নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিতার অস্থি\'র সন্ধানে

০৭ ই মার্চ, ২০১৬ ভোর ৫:২৭

১৯৯৯ সালের ২৭ জুলাই ...
মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারের একটি মসজিদের পেছনে কনস্ট্রাকশনের খোঁড়াখুঁড়ির ফলে বেড়িয়ে পড়লো পুরনো একটি কুয়ার মুখ। সিমেন্টের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা। খোলা হল স্ল্যাবের মুখ। সেখান থেকে বেরিয়ে এল তিনটি মাথার খুলি,হাড়গোড়। ধীরে মাটি খনন কাজ চলতেই লাগলো, উঠে আসতে শত শত মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড়। অনেকেই আসতে লাগলেন তাঁদের আপনজনদের অস্থি ’র সন্ধানে। সুমীতা দেবীও এসেছিলেন সেদিন, এসেছিলেন অনলও।২৯ বছর পর খুব কাছ থেকে পিতার অস্তিত্বের সন্ধানে এসেছিলো অনল।আমি জহির রায়হানের ছেলে অনল রায়হানের কথা বলছিলাম . . .

এই ঘটনার ১৫ বছর আগের একটি ঘটনা বলি, আমির হোসেন নামের একজন সৈন্য যিনি বাহাত্তরের ৩০ শে জানুয়ারি মিরপুরে বিহারীদের নোংরা উল্লাসের একজন প্রত্যক্ষদর্শী।জহির রায়হান সম্পর্কে অনুসন্ধানকালে তিনি বলেছিলেন ,
-
“ আমাদের সাথে যে সাংবাদিক ছিলেন, তিনি কালো মতো একটা প্যান্ট পরেছিলেন। সাদা জামা এবং তার ওপর হলুদ রঙের সোয়েটার ছিল তার গায়ে। আমাদের উপর যখন হামলা হয়, তখন দেখলাম বুকে হাত চেপে ধরে-ওখানে একটা দেয়াল ছিল, তার গায়ে পড়ে গেলেন। দেখলাম, ওনার কাপড় রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তারপর আমি কিছুদূরে একটা গাছের পেছনে আশ্রয় নিয়ে দেখি কয়েকশো বিহারী ড্যাগার আর কিরিচ নিয়ে আল্লাহু আকবর স্লোগান দিতে দিতে এগিয়ে আসল। তারপর তারা মাটিতে পড়ে থাকা দেহগুলো কোপাতে কোপাতে টেনে পানির ট্যাংকের পশ্চিম দিকে টেনে নিয়ে গেল। তারপর আর আমি সেই লাশগুলোকে খুজে পাইনি ”
...... ধারণা করা হয় এই লোকটিই ছিলেন জহির রায়হান।
-
হ্যাঁ, সেদিনের পরে আসলেই তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি, কোত্থাও খুঁজে পাওয়া যায় নি। কিন্তু, তিনি নিখোঁজের ১৫-১৬ বছর পর সারা মুখে দাড়ি-গোঁফ ভর্তি ভিখিরি বেশের এক লোক তাঁর বাড়ির কাজের লোকের কাছে গিয়ে বলেন-“ তিনি ফিরে এসেছে, আজকেই কোন এক সময়ে তিনি ফিরে আসবে...” কিন্তু দিন গড়িয়ে রাত নামলেও, মাস পেরিয়ে বছর আসলেও জহির রায়হান আর ফিরে আসে নি . . .
-
১৫ বছর এভাবেই কেটে গেলো তিনি ফিরলেন না। সুমীতা আর অনল ধরেই নিলেন তিনি আর ফিরবেন না। কিন্তু . . . কিন্তু, আবারো শোনা গেল ২৮-২৯ বছর আগের নিখোঁজ অনেকের সন্ধান মিলেছে, কিছু হারিয়ে যাওয়া মানুষের অস্থি’র সন্ধান মিলেছে। আপনজনের অস্থি’র সন্ধানে সেদিন অনেকেই ছুটে গিয়েছিলো মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের মুসলিম বাজারের সেই পুরনো কুয়োর কাছে। যেখান থেকে উদ্ধার করা হচ্ছিলো শত মানুষের মাথার খুলি, হাড়গোড়। হয়তো সেই মানুষটিকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না কিন্তু এরপরেও তো সে তাঁর বাবার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারবে ! এই আশায় অনল ছুটে গিয়েছিলেন সেখানে। সেই সাদা শার্ট, হলুদ রঙের সোয়েটার দেখে সনাক্ত করেছিলেন তাঁর বাবার অস্থি কে। ২৭ বছর পরে সে ফিরে পেয়েছিলো বাবার অস্থিকে । কিন্তু নিয়তির কি অদ্ভুত খেলা দেখুন, এতো বছর পরেও বাবাকে ফিরে পেয়েও অনল চিৎকার করে “বাবা” বলে ডাকতে পারছে না , বাবাকে জড়িয়ে ধরতে পারছে না । শুধু কিছু ক্ষয়ে যাওয়া হাড়গোড় আর পোশাক দেখেই সে বুক ভরা কষ্টে,যন্ত্রণায়বাবাকে অনুভব করতে পারছে !!

