নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আঁচলের ঘ্রাণে বিমোহিত হতে মনে প্রেম থাকা লাগে। চুলের গন্ধ নিতে দুহাত বাড়িয়ে দেয়া লাগে। হাহাকার থাকা লাগে। দুনিয়া ছারখার হওয়া লাগে। সবাই আত্মা স্পর্শ করতে পারে না।আমার সমস্ত হাহাকার ছারখারে তুমি মিশে আছো।

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার

এক জন নিভৃতচারী

সানবীর খাঁন অরন্য রাইডার › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক একটা গান এক একটা ইতিহাস

০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৮:২৫

আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী তখন ঢাকা কলেজের ছাত্র।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী।মেডিকেলের সামনে অনেক মানুষ গুলি করে মারা হয়েছে।খবরটি তার কানে যায়।খবর পেয়ে তিনি মেডিকেলে চলে আসেন।শহর জুড়ে তখন থমথমে অবস্তা।যেকোন সময় কার্ফিউ জারি হতে পারে।হাসপাতালের আউটডোরে তিনি একটি লাশ দেখতে পেলেন।মাথার খুলি নেই।গুলিতে উড়ে গেছে।ওটা ছিল ভাষা সংগ্রামী রফিকের লাশ।লাশটি দেখে তার মন নাড়া দেয়।তার মনে হয় এটি যেন তার ভাইয়েরই লাশ।তৎক্ষনাৎ তার মাথায় দুইটা লাইন আসে " আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী; আমি কি ভুলিতে পারি।"

বাড়ি ফিরে তার শুধু রক্তমাখা লাশের কথাই মনে পড়তে থাকে।পরের কয়েকদিন লিখে ফেলেন আরও কিছু লাইন।এইভাবে তৈরী হয় একটা কবিতা।ছেলেটি ভাবেও নি এই কবিতা নিয়ে একদিন হবে বিপ্লব।ভাষা আন্দোলনের প্রথম লিফলেটে এই কবিতা "একুশের গান" শিরোনামে প্রকাশিত হয়।

১৯৫৩ সাল।ঢাকা কলেজে ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রথম বর্ষ উৎযাপন উপলক্ষে একটা গান দরকার।আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সহপাঠি বন্ধু ছিলেন আতিকুল ইসলাম।ছেলেটা বড় সুন্দর গায়।তার বড় ভাই কবিতাটি পড়ে আতিকুলকে পাঠালেন আবদুল লতিফের কাছে।আবদুল লতিফ তখন যুবলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক।তিনি গানটি সুর করলেন।ঢাকা কলেজ এবং ইডেন কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিক করলো আসছে ২১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা কলেজে শহীদ মিনার স্তাপন অনুষ্ঠানে গানটি গাওয়া হবে।আতিকুলরা সেদিন গানটি গেয়েছিল।যার অপরাধে পাকিস্তান সরকার তিনি সহ ১১ জনকে বহিষ্কার করে!

কিন্তু বিপ্লব কখনো থেমে থাকেনা।শুধু একজন থেকে আরেকজনে ছড়িয়ে যায় মাত্র।সেই গান এসে পড়ল দেশ সেরা সুরকার আলতাফ মাহমুদের হাতে।তিনি নতুন করে সুর করলেন।তার সুরে গানটি নতুন মাত্রা পেল।১৯৫৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী প্রভাত ফেরীতে গানটি গাওয়া হয়।তার করা সুরটিই বর্তমানে প্রচলিত।যা আমরা গেয়ে যাচ্ছি।সেই বছরই হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত "একুশের সংকলন" এ গানটি প্রথম বই আকারে প্রকাশিত হয়।পাকিস্তান সরকার সেই বই নিষিদ্ধ করে সকল কপি বাজেয়াপ্ত করেন।

একেকটা গান যেন একেকটা ইতিহাস।একেকটা গানের পিছনে রয়েছে হাজারো রক্ত,সংগ্রাম আর সময়ের গল্প।আজকাল যখন ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে হানি সিং,হৃদয় খানদের গান শুনি মন খারাপ হয়ে যায়।১৬ ই ডিসেম্বরের গান ২১ শে ফেব্রুয়ারীতে বাজতে দেখলে কষ্ট লাগে।আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারী।আর সেই দিবসের ভাষা বাংলা।গর্ব করা উচিত প্রতিটা বাঙালীর।যখন সেই দিবসের গানের প্রথম লাইনের সুর " আ....... শুনি তখন শরীরের লোম দাড়িয়ে যায়।শ্রদ্ধায় মাথা নুয়ে আসে।পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ ছয় দশক ধরে এই একই গান গেয়ে যাচ্ছে এবং গাবে।

প্রতিবছর শত শত মানুষ প্রভাত ফেরীতে দেশের আনাচে কানাচে শহীদ মিনারে এই গান গেয়ে ফুল দেয়।যেখানে বাঙালী আছে সেখানেই শহীদ মিনার আছে।শহীদ মিনার না থাকলেও অসুবিধা নাই।শিশুরা ৪-৫ টা কাঠি দিয়ে বানিয়ে ফেলে শহীদ মিনার।তার পর খালি পায়ে কিছু বুঝুক আর না বুঝুক শ্রদ্ধা জানায়।

দেশকে বাচ্চাদের মত নির্মোহ ভাবে ভালবাসতে হবে।বাচ্চাদের মত আধো আধো বোলে বলতে হবে "মা তোমাকে ভালবাসি"।গান গাইতে হবে।ভাষার জন্য জীবন দেয়া ভাইদের আমি কি ভুলিতে পারি ?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪

বিজন রয় বলেছেন: ভোলা যায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.