নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ শিরোনামের কবিতার লাইন আজ বড়ো বেশি মনে পড়ছে- “আজো আমি বাতাসে লাশের গন্ধ পাই/আজো আমি মাটিতে মৃত্যুর নগ্ন নৃত্য দেখি/ধর্ষিতার কাতর চিৎকার শুনি আজো আমি তন্দ্রার ভেতরে।”
হ্যাঁ, আমি আজো বাতাসে তনুদের লাশের গন্ধ পাই। আজো আমি বাংলার আনাচে-কানাচে, পথে-প্রান্তরে ধর্ষকদের, খুনিদের দৌরাত্মে মৃত্যুর নগ্ন নৃত্য দেখি। দেখতে দেখতে চোখ দুটো জ্বলে ওঠে। হৃদয়টা ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। কান শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেন আর কোনো ধর্ষিতার করুণ চিৎকার শুনতে চায় না। শুনতে চায় না সন্তান হারা কোনো মা-বাবার বুকের গর্জে ওঠা হাহাকার।
সাত সকালে টিভি খুলে যখন কোনো ধর্ষণ, খুন-রাহাজানি, শিশু নির্যাতনের চিত্র দেখি তখন শুভ সকালটাকেও আর শুভ বলে মনে হয় না। সারাটা দিন ভালো যায় না। একটা অসন্তোষ ভেতরে-ভেতরে দানা বেঁধে ওঠে।
বর্তমানে শিশু ও নারী ধর্ষণ ও হত্যা বেড়ে গেছে এর কারণ, অপরাধীরা জানে ধর্ষণ বা হত্যা করলে আদালতে যেতে হবে না, বিচার হবে না, সাজাও হবে না। যদি বিচার হতো, সাজা হতো ও দোষীদের আদালতে যেতে হতো, তাহলে এসব হতো না।
বিচার হয় না বলেই এখনো চলন্ত বাসে গণধর্ষণ হচ্ছে। শিশু নির্যাতন ও হত্যা হচ্ছে।মিডিয়াতেও সব খবর আসে না। যা দুএকটি আসে তাও দুএকদিন চাঙ্গা থাকে। তারপরে আর সেগুলোর কেউ খবর নেন না। সাংবাদিকরাও নতুন খবর সংগ্রহের চাপে ভুলে যায় পুরোনো চাঞ্চল্যকর ঘটনাগুলো। সেই সাথে দেশের মানুষও ভুলে যায় পুরোনোকে। সামান্য দুএকটির বিচার হয়, অনেক কিছুরই বিচার হয় না।
দু’একজন উর্ধ্বতন ব্যক্তিদের বলতে শোনা যায়- এসব কোনো ব্যাপার নয়, এসব মামুলি ব্যাপার মাত্র, এসব সাধারণ ঘটনা মাত্র। এসব বক্তব্য মোটেই সমাজের জন্য ইতিবাচক নয়। বড়ো বড়ো অপরাধ সংঘটিত হবার পেছনে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এ ধরনের বক্তব্যও কম দায়ী নয়। এধরনের বক্তব্য অপরাধীদের মনে উৎসাহ সৃষ্টি করে।
সাম্প্রতিক দেশবাসিকে অবাক করেছে সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকান্ড।
ওল্ড ইজ গোল্ড কথাটি মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় পুরোনো দিনের একটি গানের কথা। প্রতিদিন কতো খবর আসে কাগজের পাতা খরে, জীবনপাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে। গানের এই কথাটি বারবার আমার মনের জানালায় উঁকি দিয়ে যায়। কয়টা খবর আমরা জানতে পারি? অসংখ্য মিডিয়ার কারণে দু’একটি খবর যা-ও সামনে আসে তা কয়েকদিন পরেই আবার অন্য কোনো হৃদয়বিদারক খবরের আড়ালে পড়ে যায়।
হাজার হাতের ছোঁয়ায় জ্বলে ওঠা হাজার মোমবাতি কি আমাদের সামনে নিভে যাবে? আমরা যেন বলতে পারি এই আলো কখনো নিভে যেতে পারে না। গাছের গোড়া কেটে দেওয়া লাউয়ের ডগার মতো দুপুরের তাপ বাড়বার আগেই আমরা যেন নেতিয়ে না পড়ি। আমরা যদি আমাদের মোমবাতির আলো জ্বালিয়ে না রাখি তবে তনুদের আত্মায় শান্তি পাবে না। ওরা আলোয় আসতে পারবে না, প্রতিদিন আমাদের ঘর হতে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরবে না। ওরা রাজপথের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে, অফিসের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে রওয়ানা দিয়ে চলে যাবে জঙ্গলে, নর্দমায়, নদীতে অথবা ম্যানহোলে কিংবা অন্ধকার কোনো জগতে।
তনু হত্যা হবার পরপরই সারাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে। আমরা বিক্ষোভ করছি, সমাবেশ করছি। মিডিয়াতে রাতদিন সংবাদের শিরোনামে তনুর নাম দেখছি। কিন্তু ফুলের মতো মেয়ে, অনেক সম্ভাবনাময় তনুর খুনিদের আমরা আজো দেখতে পারিনি। আমরা অনেক কিছুই দেখি, কিন্তু দেখা উচিত এমন অনেক কিছুই আমাদের দেখা হয়ে ওঠে না।