৯৯’ এর ২৭ শে জুলাই মুসলিম বাজার বধ্যভূমিতে ছুটে এসেছিলেন জাহানারা খান লোদী; জিয়াউল হোক লোদীর মেয়ে। বাহাত্তরের ৩০ শে জানুয়ারি, যেদিন জহির রায়হান নিখোঁজ হন, সেদিন মিরপুরের এডিশনাল এসপি জিয়াউল হক লোদীও ছিলেন তাঁর সাথে। তাঁদের কাউকেই সেদিনের পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। জাহানারা শুনেছিলেন তাঁর পিতাকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিলো পাকি হায়নারা।হতবাক হয়ে তাকিয়ে ছিলেন মাথার মাঝ বরাবরে ছিদ্র থাকা ২৯ বছরের পুরনো একটি দিকে। তাহলে এই কি তাঁর পিতা?
-
একবার এক সাক্ষাৎকারে জিয়াউল হকের কন্যা জাহানারা খান বলেছিলেন :-
“আমরা যে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার তা আমরাই বিস্মৃত হয়েছি। কেউ আমাদের কথা জানে না। জিয়াউল হক লোদী নামের একজন যে মিরপুরে শহীদ হয়েছিলেন সে কথা যেন শুধু আমরাই জানি। টিভিতে শহীদ পরিবার নিয়ে যখন কোন অনুষ্ঠান দেখায়, তখন আমরা টিভি বন্ধ করে দিই”... তাঁর এই ভাষ্যে সেদিন লজ্জিত হয়েছিলেন প্রতিবেদক। লজ্জাটা আমাদের সবার নয় কি?

হয়তো সেদিন এরকম কয়েকশো জন কিংবা কয়েক সহস্রজন ২৯ বছরের পুরনো করোটিগুলো থেকে খুঁজে বের করতে চেয়েছিলো তাঁদের কাছের মানুষের করোটিকে।তাতে হাত রেখে বলতে চেয়েছিলো এই আমার পিতা, এইতো আমার ভাই, এইযে আমার বোন, এইতো আমার মা...
তাঁরা পারেনি!
তথ্যসূত্রঃ অনল রায়হানের "পিতার অস্থি'র সন্ধানে" লেখাটি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৩২

বিজন রয় বলেছেন: অসম্ভব ভাল লাগল। এগুলোই তো আমদের প্রকৃত ইতিহাস।
++++

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: অনেক শহীদের নাম আমরা জানিনা।

তাই আত্মগ্লানি অনুভব করি।

ইতিহাস আমাদের পথ দেখাক।

ভাল থাকুন। সবসময়।

৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৯

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.