নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সময়ের বিস্মৃতির আড়ালে আমাদের ভুলে যাওয়া,থাক না আমি তো ভাল আছি

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:১৭

বহির্বিশ্বের চাপ, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, ব্যবসায় রীতিমতো ধস, বাইরের দেশগুলোর হঠাৎ বিরুদ্ধে চলে যাওয়া, প্রতিদিন গণহারে সৈনিকদের মৃত্যু সংবাদ, মুক্তিবাহিনীর বীরোচিত যুদ্ধ সব মিলিয়ে জেনারেল ইয়াহিয়া বুঝতে পেরেছিলেন ক্রান্তিকাল উপস্থিত। খুব বেশিদিন টিকে থাকা অসম্ভবপর। খুনের নেশায় উন্মত্ত ইয়াহিয়া ২৫শে মার্চ গোপণে “অপারেশন সার্চলাইট” এর নির্দেশ দেয়ার সাথে সাথেই বুদ্ধিজীবী হত্যারও নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। আর তার নির্দেশ অনুযায়ী বিগত ন’মাস ধরে বিচ্ছিন্ন অথচ নিয়মিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যা করা হচ্ছিলো। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ভারতীয় মিত্রবাহিনী যোগ দেয় মুক্তিবাহিনীর সাথে। ইসলামাবাদের শাসক ইয়াহিয়া বুঝে যায় যে সময় হয়ে গেছে।

তাই ডিসেম্বরের ১০ তারিখ থেকে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী নীল নকশা আঁকেন যার ফল ছিলো ১৪ই ডিসেম্বর। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানী বাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে এনে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। তারা কখনোই চায়নি বাঙ্গালিরা মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আর তাই তারা চলে যাওয়ার পর যাতে বাঙ্গালিরা কখনোই সোজা হয়ে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য শেষ করে দেয় বুদ্ধিজীবীদের। সেদিন প্রায় ২০০ জনের মত বুদ্ধিজীবীদের তাদের বাসা হতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের চোখে কাপড় বেঁধে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, রাজারবাগসহ অন্যান্য আরো অনেক স্থানে অবস্থিত নির্যাতন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের উপর বিভৎস নির্যাতন চালানো হয়। পরে তাদের নৃশংসভাবে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে হত্যা করে ফেলে রাখা হয়।

শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে এ সম্পর্কে বলা হয়, এটা অবধারিত হয়,

“বুদ্ধিজীবীরাই জাগিয়ে রাখেন জাতির বিবেক, জাগিয়ে রাখেন তাদের রচনাবলির মাধ্যমে, সাংবাদিকদের কলমের মাধ্যমে, গানের সুরে, শিক্ষালয়ে পাঠদানে, চিকিৎসা, প্রকৌশল, রাজনীতি ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণের সান্নিধ্যে এসে। একটি জাতিকে নিবীর্য করে দেবার প্রথম উপায় বুদ্ধিজীবী শূন্য করে দেয়া। ২৫ মার্চ রাতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল অতর্কিতে, তারপর ধীরে ধীরে, শেষে পরাজয় অনিবার্য জেনে ডিসেম্বর ১০ তারিখ হতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে দ্রুতগতিতে।”

মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীকে এই বুদ্ধিজীবী হত্যার লিস্ট করতে এবং তা হত্যা বাস্তবয়নে সাহায্য করে জামায়াতে ইসলামী কর্তৃক গঠিত কুখ্যাত আল বদর বাহিনী। বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রধান ঘাতক ছিলেন বদর বাহিনীর চৌধুরী মঈনুদ্দীন (অপারেশন ইন-চার্জ) ও আশরাফুজ্জামান খান (প্রধান জল্লাদ)। ডঃ গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ডঃ মুনীর চৌধুরী, জহির রায়হান, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে প্রথম দাবী তুলেন সংসদে), ডঃ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ডঃ আনোয়ার পাশা, ফজলুর রহমান খান, ডাঃ মোঃ ফজলে রাব্বি, শহীদুল্লাহ কায়সার, সেলিনা পারভীন, মেহেরুন্নেসা, ডঃ আবুল কালাম আজাদসহ আরো কতজন! বাংলাপিডিয়া হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষাবিদ ৯৯১ জন, সাংবাদিক ১৩, চিকিৎসক ৪৯, আইনজীবী ৪২, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী এবং প্রকৌশলী মিলে প্রায় ১৬ জনকে হত্যা করা হয়।

সেদিনের সেই হত্যাকান্ড শুধু একটি গণহত্যাই ছিলো না। সেরেফ একটি জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়া। নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দূর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়াই ছিলো তাদের উদ্দেশ্য। সেই ধাক্কা বাংলাদেশ আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। যার কারণে, আজ স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে তর্ক হয়, দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি মেজর জিয়া, যুদ্ধাপরাধীরা নির্দ্বিধায় গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে শহর দাপিয়ে বেড়ায়, তারাই আজ জননেতা। পৃথিবীর আর কোন দেশের জন্ম ইতিহাস নিয়ে এমন বিভ্রান্তি নেই। জাতি আজ দ্বিধায়, ইতিহাস প্রশ্নবিদ্ধ। আজ প্রজন্ম পাশ্চাত্য সংস্কৃতি নিয়েই ব্যস্ত। অথচ, আজ তাঁরা বেঁচে থাকলে এই দেশটার চেহারা হতে পারতো সম্পূর্ণ অন্যরকম। হয়তো তৃতীয় বিশ্বে আমরাও হতাম উন্নত এক দেশ। জ্ঞানে-বিজ্ঞানে অনেক উপরে থাকতাম আমরা। কিন্তু বর্বর, জানোয়ার পাকিস্তানিরা ওদের বাঁচতে দেয় নি। বিজয়ের ঠিক আগ মুহূর্তে তারা তাদের জীবনের বিনিময়ে দিয়ে গেছে আমাদের এই দেশ।

এই ৪৫ টি বছরে কতবার সেই বুদ্ধিজীবী দিবস এলো গেলো। অথচ, আমাদের সময় নেই তাদের দিকে ফিরে তাকানোর। আমরা অনেক এগিয়ে গেছি এখন। সেই দিন ৪৫ বছর আগেই ফেলে এসেছি। তখনকার ঐ মিছে একটা তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে এত মাথা ঘামানোর কি আছে? আমিতো ভালো আছি। এ-ই অনেক।কি হবে ওসব ব্যাকডেটেড চিন্তা করে?

তথ্য- শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৭:৪৯

বিজন রয় বলেছেন: এরা সব ভুলে যায়।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২০

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: অদ্ভুত আয়োডিনের অভাবে ভোগা প্রজন্ম

২| ০৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:০৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: বাংলাদেশের উচিত, মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীসহ অন্যান্য যুদ্ধপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের করে অপরাধীদের বিচারের সম্মুখীন করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:২১

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার বলেছেন: হুমম,অতি ক্ষুদ্র পদক্ষেপ হলেও প্রচেষ্টা চলছে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.