক। খেলা দিন শেষে খেলাই থাকুক। এই প্রত্যাশা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.