সারাদেশ অনেক গরম হয়ে উঠেছে। চারদিক থেকে অনেক হাত এক হয়েছে। এই সব দেখে তনুর বাবা-মা ও বুকে একটু আশ্বাস পেয়েছে যে তাদের মেয়ের হত্যাকারীদের সুষ্ঠু বিচার হবে। কিন্তু এখনো হচ্ছে না। কোন জনমে যে আর হবে তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। আমাদের এই দেশে অনেক কিছুই দৃশ্যমান হয় না। কারণ এই দেশে মাঝে মাঝে মঙ্গলগ্রহ থেকে এ্যালিয়েনরা আসে। এই এ্যালিয়েনরাই যত নাটের গুরু। পুলিশ, আর্মি, র্যাব কোথায় এদের খুঁজে পাবে? বিজ্ঞানীরাই তো এ্যালিয়েনদের খুঁজে পায় না। এরা দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ দৃষ্টির বাইরেই থাকবে।যেমন চিত্রনায়ক সালমান শাহ’র খুনের রহস্য আমরা আজো জানলাম না।কয়টা উদাহরণ দিবো? এই দেশে অনেক চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের রহস্য আজো উদঘাটিত হয়নি। কিছুদিন পত্রপত্রিকা-টিভি সাগরের অশান্ত তুফানের মতো গর্জন করতে থাকে। সাংবাদিকরা দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ্যালিয়েন বলে তো কথা! ওদের সাথে কি আর দৌড়ে পারা যায়? নিরাপত্তা বাহিনীরা ওদের ধরতেও পারে না আর সাংবাদিক ভাইয়েরা খুনি এ্যালিয়েনদের ছবিও তুলতে পারে না। তাই আমরা সাধারণ দেশবাসি বরাবরই বঞ্চিত হই এ্যালিয়েনদের সুদর্শন চেহারার দর্শন হতে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো আমরা কি এভাবেই হেরে যাবো? নাকি বিজ্ঞানের আরো অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে এ্যালিয়েনদের দৃশ্যায়নে সচেষ্ট হবো? নাকি প্রতিদিন, প্রতিমাসে, প্রতিবছরে আমরা তনুদেরকে হারাবো?
তনুর প্রসঙ্গে যদি বলি- যতোবার চোখ পড়ে তনুর ছবির উপরে ততোবারই হৃদয়টা হাউমাউ করে ওঠে।বাগানের নিষ্পাপ ফুলের মতোই যেন একটি প্রাণবন্ত ফুল। লক্ষ, লক্ষ কলেজপড়ি মেয়েদের মতোই ও যেন এক অশেষ সম্ভাবনাময় মেয়ে সে মুখ ভার করে বসে থাকে। আমাদেরকে ও বলে যায়- আপনারা আমাকে বোঝেন তাই আপনাদের সাথে আমার কথা বলতে ভালো লাগে। মিডিয়ার মানুষ, দেশের সাধারণ মানুষ, প্রশাসনের মানুষ আমার কষ্ট বোঝে না। আইনের মানুষগুলো তো বোঝেই না। ওনারা তো সাধারণ মানুষ থেকে আরো অন্ধ, পঙ্গু।
সকল মা-বাবার কোমলমতী সন্তানের একমুঠো নিরাপত্তার জন্য এই তনু হত্যার বিচারের তাৎপর্য সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ স্বরূপ আমরা বলতে পারি- যদি এই হত্যাকান্ডের দুদিনের মধ্যে হত্যাকারীদের ধরা হতো তবে ০১/৪/২০১৬ইং তারিখ সকালে টাঙ্গাইলে বাসে এক তরুণীকে গণধর্ষণের শিকার হতে হতো না, লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার তোরাবগঞ্জ ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডে দুই বোনকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে ২৯/৩/২০১৬ইং তারিখ রাতে ধর্ষকরা সর্বনাশ করতে পারতো না। ধর্ষকরা, খুনিরা আজ দেখছে, দেখে দেখে বুঝে গিয়েছে যে কোনো না কোনোভাবে পার পাওয়া যায়, পার পাওয়ার উপায় আছে। তাই তারা বুকে সাহস নিয়ে চারদিকে বেপরোয়াভাবে এসব কুকর্ম করে বেড়াচ্ছে। অপরাধ করে পার পাওয়া দেখে মানুষ অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তাই আমরা যদি এর কোনো সুরাহা করতে না পারি তবে অপরাধ প্রবণতা যে দিনদিন বাড়তেই থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কবিতার ভাষায় বলতে চাই-
"আমাদের কাছে প্রতিটি তনু সারা জাহানের স্বর্গীয় ফুল
ওদের প্রাণ অকালে অত্যাচারে, নির্যাতনে ঝরে যেতে পারে না
অবহেলা করো না, ভুলে যেও না বিচারের দাবি কেউ
একজন খুনিকে বাঁচালে এখন ভবিষ্যতে পস্তাতে হবে সবাইকে।"
#Justice for tonu
০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:২০
সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: ছাইচাপা আগুন কখনও নিভে যায় না
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৬
বিজন রয় বলেছেন: আলো নিভে গিয়েছে।